আইসিটি সেক্টর দেশের একমাত্র সেক্টর যেখানে সকল কাচামাল (মেধা) দেশে তৈরি হয়। আইসিটি সেক্টরের মাধ্যমে বিদেশি রেমিট্যান্স শতভাগ আনা সম্ভব। বর্তমান সরকার আইসিটি বান্ধব। সরকার চায় আইসিটিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিতে। আর আমাদের দেশে আইসিটি কোম্পানিকে রিপ্রেজেন্ট করে বেসিস অর্থ্যাৎ সরকারের কাজে সফলতা আনার জন্য বেসিস এর ভূমিকাটা অনেক বড়। আমরা সরকারের সাথে দেশের উন্নয়নে একসাথে কাজ করতে চাই এবং বেসিস সদস্য কোম্পানিগুলোকে আমাদের দেশে এবং দেশের বাইরে সবার কাছে আস্থার জায়গাতে নিয়ে যেতে চাই বলছিলেন বেসিস নির্বাহী কমিটির ২০২৪-২৬ নির্বাচনে অংশ নেওয়া টেকনোগ্রামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদুল ইসলাম বাবু। বেসিস নির্বাচনে তার অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্য আর কর্মপরিকল্পনা নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডি তার কার্যালয়ে টেকজুমটিভির সাথে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন ‘ওয়ান টিমের ’ প্যানেলের আহমেদুল ইসলাম বাবু।
টেকজুম: আপনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন কেন?
আহমেদুল ইসলাম বাবু : আমি প্রায় শুরু থেকেই বেসিস এর সাথে আছি। বেসিস এর কোথায় কি সমস্যা কোনটা করলে ভাল হবে সেই বিষয়গুলো আমি খুব কাছ থেকে অনুধাবন করেছি আর সেই সকল সমস্যাগুলির সমাধান নিয়ে বিগত ২ বছর কাজ করেছি। বেশ কিছু সমস্যা সমাধান করতে পেরেছি আরো কিছু কাজ বাকি আছে সেগুলো বেশি করতে চাই । বর্তমানে বেসিস এ চব্বিশ শত জন সদস্য আছে। বেসিস সদস্যদে সুযোগ সুবিধা যেন তারা সঠিকভাবে পায় সেগুলোর উপর কাজ করতে চাই। নতুন যারা উদ্যোক্তা আছে এবং যারা আইটি ফিল্ডে আসতে চায় তাদের নিয়ে কাজ করতে চাই। আমি দীর্ঘদিন ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট স্পেসিয়ালি জাপান ও ইউএসএ মার্কেট নিয়ে কাজ করছি। আমার এ অভিজ্ঞতার আলোকে আমি সকল নবীন ও বর্তমান উদ্যোক্তাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই ।
টেকজুম: বেসিস জাপান ডেস্ক কতটুকু সফল?
আহমেদুল ইসলাম বাবু : ২০১৬ সালে, আমরা মাত্র ২০ টি বেসিস সদস্য নিয়ে জাপান ফোকাস গ্রুপ গঠন করেছিলাম। আজ, জাপান ডেস্কের মাধ্যমে ১২০ টিরও বেশি বেসিস সদস্য কাজ করে বার্ষিক প্রায় ১৪০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করছে। যা আমাদেরকে চতুর্থ বৃহত্তম আইসিটি রপ্তানি গন্তব্যে পরিণত করেছে। আমার লক্ষ্য হলো আগামী ৫ বছরের মধ্যে জাপানকে আমাদের শীর্ষ আইসিটি রপ্তানি গন্তব্যে পরিণত করা। ২০২২-২৩ মেয়াদে, বেসিস বোর্ডের সদস্য হিসেবে আমি জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ, বি২বি ম্যাচ-মেকিং, জাপান ডে ও জাপান IT Week-এ অংশগ্রহণের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এর ফলে আমরা ২০ টিরও বেশি এমওইউ স্বাক্ষর করেছি এবং জাপানে বাংলাদেশী আইসিটি -এর চাহিদা বৃদ্ধি করেছি। বেসিস জাপান ডেস্ক এর মাধ্যমে, সিটি অফ মিয়াজাকি, ইউনিভার্সিটি অফ মিয়াজাকি ও জাইকা এর সহযোগিতায় বি-মিট প্রোগ্রামের মাধ্যমে ১০০ এর অধিক বেসিস সদস্যকে জাপানীজ ভাষা এবং বিজনেস কালচার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
টেকজুম: বর্তমানে দেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির প্রকৃত অবস্থা কেমন?
আহমেদুল ইসলাম বাবু : আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে আইটি সেক্টর থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। আমরা এখন আইটি সেক্টর থেকে ১.৪ বিলিয়ন ডলার আয় করছি। আমরা যদি এই সেক্টরকে আগামী ১০ বছরের মধ্যে ১৫-২০ বিলিয়নের দিকে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে এই সেক্টর একটি অন্যতম ইন্ডাস্ট্রি আকারে দাঁড়াবে। আমি মনে করি, এটা করা সম্ভব।দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি সফটওয়্যারের অবস্থান বেশ ভালো। বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত। এই সেক্টরে আমরা পৃথিবীর সাথে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে বাংলাদেশের কিছু তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বাইরের কয়েকটি উন্নত দেশেও ৪র্থ শিল্প-বিপ্লবের সাথে সংশ্লিষ্ট সল্যুশন তৈরি করে তা রপ্তানি করে যাচ্ছে।
টেকজুম: বিগত দুই বছর আপনি ইসিতে থেকে কি কাজ করছেন আইটি সেক্টরের জন্য ?
আহমেদুল ইসলাম বাবু : বিগত দুই বছরের বেসিসের যথেষ্ট অ্যাক্টিভ ছিলাম আমার নির্দিষ্ট কাজ গুলোর বাইরেও কাজগুলো করার জন্য সচেষ্ট ছিলাম । বেসিসে আমার অন্যতম প্রধান ফোকাস ছিল জাপানকে নিয়ে । আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারনে বোর্ড আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিল জাপান মার্কেটটাকে আরো সম্প্রসারিত করার জন্য। আমরা মিয়াজাকি ইউনিভার্সিটি এবং জাইকার সহযোগিতায় একশ বেসিস মেম্বার কোম্পানি কে জাপানি ল্যাংগুয়েজ প্রশিক্ষণ দিয়েছি যাতে করে তারা সহজেই জাপানে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। ২০২২ সালে আমরা প্রথমবারের মত স্বতন্ত্র জাপান ডে উদযাপন করেছি । সেখানে ২০০ এর বেশি জাপানিজ উদ্যোক্তাদেরকে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের সাথে একটি মিলনমেলা করতে পেরেছি । আমরা চলতি বছরে জুন অথবা জুলাই মাসে এর থেকেও বড় একটি জাপান ডে উদযাপন করার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি । আমাদের সবথেকে বড় এচিভমেন্ট হল বি- টপএসি নামের একটি প্রজেক্ট যেটা জাইকা প্রথমবারের মত জিটুজি এর বাইরে বেসিসকে তারা সরাসরি পার্টনার হিসেবে গ্রহণ করেছে যার ফলে সরাসরি জাইকার সাথে বেসিস এর সরাসরি কাজ করার আরও বেশি সুযোগ তৈরি হয়েছে।
টেকজুম: নির্বাচিত হলে বেসিসকে কোন স্তরে দেখতে চান?
আহমেদুল ইসলাম বাবু : প্রাণের সংগঠন বেসিস আজকে যে স্তরে এসেছে তা একদিনে আসেনি। প্রতিষ্ঠাতাদের পাশাপাশি অসংখ্য মানুষের চিন্তা, কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ ও নিরলস পরিশ্রমের ফসল আজকের অবস্থান। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি যেভাবে উন্নতি করছে তার সাথে তাল মিলিয়ে বেসিস একটি ভবিষ্যতমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠবে এটাই বিশ্বাস। আমরা অন্যান্য দেশের ট্রেডবডিগুলোর সাথে সমতার ভিত্তিতে কোলাবরেট করে আমাদের সদস্যদের নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারবো বলে মনে করি।জাপান ছাড়াও, আমরা ইতিমধ্যেই ইউএসএ, কোরিয়া ও আফ্রিকা ডেস্ক গঠন করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এই যাত্রায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
টেকজুম: নতুন মেয়াদে কমিটির সামনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকবে বলে মনে করছেন?
আহমেদুল ইসলাম বাবু : সরকার ব্যাপকভাবে ডিজিটালাইজেশনের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে আমাদের প্রচুর সু্যোগের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বেসিসকে অন্যতম প্রধান বাস্তবায়নকারী সংস্থায় পরিণত করতে হবেI নতুন নতুন বাজারে প্রবেশ করা, ট্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে সদস্যবান্ধব করা, স্কিলড রিসোর্সের অভাব দূর করতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া, সদস্যদের অ্যাক্সেস টু ফাইন্যান্সের সুবিধা বাড়ানো ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে মোকাবেলা করতে হবে। পাশাপাশি এই সেক্টরে কন্ট্রিবিউশন আরো বাড়ানোর ব্যাপক উদ্যগ গ্রহণে করতে হবে।
টেকজুম: জাপান ডেস্ক সামনে কি করতে যাচ্ছে?
আহমেদুল ইসলাম বাবু : অনেক গুলো প্রোগ্রাম আমাদের হাতে আছে। এর মধ্যে দুইটি উল্লেখযোগ্য প্রোগ্রামের কথা আপনাকে জানাতে পারি। ১) বিজন্যাস ম্যাচ মেকিংঃ মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাপান থেকে প্রায় ৭০ জন টপ বিসনেস পারসন এর একটি সামিট এ বেসিস কে সম্পৃক্ত করে ১০০ এর অধিক কোম্পানিকে নেটওয়ার্কিং করার সুযোগ তৈরীর কাজ প্রায় সম্পন্ন। আশা করি এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমাদের কোম্পানি গুলো সরাসরি জাপানী ব্যবসায়ীদের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি করার বড় সুযোগ পাবে। ২) জাপান ডে পালন ঃ মেয়র অফ মিয়াজাকি কে সাথে নিয়ে জুন/জুলাই মাসের মধ্যে ২০০+ জাপানী কে সাথে নিয়ে বড় পরিসরে জাপান ডে পালন করবো। যেখানে মিয়াজাকি ও হিরোশিমা থেকে আইটি কোম্পানিদের নিয়ে বি২বি ম্যাচ ম্যাকিং আয়োজন করা হবে। এছাড়া এ বছর জাপানে একটি বাংলাদেশ ICT রোড শো করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
টেকজুম:জাপান ডেস্কের সাফল্য অন্য দেশের ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা আছে কি?
আহমেদুল ইসলাম বাবু : ধন্যবাদ আপনার প্রশ্নের জন্য। আমরা জাপান ডেস্কের ইতিবাচক সাফ্যল্য কাজে লাগিয়ে বাংলাশের আইটি কোম্পানি গুলোকে যদ বেশি দেশে ব্যবসা বিস্থার করবো ততই আমাদের জন্য ভালো। সেই বিশ্বাস থেকে এ বছর এর মধ্যেই কোরিয়া ও আফ্রিকা ডেস্ক তৈরী করবো ও এর কার্যক্রম শুরু করবো।
টেকজুম: সদস্যদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
আহমেদুল ইসলাম বাবু : বেসিস বোর্ডে ওয়ান টিম থেকে যে কাজ গুলো আমরা শুরু করেছি এই গুলোর ধারাবাহিক ভাবে করলেই আমরা রেজাল্ট পাবো। এই উদ্যোগ গুলো থেমে গেলে আমি মনে করি ইণ্রাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এই ইন্ডাস্ট্র্রির সবাই বিচক্ষণ ব্যাক্তি । সবাই বিচক্ষণতার সাথে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন বলে আমার বিশ্বাস। আমরা ওয়ান টীম অনেক অভিজ্ঞতা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছি যা বাস্তবায়ন করতে হবে। সদস্যদের প্রতি বিনীত অনুরোধ থাকবে বেসিস ২০২৪-২৬ নির্বাচনে ওয়ান টিমকে নির্বাচিত করে প্রতিটি মেম্বারের ব্যবসার উন্নতির জন্য আইসিটি ইণ্ড্রাস্ট্রির উন্নতির জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিবেন।