ব্যক্তিগত থেকে প্রাতিষ্ঠানিক—সব ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিষেবা গ্রহণ করতে হয়। খুলতে হয় বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট। এসব অ্যাকাউন্টের সুরক্ষায় থাকে পাসওয়ার্ড। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে পাসওয়ার্ড শক্তিশালী না হলে হ্যাকারদের হামলার আশঙ্কা থাকে। অন্যদিকে মনে রাখার ঝামেলা এড়াতে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের ব্যবহার বাড়ছে।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহারের আগে পাসওয়ার্ড কতটুকু শক্তিশালী সেটি দেখতে হবে। কেননা এটি ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সুরক্ষিত রাখে। তাই পাসওয়ার্ড তৈরির সময় থাকতে হবে সতর্ক। সাধারণত যেসব পাসওয়ার্ড ছোট ও সহজে মনে রাখার জন্য তৈরি করা হয় সেগুলো নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর। তাই শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরির বিষয়ে জানতে হবে।
পাসওয়ার্ডে ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার না করা: অধিকাংশই মানুষই পাসওয়ার্ড তৈরির সময় পোষ্য প্রাণী বা নিজের সন্তানের নাম, জন্ম তারিখ বা মাস এগুলো ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু হ্যাকার যদি আপনার সম্পর্কে জানতে পারে তাহলে সহজেই এসব তথ্যের মাধ্যমে পাসওয়ার্ড জানতে পারবে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে এসব তথ্য জেনে নেয়া সম্ভব।
কমন বা প্রচলিত পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করা: ইন্টারনেট জগতে ব্যবহৃত হয়েছে বা হচ্ছে এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা যাবে না। সাইবারনিরাপত্তা কোম্পানি সফোস ৫০টি প্রচলিত পাসওয়ার্ডের তালিকা দিয়েছে। হ্যাকাররা এগুলো ব্যবহার করে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। এর মধ্যে ১২৩৪৫৬, পাসওয়ার্ড ও কোয়ারটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত।
এক বা দুই শব্দ ব্যবহার না করা: অভিধানে থাকা এক বা দুই শব্দে কোনো পাসওয়ার্ড তৈরি করা যাবে না। কেননা হ্যাকারদের কাছে সব শব্দ স্ক্যান বা যাচাইয়ের সফটওয়্যার রয়েছে।
বড় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা: পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ১১ থেকে ১২ শব্দ যথেষ্ট। সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান স্যানস অবশ্য পাসওয়ার্ডে ১৫ ক্যারেক্টার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে।
পাসওয়ার্ডে বিভিন্ন ক্যারেক্টার ব্যবহার: যেকোনো পাসওয়ার্ডকে শক্তিশালী করতে চাইলে বিভিন্ন কিছু ব্যবহার করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যাপিটাল বা আপারকেস লেটার, লোয়ার কেস লেটার, সংখ্যা ও বিশেষ চিহ্ন।
একটি ফ্রেজে পাসওয়ার্ড তৈরি করা: সহজে মনে রাখার জন্য ফ্রেজের মাধ্যমে পাসওয়ার্ড তৈরি করা ভালো। যেমন: হুডেয়ারসউইনস। আরেকটি উপায় হচ্ছে কোনো বড় ফ্রেজে থাকা প্রথম অক্ষরগুলোর ব্যবহার। অক্ষরগুলো ক্যাপিটাল ও লোয়ার কেস মিলিয়ে লেখা যায়। এতে করে সহজেই পাসওয়ার্ড শনাক্ত করা সহজ হবে না।
বড় ও জটিল পাসওয়ার্ড তৈরি: পাসওয়ার্ড যত বড় ও জটিল হবে নিরাপত্তা তত বাড়বে। এক্ষেত্রে সাধারণভাবে লেখা কোনো পাসওয়ার্ডের শেষে নিজের পছন্দ বা সুবিধা অনুযায়ী তিন চার শব্দ যুক্ত করে দেয়া ভালো।
নির্দিষ্ট সময় পর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা: নির্ধারিত সময় পর পর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা হলে হ্যাকার বা হামলাকারীর পক্ষে তা শনাক্ত করা কঠিন হবে। এজন্য পাসওয়ার্ডের আগে-পরে সাল যুক্ত করা যেতে পারে। প্রতি বছর সাল পরিবর্তন করা যাবে। এটি পাসওয়ার্ডের আকার বাড়াবে এবং এটি কতদিনের পুরনো সেটিও জানা যাবে।
একাধিক পাসওয়ার্ডের জন্য ম্যানেজার প্রোগ্রাম ব্যবহার: যদি একসঙ্গে বিভিন্ন প্লাটফর্ম ও পরিষেবায় পাসওয়ার্ড দিতে হয় তাহলে লাস্টপাস বা রোবোফর্মের মতো ম্যানেজার ব্যবহার করা ভালো। এসব ম্যানেজার সব পাসওয়ার্ড নিরাপদে সংরক্ষণ করে থাকে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে বসাতে সহায়তা করে। তবে এসব অ্যাপে মাস্টার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হয়।
পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তা স্তর পরীক্ষা: যেকোনো পাসওয়ার্ড কতটা শক্তিশালী সেটি পরীক্ষার উপায় রয়েছে। এর জন্য গিবসন রিসার্চের একটি টেস্টার রয়েছে। তবে হ্যাকাররা যদি কোনোভাবে ডিভাইসে কিলগার প্রবেশ করিয়ে থাকে তাহলে যেকোনোভাবে পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিতে পারবে। এ কারণে একেক জায়গায় একেক রকম পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত।