খেশ কাপড় ও খেশ শাড়ি নিয়ে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রায় বলতে গেলে তেমন কিছুই জানেনা। টাঙ্গাইলের বাহিরে এই শাড়ি ততটা পরিচিত নয় এবং যা উৎপাদন হয় তার পুরটাই টাঙ্গাইল জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর ফলে আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি তাঁতের কাপড়ের সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। অথচ এটির সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে এই যে এর কাঁচামাল বা মূল উপকরণ হচ্ছে পুরানো সুতি কাপড়, লুঙ্গি, গামছা ইত্যাদি। অর্থাৎ পুরনো কাপড়কে হাত দিয়ে ফালি ফালি করে তার মাধ্যমে সুতা বের করে রিসাইকেলিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খেশ কাপড় তৈরি করা হয়। খেশ দিয়ে শাড়ি, পাঞ্জাবী, থ্রি – পিস অনেক কিছুই বানানো সম্ভব হচ্ছে এবং এবারের শীতে খেশের শালও তৈরি করা হয়েছে। তাই এর ব্যবহার যত বাড়বে তত বেশি আমাদের পুরনো কাপড়ের স্বদ ব্যবহারের একটা রাস্তাও তৈরি হবে।
আমাদের দেশে যে তাঁতের কাপড় তৈরি হয় অনেক ক্ষেত্রেই কাঁচামাল দেশের বাহির থেকে আমদানি করতে হয়। তাঁতের কাপড়ের মূল উপকরণ হচ্ছে আসলে সুতা এবং রঙ। এই দুইটি উপকরণ অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশ থেকে আনতে হয় এবং এর ফলে আমাদের মুদ্রা বিদেশে পাঠাতে হয়। কিন্তু খেশের ক্ষেত্রে এর উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম এই জন্য যে এই কাপড়টা ইতিমধ্যে আমরা ব্যবহার করে ফেলেছি বা পুরানো হয়ে গেছে তাকেই আমরা আবার রিসাইকল করছি। এর ফলে নতুন যে কাপড় উৎপাদিত হচ্ছে তার জন্য কিন্তু বিদেশে থেকে কোন উপকরণ আনতে হচ্ছে না। এই উপকরণ এবং কাঁচামালগুলো ইতিমধ্যে দেশে রয়েছে।
এই সাধারণ ব্যাপারটি আমরা অনেকেই জানিনা এর প্রচার দরকার। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা এবং চিন্তাভাবনা করা দরকার। শুধু টাঙ্গাইল নয় সেই সাথে আশেপাশের কোন কোন জেলাতে খেশ উৎপাদন করা যায় এবং খেশের সাথে কোন নদী বা আবহাওয়ার কোন বিশেষ সম্পর্ক আছে কিনা এবং বাংলাদেশের অন্য কোন কোন জেলাতে এই ধরনের আবহাওয়া বিরাজমান সেদিক নিয়ে চিন্তা করা উচিৎ। আর কাঁচামালের ব্যাপারটি যদি আমরা চিন্তা করতে যাই তাহলে বলতে হয় যে পুরানো কাপড়তো দেশেই পাওয়া যাচ্ছে এবং নতুন যত খেশ কাপড়ের চাহিদা বাড়বে সুতি পুরানো কাপড়ের ব্যবহারও তত বাড়বে।
এই ব্যাপারটি খুব সামান্য মনে হতে পারে কিন্তু এর সাথে অনেক মানুষের ভাগ্য জড়িত। যদি খেশ কাপড়ের চাহিদা বাড়ে তাহলে খেশের কাঁচামালের চাহিদাও বাড়বে। এই কাঁচামাল মানে হচ্ছে যে পুরাতন সুতি কাপড় সংগ্রহের জন্য সারাদেশে আরও মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। তারপরে সেই পুরানো কাপড়গুলো নিয়ে এসে সেগুলোকে প্রক্রিয়াজাতকরণে জন্য আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। উৎপাদনের প্রতিটি ধাপেই কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এর ফলে কিছু কিছু পরিবারের আয় বাড়বে এবং নতুন কর্মসংস্থানেরও তৈরি হবে।
সেই সাথে ইনোভেশন বা খেশের নতুন নতুন পণ্যের দিকে নজর দিতে হবে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে খেশের শাল চলে আসে। এই লেখক বা আমি এটি তৈরি করি আমার আরিয়া’স ক্যালেকশন উদ্যোগ থেকে। এটি করতে গিয়ে দেখা গেল যে খেশের সাথে অন্য একটি কাপড়ের ফিউশন করে শালটা তৈরি করা গেছে এবং দুই রকমের শাল তৈরি করা সম্ভব। প্রথমত একটু মোটা বা ভারি শাল যেটা শীত কালের জন্য খুব উপযোগী হবে কিন্তু বছরের বাকি সময় সেটি তেমন পরার উপযোগী হবে না। আরেকটি হচ্ছে পালতা শাল হয়তো যেটি তীব্র শীতে তেমন একটা কাজে দিবেনা কিন্তু একটু শীত কমলে বা বছরের বাকি সময় এটি ওড়না হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এভাবে খেশ নিয়ে যদি আমরা নানামুখী চিন্তা করি তাহলে এটিকে কেন্দ্র করে একটি ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হতে পারে। আর তা হলে এর কাঁচামালের প্রয়োজনীয়তা অনেক বাড়বে।
খেশের কাঁচামাল নিয়ে বারবার আমি বলে যাচ্ছি এই কারনে যে কাঁচামাল দেশেই পাওয়া যাচ্ছে এবং এর জন্য নতুন করে এক ডলার মূল্যর কোনকিছু আমদানি করতে হবে না। এমন না যে খেশের চাহিদা বেড়ে গেলে পুরাতন কাপড়ের চাহিদা বেড়ে যাবে এবং আরও নতুন কোনকিছু বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে এমন মোটেও না। কারন হচ্ছে যে আমাদের যে পুরানো কাপড় তা আমরা অনেক সময় অবহেলায় ফেলে দেই হয়তো পুড়িয়ে ফেলি বা রাস্তায় ফেলে দেই মোট কথা হলো আমরা গুরুত্ব দেইনা। কিন্তু যদি খেশের চাহিদা বাড়ে তাহলে এই কাপড়গুলোকে আমরা অনেকেই অল্প দামে হলেও বিক্রি করে দেব এবং তা আবার নতুন কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত হবে। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াতে নতুন করে কোন কিছু আমদানি করতে হবে না এবং এর ফলে তা আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।
লেখক : নিগার ফাতেমা
স্বত্বাধিকারী : আরিয়াস কালেকশন।