ডিজিটাল যুগে প্রায় সব মানুষের হাতে এখন স্মার্টফোন শোভা পাচ্ছে। স্মার্টফোন আসার পর বদলে গেছে অনেক কিছুই। প্রযুক্তির এই যুগে একটি ফোন হাতে থাকলেই ঘরেই বসেই আপনি সারা বিশ্বের খবর জানতে পারবেন। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করে আপনি ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইল, মেসেজ আদান-প্রদানসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন। এককথায় বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনের জুড়ি নেই।
স্মার্টফোনটি আপনার এত সুবিধা দিচ্ছে তার যত্ন নেওয়া জরুরি। কারণ বেশির ভাগ সময় আমরা যে কাজটি করি তা হলো ফোনে চার্জ দেওয়ার নিয়ম মানি না। ফলে খুব তাড়াতাড়ি আপনার ফোনটির ব্যাটারি চার্জ নেওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
আর মোবাইল যদি ব্যাটারি সমস্যা হয় তবে ফোনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। মনে রাখবেন ফোনের ব্যাটারি ভালো থাকলে আপনার ফোনটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সব স্মার্টফোন ব্যাটারির নির্দিষ্ট জীবনকাল আছে। কিন্তু রাতভর স্মার্টফোন চার্জে দিয়ে রাখলে ফোনের ব্যাটারির আয়ু কমতে থাকে।
অনেকেই রাতে ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সারা রাত চার্জ হয় ফোন। কিন্তু আপনি জানেন কি? আপনার অজান্তেই ফোনের আয়ু কমে যাচ্ছে। এখনই সাবধান হন।
একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সারা দিনের ব্যস্ততার পর মোবাইলের চার্জ যখন প্রায় শেষ, তখন তা চার্জে দিয়ে ঘুমোতে যান অনেকেই। কিন্তু এর ফলে ব্যাটারি ওভার চার্জড হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। লিথিয়াম ব্যাটারির ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা আরও বেশি। ফোন অতিরিক্ত চার্জ হয়ে গিয়ে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ‘লিথিয়াম আয়ন’ ব্যাটারির কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে।
অন্যদিকে চার্জ বেশি হলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা মোবাইলে কভার ব্যবহার করি। এর ফলে তাপ সহজে বের হয় না। এই তাপ ব্যাটারির সেল অক্সিডেশান তৈরি করতে পারে, যা ব্যাটারির ক্ষমতা এবং আয়ু আরও কমিয়ে দেয়।
স্মার্টফোনের চার্জ নিয়ে অনেক সময়েই সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের। সারা দিনের কাজের শেষে রাতে যখন চার্জ প্রায় নিঃশেষ, তখন সারা রাত চার্জে বসিয়ে রাখাই সুবিধের মনে করি আমরা। কিন্তু জানেন কি, এভাবে মোবাইল ফোনের আয়ু কমিয়ে ফেলছি আমরাই।
কিছু মোবাইলে স্মার্ট ফাস্ট চার্জিং এর ব্যবস্থা আছে। কিন্তু তার সংখ্যা গোনার পক্ষেও নগণ্য।
রাতে ফোন চার্জে রেখে ঘুমিয়ে যাওয়ার অভ্যাসটা ব্যাটারির স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই সুবিধাজনক নয় বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। ০-১০০% চার্জ হওয়াকে একটি সাইকেল ধরা হয়। একাধিক বিশেষজ্ঞের দাবি, কমবেশি ৪০০-৫০০ সাইকেল পূর্ণ করে ফেলার পর ব্যাটারির জীবনকাল শুরু করে। তখন তা আর কতদিন চলবে সেটা নির্ভর করে পরবর্তীকালে আপনার ব্যবহারের এবং চার্জের ধরনের উপর। সে ক্ষেত্রে সারা রাত তাকে চার্জে বসিয়ে ব্যস্ত রাখা মোটেও জুতের কাজ হচ্ছে না। কারণ ব্যাটারি প্রযুক্তিবিদদের মতে, রোজ ৮০% এর বেশি চার্জ করা (সারা রাত চার্জে বসিয়ে রাখা) এবং ২০% নিচে নামার পরেও ফের চার্জ না করে কাজ চালিয়ে যাওয়া, মোবাইলের রিচার্জেবল ব্যাটারির আয়ু সব থেকে তাড়াতাড়ি কমায়। সে ক্ষেত্রে, সারা দিনের সঙ্গী স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই তাকে সারা রাত চার্জে বসিয়ে রাখা মোটেও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়।
কিছু মোবাইলে ‘ট্রিকল চার্জ’ প্রযুক্তির ব্যবস্থা থাকে। যার ফলে সেইসব হ্যান্ডসেট সারা রাত চার্জে বসিয়ে রাখলেও কিছু ক্ষতি হয় না। কিন্তু সেইসব প্রিমিয়াম ফিচারের মোবাইল আর কটা। ৯৮-৯৯% মোবাইল সারা রাত চার্জে বসিয়ে রাখলে, ১০০% চার্জ হওয়ার পর তা কমে ৯৯% হওয়া এবং চার্জ হওয়া একই সঙ্গে চলতে থাকায় যে তাপ উৎপন্ন হয়, তা কিন্তু ব্যাটারির আয়ু কমাতেই থাকে ক্রমাগত।
মোবাইলে ব্যবহৃত লিথিয়াম আয়ন পলিমার ব্যাটারি লিথিয়াম কোবাল্ট অক্সাইড লেয়ার এবং গ্রাফাইট লেয়ারের একাধিক স্তর দিয়ে তৈরি। লিথিয়াম আয়নগুলি গ্রাফাইট থেকে লিথিয়াম কোবাল্ট অক্সাইডের স্তরের দিকে সরে যায় শক্তি ছাড়তে। চার্জে বসিয়ে রাখলে কোবাল্ট অক্সাইড স্তর থেকে ধীরে ধীরে তা ফেরে গ্রাফাইট স্তরে। দীর্ঘক্ষণ (সারা রাতের মতো) এ ভাবে চললে গ্রাফাইট স্তরে আয়নের ঘনত্ব প্রয়োজনের তুলনায় বেড়ে গিয়ে স্তরের অখণ্ডতা নষ্ট করে দিয়ে আয়ু কমিয়ে দেয়।
তবে স্মার্ট ফাস্ট চার্জার হোক বা যা হাতের কাছে রয়েছে, যখন খেয়াল রাখতে পারবেন, তখনই লাগিয়ে দিন চার্জে। শুধু একটু খেয়াল রাখুন, ৮০% পেরিয়ে গেলে খুলে রাখাই ভালো। আর যখন ২০-র কাছাকাছি নেমে আসবে দাগ, মনে রাখবেন তখন ফের চার্জ দেওয়ার সময় এসে গিয়েছে।
স্মার্টফোনে আমরা বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে থাকি। কিছু অ্যাপস রয়েছে যা ফোনের ব্যাটারি দ্রুত খরচ হয় বা ফোন গরম হয়ে ওঠে। তাই এ ধরনের অ্যাপস ব্যবহার না করাই ভালো।