ময়মনসিংহের শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কেকের চর ইউনিয়নের ভাটি লঙ্গরপাড়ার দুই দরিদ্র পরিবারের সন্তান শামীম ও আল আমিন। ৪১তম বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন মেধাবী এ দুই যুবক।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ৪১তম বিসিএসের ফল প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। দারিদ্র্য আর নানা প্রতিকুলতা পার করে অনেক অদম্য মেধাবীরাই সুযোগ পেয়েছেন এবারের বিসিএস নিয়োগের সুপারিশে।
এমনই দুই যুবকের গল্প শোনাব আজ। শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কেকের চর ইউনিয়নের ভাটি লঙ্গরপাড়ার দুই দরিদ্র পরিবারের সন্তান শামীম ও আল আমিন। ৪১তম বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন মেধাবী এ দুই যুবক।
শ্রীবরদী উপজেলার কেকের চর ইউনিয়নের ভাটি লঙ্গরপাড়া গ্রামের প্রান্তিক বর্গাচাষি আব্দুল কুদ্দুস ও হোসনে আরা দম্পতির ছেলে শামীম মিয়া। পরিবারের অবস্থা দেখে বুঝার উপায় নেই, সদ্য ঘোষিত ৪১তম বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন এই পরিবারের বড় ছেলে শামীম। টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি তাদের ঘর। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে ছেলেদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন আব্দুল কুদ্দুস। কষ্ট একদিন ঘুচে যাবে বলে স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। অবশেষে সেই স্বপ্ন পুরণ হয়েছে। এখন তিনি বিসিএস ক্যাডারের বাবা।
শামীম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃষি বিভাগে উত্তীর্ণ হন। শামীমের বাবা কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। আমাদের ছোট সংসার। খুব কষ্ট করে বড় ছেলে শামীমসহ তিন ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছি। আমার ছেলে বিসিএস চান্স পাইছে। আমার দেহডা আল্লাহ শান্তি করে দিছে।’
মা হোসনে আরা জানান, ছেলের সফলতায় খুব খুশি তিনি।
বিসিএস ক্যাডার শামীম বলেন, ‘অনেক প্রতিকুলতা-বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করেই আজকের এ সাফল্যে পেয়েছি। আমার এ সাফল্যের পেছনে আসল কারিগর আমার বাবা-মা। আমার সাফল্যের কৃতিত্ব তাদেরকেই দিতে চাই।’
একই এলাকার দিনমজুর বকুল আহমেদ ও মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের সন্তান আল আমিন। নানা প্রতিকুল পরিবেশে লেখাপড়া করে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে নিয়েছেন তিনি; লড়ে গেছেন নিজের জীবন সংগ্রাম।
আল আমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ৪১তম বিসিএসে অংশ নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন তিনি।
আল আমিনের বাবা বকুল বলেন, ‘আমার ছেলে খুব কষ্ট করেছে, বিসিএসে টিকেছে। আমি তার জন্য খুব খুশি।’
বিসিএস ক্যাডার আল আমীন বলেন, ‘এ দীর্ঘ পথযাত্রায় আমি অনেক মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ ও চিরঋণী। পরিবারের পাশাপাশি অনেক মানুষ আমাকে সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।’
একই গ্রামের অতি দরিদ্র পরিবারের দুই জনের এমন সাফল্যে খুশি স্থানীয়রাও।