সৈয়দা তাসমিয়াহ তাহলীলের জন্ম সিলেটের পশ্চিম জাফলংয়ের গোয়াইনঘাটের রাজনগর গ্রামে। বয়স মাত্র তেরো বছর। এ বয়সে খেলাধুলা, আনন্দ-স্ফূর্তি করে দিন কাটানোর কথা। কিন্তু তা না করে পড়াশোনার পাশাপাশি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বেতের পণ্য অনলাইনে বিক্রি করে হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা। শুধু দেশেই নয়, সিলেটের ঐতিহ্যকে কাস্টমাইজ করে আধুনিক রূপ দিয়ে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরাই এই কিশোরীর মূল লক্ষ্য। উদ্যোগে ব্যক্তি, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সৃজনশীলতা থাকে। যা ব্যবসায় থাকে না। মুনাফা লাভ উদ্যোগের মূল বিষয় নয় দেশি পণ্যের প্রচারণা ও বিশ্বের বুকে সিলেটকে রিপ্রেজেন্ট করতে চাই। তাসমিয়াহ তাহলীলের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে টেকজুমের এবারের আয়োজন।
টেকজুম: উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু কিভাবে?
তাসমিয়াহ তাহলীল: মা এবং বাবা দুজন দুই পরিবেশের মানুষ। একজনের তাত্ত্বিক জ্ঞান আরেকজনের প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞান। তাদের দুজনের সমন্বয়ে আমি। ‘প্রতিটি মানুষই আলাদা। তাদের ক্ষেত্রগুলোও আলাদা। যদিও সফল হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা সবার মাঝেই আছে। আমারও আছে। বর্তমানে ই-কমার্স যে অবস্থানে; তা থেকে বোঝা যায়, ভবিষ্যতে সব কিছুই ই-কমার্স নির্ভর হবে। তাই আমার মনে হয়, উদ্যোক্তা হতে পারলে সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে পারবো।’ সৃজনশীলতার মাধ্যমে নিজেকে সফল হওয়ার ইচ্ছার কারনে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজে কে তৈরি করছি । প্রতিটি মানুষই আলাদা এবং তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রগুলোও আলাদা। যদিও সফল হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমাদের সকলেরই মাঝে আছে। আমার মাঝেও আছে।
টেকজুমঃ উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন কিভাবে?
তাসমিয়াহ তাহলীল: আমার মা উই গ্রুপের একজন সদস্য। তিনিই প্রথমে আমাকে উই গ্রুপ সম্পর্কে জানান। শুধুমাত্র উই জয়েন হওয়ার জন্য আমি আমার নানুর আইডিতে উইতে জয়েন হই ( আমার বয়স তখন ১৩ হয়নি) ও পরবর্তীতে নিজের নাম দেই। মুলত রাজিব স্যারের আর্দশে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং উই এর আপু ভাইয়াদের পোস্ট দেখে নিজে উদ্যোগ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেই। আমার উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে মূলত নিজের দক্ষতা বাড়ানো, পরিচিতি এবং উদ্যোগকে সবার সামনে নিয়ে আসা। এ ছাড়া রুচিশীলতা, শৌখিনতা এবং প্রজন্মের কাছে পরিবেশ বান্ধব ও দেশীয় পণ্যের প্রসার ঘটানো।’
টেকজুমঃ ক্যারিয়ারে ই-কমার্স কেন বেছে নিলেন?
তাসমিয়াহ তাহলীল: আমি খুব সৃজনশীল মানুষ। আমার শখ কনটেন্ট রাইটিং এবং ডিজাইনিং আর বর্তমানে ই-কমার্স যে অবস্থানে আছে ভবিষ্যতে সবকিছুই ই-কমার্স নির্ভর হবে। আমার দূরদৃষ্টিতে তাই মনে হল একজন উদ্যোক্তা হলে আমি আমার সৃজনশীলতাকে (পন্যের কাস্টমাইজ ও আধুনিকয়ন) কাজে লাগাতে পারব। ‘উদ্যোগ আর ব্যবসা এক নয়। উদ্যোগে ব্যক্তি, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সৃজনশীলতা থাকে। যা ব্যবসায় থাকে না। মুনাফা লাভ উদ্যোগের মূল বিষয় নয়। আমার উদ্যোগ আমার স্বপ্ন। আমি স্বপ্নের হাত ধরে হাঁটতে চাই। দেশি পণ্যের প্রচারণা ও বিশ্বের বুকে সিলেটকে রিপ্রেজেন্ট করতে চাই। সে জন্য মা-বাবা আমাকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন।’
টেকজুমঃ নাগরী হাট (Nagri Hut) এ কি কি পণ্য নিয়ে কাজ করেন?
তাসমিয়াহ তাহলীল: সিলেটের সব ঐতিহ্যবাহী ও বিলুপ্তপ্রায় পণ্য নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা। তবে আমার সিগনেচার পণ্য বেতের ইউনিক পণ্য। হোমডেকর এ বিশেষ করে স্থানীয় বেত পণ্যের প্রসারই আমার উদ্যোগের ফোকাস। বেতের বিভিন্ন জিনিসপত্র যেমন, কফি টেবিল, মোড়া, চেয়ার, রকিং চেয়ার, দোলনা, মুভিং চেয়ার, সোফা, বেড ইত্যাদি Nagri Hut ( নাগরী হাট) এর পন্য।
টেকজুমঃ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্ক যদি বলতেন?
তাসমিয়াহ তাহলীল: ‘আমি এ পর্যন্ত নাগরী হাট পেজের মাধ্যমে বেতপণ্য বিক্রি করেছি প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আমি মূলত অনলাইনে সময় দেই। আর পণ্য সংগ্রহ ও ডেলিভেরিতে আমার বাবা-মা সহায়তা করে। আমার ইচ্ছা, সিলেটের বেতপণ্যকে কাস্টমাইজ করে আধুনিক রূপ দিয়ে বিশ্বদরবারে তুলে ধরা।’
টেকজুমঃ উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) কিভাবে আপনার উদ্যোগে ভূমিকা রেখেছে?
তাসমিয়াহ তাহলীল: আমার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে বড় অবদান উই এর। উইয়ের মাধ্যমে শুধুমাত্র সময় বিনিয়োগ করে , নিজের পরিচিতি,পণ্য পরিচিতি করে আমার ব্যবসাকে অনেকদূর এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি। আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে আমার সবচেয়ে বড় অবদান ফেসবুকের উই গ্রুপ ও রাজীব আহমেদ স্যার’। ই-ক্যাব এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ফোরামটির উপদেষ্টা রাজিব আহমেদ স্যারকে পরামর্শক হিসেবে পেয়ে আমি সত্যিই অনেক বেশি গর্বিত বোধ করি কারণ তিনি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আমাদের মত উদ্যোক্তাদের জন্য।