ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের পথে হাটছে সরকার ও জনগণ। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ’ভিশন ২০২১’ ঘোষণা দিয়েছিলেন। যার মূলভিত্তি ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মান। অর্থাৎ দেশের জনগণ যেন ঘরে বসে নিজের হাতে থাকা মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটারে বসে সকল সেবা পেতে পারে। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন হয়েছে। মানুষ এখন নিজের মোবাইল ও কম্পিউটার দিয়ে কেনাকাটা, লেখাপড়া, যোগাযোগ করা সহ অধিকাংশ সেবা পেতে পারছে মুহূর্তে। এ জন্য প্রয়োজন হচ্ছে না লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা। যার ফলে কমে দূর হয়েছে ভোগান্তি এবং সাশ্রয় হয়েছে সময় ও অর্থ।
২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বপ্রথম স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখান। একটি উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি ও একটি স্লোগান হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ। এই প্রতিশ্রুতির লক্ষ্য ২০৪১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর হওয়া। স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ এই চারটি পিলার নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এই চার দিকে স্মার্ট হয়ে গেলে সামগ্রিকভাবে স্মার্ট হবে প্রিয় ভূমি বাংলাদেশ। এর ফলে এই দেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত ও উদ্ভাবনী একটি উন্নত বাংলাদেশ।
স্মার্ট বাংলাদেশ শুধু একটি স্লোগান ও প্রতিশ্রুতিই নয়। এটি বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও জনগণের প্রায় দুই দশকের বিশাল কর্মযজ্ঞ রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ পরিকল্পনাকে বলা যায়, শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একটি সিদ্ধান্ত। এটি আমাদের জীবনযাত্রার মান ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে দেশের ই-কমার্স উদ্যোক্তারা। কারণ ডিজিটাল বাংলাদেশের বিনির্মানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে ই-কমার্স। বিপুল সংখ্যক মানুষের ডিজিটাল সেবা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে এই খাতে। এছাড়াও ডিজিটাল অর্থনীতির আকার বড় করেছে ই-কমার্স। ব্যক্তি পর্যায়ে ডিজিটাল লেনদেনের উল্লেখযোগ্য সম্পন্ন হয় ই-কমার্সে।
স্মার্ট বাংলাদেশের যে চারটি পিলার (স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ) রয়েছে তার সবগুলো ই-কমার্সের সাথে সম্পৃক্ত। স্মার্ট পদ্ধতিতে অনলাইনে কেনাকাটার মাধ্যমে একজন মানুষ স্মার্ট নাগরিক হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে পারে। অনলাইনে কেনাকাটার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্মার্ট পদ্ধতিতে সরকারি বেসরকারি যেকোন সেবা সহজে গ্রহণ করতে পারবে একজন স্মার্ট নাগরিক। এছাড়া ই-কমার্সে কেনাকাটা করার মাধ্যমে ব্যক্তি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি স্মার্ট লেনদেন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমরা যে ক্যাশ লেস সোসাইটির স্বপ্ন দেখি এর জন্য ই-কমার্স অন্যতম একটি হাতিয়ার। স্মার্ট বাংলাদেশে বিনির্মান করতে হলে সরকারি অসংখ্য সেবা স্মার্ট পদ্ধতিতে অনলাইনে কেনাকাটা করা যাবে। যার লেনদেন হয়ে থাকবে স্মার্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে। অনলাইন ট্রানজেকশন ই-কমার্সের অন্তর্ভুক্ত। দেশের নাগরিক যখন অনলাইন কেনাকাটা, অনলাইন লেনদেন ও অনলাইন সেবা স্মার্ট পদ্ধতিতে ভোগ করবে তখনি গঠন হয়ে স্মার্ট সমাজ। এই করাণে বলা হচ্ছে, স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন বাস্তবায়নে ই-কমার্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ই-কমার্স উদ্যোক্তারা সরাসরি ভোক্তার সাথে কাজ করে। ভোক্তার চাহিদা, রুচি বুঝে তাদেরকে সেবা দিয়ে থাকে। ভোক্তা এনালগ থেকে ডিজিটাল এবং ডিজিটাল থেকে স্মার্ট করতে উদ্যোক্তাদের ভূমিকা অপরিসীম। এখানে একটা বাস্তব অভিজ্ঞতা তোলে ধরতে পারি। আমার উদ্যোগে যখন সেন্ড মানির পরিবর্তে পেমেন্ট পদ্ধতি চালু করেছি আমাদের অনেক ক্রেতারা তখন পেমেন্ট পদ্ধতিতে অভ্যস্ত ছিল না। যেহেতু আমরা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ক্যাশ ব্যাক সুবিধা নিয়েছিলাম তাই চেয়েছি আমাদের সকল ক্রেতারা এই সুবিধা ভোগ করুক এবং পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়। এতে করে তাদের অতিরিক্ত চার্জ কাটা থেকে মুক্তি পাবে এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তখন লক্ষ্য করেছি অনেকেই পেমেন্ট করতে পারছেন না। অর্থাৎ পেমেন্ট করা নিয়ে তাদের কোন অভিজ্ঞতা নেই। তাই ক্রেতাদের জন্য ভিডিও তৈরি করলাম, আবার কাউকে প্রতিটা ধাপ মেসেজের মাধ্যমে বলে দিয়ে পেমেন্ট করার অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দিয়েছি। এর ফলে কিছু মানুষ নতুন করে পেমেন্ট পদ্ধতিতে দক্ষতা অর্জন করলো এবং পরবর্তীতে সবসময় নিজেরাই পেমেন্ট করতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ কারো সাহায্য ছাড়াই পেমেন্ট করতে পেরেছে। এইভাবে নানাভাবে ভোক্তাদের স্মার্ট করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে ই-কমার্স উদ্যোক্তারা।
দেশের ই-কমার্স খাতের অধিকাংশ অর্ডার (ক্রয়াদেশ) নিষ্পত্তি হয়ে থাকে ফেসবুক, মেসেঞ্জার বা হোয়াটস্যাপের মাধ্যমে। এভাবেই বাড়ছে দেশে অনলাইন কেনাকাটার পরিমাণ। এটি ডিজিটাল সেবার অন্তর্ভুক্ত একটি পরিষেবা। কেনাকাটার এই পদ্ধতিতে ক্রেতাদের আস্তে আস্তে অটোমেশন পদ্ধতির দিকে এগিয়ে নিতে পারেন ই-কমার্স উদ্যোক্তারা। অর্থাৎ তাদের ব্র্যান্ডিং ও ক্রেতার সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে ওয়েবসাইটের দিকে ক্রেতার এগিয়ে নিয়ে যাবে যেন ক্রেতারা নিজের মোবাইল থেকে পণ্য নির্বাচন, অর্ডার ও পেমেন্ট নিশ্চিত করা সহ সবকিছু অটোমেশনের মাধ্যমে পেয়ে থাকে। এতে করে উভয় পক্ষের সময় অপচয় রোধ করার পাশাপাশি স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। একই সাথে ই-কমার্স উদ্যোক্তারা পণ্য উৎপাদনকারী, সরবরাহকারীদের স্মার্ট করা সহ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে। যা সামগ্রিকভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি ও স্লোগানকে সমৃদ্ধ করবে।
লেখক: জেনিস ফারজানা তানিয়া, স্বত্বাধিকারি: আলিয়া’স কালেকশন।