২০২০ সালে ৩৮তম বিসিএসে ২ হাজার ২০৪ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এর মধ্যে বিল মারুফ বিন বারিক একজন। পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন তিনি। যেহেতু পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন, তাই গেজেট থেকে নাম বাদ পড়তে পারে এটাও কখনো ভাবেননি। ২০২১ সালে যখন গেজেট প্রকাশ করা হয়, তখন গেজেটে নাম না দেখে বিশ্বাসই হচ্ছিল না মারুফের।
বিল মারুফ বিন বারিক বলেন, ‘গেজেটে নাম না দেখে খুব হতাশ হয়েছিলাম। কেন বাদ পড়লাম, সেটা জানার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পুলিশ বিভাগ ও প্রশাসন—সব জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করেছি। কিন্তু বাদ পড়ার সঠিক কারণ জানতে পারিনি। তবে ধারণা করি, আমার বাবা একজন রাজনীতি–সচেতন মানুষ। তিনি নওগাঁ বিসিক শিল্পনগরীর মালিক সমিতির সভাপতি হিসেবে আছেন। উনি নির্ভীক ও সত্যবাদী একজন মানুষ হিসেবে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতেন। এ বিষয়টাকে তৎকালীন প্রশাসন হয়তো সরকার বিরোধিতা হিসেবে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনে তুলে ধরেছিল।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন বিল মারুফ বিন বারিক। ৩৮তম বিসিএস ছিল তাঁর দ্বিতীয় বিসিএস।
মারুফ বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে যেদিন আমার গেজেট প্রকাশিত হয়, সেদিন আমি অফিসে ছিলাম। তখন আমি সিরাজগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল বাঘাবাড়ীর বিদ্যুৎকেন্দ্রে চাকরি করতাম। গেজেটে নাম না দেখে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। ওই মুহূর্তে আমি বাঘাবাড়ীতে থাকায় সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় এসে যোগাযোগ করা সম্ভব ছিল না। দুই দিন পরে ঢাকায় এসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করি, কিন্তু কোথাও কোনো উত্তর পাইনি।’
এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন মারুফ। আবেদনেও কাজ হয়নি। পরবর্তী সময়ে এমন প্রার্থী যাঁরা গেজেটভুক্ত হননি, তাঁরা মিলে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেছিলেন, কিন্তু চূড়ান্ত কোনো সমাধান আসেনি। কয়েক বছর ঘুরেও কোনো সমাধান না পেয়ে পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগদানের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন মারুফ।
বিল মারুফ বিন বারিক বলেন, ‘আমরা যাঁরা বিভিন্ন বিসিএসে গেজেট থেকে বাদ পড়েছিলাম, আগস্টে নতুন সরকার গঠন হওয়ার পর সবাই মিলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করি। এখন যেহেতু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে নতুন সরকার এসেছে, তাই আমরা সরকারের কাছে আমাদের বৈষম্যের বিষয় তুলে ধরেছিলাম। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দ্রুত আমাদের আবেদন গ্রহণ করে গেজেটের প্রজ্ঞাপনি জারি করে। অবশেষে দীর্ঘদিনের অপেক্ষা ও বৈষম্যের অবসান হলো। এখন পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগদানের অপেক্ষায় আছি।’