পাট কে বিশ্ববাসী সেভাবেই গ্রহণ করেছিল যেভাবে মসলিন কে করেছিল। বাংলার মসলিন, বাংলার পাট যেন বাংলাদেশের আলাদা পরিচয় তৈরি করেছিল বিশ্বদরবারে। তবে বলাবাহুল্য যে, পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত জাতের এবং গুণগত মানসম্পন্ন পাট বাংলাদশে উৎপাদিত হওয়া সত্বেও এর ব্যবহার ছিল খুবই সীমাবদ্ধ। বস্তা, দড়ি, চট, বাজারের ব্যাগ এর মতো সস্তা কিছু পণ্যের জন্য ই পাটকে ব্যবহার করা হতো।
এমনকি তখনকার সময়ে বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট ই রপ্তানি হতো বেশি। খুব বেশি দূরে নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকালেই ভিন্ন চিত্র চোখে পরে। তুলনামূলক কম উন্নত জাতের পাট উৎপাদন করেও ভারত বিভিন্ন পাটপণ্য রপ্তানি করে থাকে। এমনকি বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট আমদানি করে তা থেকে উন্নত প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করছে আর তা রপ্তানি করে বিশ্বে সুনাম অর্জন করছে।
দেশ ভাগ, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিভিন্ন ধরনের অরাজকতা ও বৈশ্বিক কারণে বাংলাদেশের পাট-শিল্পের বিকাশ ঘটতে পারে নি। বাংলাদেশের পাটের ব্যবহার সস্তা কিছু পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে ই আটকে ছিল। ফলে রপ্তানি ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পরে পাট ও পাটজাত পণ্য।
সোনালি আঁশ পাটের হারিয়ে যাওয়া সোনালি অতীত ধীরে হলেও ফিরে আসছে। বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে পাটের নতুন নতুন ব্যবহার সম্পর্কে জানা যাচ্ছে এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় পাট বাংলাদেশের রপ্তানি সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। এক বক্তব্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক পাটকে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিকারক পণ্য হিসেবে গড়ে তোলার আশা ব্যক্ত করেছেন।
একসময়ের বস্তা, ছালা, দড়ি, চট, বাজারের ব্যাগ এর মতো সস্তার ব্যবহারের পাটই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে বিশ্বের নামী দামী গাড়ি কোম্পানির বিভিন্ন পার্টস তৈরীতে। বিএমডব্লিউর সর্বাধুনিক আই – থ্রি মডেলের ইলেকট্রিক গাড়ির ভিতরের বাক্স, বডি ও অন্যান্য কাঁচামাল তৈরীর উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে পাট। আর তা সবই রপ্তানি করা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে।
কুয়েট এর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের “কিলোফ্লাইট আলফা” টিম ৩ বছরের চেষ্টায় পাটের আঁশ দিয়ে তৈরি করেছেন “ফর্মুলা স্টুডেন্ট” নামক রেসিং কার। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ফর্মুলা ওয়ান কারের আদলে তৈরি এ রেসিং কারটি ঘণ্টায় ১৬২ কিলোমিটার বেগে চলতে সক্ষম। ২০১৮ সালে শুরু করে ২০২১ সালের জুলাই মাসে শেষ হওয়া এই রেসিং কারটি যুক্তরাজ্যের একটা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। গত কয়েকবছরে টিম “কিলোফ্লাইট আলফা” বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্ট ও প্রদর্শনীতে অংশ নেয় “ফর্মুলা স্টুডেন্ট” নিয়ে।
বিভিন্ন সড়ক ও বাঁধ নির্মাণে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে রাবার ও পাট মিশ্রিত এক ধরনের কাপড়। এর ফলে ঐসব কাঠামোর স্থায়িত্ব কাল বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঐ কাপড়টির নাম জুটেক্স যা বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি পাটকলে তৈরী হচ্ছে।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্যোগে পাট ও ভেড়ার লোম দিয়ে এক ধরনের কম্বল তৈরির চেষ্টা সফল। খুব দ্রুত ই হয়তো এটা বাজারজাত করার উপযোগী হবে বলে বলেছেন দুই সংস্থার বিজ্ঞানীরা। পাটের গাছের বাকল থেকে দেশীয় ভিসকস শাল তৈরির প্রসেসটাও চলমান।
একটা সময় যে পাট থেকে সস্তা বস্তা উৎপাদন হতো সেই পাট থেকেই এখন তৈরি হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন নতুন পণ্য। যা হয়তো আমাদের তাক লাগিয়ে দিতে পারে।
আচ্ছা, ঘরের চালের বৃষ্টির শব্দ ভালো লাগে? ঘরের চালে তো ঢেউ টিন ব্যবহৃত হয় তাই না ? শুধু ঘরের চালে কেন ঢেউটিনের রয়েছে নানাবিধ ব্যবহার। যদি বলি ঢেউ টিন তৈরি হচ্ছে পাট থেকে। তাহলে কি বিশ্বাসযোগ্য হবে? আসলে প্রথম বার যখন জেনেছি আমিও অবাক বনে গিয়েছিলাম। যাই হোক, বিশ্বাস করেছি পাট থেকে বহুমুখী পণ্য তৈরির এটিও একটা।
বাংলাদেশী বিজ্ঞানী মুবারক আহমেদ খান এমনই এক আবিষ্কার দিয়ে অবাক করে দিলেন সবাইকে। তিনি পাট থেকে তৈরি করলেন ঢেউটিন। যা পরিবেশ বান্ধব।
পাট গাছের আগাগোড়া পুরোটাই কোন না কোন কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে পুরাকাল থেকে। পাটের অন্যতম একটা অংশ হলো পাটকাঠি। যা অঞ্চলভেদে নালিতা, নলখাগড়া, নলকাঠি, টাঙ্গা, টাঙ্গি সহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। পাট উৎপাদনের শুরু থেকে পাটকাঠি জ্বালানি এবং ঘর তৈরি ছাউনি বা বেড়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমনটাই দেখা যেত পাটকাঠি বিক্রি ই হতো না কৃষকের নিজের ঘরে জ্বালানি স্বরূপ রয়ে যেত। এই পাটকাঠি ই এখন সোনালি আঁশ পাটের আরেক নাম রূপার কাঠি হয়ে উঠছে তার নতুন ও ইউনিক ব্যবহারের মাধ্যমে। পাটকাঠি থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি হচ্ছে চারকোল বা পাট ছাই। আর এই ছাই থেকে তৈরি হয় কার্বন পেপার, ফটোকপির কালি, মোবাইল ফোনের ব্যাটারি, ওয়াটার পিউরিফিকেশন প্লান্ট, ফেসওয়াশ সহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী৷ শুধু তাই নয় চারকোল বা ছাই রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
পাটের ছাই বা চারকোল প্রধানত রপ্তানী হয় চীন, তাইওয়ান, ব্রাজিল, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানিসহ ইউরোপীয় দেশ গুলোতে।
পাটের নিত্য নতুন ব্যবহার মানুষ কে মুগ্ধ করে দিচ্ছে দিনে দিনে। পাটের ব্যবহার ঘরের তৈজসপত্রে কিংবা সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কোথাও কিন্তু পিছিয়ে নেই। পরিধেয় কাপড়েও লেগেছে পাটের ছোঁয়া।
পাট দিয়ে তৈরি ঘরে ব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে রয়েছে -ছিকা, শোপিস, ওয়ালম্যাট, ওয়াল হ্যাঙ্গিং, ডোর ম্যাট, ফ্লোর ম্যাট, শতরঞ্জি, কার্পেট, টেবিল ম্যাট, প্লেস ম্যাট, পর্দা, কুশন কভার, সোফা কভার, বেড কভার ইত্যাদি।
এছাড়াও পাটের রুম স্লিপার, বিভিন্ন রকম জুতা, শপিং ব্যাগ,হ্যান্ড ব্যাগ, মেয়েদের গহনা উল্লেখযোগ্য। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, বিশ্ব বিখ্যাত ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পায়ের জুতা বাংলাদেশের পাট থেকে তৈরি। এই জুতা গুলো আর কোথাও বিক্রি হয় না এবং উৎপাদনের পর সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তৎকালীন (২০২০) বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া।
পরিধেয় পোশাকের মধ্যে রয়েছে পাটের শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, কটি, গজ কাপড় দিয়ে তৈরী বিভিন্ন পণ্য ইত্যাদি।গজ কাপড়, পাটের চটে ও দড়ির বিভিন্ন ফিউশনের মাধ্যমে তৈরি বিভিন্ন পণ্যে ভ্যালু এ্যাড হচ্ছে।
এইসব পণ্যের প্রায় সবই তৈরি হয় পাটের আঁশ থেকে। বিজ্ঞানীরা পাটের আঁশ নিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকেন নি। তারা পাট গাছের অন্যান্য অংশ কে ব্যবহার করে বিভিন্ন উদ্ভাবনী তে মগ্ন হন।
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা পাটের তন্তু থেকে আবিষ্কার করেছেন এন্টিবায়োটিক। হোমিকরসিন নামক ঐ এন্টিবায়োটিক ৩ বছরের গবেষণা শেষে ২০২১ সালে সফলভাবে আবিষ্কার করতে সক্ষম হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে। পাটের তন্তুর খাজে খাজে ৫০ এরও বেশির অণুজীব বা ব্যাকরিয়া বাস করে। সেসব ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে স্টেফাইলো কক্কাস হোমিনিস নামক একটা ব্যাকটেরিয়া খুজে পাওয়া যায়, যা তার শরীর থেকে এমন কিছু তৈরি করে যাতে আবার অন্য ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। আর এই ব্যাকটেরিয়া থেকে ই গবেষণার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এন্টিবায়োটিক। যা সুপার বাগ নামক শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সক্ষম। যাদের শরীরে আর কোন এন্টিবায়োটিক কাজ করে না তাদের জন্য হোমিকরসিন এন্টিবায়োটিক টি উপযোগী।
পাটের নতুন নতুন আবিষ্কার ও ব্যবহার বেড়েই চলেছে। পাট গাছের পুরোটাই কিছু না কিছু কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাট এমন একটা গাছ যার পুরোটাই মানবজীবনের কল্যাণে কোন না কোন ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
পাটের পাতার বহুবিধ ব্যবহারের জন্য বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালান এবং তারা সফল। কোন এক সময় পাট পাতা কে মানুষ সবজি রূপেই চিনেছিল এবং তা এখনো অব্যাহত আছে। শুধু তাই নয় পাট পাতা শুধু সুস্বাদু শাক হিসেবে নয় এটা হারবাল ঔষধ হিসেবেও পরিচিত মানুষের কাছে। তিতা ও মিষ্টি পাট শাক ভেজে খাওয়ার পাশাপাশি আরও অনেক পদ্ধতি তে রান্না করে খাওয়া হয় বর্তমানে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডাল দিয়ে রান্না, পাট শাকের ভর্তা।
রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলার গ্রামীণ ঐতিহ্য বাহী খাবার হল পাট শাকের শুঁটকি বা তাদের আঞ্চলিক ভাষায় শুক্যাতি বা শুকতানি।
এই শুকতানি বা পাট শাকের শুঁটকি ভাজি, ভর্তা ও ঝোল করেও রান্না করা হয়ে থাকে। গ্রামে শুকতানি নিয়ে এখনো একটা প্রচলন আছে, খাবারের অরুচি হলে,শুকতানির ঝোল দিয়ে ভাত খেলে মুখের রুচি ফিরে আসে। শুকতানি একদম প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি ও স্বাস্থ্যসম্মত একটা খাবার। সাধারণত পাট শাক রোদে ভালো ভাবে শুকিয়ে একটু হাতের কারসাজিতে এই পাট শাকের শুঁটকি তৈরি করা হয়ে থাকে।
পাটশাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, অ্যালকালয়েড, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন, লিপিড, কার্বহাইড্রেট এবং ফলিক অ্যাসিড রয়েছে। তুলনামূলক ভাবে দেশীয় অন্যান্য শাকের তুলনায় পাটশাকে ক্যারোটিনের পরিমাণও পাওয়া যায়।
পাটের শাকের ঔষধি গুণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এটা ক্যান্সার ও টিউমর নিরোধক। এছাড়াও মুখের ঘা দূর করা, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণ, গ্যাস্ট্রিক, বাতের ব্যাথা, রাতকানা রোগের বিরুদ্ধে লড়াই সহ আরও অনেক গুণাগুণ রয়েছে পাট শাকের।
পাট শাকের স্বাদ, সহজলোভ্যতা এবং ওষধি গুণের জন্য পাটপাতার কদর এদেশে যেমন আছে, দেশের বাইরেও কম নয়। পৃথিবীতে পাটের প্রথম চাষ মিশরে হয়েছিলো বলে মনে করা হয়। মিশরের জাতীয় খাবার মুলুখিয়াহ্ মুলত পাটশাকের লাবড়া বিশেষ। আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাটের এই মিশরীয় রেসিপি এখন ব্যাপক জনপ্রিয়। ফিলিপাইনে পাটশাককে বলা হয় স্যালুওট। জাপানেও পাটশাকের বেশ কদর আছে। জাপানিরা বহুদিন থেকেই আফ্রিকা থেকে শুকনো পাটপাতা আমদানি করে আসছে। তারা এটাকে কফি ও চায়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাটশাক দিয়ে তৈরি হয় স্যুপ।
পাট পাতা থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে অর্গানিক চা। যা রপ্তানি করা হচ্ছে জার্মানিতে। পাট পাতা অর্গানিক চায়ের কারখানা ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি তে স্থাপন করা হয়।
এছাড়াও জার্মান প্রযুক্তির সহায়তায় পাট থেকে তৈরি করা হচ্ছে পলিমার ব্যাগ। যা কৃত্রিম পলি ব্যাগ বা পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পলিথিনের মতো ব্যবহার কিন্তু পরিবেশ বান্ধব। পাট পরিবেশ বান্ধব বলে কৃত্রিম পলির বদলে বিশ্ববাসীর কাছে পাটের গ্রহণযোগ্যতাও বেড়েছে অনেক বেশি।
পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এর ব্যবহার আরও বেশি বাড়াতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। পোল্ট্রি ও ফিস ফিডসহ মোট ১৯ টি পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন।
পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে বিশ্বের অধিকাংশ পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলনে পাটের ব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ব্যাগ গুলোর বেশির ভাগই যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। সুখবর হলো এগুলো তৈরি করছে আমাদের দেশের তরুণ উদ্যোক্তারা। এমনকি এগুলোর প্রাথমিক নকশাও তারাই করছে।
আমাদের জন্য সুখকর খবর হলো ব্রিটিশ রাজপুত্র চার্লসের বাসায় ব্যবহৃত হচ্ছে পাটের তৈরি আধুনিক বিলাসসামগ্রী।
স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের রাণীর হাতে পৌঁছে গিয়েছে বাংলাদেশের পাটের তৈরি বাহারি ব্যাগ।
২০১১ সালে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে ১৫,০০০ অংশগ্রহণকারীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল ব্যাগ। ঐ ব্যাগ ছিল পাটের ব্যাগ এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের ঐ পাটের ব্যাগগুলো গিয়েছিল বাংলাদেশ থেকে।
একসময় যে চটের ব্যবহার ছিল সীমাবদ্ধ সেই চট দিয়ে তৈরি হচ্ছে আকর্ষনীয়, ইউনিক ও নান্দনিক ডিজাইনের সব পণ্য। যা সমাদৃত হচ্ছে মানুষের কাছে। ফলে চাহিদাও বাড়ছে। নতুন নতুন ও তরুণ উদ্যোক্তারা তাদের ক্রিয়েটিভিটি কাজে লাগিয়ে তৈরি করছে পাটের বিভিন্ন ফিউশন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাটের চটের উপরে উলের সুতায় তৈরি বিভিন্ন ক্রসস্টিস ডিজাইন। এই ডিজাইন ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের পণ্যে ভ্যালু এ্যাড করে তৈরি হচ্ছে শাড়ি, গহনা, ব্যাগ, সহ নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য। যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে।
পরিবেশ বান্ধব বলে পাটপণ্যের চাহিদা ও ব্যবহার দুইই বাড়ছে ধীরে ধীরে। বিশ্বব্যাপি এর ব্যবহারও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো পাট শিল্পের প্রসারের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ও কৌশলের ব্যবহার হচ্ছে কম। যদিও নতুন নতুন পাটকল স্থাপিত হয়েছে এবং হচ্ছে তবুও আরও বেশি প্রচার ও প্রসারে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা উচিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাটের সাথে জড়িত সকলকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
পাটের নতুন নতুন বিভিন্ন ব্যবহার বাংলাদেশ ও বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এনে দিচ্ছে ধীরে ধীরে। তাছাড়া পাট বাংলাদেশের সম্ভাব্য জি আই পণ্য। শুধু পাট নয়, পাট থেকে তৈরি বিভিন্ন পণ্যও জি আই পাওয়ার উপযোগী বলে মনে করছি। তাই পাটের নতুন নতুন পণ্যকে ছড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের বহুমুখী পণ্য সোনালি আঁশ এবং রূপার কাঠি খ্যাত পাট।
রুমা আক্তার
স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার জুট হেভেন