দেশের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখে আয়কর। দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৯% নারী। একটা সময় নারী কেবল ঘর সামালানোর দায়িত্ব পালন করলেও বর্তমানে ব্যবসা, বাণিজ্য, এমনকি বিমান পরিচালনায় নারীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারীরাও নানা ভাবে অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত।
অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সম্পৃক্ততার সাক্ষী হিসেবে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে আয়কর রিটার্ন। আয়কর শব্দটি শুনতে অনেকের মনে শঙ্কা কাজ করে। তবে এখানে শঙ্কার কিছু নেই। হিসেবের খাত গুলো বুঝলে অনেক সময় নিজেও আয়কর রিটার্ন ফরম পূরন করা যায়।
একজন নারী ব্যবসায়ী/ উদ্যোগতা আয়কর রিটার্নের আয় ও ব্যয়ের হিসাব সাধারণত যেভাবে করতে হয়:
রিমা একজন উদ্যোগতা। তার উদ্যোগের নাম নকশী। তিনি নানান রকম নকশীপন্য বিক্রি করেন। তিনি ১ লা জুলাই ২০১৯ থেকে ৩০ শে জুন ২০২০ পর্যন্ত ২০ লক্ষ টাকার পণ্য দেশে বিক্রি করেছেন এবং বিদেশে রপ্তানী করেছেন ৫০ হাজার টাকার পণ্য। এখন তিনি কত টাকা কর দিতে হবে?
অনেকের ধারণা, যত টাকার পণ্য বিক্রি হয় তত টাকার উপর কর দিতে হয়। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। মোট বিক্রিত আয় হতে খরচ ও অবচয় খারচ বাদ দিয়ে কর দিতে হয়। তবে ব্যবসার মূলধনজাতীয় খরচ এখানে আসবে না। যেমন, কেউ যদি ৫০ হাজার টাকার ফার্নিচার ক্রয় করে খরচের হিসেবে বাদ যাবে না সে টাকা। এছাড়াও হস্তশিল্পের রপ্তানী আয় করমুক্ত। তাই রিমার ৫০ হাজার টাকা আয়ের কর দিতে হবে না।
মনে করি, ২০ লক্ষ টাকার বিক্রিত মালামাল ক্রয় করতে রিমার খরচ হয়েছে ১২ লক্ষ টাকা। গ্রস মুনাফা ৮ লক্ষ টাকা। অফিস ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল, মোবাইল বিল, যাতায়ত, বিভিন্ন কাগজ নবায়ন ফি বাবদ বাৎসরিক ২ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। অবশিষ্ট রয়েছে ৬ লক্ষ টাকা।
অবচয়ের হিসেব: রিমা ৫০ হাজার টাকার ফার্নিচার কিনেছে, তৃতীয় তফসিল অনুযায়ী অবচয় ভাতা পাবে ১০% হারে। তাই অবচয় খরচ হবে ৫ হাজার টাকা। এখন রিমার ব্যবসা খাতে নীট আয় বের করতে গ্রস আয় থেকে বাদ দিতে হবে আরো ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ নীট আয় ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা।
রিমা আয়করের পরিমান:
প্রথম ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার আয়কর নেই।
পরের ১ লাখ টাকায় ৫% হারে ৫ হাজার টাকা।
পরের ১ লাখ টাকায় ১০% হারে ১০ হাজার টাকা।
পরের ৪৫ হাজার টাকায় ৬ হাজার ৭ শত ৫০ টাকা।
মোট কর (৫০০০+১০০০০+৬৭৫০) দাড়ায় ২১৭৫০ টাকা।
রিমা যদি অনুমোদিত খাতগুলোতে বিনিয়োগ বা দান করে তাহলে নির্দিষ্ট পরিমান অংকের ছাড় পাবে, যেটিকে বলা হয় রেয়াত। করযোগ্য মোট আয়ের ২৫% পর্যন্ত বিনিয়োগ ও দান করতে পারবে। জীবন বিমার প্রিমিয়াম ১ লক্ষ টাকা দিলে রেয়াত পাবে ১৫%। কর থেকে আরো ১৫ হাজার টাকা রেয়াত বাদ যাবে। এখন কর (২১৭৫০-১৫০০০) দাড়ায় ৬ হাজার টাকা। রিমা ২০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের কর দিচ্ছে ৬ হাজার টাকা।
সাধারন কিছু তথ্যের উপর নির্ভর করে তৈরী করা হয়েছে উপরের ছক। ব্যক্তি ও তথ্য ভেদে আয়কর নির্নয় হয় তাই আরো বিস্তারিত জানতে আয়কর কর্মকর্তা বা আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া শ্রেয়।
যে নারীরা আয় করছেন সবার উচিৎ আয়কর রিটার্ন দাখিল করা। বাংলাদেশে কর্মজীবী নারীর মাত্র ৩৬ শতাংশের মাত্র ব্যাংক একাউন্ট আছে যেখানে পুরুষদের ৬৫% এর ব্যাংক একাউন্ট আছে। আমাদের শুধু উপার্জনে নিজেদের সম্পৃক্ত করলে হবে না অন্যান্য অর্থনেতিকও নিজেদের সম্পৃক্ত করতে হবে। উল্লেখ্য, আয়কর সীমার নিচে থাকলেও আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। নতুবা পরবর্তীতে আইনানুগ জটিলতা সৃষ্টি হবে।
লেখক: ব্যারিস্টার রহিমা হক
প্রতিষ্ঠাতা, আইন সেবা।