ময়মনসিংহের বিখ্যাত মিষ্টি বলতেই সবাই “মুক্তাগাছার মণ্ডা” র কথা জানি। তবে বাংলাদেশের আরও একটা বিখ্যাত মিষ্টির জন্মস্থান আমাদের ময়মনসিংহে। সুস্বাদু এই মিষ্টিকেই বলা হয় “মালাইকারী”। অনেকে বলে থাকে- যদি মিষ্টি খেতে চাও তবে মালাইকারি মিষ্টি খাও।
কারন বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ আর রসের কম্বিনেশনে এক কথায় অতুলনীয় এই মিষ্টি দেখেই যে আপনি লোভ সংবরণ করতে পারবেন না, এটা অনেকটাই সুনিশ্চিত।
এই মালাইকারীর জন্ম হয়েছিল ময়মনসিংহের সুধির ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারে। এর মালিক সুধির চন্দ্র ঘোষ নিজেই এদেশে প্রথম মালাইকারী তৈরি করেছিলেন আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছরেরও অধিক সময় আগে। তবে সুধির চন্দ্র ঘোষ বয়সের ভারে এখন মিষ্টি তৈরির কাজ থেকে অনেকটা অবসর নিয়েছেন এবং উনার অভাব পূরন করতে দুই ছেলে সুবোধ চন্দ্র ঘোষ এবং শংকর চন্দ্র ঘোষ মিলে চালিয়ে যাচ্ছেন মালাইকারী তৈরীর এই ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাটি। বর্তমানে ময়মনসিংহের স্বদেশী বাজারে এর একটি শাখা রয়েছে। সুধির ঘোষের বদৌলতে মিষ্টি ভোজন রশিকরা এই অপূর্ব সৃষ্টি মালাইকারির স্বাদ গ্রহণ করতে পারছে কয়েক দশক ধরে।
তবে এই সুস্বাদু মালাইকারী শুধু সুধির ঘোষের দোকান ছাড়াও শহরের আরও কিছু মিষ্টির দোকানে পাওয়া যায়, যার মধ্যে কৃষ্ণাকেবিন, মিষ্টি কানন আর লাজিজ মিষ্টান্ন ভান্ডার অন্যতম। প্রত্যেকটা দোকানের মালাইকারীর স্বাদই অতুলনীয়, তবে ময়মনসিংহ তথা বাংলাদেশের ইতিহাসে মালাইকারি বলতে সুধির ঘোষের মালাইকারির নামই সবার আগে চলে আসে।
স্বাদের মত কিন্তু মালাইকারীর প্রস্তুত প্রণালীটাও একটু ভিন্ন। মালাইকারির মূল উপকরণ দেশি গরুর খাটিঁ দুধ আর চিনি। প্রথমে তৈরি করা হয় দুধের ক্ষীর আর ছানা। কারখানায় ময়রারা (মিষ্টি তৈরির কারিগর) বিশেষ কৌশলে এই মিষ্টি তৈরি করে থাকে। দুধ ও অন্যান্য উপকরণ জ্বাল দিতে হয় কাঠের চুলায়। তারপর ছানায় তৈরি এই মিষ্টি দীর্ঘ সময় ভাঁজা হয়। যার ফলে এর বাহিরের অংশে একটা আবরণ সৃষ্টি হয়। ভাঁজার পর একে তুলনামূলক কম ঘন সিরায় ডুবানো হয়। সিরা থেকে তুলে একেকটি বড় সাইজের মিষ্টি মাঝামাঝি কেঁটে এতে অত্যন্ত ঘন মালাই বা ক্ষীর এর প্রলেপ দেওয়া হয়। এই মালাইয়ের স্বাদ অক্ষুন্ন রাখার জন্যই এই মিষ্টির সিরা হালকা রাখা হয়। যার ফলে মালাইকারি বেশ নরম ও বিশেষ সুঘ্রাণ বিদ্যমান থাকে। এর বিশেষ নরম অবয়র ও সুঘ্রানই এই মালাইকারিকে স্বাদে অন্যন্য ও বিখ্যাত করে তুলেছে।
ময়মনসিংহ শহরের এই মালাইকারীর স্বাদ একবার যে মিষ্টিপ্রেমী মানুষ নেয়, সে বার বারই নিতে চায়। শহর থেকে তাই আশেপাশের উপজেলা জেলায়ও বিভিন্ন বিশেষ উপলক্ষ্যে মানুষ এই মালাইকারী নিয়ে থাকে, আর কুটুমবাড়ি বেড়াতে গেলে তো এই মিষ্টি না নিয়ে যায় না কেউ। ঢাকায়ও ময়মনসিংহের এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির বেশ সুনাম শুনতে পাওয়া যায়। অনেকেই দূরত্বের জন্য এর স্বাদ নিতে আসতে না পারায় গভীর হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
আর তাই সম্ভাবনাময় ই-কমার্সের মাধ্যমে ইচ্ছে করলে দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে পারি আমাদের এই মালাইকারী মিষ্টির স্বাদ। খাদ্যদব্যকে ই-কমার্সের আওতাভুক্ত করণে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হল ডেলিভারি সমস্যা। এর সমাধানের কথা তাই আমাদের চিন্তা করা উচিত সবার আগে এবং সারাদেশে শুধুমাত্র নিরাপদ ফুড ডেলিভারির জন্য কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর উচিত আলাদা একটা সেক্টর ওপেন করা। তবেই সব জায়গার বিখ্যাত সব খাবার সারাদেশের মানুষ পরখ করে দেখতে পারত, দূর থেকে আফসোস করতে হত না।