গরমে এসির শীতল হাওয়া যেন প্রশান্তির ছোঁয়া। ভ্যাপসা গরম থেকে বাঁচতে এসির প্রয়োজনীয়তা এখনও। গরমে স্বস্তি পেতে এসির জুড়ি নেই। গরম থেকে স্বস্তি পেতে অনেকেই বাসায় এসি ব্যবহার করে থাকেন। অনেকে আবার নতুন করে এসি কেনার জন্য ধারণা নিচ্ছেন। তবে সবার মনে একটাই ভয় থাকে এসি ব্যবহারের কারণে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে। কিছু নিয়ম মেনে যদি আপনি এসি চালান তবে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে। এসি যারা কিনছেন তাদের সচেতন হতে হবে অনেক বিষয়ে। আসুন জেনে নেই কিভাবে সঠিক নিয়মে এসি চালালে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।
এসি অন করার আগে দরজা-জানলা খুলে রাখুন
এসি চালানোর কিছুক্ষণ আগে অল্প কিছু সময়ের জন্য আপনার ঘরের সমস্ত দরজা-জানলা খুলে দিন এবং পাখাটাও চালিয়ে দিন। এই দুটি কাজ করে রাখলে, আপনার ঘরের ভেন্টিলেশন প্রক্রিয়া আরও ভাল হবে এবং গরমে যে ঘর তেতে থাকে, সেই হিটও বেরিয়ে যেতে পারবে। পাশাপাশি এই কাজ করে রাখলে, এসি তার কুলিং সিস্টেম তাড়াতাড়ি চালু করতে সক্ষম হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০ মিনিট ধরে ঘরের জানলা-দরজা খুলে, পাখা চালিয়ে রাখুন। পরে যখন দরজা-জানলা বন্ধ করে আবার এসি চালাবেন, তখন ঘরটি ঠান্ডা করতে আপনার এসি মাত্র আধ ঘণ্টা বা তারও কম সময় নেবে।
ইনভার্টার এসি ব্যবহার করুন
এসি কেনার আগে প্রতিটা ব্র্যান্ডে নতুন কি ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিলে ভালো ব্রান্ড বাছাই করা যাবে সহজেই। বিদ্যুৎ খরচে সাশ্রয় হবে। সেক্ষেত্রে ইনভার্টার কিনুন। ইনভার্টার এসির ব্যবহারে বিল কম আসে। ইনভার্টার এসির বড় সুবিধা হচ্ছে ইনভার্টার এসির কমপ্রেসর মোটরটি প্রয়োজনমতো নিজস্ব চলার গতি পরিবর্তন করতে পারে। ইনভার্টার এসিতে এমন একটি সেন্সর থাকে, যা ঘরের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে কমপ্রেসর পুরোপুরি বন্ধ না করে, মোটরটির চলার গতি কমিয়ে দেয়। এর কারণেই বিদ্যুৎ খরচ কমে আসে, যা পরিবেশবান্ধব। পিক আওয়ারে (বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা) বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে অফ-পিক আওয়ারে যেকোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার বিল কমানোর একটি কার্যকর কৌশল।
এসি-র সঠিক তাপমাত্রা সেট করুন
এসি অন করে তার তাপমাত্রা অন্তত ২০ মিনিটের জন্য ১৬ ডিগ্রিতে কুইক কুল মোডে রাখুন এবং তারপরে সেটিকে ২৪ ডিগ্রিতে সেট করুন। এমনটা করলেও ইলেকট্রিক বিল কম আসবে। ব্যুরো অফ এনার্জি এফিশিয়েন্সি-র একটি গবেষণা অনুযায়ী, এসি-র তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রিতে রাখা সবথেকে ভাল। কারণ, এই তাপমাত্রা মানব শরীরের জন্য স্বস্তিদায়ক। শুধু তাই নয়। রিসার্চে আরও বলা হচ্ছে, এসি-র তাপমাত্রা যত বাড়ানো হয়, প্রতি ডিগ্রিতে ৬ শতাংশ করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। তাই আপনার এসি ১৮ ডিগ্রির পরিবর্তে ২৪ ডিগ্রিতে চালিয়ে রাখলে ইলেকট্রিক বিল অনেকটাই বাঁচাতে পারবেন।
এসি চালিয়ে টাইমার সেট করে দিন
হালফিলের বেশির ভাগ এসি মডেলেই রয়েছে টাইমার সেট করে রাখার সুবিধা। টাইমার সেট করে রাখার অর্থ হল, এটি নির্দিষ্ট সময়ে আপনার এসির স্যুইচ অফ করে দিতে পারে এবং তাতে আখেরে বিদ্যুৎ খরচ সামান্য হলেও কম করা যায়। বেশির ভাগ মানুষই রাতে ঘুমানোর সময় এসি চালিয়ে টাইমার সেট করে রাখেন, যাতে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে মেশিনের কম্প্রেসর বন্ধ হয়ে যায় এবং ইলেকট্রিক বিলও কম করা যায়।
ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বন্ধ রাখুন
ঘরে টিভি, ফ্রিজ ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস থাকলে তা থেকে তাপ নির্গত হয়। রাতে এসি চালানোর আগে এই ধরনের ডিভাইস বন্ধ করে রাখলে কম বিদ্যুৎ খরচ হবে।
ঠিক সময়ে এসি সার্ভিসিং
এমন কোনও নিয়ম নেই যে, এয়ার কন্ডিশনার আপনাকে বছরে একবারই সার্ভিসিং করতে হবে। আপনি যদি এমন কোনও এলাকায় বাসবাস করেন, যেখানে ধূলোবালি থেকে সৃষ্ট নোংরার পরিমাণ একটু বেশি, সেরকম জায়গায় দুই থেকে তিন মাস অন্তর এসি সার্ভিসিং করানো অত্যন্ত জরুরি। এমনটা করতে পারলে আপনার এসি যেমন ঠান্ডাও ভাল হবে, তেমনই আবার ইলেকট্রিক বিলও একটু সাশ্রয় করতে পারবেন। এসি খুব বেশি পুরনো হয়ে গেলে তা চালানো ঠিক নয়। কারণ পুরনো এসিগুলো নতুনের মত খুব বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয় না।