দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সম্প্রতি ঘোষণা এসেছে, ১২ সেপ্টেম্বর খুলছে স্কুল ও কলেজ। এ নিয়ে অনেক অভিভাবক কীভাবে তাঁর সন্তানকে নিরাপদ রাখবেন, তা নিয়ে চিন্তিত।
স্কুল খুললেই আবার সেই জনসমাগম। যত জনসমাগম, তত সংক্রমণ। তার ওপর করোনার ডেলটা ধরন শিশুদের জন্যও সংক্রামক। করোনায় আক্রান্তের হার নিম্নমুখী হলেও তা আবার যে ঊর্ধ্বমুখী হবে না, হলফ করে বলা যায় কি! তার ওপর শিশু-কিশোরদের এখনো টিকা দেওয়া শুরু হয়নি। তাই সচেতনতাই প্রতিরোধের উপায়।
ভালো মাস্ক পড়ার বিকল্প নেই
স্কুলে যাওয়ার সময় ভালো মানের মাস্ক পরাতে হবে শিশুকে। সংক্রমণ প্রতিরোধে এটা কার্যকরী বলে বিবেচিত। কিন্তু এটা এত সোজা নয়। শিশুদের মানসিকতা ও চলাফেরায় মাস্ক একটা বাধা, ভীতি ও অস্বস্তি। দীর্ঘ সময় মাস্ক পরে থাকা তার জন্য কষ্টকরও। এটি অভ্যাসের ব্যাপার। তাই আগে থেকেই শিশুকে প্রস্তুত করতে হবে। যদি মাস্ক পরার গুরুত্ব আলোচনা না করা হয় বা মাস্কভীতি দূর না করা যায়, তাহলে শিশু মুখে-নাকে মাস্ক রাখবে না। ধমক দিয়ে হবে না, বিষয়টার গুরুত্ব অনুধাবন করাতে হবে। এখন থেকেই প্রতিদিন শিশুদের মাস্ক সম্পর্কে বলুন, মাস্ক কীভাবে পরতে হবে, না পরলে কী বিপত্তি হতে পারে, কীভাবে খুলতে হয়, তা শেখান। বাড়িতে কিছু সময়ের জন্য মাস্ক পরার অভ্যাস করুন। সবচেয়ে বড় কথা, অভিভাবকেরা নিজে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার না করলে শিশুরাও শিখবে না।
বাড়ি থেকেই শিখিয়ে দিন
শিশুরা স্কুলে যাবে, বন্ধুর পাশে বসবে, খেলার মাঠে যাবে কিন্তু কাছে আসবে না—এটা তাদের পক্ষে মেনে চলা কঠিন। এ বিষয় নিয়ে এখনই শিশুদের সঙ্গে আলোচনা করুন। কীভাবে অ্যাসেম্বলিতে দূরে দূরে দাঁড়াবে, কীভাবে ক্লাসে দূরে বসবে, টিফিন খাওয়ার সময় কী হবে—এগুলো স্কুলে শিক্ষকেরা তো দেখবেনই, বাড়ি থেকেও জানা দরকার।
হাঁচি-কাশি দেওয়ার নিয়ম রোজ শেখান। হাত ধোয়ার বিষয়টাও। বিশেষ করে সবার স্পর্শ লাগে এমন কিছু ছুঁলেই হাত ধুতে হবে। যেমন কোনো সুইচ, ডেস্ক, দরজার হাতল ইত্যাদি। এগুলো অভ্যাসের ব্যাপার। এক দিনে হয় না। তাই আজ থেকেই শুরু করুন।
শিশুদের বোঝাতে হবে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে বন্ধুকে জড়িয়ে ধরা যাবে না, করমর্দন বা হ্যান্ডশেক করা যাবে না, হাতাহাতি তো নয়ই। একটু দূরে বসেই গল্প করতে হবে। খেলার সময়ও তা-ই। নিজেদের ভালোর জন্যই এসব করতে হচ্ছে।
সঙ্গে যা রাখা ভালো
স্কুল ব্যাগে টিস্যু পেপার বা পরিষ্কার রুমাল, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ছোট বোতল তো দেবেনই। টিফিন বক্স বা পানির বোতল যে অন্যের সঙ্গে এখন ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা যাবে না, তা-ও বলুন। এমনকি কলম, পেনসিল, রং পেনসিলও না। শিশুর ব্যাগে পলিথিন প্যাকেটে অতিরিক্ত মাস্ক দিতে হবে। কেননা তারা খাওয়ার সময় মাস্ক খুলতে গিয়ে ময়লা করতে পারে, কখনো মাস্ক নিচে পরে যেতে পারে। একবার ব্যবহৃত ময়লা মাস্ক আবার পরা যাবে না, তা বুঝিয়ে বলুন।
আরও যেসব বিষয় মানতে হবে
স্কুল থেকে ফেরার পর স্কুলের জামাকাপড়, ব্যাগ, টিফিন বক্স, বোতল সবই ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। শিশুকে ভালো করে গোসল করিয়ে নিতে হবে। স্কুলে পরে যাওয়া জুতা ঘরে ঢোকানো যাবে না।
শিশু অসুস্থ হলে কিছুতেই স্কুলে নিয়ে যাবেন না। অভিভাবকেরা অনেক সময় উপস্থিতি কাটা যাওয়া বা পরীক্ষা দিতে না পারার ভয়ে অসুস্থ শিশুকেও স্কুলে যেতে বাধ্য করেন। এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ সাহায্য করবে, যেমন অসুস্থ শিশুটিকে পরীক্ষা না দিয়েও কীভাবে নম্বর দেওয়া যায় বা তার পরীক্ষা বিশেষভাবে পরে বা অনলাইনে নেওয়া যায়, সেই বিকল্প বের করবেন।
কোনো শিশু স্কুলে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত আইসোলেশনে নিতে হবে। প্রতিটি স্কুলে সিক রুম বা আলাদা আইসোলেশন রুম থাকা বাঞ্ছনীয়।
স্কুল খোলার সঙ্গে সঙ্গে অতি উৎসাহে শিশুর ওপর পড়াশোনার প্রচণ্ড চাপ চাপিয়ে দে বেন না। দীর্ঘদিনের অনভ্যস্ততা কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে সময় দিন। করোনাকালীন পড়াশোনার ঘাটতি পূরণ করার চেয়ে এই মুহূর্তে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিশুকে আবার স্কুলের পরিবেশে ফিরিয়ে আনা ও এই পরিস্থিতি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
- সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর স্কুল-কলেজ খোলার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে কিছু বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে। সেগুলো হলো—
তাপমাত্রা পরীক্ষা করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রবেশের ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা
ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকসহ প্রত্যেকের মাস্ক ব্যবহার করা
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা