শুরুতেই বলতে হয়, আপনি যে দেশে স্থায়ীভাবে বাস করছেন, সেই দেশের পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক। কারণ, আপনি সেই দেশের নাগরিক, তার প্রমাণ অনেকটাই নির্ভর করে পরিচয়পত্রের ওপর। বাংলাদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রেও পরিচয়পত্র থাকার বিষয়টি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একজন বাংলাদেশি নাগরিক ১৮ বছর বয়সী হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন করতে পারবেন। আজকের মূল আলোচ্য বিষয় ‘মোবাইল নাম্বার দিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র বের করার নিয়ম’। তবে এ আলোচনায় যাওয়ার আগে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিষয়ে কিছু তথ্য দেওয়া যাক।
বাংলাদেশি নাগরিক, যাদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশি নাগরিকের প্রমাণ এই জাতীয় পরিচয়পত্র। তা ছাড়া, বিভিন্ন সময় একাধিক অপরিহার্য জনসেবা; যেমন: রেশন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সরকারি সহযোগিতা ইত্যাদি গ্রহণের সুযোগ পাওয়া যায় এর মাধ্যমে।
জাতীয় পরিচয়পত্র প্রথম জারি করা হয় ২০০৬ সালের ২২ জুলাই। সে সময় দেওয়া পরিচয়পত্রটির ওপর প্লাস্টিকের ল্যামিনেট আবরণ ছিল। ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর এতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। তখন এর নাম দেওয়া হয় স্মার্ট এনআইডি কার্ড। এই স্মার্ট এনআইডি কার্ডে বায়োমেট্রিক এবং মাইক্রোচিপ এমবেড করা হয়। জাতীয় পরিচয়পত্রে পরিবর্তন আনার মূল কারণ ছিল হুবহু নকল রোধ।
প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্র প্লাস্টিকের ল্যামিনেট আবরণ এবং স্মার্ট এনআইডি কার্ড বায়োমেট্রিক মাইক্রোচিপ এমবেড করা
জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে যে সুবিধা পাওয়া যাবে
বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, তারা নিম্নলিখিত সুবিধা এবং পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত—
১. নাগরিকদের অধিকার এবং সুবিধা
২. শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুবিধা
৩. জাতীয় পরিচয়
৪. ড্রাইভিং লাইসেন্স
৫. পাসপোর্ট
৬. সম্পত্তি বা জমি ক্রয়-বিক্রয়
৭. বাংলাদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
৮. ব্যাংকঋণ সহায়তা
৯. সরকারি পেনশন
১০. বিআইএন (Business Identification Number) সুবিধা
১১. ব্যবসা বা ট্রেড লাইসেন্স
১২. যানবাহনের নিবন্ধন
১৩. বিমা প্রকল্প
১৪. বিবাহ নিবন্ধন
১৫. ই-পাসপোর্ট
১৬. ই-গভর্ন্যান্স
১৭. গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ
১৮. মোবাইল সংযোগ
১৯. ব্যাংক লেনদেন
২০. শেয়ার-বিও অ্যাকাউন্ট রক্ষণাবেক্ষণ
উপরিউক্ত, বিষয়গুলো থেকে সেবা নিশ্চিত করতে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন। একজন নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার ফলে বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিতও হতে হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্র সহায়তা কেন্দ্র এবং ফোন কল নম্বর
জাতীয় পরিচয়পত্রের যেকোনো সমস্যা সম্পর্কিত বিষয়ে তাদের সহায়তা কেন্দ্রে সরাসরি মোবাইলে কথা বলতে পারবেন কোনো চার্জ ছাড়াই। এ জন্য ফোন করতে হবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ফোন নম্বর ১০৫-এ। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ সেবা গ্রহণ করা যাবে। তা ছাড়া, ফ্যাক্স অথবা ই-মেইলের মাধ্যমেও এই সেবা নেওয়া সম্ভব। ফ্যাক্স নম্বর: ৬০-২-৫৫০০৮৫১৫ এবং ই-মেইল ঠিকানা: secret@ecs.gov.bd
জাতীয় পরিচয়পত্র করতে যা যা দরকার
১. এসএসসি বা সমমানের সার্টিফিকেট।
২. জন্মসনদের মূল কপি।
৩. ছবি এবং বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহের জন্য ইসি প্রাঙ্গণে সশরীরে উপস্থিত থাকা।
৪. বাবা, মা, স্বামী বা স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
৫. ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে ইউটিলিটি বিল, বাড়ি ভাড়ার রসিদ, অথবা হোল্ডিং ট্যাক্স রসিদ।
মোবাইল নাম্বার দিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র বের করার নিয়ম
মোবাইলে ডায়াল করে জাতীয় পরিচয়পত্র বের করা সম্ভব। এটি প্রধানত ইউএসএসডি ডায়াল প্রক্রিয়া দ্বারা হয়। সব মোবাইল অপারেটর থেকেই এ কাজ সম্ভব হলেও বাংলালিংক ব্যবহারকারীদের জন্য এটি বের করা সহজ। অন্য মোবাইল অপারেটরে যদি এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হয়, তবে এর বিকল্প মাধ্যম হিসেবে রয়েছে অনলাইন। নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র বের করা সম্ভব।
মোবাইল ফোন থেকে যেভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর পাবেন
মোবাইল ফোন থেকে যেভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর পাবেন
১. প্রথমে মোবাইল ডায়াল অপশনে গিয়ে *১৬০০# ডায়াল করতে হবে।
২. ডায়ালের পর একটি ইন্টারফেস আসবে এবং দুটি ইনফরমেশন থাকবে: 1. Status of your sim এবং 2. Status against your NID.
৩. দ্বিতীয় নম্বর সিলেক্ট করে (2-লিখে) সেন্ড বাটনে ক্লিক করতে হবে।
৪. এর পর ইন্টারফেসটিতে লেখা আসবে (Your request has been accepted. Please wait for reply)।
৫. রিপ্লাই আসার জন্য অপেক্ষা করতে বলা হবে এবং ১৬০০ নম্বর থেকে এসএমএসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর জানিয়ে দেওয়া হবে।
ইউএসএসডি ডায়াল করে শুধুমাত্র এনআইডি কার্ডের নম্বর বের করা সম্ভব হলেও আর কোনো তথ্য এখানে বের করা যায় না। এ সেবা থেকে প্রিন্ট কপি বের করা সম্ভব নয়। তবে প্রক্রিয়াটি শুধু জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর বের করার জন্য বেশ সহজ মাধ্যম।
পরিশেষে
বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্রের বিকল্প নেই। যেকোনো অফিশিয়াল-আনঅফিশিয়াল ডকুমেন্টের কাজ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি কাজেও এর ব্যবহার রয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে মোবাইল নম্বর দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র বের করার এ নিয়ম মেনে নম্বর পেলে জাতীয় পরিচয়পত্র সহায়তা কেন্দ্র থেকে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।