ঠাকুরগাও উত্তরবঙ্গের মেয়ে রুবাইদা রাখি। তিনি বর্তমান থাকেন ঢাকার মিরপুরে। পড়াশোনা শেষ করে জব পেলেও করা হয়ে ওঠেনি কারন জব কখনোই পছন্দের ছিলনা তার। পড়াশুনা শেষ করে শূন্য থেকে হয়ে ওঠেছেন সফল উদ্যোক্তা। স্বামী-সংসার ও এক সন্তানকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি নিজের ব্যবসার মাধ্যমে মন কেড়েছেন শত শত ভোজনপ্রেমীদের।শূন্য পুঁজিতে ব্যবসা শুরু তার। সব সময় চেয়েছি যেন কোনো কিছু করতে আমার কারো সাহায্য নিতে না হয়। এ পর্যন্ত খাবার বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ টাকা।’
টেকজুম: উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু কিভাবে?
রুবাইদা রাখি: আমি নিজের চেস্টায় কিছু করব এই বোধটা সবসময় ছিল এবং এটুকুই আমাকে উদ্যোক্তা জীবনেরপথে নিয়ে আসতে সাহায্য করে। আমি ২০১৫ তে ড্রেস এবং পান্জাবী নিয়ে কাজ করলেও বর্তমানে কাজ করছি মূলত ফুড নিয়ে । ঘরে তৈরী রান্না করা ফ্রেশ খাবার সবার পছন্দমতন উপায়ে তৈরী করে নিজের কিচেন থেকে পুরো ঢাকা শহরের যে কোন প্রান্তে পৌছে দেয়াটাই মূলত আমার লক্ষ্য এবং কাজ।
টেকজুম: ভর্তা বাহার ও ফুড ক্যাটারীং এ কি কি পণ্য বিক্রি করেন?
রুবাইদা রাখি: আমি দেশী আইটেম থেকে শুরু করে সবরকম খাবার রেখেছি আমার ফুড বিজনেসে। আমার পেজ ‘ভর্তা বাহার ও ফুড ক্যাটারীং’ এ রয়েছে ৮৫ রকমের ভর্তা ১৬ রকম ডাল এবং ৫০ রকমের কারী । পোলাও কোরমা, চাইনিজ আইটেম সহ ফ্রোজেন আইটেমস সাথে যেকোন পার্টিতে প্রায় ৫০০ জন পর্যন্ত অর্ডার করে খেতে পারবেন।
টেকজুম: নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছিঃ
রুবাইদা রাখি: আমি প্রায় জিরো ইনভেস্টমেন্ট থেকে শুরু করেছিলাম । আমার লক্ষ্য ছিল যে আমাকে যেন কারোর থেকে সাহায্য নিয়ে কিছু করতে না হয়। আমি সেটাই করেছি। আমার এ পর্যন্ত সেল পাঁচ লাখ টাকা প্রায়। শুরুতে অর্ডার কম থাকলেও আমার কিছুদিনের মধ্যেই ক্রেতা বাড়তে থাকে এবং আমার বেশিভাগই রিপিটেড কাস্টমার বর্তমানে। আলহামদুলিল্লাহ্ আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ফ্যামিলিতে শুরু থেকেই সবাই অনেক সাপোর্ট দিয়েছে । আমার বাবার বাড়ি শশুরবাড়ী কেউই আমাকে নিরুৎসাহিত করেন নি বরং সবকিছুতেই আমি খুব সাপোর্ট পেয়েছি অন্তত কাজ নিয়ে পোস্ট দেয়া মাত্রই। শুরুর দিকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি খাবার ডেলিভেরি প্রক্রিয়া নিয়ে। যেহেতু খাবার অনেক সেন্সিটিভ বিষয়, পথিমধ্যে অনেক সময় খাবার নস্ট হলে বা কোনো ত্রুটি হলে ক্রেতাদের সন্তুস্টির জন্য নিজে দায়িত্ব নিয়ে পুনরায় সমস্যার সমাধান করেছি।
টেকজুম: ‘ভর্তা বাহার ও ফুড ক্যাটারীং’ নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন?
রুবাইদা রাখি: ভবিষ্যতে আমি আমার ব্যবসাটাকে আরো বড় করতে চাই। অনেক সফল না হতে পারলেও আমি যেন আর কারো কাজে সাহায্যে আসতে পারি সেরকম কেউ একজন হতে চাই। কোনদিন ব্যবসাটা একটু বড় করতে পারলে আমার সবসময়ের ইচ্ছে ঢাকা শহরের অনেক পথশিশু রোজ না খেয়ে থাকে আমি তাদের পাশে দাড়াতে চাই। তাদের রোজকার আহারের সামান্য হলেও ব্যবস্থা আমি করতে চাই।
টেকজুমঃ উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) কিভাবে আপনার উদ্যোগে ভূমিকা রেখেছে?
রুবাইদা রাখি: আমি উই তে মার্চ থেকে জয়েন করি। যদিও উদ্যোক্তা জীবনের শুরু থেকে উই তে ছিলামনাহ তবে এখানে এসে বুঝলাম উই নি:সন্দেহে এক একটা মানুষের স্বপ্ন পূরনের এবং স্বপ্ন গুলোকে বাস্তবে রুপ দেয়ার মতন একটা চমৎকার গ্রুপ। আমি উই থেকে এতকিছু শিখেছি যেটা আসলেই আমার উদ্যোক্তা জীবনে কাজে এসেছে। শুধু উদ্যোক্তা হলেই হয়নাহ্অনেক পড়াশোনার ও প্রয়োজন পড়ে যেটা উই এবং রাজীব ভাইয়ার ডিজিটাল স্কিল গ্রুপ আমাকে শিখিয়েছেন আরো জোরালোভাবে। আমি রোজ রাতে পড়তে আসি নতুন কিছু শিখতে আসি এই গ্রুপদুটোতে। নিশা আপুর অর্ডারটা ছিল উই থেকে আমার উদ্যোক্তা জীবনের অন্যতম বড় পাওয়া। আমি খুব কৃতজ্ঞ এ দুজন মানুষ রাজীব ভাইয়া এবং নিশা আপুর কাছে যারা হাজার হাজার ছেলে মেয়েদের স্বপ্নবাজ জীবনটাকে বাস্তবতার হাত ধরে গড়তে চলেছেন সফলতার শীর্ষে।