ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষার্থীকে লালন শাহ হলের বৈধ সিটে থাকতে না দেয়ার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। সেই শিক্ষার্থীর নাম মাহাদী হাসান। সে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ও লালন শাহ হলের ৪২৮ নং কক্ষের আবাসিক ছাত্র।
এ ঘটনায় শনিবার (২ এপ্রিল) হল প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয় ভুক্তভোগী। পরেরদিন সোমবার (৩ এপ্রিল) বৈধ সিটে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম ওই ভুক্তভোগীকে ক্যাম্পাসে ডাকেন। প্রভোস্টের ডাকে সাড়া দিয়ে ভুক্তভোগী ক্যাম্পাসে এসে উঠলেও নিরাপত্তা সংকটে ভুগছে।
ওই শিক্ষার্থী নিরাপত্তার জন্য প্রভোস্টের নিকট লিখিত চাইলে নিরাপত্তার বিষয়টি এড়িয়ে যায় হল প্রভোস্ট এবং তাকে বলে তোমার জন্য কি লোক রাখা লাগবে? এ কথায় শুনিয়েছেন প্রভোস্ট বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীর।
ভুক্তভোগী মাহাদী হাসান বলেন,”আমি প্রভোস্টের ডাকে সিটে উঠার জন্য ক্যাম্পাসে গেলে প্রভোস্ট আমাকে বলেন এই ছোট ব্যাপারটা এত বড় করা তোমার জন্য ঠিক হয়নি। তুমি চাইলে বসে মীমাংসা করতে পারতে। তোমার সিট দরকার আমি তোমাকে সিট দিচ্ছি। তখন আমি প্রভোস্টের নিকট সিটের পাশাপাশি নিরাপত্তা চাইলে তিনি আমাকে বলেন, তোমার জন্য কি একটা লোক রাখা লাগবে? তখন আমি তাকে বলি আমি তো সেটা চাচ্ছি না। সকল স্টুডেন্ট যেমন স্বাভাবিক চলাফেরা করে আমিও সেভাবে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে চাই”।
ভুক্তভোগী আরো বলেন, পরে ঘটনাস্থলে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমি কোন সংগঠনের সাথে জড়িত কিনা। এ বিষয়ে জানার জন্য আমাকে সাইডে নিয়ে আমার ফোন কেড়ে নেয় এবং ফোনের টাইমলাইন চেক করেন তারা। এবং আমাকে বলেন তুই যে নিজেকে ছাত্রলীগ দাবি করিস তাহলে ১৭ মার্চ ও ২৬ মার্চ গেলো কিন্তু তোর আইডিতে পোস্ট কই। তারা পরোক্ষভাবে আমাকে প্রমাণ করার চেষ্টা করে আমি অন্য কোন সংগঠনের সাথে জড়িত। তাদের অপরাধের প্রতিবাদ করতে গেলে অন্য দলের ট্যাগ লাগাতে চায় তারা।
এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, “প্রক্টরিয়াল বডি এবং শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের উপস্থিতিতে ঐ শিক্ষার্থীকে তার বৈধ সিটে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। উঠিয়ে দেয়ার পর তার কোন অসুবিধা হলে আমাকে জানাতে বলেছি এবং তখন প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানিয়েছি। কিন্তু সে লিখিতভাবে নিরাপত্তার বিষয়ে আবদার করে, কিন্তু একজন প্রভোস্ট হিসেবে আগে থেকে তো লিখিতভাবে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে পারি না। অথবা তার নিরাপত্তার জন্য তো কোন সিকিউরিটি গার্ড রাখতে পারিনা।
ওই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার জন্য প্রক্টর বা ছাত্র উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রক্টরকে জানানো হয়েছে বলেই তো সেখানে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে এক টিভি চ্যানেলে শিক্ষার্থীর অভিযোগের কথা ভিত্তিহীন বলে জানান হল প্রভোস্ট। ভিত্তিহীনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর আগে ঐ শিক্ষার্থী যে কক্ষে ছিলো সেখানে তো অবৈধভাবে ছিলো। কিন্তু কেনো এতোদিন ঐ শিক্ষার্থী অবৈধভাবে হলে থাকলো! একি প্রভোস্টের অবহেলা নাকি ব্যর্থতা জানাতে চাইলে হল প্রভোস্ট কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।”
প্রসঙ্গত, ভুক্তভোগী মাহাদী হাসান লালন শাহ্ হলের ৪২৮ নং কক্ষের আবাসিক ছাত্র। সে ওই কক্ষে থাকার জন্য তার জিনিসপত্র রেখে আসলে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাকে ডেকে পাঠায়। পরে সে দ্রুত সেখানে যায়। এরপর ছাত্রলীগের কর্মীরা তাকে ধমক দিয়ে তার আবাসিক কক্ষ (৪২৮ নং) থেকে জিনিসপত্র বাইরে ছুড়ে ফেলে। এবং তাকে ওই জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বলা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। এই ঘটনায় অভিযুক্তরা সকলেই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী বলে জানা গেছে।