অনেক বছর ধরে যে সার্চ ইঞ্জিন থেকে নানা তথ্য নিচ্ছি, সেই গুগলে চাকরি! বিষয়টা নিশ্চয়ই স্বপ্নের মতো। আমি সম্প্রতি গুগল সিঙ্গাপুরের ইউটিউবে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেছি। ইউটিউবের জন্য বাংলাদেশি কনটেন্ট সৃষ্টি ও গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমের কৌশল নিয়েই আমার কাজ।
যেখান থেকে শুরু
আমার জন্ম ফরিদপুরে। পড়াশোনা নীলফামারীর সৈয়দপুরে। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিই লায়ন্স হাইস্কুল থেকে আর উচ্চমাধ্যমিক সৈয়দপুর সরকারি টেকনিক্যাল কলেজ। শৈশব-কৈশোর শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ থেকে মার্কেটিংয়ে স্নাতক করি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রি নিই। এমবিএ পড়ার সময় স্থানীয় একটি ব্যাংকে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার হিসেবে কাজ করেছি। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার হিসেবে কাজ বেশ চ্যালেঞ্জিং। অনেক কিছু শেখার সুযোগ থাকে, অনেক বিষয়ে তরুণ কর্মী হিসেবে হাতে–কলমে কাজ শিখতে হয়।
ব্যাংকিং খাতে কাজ করতে করতে ঠিক এক বছরের মাথায় বুঝতে পারি, সৃজনশীল কাজে আমার আগ্রহ আছে। সৃজনশীল কাজের সুযোগ নিতে একটি টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার হিসেবে যোগ দিই। বিভিন্ন বিভাগে কাজের সুযোগ পেয়েছি। ডিজিটাল টিমে কাজের মাধ্যমে সৃজনশীল বিভিন্ন পণ্য ও সেবা উপস্থাপনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। যেহেতু প্রযুক্তি নিয়ে বড় কাজের সুযোগ হয়েছে, তাই আরও বড় কাজ করার আগ্রহ হচ্ছিল।
এরপর একটি ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের জন্য কাজ করেছি। ডাক্তার ভাইসহ কয়েকটি স্বাস্থ্যবিষয়ক প্ল্যাটফর্মেও যুক্ত থেকেছি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডিজিটাল লিটারেসি নিয়ে কাজ করেছি। গুগল, ফেসবুকসহ বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং হয় একটু একটু করে। নেটওয়ার্কিংয়ের দক্ষতা কাজে লাগিয়েই এ বছর সেপ্টেম্বরে যোগ দিই গুগলের সিঙ্গাপুর অফিসে।
গুগলে চাকরির ধাপ
গুগলে চাকরির ধাপ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আলাদা। বিশ্বখ্যাত এই টেক জায়ান্টের ক্যারিয়ার পোর্টালে বিভিন্ন নিয়োগের খোঁজ পাওয়া যায়।
স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার ম্যানেজার পদে নিয়োগের জন্য গুগলের মানবসম্পদ বিভাগ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে ছয়টি সাক্ষাৎকার পর্বে অংশ নিতে হয়েছে। নানা ধাপের পর নিয়োগপত্র পেয়েছি। গুগলের মূল্যায়নপ্রক্রিয়া অনেক আলাদা। এখানে আমাকে কোনো তাত্ত্বিক প্রশ্ন কখনোই করা হয়নি। বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেস বা ঘটনা বিশ্লেষণ করে আমার ভাবনা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে আমার কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন তাঁরা।
সহকর্মী হতে কতটা প্রস্তুত, দলের সদস্য হিসেবে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে পারব কি না, আমার কী ধরনের ‘সফট স্কিল’ আছে, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা আছে কি না, এসবই ছিল নিয়োগকর্তাদের বিবেচ্য। বাংলায় কেমন লিখতে পারি, সে পরীক্ষাও আমাকে দিতে হয়েছে।
সবশেষে পরিচালক পদমর্যাদার একজন আমার মুখোমুখি হয়েছিলেন। পদ বা কাজের প্রকৃতিভেদে নিয়োগের ভিন্ন ভিন্ন ধাপ থাকে।
নেটওয়ার্কিং গুরুত্বপূর্ণ
গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজের আগ্রহ তৈরি করেছি ভিন্ন ভিন্ন নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কী করছেন, কী ধরনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন, লিংকডইন-ফেসবুক ঘেঁটে জানার চেষ্টা করেছি। বুঝতে পেরেছি, নেটওয়ার্ক তৈরি ও সংযুক্তির মাধ্যমে নিজের দুর্বলতাগুলো জানা যায়।
সিভি তৈরি করতে হবে নিজের মতো
অনেকেই সাধারণ সিভি সব জায়গায় দিয়ে চাকরির চেষ্টা করেন। গুগল বা মেটার মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য যে পদে চাকরির চেষ্টা করবেন, সেই পদ বুঝে সিভি তৈরি করতে হবে। কোনোভাবে কাট-কপি-পেস্ট করে বা পুরোনো সিভি জমা দেওয়া যাবে না।