বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্চের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধ্বে বাংলাদেশের শীর্ষ স্মার্টফোন কোম্পানি হচ্ছে শাওমি। ২৮.৮% মার্কেট শেয়ার ও বার্ষিক ১৩৪% প্রবৃদ্ধি নিয়ে শীর্ষস্থান নিয়েছে বৈশ্বিক এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। রিপোর্টে স্থানীয় কারখানায় উৎপাদন এবং সাশ্রয়ী দামের মডেলগুলোর চাহিদার কারণে বাংলাদেশে শাওমি সাফল্য পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ২০১৮ সালে দেশের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে আসার পর চার বছরে শাওমির এ অভাবনীয় সাফল্য। এতো অল্প সময়ে এমন সাফল্যের কারণ কি?
শাওমি ‘ফ্যান ফার্স্ট কৌশল
গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া বা ফিডব্যাককে সবসময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে শাওমি। তারুণ্য নির্ভর ব্র্যান্ড হওয়ায় সবসময় তরুণদের মতামত, পছন্দ-অপছন্দ, ভালো-মন্দ সবকিছু বিবেচনা করে থাকে। শাওমি ফ্যানদের একটি বড় বৈশ্বিক কমিউনিটি রয়েছে। তারাই শাওমি ব্র্যান্ড এবং কোম্পানির পণ্য উন্নয়নে অবদান রাখে। শাওমি কমিউনিটি বাংলাদেশে এখন নিবন্ধিত পাঁচ লাখের অধিক ফ্যান রয়েছে। শাওমি ফ্যানদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনলাইন ও অফলাইনে মিলিত হয়ে থাকে এবং তাদের ফিডব্যাক নিয়ে নিজের পরিকল্পনা সাজায়।
বৈচিত্র্যময় পোর্টফোলিও
শাওমি দেশে বিদ্যমান বৈচিত্র্যময় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম। শাওমির একেকটি প্রোডাক্ট লাইন একেক ধরনের গল্প বলে। একেক শ্রেণীকে লক্ষ্য করে আনা। যেমন: রেডমি সিরিজের ফোনগুলো সাধারণত এন্ট্রি ও মিড রেঞ্জের হয় আর শাওমি সিরিজের ফোনগুলো হাই-অ্যান্ডের হয়। এভাবে মানুষের আয়, বয়স, আঞ্চলিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন মডেলের হ্যান্ডসেট নিয়ে আসে শাওমি।
অফলাইন ও অনলাইন উপস্থিতি
দেশে অফলাইন ও অনলাইন দুই স্থানেই শাওমির সরব উপস্থিতি রয়েছে। শাওমির ডিভাইসগুলো বিক্রির জন্য দেশব্যাপী ৩০০ এর অধিক অথোরাইজড শাওমি স্টোর এবং ৪৫০০ এর বেশি অনুমোদিত রিটেল স্টোর রয়েছে। এছাড়াও, বিভিন্ন ই-কমার্স প্লাটফর্মের সাথে যুক্ত হয়ে অনলাইনে গ্রাহকের কাছে পৌছে যাচ্ছে শাওমি।
শাওমি বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি
শাওমি এমন একটি ব্র্যান্ড যা শুরু থেকেই সবার জন্য প্রযুক্তির ডেমোক্র্যাটাইজেশন নিয়ে কাজ করছে। ফোনের ফিচার থেকে শুরু করে সবকিছুতেই চেষ্টা করা হয় সর্বশেষ উদ্ভাবনী প্রযুক্তি রাখা। শাওমি বাংলাদেশ সবসময় সেরা ফিচার, সর্বোচ্চ গুণগতমান এবং আকর্ষণীয় মূল্যে ডিভাইস নিয়ে আসার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকে । এছাড়াও,শাওমির অন্যতম প্রতিশ্রুতি হলো স্থানীয় নেতৃত্ব নিশ্চিত করা। সেই বিবেচনায় আজ পর্যন্ত শাওমি বাংলাদেশের নিয়োগকৃত প্রায় সকল লোকবল স্থানীয়। খুব সম্ভবত শাওমি বাংলাদেশে ফরচুন ৫০০ তালিকার একমাত্র ব্র্যান্ড যেখানে প্রায় সব বাংলাদেশি লোকজন কাজ করেন।
দেশে কারখানা
গত বছরের অক্টোবরে দেশে কারখানা স্থাপন করে শাওমি। বর্তমানে দেশে শাওমির মোট স্মার্টফোন চাহিদার ৯৫% স্থানীয় কারখানায় উৎপাদিত হচ্ছে । এখানে এন্ট্রি ও মিড রেঞ্জের সব ফোন যেমন রেডমি ১০এ, রেডমি ১০সি এবং রেডমি নোট ১১ দেশেই উৎপাদিত হয়। গ্রাহকও সাশ্রয়ী দামে ফোন পেয়ে লুফে নিচ্ছে। ফলে দিন দিন বাড়ছে শাওমির জনপ্রিয়তা। আগামীতে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নিয়ে আরো চমক নিয়ে আসছে শাওমি।
মানসম্মত সেবা
শাওমি সবসময় বিক্রয়োত্তর সেবাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। বাজারের উপযোগী পণ্য এবং বিক্রয়োত্তর চমৎকার সেবা প্রদানের মাধ্যমে শাওমি বাংলাদেশে দ্রুত ভক্তদের আস্থা ও হৃদয় জয় করেছে। বর্তমানে শাওমি বাংলাদেশে ৪০টি অধিক সার্ভিস সেন্টার ও ৪২টির আধিক কালেকশন পয়েন্ট রয়েছে। তাছাড়া, শীর্ষস্থানীয় কনজ্যুমার ইন্টেলিজেন্স ফার্ম রেডকোয়ান্টা বাংলাদেশ বিক্রয়োত্তর সেবায় শাওমিকে সেরা ব্র্যান্ড হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে আগেই।