স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রত্যেকটি বাণিজ্য সংগঠনেরই স্বতন্ত্র ও আলাদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দেশে অফিস আদালতের কাজ স্মার্টলি করতে সফটওয়্যার অটোমেশন সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা যেমন মেটাচ্ছে বেসিস তেমনি দেশের বাইরে আইটি, আইটিএস পন্য সেবা রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে সংগঠনটি। এদিকে কন্টাক্ট সার্ভিসের মাধ্যমে বিদেশি আয় বৃদ্ধি ও এ খাত উন্নয়নে অলংকরণ করে যাচ্ছে বাক্কো, করোনাকালীন ইকমার্সের জয়জয়কারতো দেখেছে পুরো দেশ, এক্ষেত্রে ইক্যাবের ভুমিকাও অনস্বীকার্য। আবার কম্পিউটার পন্য বাজারের চাহিদা মেটাতে বিসিএস নিরলস, এবং গুণগতমানসস্পন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদানে আইএসপিএবি।
মোদ্দাকথা, প্রত্যেকেটি খাতই অন্যটার সঙ্গে যুক্ত। আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ প্রস্তুত করতে পাঁচ সংগঠনকে একটা সম্মিলিত লক্ষ্য নির্ধারণ করে সে অনুসারে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। এভাবেই নিজের পরিকল্পনাগুলো বলছিলেন সফল প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ব্যাবিলন রিসোর্সেস লিমিটেডের সিইও লিয়াকত হোসাইন।
প্রযুক্তি ব্যাক্তিত্ব লিয়াকত হোসাইনের বেসিস প্রেসিডেন্ট অ্যাডভাইজরি স্ট্যান্ডিং কমিটি, স্ট্যান্ডিং কমিটি অন এইচআর ডেভেলমেন্ট, ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন স্টার্টআপের মেম্বার হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা আইটি উপ-কমিটির সদস্য, আমরাই ডিজিটাল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশানের জেনারেল সেক্রটারি, ওরাকল ইউনিভার্সিটির পার্টটাইম সিনিয়র ফেকাল্টি।
এই প্রযুক্তিবিদের সাথে দীর্ঘ আলাপে উঠে এসেছে দেশের বর্তমান সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির হালচালসহ আসন্ন বেসিস নির্বাচনের নানান দিক। আলাপের কিছু অংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: দেশের সফটওয়্যার খাতের প্রকৃত অবস্থা কেমন?
লিয়াকত হোসাইন: আমাদের দেশের মানুষ মেধাবী। তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের তরুণরা ভালো করছে। তাদের প্রতিভা আছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আছে, আমাদের অবকাঠামো মোটামুটি প্রস্তুত। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমরা এখনও যথাযথ পেশাদারিত্বে পৌঁছাতে পারিনি। সফটওয়্যার সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্রেতা চাহিদা এবং বিক্রেতার সরবরাহকৃত সেবার মাঝে এখনও বোঝাপড়ার সমস্যা রয়েছে।
স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত সফটওয়্যারগুলোর স্থানীয়ভাবে প্রচারের এবং ক্রেতাদের উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা আছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর যেমন দায় রয়েছে, তেমনি দেশীয় পণ্যে ব্যবহারের প্রতি বড় বড় প্রতিষ্ঠানের রয়েছে অনাগ্রহ। আবার যারা ভালো করছে বা বিশ্ববাজারে পণ্যসেবা সরবরাহ করছে তাদেরকেও বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। লোকাল ও আন্তর্জাতিক দুই বাজারেই আমাদের যে খুব ভালো অবস্থান, তা নয়। তবে ভালো করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
প্রশ্ন: ২০২৫ সালের মধ্যে আইসিটি খাত থেকে নির্ধারিত ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব?
লিয়াকত হোসাইন: দেখুন, যদি আমরা সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারি, এটা বাস্তবায়ন করা কিছুটা কঠিন তবে অসম্ভব নয়। দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি, আন্তর্জাতিক মার্কেটে ব্রান্ডিং বাড়ানো, সফটওয়্যার প্রফেশনালদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য দক্ষ সেলস ও মার্কেটিং টিম গঠন, নতুনদের জন্য এক্সেস টু ফাইনান্স বৃদ্ধির মাধ্যমে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।
আমরা এখন ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছি। আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের অন্যতম হাতিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি খাত। সরকার এই খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে রফতানি আয় ২ বিলিয়নেরও কম। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এটাকে ৫ বিলিয়নে উন্নীত করা আমাদের স্বপ্ন। আর একটা লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করলে উৎসাহ বাড়ে। এই খাতের ব্যাবসায়ীদের সঠিকভাবে পরিচালনা করে তাদের মেধাকে কাজে লাগাবার যোগ্যতা ও অর্জন করতে হবে।
প্রশ্ন: বিদেশি সফটওয়্যারের আধিপত্য- দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
লিয়াকত হোসাইন:ঝুকিপূর্নতো অবশ্যই, আমাদের স্থানীয় সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী যেসব কোম্পানি রয়েছে, তাদের অনেকেরই কাজের মান আন্তর্জাতিক কোম্পানির চেয়ে কোন অংশে কম না। বেশ কিছু কোম্পানি আছে যারা আন্তর্জাতিক গুণগতমানসম্পন্ন সফটওয়্যার তৈরি করে স্থানীয় ইন্ডাস্ট্রিতে বিক্রি করেছে। একই সাথে বিদেশেও রফতানি করছে।
অন্যদিকে, বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাইরের দেশ থেকে সফটওয়্যার আনছে। আমার মতে, যেসব সফটওয়্যার আমরা তৈরি করতে পারি না, যেমন, ডাটা বেইজ ওএস ইত্যাদি দেশের বাইরে থেকে আনতে পারি। এর বাইরে সকল প্রকার এন্টারপ্রাইজ সল্যুশান, অটোমেশান টুল তৈরিতে স্থানীয় কোম্পানিগুলো যথেস্ট সক্ষম।
প্রশ্ন: নেতৃত্বে আসলে বেসিসে কি ধরনের পরিবর্তন আনবেন?
লিয়াকত হোসাইন: স্থানীয় বাজারকে শক্তিশালি করা, সরকারী ক্রয়নীতি সংস্কার করা, সাসটেইনেবল প্র্যাকটিস ও প্রযুক্তির সমন্বয় করা আমার লক্ষ্য। এর পাশাপাশি আমি ব্যক্তিগতভাবে টিমওয়ার্কে বিশ্বাসী। সদস্যরা যদি মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে সংগঠনের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ দেন, তাহলে ঢাকার আশপাশে কোথাও বেসিসের নিজস্ব ভবন তৈরির চেষ্টা করবো। বেসিসের সদস্যদের জন্য কল্যাণ তহবিল চালু করতে কাজ করবো। আর সদস্যদের এমপ্লয়ী ডাটাবেইজ তৈরি করবো।
প্রশ্ন: যদি কার্যনির্বাহী পরিষদে না আসেন, তখনও কি এসব কাজ করবেন?
লিয়াকত হোসাইন: দেখুন, গত মেয়াদে কার্যনির্বাহী পরিষদে না থেকেও আমি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছি। ইন্ডাস্ট্রির প্রতি আমার ভালবাসা ও দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এটা করেছি। কার্যনির্বাহী পরিষদে থাকলেই যে ইন্ডাস্ট্রির জন্য কাজ করা যায়, এমনটা নয়। বাইরে থেকেও অনেক কাজ করা যায়। ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে কাজ করার জন্য দরকার একটা সুন্দর মানসিকতার। যারা নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তারা যদি কাজ করবার সুযোগ দেন আমি অবশ্যই আমার সেরাটুকুই করবো।
প্রশ্ন: নির্বাচিত হলে বেসিসকে কোন স্তরে দেখতে চান?
লিয়াকত হোসাইন: বেসিস আজকে যে অবস্থানে এসেছে তা একদিনে আসেনি। অসংখ্য মানুষের সম্মিলিত চেষ্টা, চিন্তা-ভাবনা, ত্যাগ, কঠোর পরিশ্রমের ফসল আজকের এই অবস্থান। আমার বিশ্বাস, আমরা যদি সঠিক পরিকল্পনা করতে পারি এবং বেসিসে যদি সঠিক নেতৃত্ব থাকে তাহলে বাংলাদেশ হতে পারে বিশ্বের অন্যতম সফটওয়্যার রপ্তানিকারক দেশ। আর এর নেতৃত্বে থাকবে বেসিস। আমি একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে বেসিসকে একটা কার্যকর সম্মানজনক বাণিজ্যিক সংগঠন হিসেবে দেখতে চাই।