বাংলাদেশে চাকুরিজীবী নারীর সংখ্যা দিনে দিনে উর্ধ্ব গতি হচ্ছে। সরকারি হোক বা বেসরকারি সব খাতে ধীরে ধীরে নারীর অংশগ্রহন বাড়ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রননালয়ের ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফ -২০১৮ ‘ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যে বলা হয়েছে বাংলাদেশে সরকারি চাকুরীজীবীর মোট ২৭ শতাংশ হলো নারী, যার সংখ্যা ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭৮৭।
নারীরা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে যত জড়িত হবে তত দেশের সার্বিক উন্নয়ন তরান্বিত হবে। আয়ের পাশাপাশি নিজের ব্যয়ের হিসেব দাখিল করাও নাগরিক কর্তব্য। উপার্জনকারী নারীরা যত আয় কর দাখিল করবে তত অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে তাদের অবস্থান দৃশ্যমান হবে এবং স্বীকৃত হবে। কিন্তু আয়কর সম্পর্কে জ্ঞানের স্বল্পতার কারনে বা অজ্ঞতার কারনে আয়কর রিটার্ন দাখিলে মানুষের মাঝে অনীহা দেখা দেয়।
সরকারি চাকুরিজীবী:
এস আর ও নং ২১১ -আইন /আয়কর/২০১৭ এর প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সরকারি বেতন আদেশভুক্ত একজন কর্মচারীর সরকার কর্তক প্রদত্ত মূল বেতন,উৎসব ভাতা ও বোনাস (যে নামেই অভিহিত হোক না কেন) করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচিত হবে। অবসরকালে প্রদত্ত লাম্প গ্রান্টসহ সরকারি বেতন আদেশে উল্লেখিত অন্যান্য ভাতা সুবিধাদি যেমন, বাড়ী ভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়ত ভাতা, শ্রান্তি নিবেদন ভাতা, বাংলা নববর্ষ ভাতা ইত্যাদি কর মুক্ত থাকবে।
ধরে নেই নাদিয়া একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং ২০২০-২০২১ করবর্ষের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন। ৩০ শে জুন ২০২০ তারিখে সমাপ্ত অর্থ বছরে তিনি মাসিক মূল বেতন পান ৫০ হাজার টাকা, মাসিক চিকিৎসা বাবদ ভাতা পান ১০০০ টাকা, উৎসব ভাতা পান ১ লক্ষ টাকা ও নববর্ষ ভাতা পান ১১০০০ টাকা। তিনি সরকারি বাসায় থাকেন। ভবিষ্য তহবিলে তিনি প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা জমা দেন। কল্যান তহবিলে চাঁদা বাবদ ১৫০ টাকা করে প্রতি মাসে তার বেতন হতে কর্তন করা হয়। তিনি একটি তফসিল ব্যাংকে ডিপোজিট পেনশন স্কীম মাসিক ৫০০০ টাকা জমা দেন।
এখন বছরের হিসেবে নাদিয়ার মোট আয় ও করদায় হিসেব নিম্ন পরিগণনা করা হলো:
মুল বেতন হলো ৬ লক্ষ টাকা।
উৎসব ভাতা ১ লক্ষ টাকা
চিকিৎসা ভাতা ১২ হাজার টাকা ও নববর্ষ ভাতা ১০ হাজার টাকা করমুক্ত থাকবে।
মোট আয় ( ৬০০০০০+১০০০০০) ৭ লক্ষ টাকা।
মোট আয়ের উপর কার দায় হবে:
প্রথম ৩৫০০০০ টাকা পর্যন্ত শূন্য
পরবর্তী ১০০০০০ টাকার ৫% হারে ৫০০০ টাকা
পরবর্তী ২৫০০০০ টাকার ১০% হারে ২৫০০০ টাকা।
নাদিয়ার বেতনের আয় হতে মোট কর দায় ৩০০০০ টাকা।
মনে করি নাদিয়া সঞ্চয় পত্রে বিনিয়োগ করেছেন ১লক্ষ টাকা এবং জীবন বীমার প্রিমিয়াম প্রদান করেছেন ১৫০০০ টাকা। তিনি মোট বিনিয়োগ করলেন ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। সরকার নির্ধারিত খাতে বিনিয়োগ করেছেন বলে তিনি বিনিয়োগজনিত আয়কর রেয়ায়েত পাবেন।
একজন করদাতার বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত পরিগণনার ক্ষেত্রে নীচের দুটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে:
১) করদাতার মোট আয়
২) রেয়াতের জন্য অনুমোদনযোগ্য অংক
রেয়াতের জন্য অনুমোদনযোগ্য অংক হবে:
নীচের (ক), (খ) ও (গ) এর মধ্যে যেটি কম হবে সেটিই হবে কর রেয়াতের জন্য অনুমদিত অংক:
(ক) রেয়াত পাবার যোগ্য খাতে করদাতার প্রকৃত বিনিয়োগ বা চাঁদার পরিমান
(খ) করযোগ্য মোট আয়ের [82C ধারার (২) উপ ধারায় বর্ণিত উৎস/উৎসসমূহ হতে প্রাপ্ত আয় এবং কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত আা হ্রাসকৃত করহার প্রযোজ্য এমন আয় থাকলে তা ব্যতীত] ২৫%
(গ) ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা
যেহেতু নাদিয়ার মোট আয়ের ২৫% হলো ১ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা আর নাদিয়া বিনিয়োগ করেছে ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। নাদিয়া বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত পাবেন ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকার ১৫%; ১৭ হাজার ২৫০ টাকা।
বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত বাদ দেবার পর প্রদেয় কর হবে
বিনিয়োগ পূর্ববর্তী করদায় ৩০০০০ হাজার টাকা
বিনিয়োগ রেয়াত পরিমাণ ১৭ হাজার ২৫০ টাকা
রেয়াত পরবর্তী করদায় ১২ হাজার ৭৫০ টাকা।
নাদিয়া রিটার্ন দাখিলের সময় ১২ হাজার ৭৫০ টাকা কর রেয়াত পাবেন।
লিখনীটি সাধারন তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত। সুনির্দিষ্টভাবে আপনার আয়কর হিসেব করতে আইনজীবী বা পরামর্শকের সাহায্য নিন।
লেখক: ব্যারিস্টার রহিমা হক
প্রতিষ্ঠাতা, আইন সেবা।