অল্প টিউশন ফি এবং ১৪০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে গুগলের সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে গুগলের এই ক্যারিয়ার সার্টিফিকেট প্রযুক্তি খাতে চাকরির সমূহ সম্ভাবনা তৈরি করবে।
যেকোনো তথ্যের জন্য বর্তমান যুগে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো গুগল। এবার এই টেক প্রতিষ্ঠানটিই কলেজের গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থার খোলনলচে পাল্টে দিতে যাচ্ছে। মাত্র কিছুদিন আগেই ১০০ মিলিয়ন ডলারের ‘গুগল ক্যারিয়ার সার্টিফিকেট ফান্ড’ ঘোষণা করেছেন গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই। কলেজের ধরাবাঁধা শিক্ষার পরিবর্তে ডেটা বিশ্লেষণ, তথ্যপ্রযুক্তি, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, ইউএক্স ডিজাইন ইত্যাদি হবে এর মূল লক্ষ্য। এককথায় বলতে গেলে, প্রযুক্তি খাতে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে গুগলের এই উদ্যোগ।
দীর্ঘদিন যাবত দেশজুড়ে কোডিং বুটক্যাম্প এবং ইউডেমি বা কোর্সেরার মতো অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার পর এই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে গুগল।
তাই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথাগত শিক্ষার বিকল্প হবে গুগল ক্যারিয়ার সার্টিফিকেট? এর গুরুত্বই বা কতখানি?
গুগলের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞ ও লেখকেরা । কন্টেন্ট মার্কেটার ও লেখক জেফ স্টিন বলেন, “আমি উচ্চশিক্ষাকে একেবারেই নাকচ করে দিচ্ছি না। কিন্তু কলেজ ডিগ্রি নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের যে ব্যয়ভার বহন করতে হয়, সেদিকে একটু মনোযোগ দেওয়া উচিৎ।”
ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট সূত্র বলছে, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে র্যাংকিংয়ে থাকা পাবলিক কলেজগুলোতে পড়তে চাইলে গড়ে বার্ষিক ব্যয় ১০,০০০ ডলার। বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই খরচ ২৩,০০০ ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। আর বেসরকারি কলেজগুলোতে পড়ার বার্ষিক ব্যয় প্রায় ৩৮,০০০ ডলার।
সাড়ে চার বছরের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি নিতে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ডলার থেকে ১ লাখ ৭১ হাজার ডলারে। অন্যদিকে, চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় প্রাথমিক বেতন ধরা হয় ৫০ হাজার ডলার, যার সিংহভাগই চলে যায় থাকা-খাওয়াসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পেছনে। এছাড়া, ছাত্রাবস্থায় নেওয়া ঋণ পরিশোধের ব্যাপার তো আছেই। তাই অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ খুব একটা থাকে না।
কিন্তু গুগল বলছে, তাদের পেশাদার সার্টিফিকেটের আওতায় কোর্স প্রতি ২৩০ ডলারের বেশি প্রয়োজন হবে না এবং প্রযুক্তি দুনিয়ায় এই সনদের গুরুত্ব অনেক বেশি। অনেক শিক্ষার্থীই গুগলের এই প্রোগ্রামে ভর্তি হতে দ্বিধা করবে না। তবে কারো কারো মতে, আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির বিকল্প হিসেবে নয়, বরং ডিগ্রিকে জোরদার করতে শিক্ষার্থীদের এই সার্টিফিকেট নেওয়া উচিত। অল্প টিউশন ফি এবং ১৪০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে গুগলের সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে এটি প্রযুক্তি খাতে চাকরির সমূহ সম্ভাবনা তৈরি করবে।
তাহলে কি এটি আন্ডারগ্র্যাডের পাশাপাশি নিজের প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে শাণিত করার একটি উপায়? না, তা নয়। কারণ প্রযুক্তি খাতের প্রচুর কোম্পানির কাছে ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকা অত্যাবশ্যক নয়। কেন? উত্তর দিয়েছেন আইবিএম এর ‘ট্যালেন্ট’ শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট জোয়ানা ডালি। কয়েক বছর আগে সিএনবিসি-কে তিনি বলেছিলেন, “প্রতিষ্ঠানগুলো আসলে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সরাসরি অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের নিয়োগ দিতে বেশি আগ্রহী।”
শুধু ডালি একাই নন, বিজনেস ম্যাগনেট ইলন মাস্কও বলেছেন, তার প্রতিষ্ঠান টেসলাতে কাজ করতে কারো কলেজ ডিগ্রি থাকা অত্যাবশ্যক না। বরং তিনি দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী চান, যাদের আগেপরে প্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন অর্জন রয়েছে। এছাড়াও, রেস্টুরেন্ট ব্র্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, নিত্যনতুন বিষয় শিখতে ইচ্ছুক ও পারদর্শী ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতেই তারা বেশি আগ্রহী।
শিক্ষার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো দুটি ভূমিকা রাখতে পারে। প্রথমটি হলো, কর্মী নিয়োগ কৌশল পরিবর্তন করা। টাকার অভাবে কলেজের ডিগ্রি নিতে পারছে না কিন্তু প্রতিভাবান, এমন মানুষদের জন্য চাকরির দরজা খুলে দিতে হবে।
কিন্তু আপনি নিজেও শিক্ষা কাঠামোকে ভিন্নভাবে গড়ে তুলতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই যদি দক্ষতা ও সম্পদ থাকে, তাহলে মালিক হিসেবে আপনি প্রতিভাবান তরুণদের প্রশিক্ষণ ও উন্নতির সুযোগ করে দিতে পারেন। আপনি যদি তাদের প্রাথমিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের ভিত্তি গড়ে দেন, তাহলে একদল বিশ্বস্ত ও অনুগত কর্মীও পাবেন। তারাই আপনার প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে পরিশ্রম করবে।
তাই এখনই সময় প্রতিভাবানদের জন্য কাজের ভিত্তি তৈরি করার। ছোটখাটো সেমিনার, ল্যাব ও মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শুরু করুন। সমন্বিত প্রোগ্রামের আয়োজন করুন যেখানে গুরুত্বপূর্ণ খাতে দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে। সেই সাথে যারা শিখতে চায়, অতীত অর্জনের রেকর্ড আছে এবং সাফল্যের জন্য উন্মুখ, তাদের জন্যও দরজা খোলা রাখুন।
পড়ালেখার ব্যয় মেটাতে গিয়ে ঋণের দায়ে জর্জরিত নয়, বরং নিজ দক্ষতা দিয়ে ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়াই মুখ্য। তাই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কোর্স যাই হোক না কেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর সদিচ্ছাই পারবে প্রতিভাবান প্রজন্মের ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখতে।