একটা সময় নারীদের উদ্যোক্তা হতে গেলে দেশে নানান প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়েছে। এখনও সেই প্রতিবন্ধকতাগুলো কাটেনি। তবে নারীরা এখন উদ্যোক্তা হচ্ছেন সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে। দেশে স্মার্ট নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে গুরুত্বারোপ করে নীতিমালা প্রণয়ন করতে একটি পলিসি ডায়ালগ করেছে নারীদের নিয়ে কাজ করা প্ল্যাটফর্ম উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট (উই)।
দেশের ফেসবুকভিত্তিক নারী উদ্যোক্তাদের সমস্যা, সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যতের করণীয় নিয়ে শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর রাওয়া কনভেশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে স্মার্ট নারী উদ্যোক্তা পলিসি ডায়ালগ।
দেশে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করা সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্টের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় ই-কমার্সে অন্যের নকল করা থেকে বেরিয়ে উদ্ভাবনী ও সৃজনশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। দেশীয় কাঁচামালে উদ্ভাবনী পণ্য তৈরি ও বিপণনকে গুরুত্ব গিয়ে সাধারণ উদ্যোক্তারা যাতে দেশের বাইরের বাজার ধরতে পারে সেজন্য একটি যথাযথ এফ-কমার্স নীতিমালা প্রণয়নে গুরুত্বারোপ করেন অংশগ্রহণকারীরা। একই সঙ্গে, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষায়িত পণ্যগুলো প্রদর্শনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সভায় অংশগ্রহণকারী নারী উদ্যোক্তাদের প্রায় ৩০টি ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপের অ্যাডমিনেরা এতে অংশ নেন। সেখানে সবাই সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যেতে বহুপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) সই করেন অংশগ্রহণকারীরা।
পলিসি ডায়ালগে সভাপতিত্ব করেন উই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন উই পরিচালক ইমানা হক জ্যোতি, নির্বাহী পরিচালক আফরিন পারভিন, উই ট্রাস্টের উপদেষ্টা জাহানুর কবির সাকিব।
সভায় আলোচনায় অংশ নিয়ে উই সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশা সবাইকে প্ল্যাটফর্মগুলোর উদ্যোক্তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো খুঁজে দেখার আহ্বান জানান। এ ছাড়া ফেসবুক গ্রুপ ডিজঅ্যাবল হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে গ্রুপের যে কোনো বিষয়ে রিপোর্ট না করা, কপি পোস্ট বন্ধ করা এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্যের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বক্তব্যে নাসিমা আক্তার বলেন, ‘অনেকেই বলেন নারীরা নারীদের ভালো দেখতে পারেন না। কিন্তু আমরা এ ধারণা ভেঙে দিতে চাই। উই সেটা ভেঙে দিতে কাজ করছে। কিন্তু সেটা করতে হলে সারা দেশের নারী উদ্যোক্তাদের সমস্যাগুলো আমাদের জানা দরকার। সে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের কাজ করতে হবে। এজন্যই এই পলিসি ডায়ালগের আয়োজন’।
তিনি জানান, এক এক করে এগিয়ে যাওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে এই পলিসি ডায়ালগ শুরু হলো। এরপর পর্যায়ক্রমে কয়েকটি ধাপে এটি আরও আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি এসব ডায়ালগ থেকে উঠে আসা বিভিন্ন সমস্যা, অসুবিধা, বিড়ম্বনাসহ নানা বিষয় নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা তৈরির কাজ করা হবে। তার আগে এসব সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে একটি উই সামিট আয়োজন করা হবে। সেখানে উদ্যোক্তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরা হবে।
সভায় উইএনডি অ্যাডমিন নাদিয়া বিনতে আমিন, ঐক্য ফাউন্ডেশনের চৈতি ফারহানা রূপা, হুর নুসরাতের প্রতিষ্ঠাতা নুসরাত আক্তার লোপা, দ্য ক্যাফে রিও এবং আলোকিত নারীর প্রতিষ্ঠাতা মহিমা আক্তার ববি, লেদার গ্রুপের তানিয়া ওহাব, নারী উদ্যোক্তা ফোরামের অ্যাডমিন রাফিয়া আক্তার, রেড বিউটি পার্লারের অ্যাডমিন আফরোজা অপু, উদ্যোক্তা মেলা’র অ্যাডমিন জান্নাত নিশি, সর্বজায়া নারী উদ্যোক্তার অ্যাডমিন নাফিসা আক্তার পলি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সভায় বক্তারা এ বছরের বাজেটকে নারী উদ্যোক্তাবান্ধব উল্লেখ করে সেই সুযোগ নিয়ে পুঁজিবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর বিষয়ে আলোকপাত করেন। তারা জানান, ফ্রি প্রশিক্ষণ থাকলেও অনেক নারী এই সুযোগটা নিচ্ছেন না। মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় বেশি সহনশীল ও উদ্যোমী। তাই এবার ঐক্যবদ্ধভাবে একটি প্লাটফর্মে আসার ঘোষণা দেন তারা। আগামী ৫ বছরের জন্য একটি স্মার্ট নারী উদ্যোক্তা পরিকল্পনা প্রণয়নের কথাও জানানো হয় সভায়।
আলোচনায় ঐক্য ফাউন্ডেশনের চৈতি ফারহানা লোপা বলেন, তাদের ফাউন্ডেশন থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এমনকি কিছু কোর্স করানো হয় মাত্র ৫০ টাকা ফি নিয়ে। কিন্তু সেখান থেকে অনেকে উদ্যোক্তা হতে চেয়েও অর্থাভাবে তা হতে পারছেন না। যদি তাদের ফাইন্যান্স করা যায়, তাহলে তারা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
হুর নুসরাতের প্রতিষ্ঠাতা নুসরাত আক্তার লোপা বলেন, ‘আমরা দেখেছি অনেকে উদ্যোক্তা হতে প্রশিক্ষণও নেন। কিন্তু দেখা যায়, অনেকে বিউটি পার্লার নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু মেকাপ সম্পর্কে প্রকৃত জানাশোনা না থাকায় সেটা সঠিকভাবে করতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রশিক্ষণ ও পড়াশোনার। সেটা করতে না পারলে বিউটি পার্লার থাকলেও গ্রাহক থাকবে না। তখন উদ্যাক্তাদের বদমান ছড়িয়ে পড়বে’।
এছাড়াও দ্য ক্যাফে রিও ও আলোকিত নারীর প্রতিষ্ঠাতা মহিমা ববি বলেন, ইউনিক প্রোডাক্ট নিয়ে উদ্যোক্তা হতে হবে। শুধু পোশাক নিয়ে বা পোশাক বিক্রিই উদ্যোক্তা নয়। ভিন্ন ও প্রয়োজন এমন প্যারিসেবল প্রোডাক্টে নজর দিতে হবে।
লেদার গ্রুপের উদ্যোক্তা তানিয়া ওয়াব বলেন, ‘সবার আগে দেশের মানুষের মানসিকতা বদলাতে হবে, নইলে দেশীয় পণ্য কখনোই ভালো অবস্থানে যেতে পারবে না। আমরা সবসময় ব্যবসায়ীদের ছোট করে দেখি। চামড়াজাত পণ্যের একটা ব্যাগ আমরা ইউরোপে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করছি, সেটা দেশে ৭ হাজার টাকা চাইলেই বলবে গ্রাহকের গলা কাটছে। আসলে আমরা মনেই করি দেশি পণ্যের মান ভালো না’।
উদ্যোক্তাদের এসব সুবিধা অসুবিধাগুলো উই সামিটে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দেন উই প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা।