দক্ষিণ কোরিয়ার ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ব্লু হোয়েলের তৈরি করা অনলাইন ভিডিও গেম প্লেয়ার আননোনস ব্যাটেলগ্রাউন্ডস (পাবজি)। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় গেমগুলোর মধ্যে অন্যতম পাবজি। ইন্টারনেটের কারণে এই গেমটির জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। তবে পাবজির ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। বাংলাদেশে বন্ধ করে দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই আবার খুলে দেওয়া হয়েছে পাবজি গেমটি।
এর আগে, গেমটির মাধ্যমে তরুণেরা সহিংসতায় উদ্বুদ্ধ হতে পারে আশঙ্কায় গেমটি বন্ধ করা হয়েছিল।
গেম নির্মাতা কোম্পানি ব্লু হোয়েল ২০১৮ সালে অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের জন্য বাজারে আনা হয় পাবজি মোবাইল। গেমটি ব্লুহোয়েলের পূর্ববর্তী আর একটি গেম ‘প্লেয়ার আননোন’র সিক্যুয়েল বলা চলে।
পাবজির ক্ষতিকর যত দিক-
অন্য ব্যাটেল রয়্যাল গেমগুলোর মতো পাবজি আরও বেশি হিংস্র একটি গেম। গেমটির ভয়াবহতা হলো- এটি শিশু ও কিশোরদের মধ্যে এক প্রকার ক্ষিপ্রতা সৃষ্টি করে। অতি মাত্রায় হিংস্রতা থাকায় ১৩ বছরের কম বয়সীদের জন্য এই গেমটি নিষিদ্ধ। তবে বিভিন্ন সংস্থা পরামর্শ দিয়েছে এই গেমটি খেলার সর্বনিম্ন বয়স ১৭ বছর হওয়া উচিত। অতিরিক্ত হিংস্রতা শিশু-কিশোরদের মধ্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। পরবর্তী জীবনে শিশুদের হিংস্র করে তুলতে পারে গেমটি।
পাবজি শুধু হিংস্রই করে তোলে না, একইসঙ্গে শারীরিক সক্ষমতার ওপরে বাজে প্রভাব ফেলতে পারে। পাবজি গেমটি কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোন ভিত্তিক, তাই কোনো স্থানে বসেই খেলতে হবে এটি। এক জায়গায় বেশি সময় ধরে বসে থাকলে সেটি শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কেবল শারীরিক ক্ষতির কারণই নয় এই পাবজি গেমটি। সেই সাথে মানসিক রোগের কারণও হতে পারে এই গেমটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এক গবেষণার পর জানিয়েছে ভিডিও গেমে আসক্তি এক ধরনের মানসিক রোগ। ভিডিও গেমগুলো একজন খেলোয়াড়ের ডিপ্রেশনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
গেমটি শারীরিক ও মানসিক রোগের সঙ্গে সঙ্গে শিশু ও কিশোরদের ওপর সামাজিক মূল্যবোধের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। গেমটি যেহেতু একটি স্থানেই আটকে থেকে খেলতে হয় সেহেতু এই গেম খেলা মানুষটি সামাজিকভাবে খুব বেশি সংযুক্ত থাকতে পারে না। আর এই কারণে সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সমাজের আচার ব্যবহার থেকেও ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে হয় সেই মানুষটিকে। এক কথায় একটা সময় গিয়ে একাকিত্ব বরণ করতে হয় তাদের।
এখানেই শেষ নয়, অতিরিক্ত মাত্রায় পাবজি খেলার কারণে চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেই সঙ্গে ঘুমের ঘাটতিও দেখা দেয়। মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে বেশি সময় ধরে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের ক্ষতি হতে পারে। আর চোখের সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমেরও ঘাটতিতে পড়েন পাবজি খেলুড়ে মানুষগুলো।
ইতোমধ্যে মাত্রাতিরিক্ত হিংস্রতার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাবজি গেমটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে অতিরিক্ত হিংস্রতার কারণ দেখিয়ে চীন, ইরাক, জর্ডানে পাবজি গেমটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ভারতের তামিল নাড়ু, গুজরাট, আহমেদাবাদ, রাজকোটেও এই গেমটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নেপালেও এই গেমটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু গেমটি নিষিদ্ধের দুই সপ্তাহ পর নেপালের সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন। পরবর্তীকালে গেমটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশে শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) পাবজি গেমটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে। এর আগে, অনলাইন গেম ‘ব্লু হোয়েল’ নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ।