বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রাজধানীর পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) এটির আয়োজন করা হয়। এবারের সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে ইউএপির বিভিন্ন ব্যাচের ৫ হাজার ৯৭৭ শিক্ষার্থী সনদ পেয়েছেন। এর মধ্যে স্নাতক ৪ হাজার ২১৬ জন এবং স্নাতকোত্তরের ১ হাজার ৭৬১ জন সনদ পেয়েছেন। অসাধারণ ফল অর্জনের জন্য নয়জনকে আচার্য গোল্ড মেডেল এবং ৫৫ জনকে উপাচার্য গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়।
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের আচার্য রাষ্ট্রপতির পক্ষে সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনাকালে শিক্ষাকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। শিক্ষা এখন আর মুষ্টিমেয় তথাকথিত কিছু অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে কুক্ষিগত নয়। তার শাসনামলে বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার দ্বারও এখন দেশব্যাপী উন্মুক্ত।’
তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার ধারণা ও পদ্ধতির প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমানে পৃথিবী চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের যুগ অতিক্রম করছে। আগের যেকোনো বিপ্লবের তুলনায় চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের গতি দ্রুততম ও এর বিস্তৃতি ব্যাপক। এ রকম পরিস্থিতিতে শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন সময়ের সঙ্গে অভিযোজন জরুরি। সরকার এ বিষয়টি সামনে রেখে শিক্ষা পদ্ধতিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা এবং কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে।’
সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-স্যাম্পেইনের এডওয়ার্ড উইলিয়াম এবং জেন মার গুটসেল অধ্যাপক মো. তাহের আবু সাইফ। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাজীবনে তোমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রের মৌলিক ধারণা ও মূলনীতি শিখেছ এবং বৈশ্বিক কর্মশক্তিতে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করেছ। আশা করি দৃঢ় ও নৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে বাংলাদেশ ও বিশ্বের আর্থসামাজিক সমস্যা সমাধানে তোমরা অবদান রাখতে পারবে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত নতুন জ্ঞান অর্জন করে যেতে হবে। তবে যা-ই করো না কেন তা পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ দিয়ে করবে, যাতে তুমি সেখানে সেরা হতে পারো।’
পরিবর্তনশীল বিশ্বের দিকে অগ্রগামী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক আবু সাইফ বলেন, ‘শুধু একজন প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী বা চাকরিজীবী হয়ে স্থির থেকো না। তোমার চারপাশে উন্মোচিত বিশ্ব সম্পর্কে সচেতন হও। অল্প বয়সে তোমরা তাজা চোখ এবং নির্ভীক মন নিয়ে বিশ্বকে দেখতে পারবে। তোমরাই এ সময়ের বিবেক। তোমরাই আরো ন্যায়সংগত এবং ন্যায্য একটি বিশ্ব গড়তে পারো।’
সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করতে হবে। তাদের এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে তারা নেতৃত্ব দিতে পারে। আত্মকেন্দ্রিকতা বাদ দিয়ে একসঙ্গে চলার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান বলেন, ‘ইউএপি বিশ্বাস করে তোমরা কেবল পেশাগতভাবেই সাফল্য অর্জন করবে না, বরং তোমাদের অবদান আর প্রজ্ঞার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোকিত করার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবে। তোমাদেরই আগামী দিনের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। তাই ন্যায়, নৈতিকতা ও দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে একটি আদর্শ সমাজ গঠনে তোমাদের আত্মপ্রত্যয়ী হতে হবে।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারপারসন স্থপতি মাহবুবা হকসহ আরো অনেকে।