স্মার্টফোন প্রত্যেকটি মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। দৈনন্দিন অনেক কাজ ফোনের মাধ্যমেই করা সম্ভব হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবছর নতুন নতুন ফোন বাজারে নিয়ে আসছে। ২০২২ সাল জুড়ে বাজারে আসা নতুন স্মার্টফোন থেকে নারীদের জন্য সবচেয়ে স্টাইলিশ ফোনের তালিকা করেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট ডিজিট নিউজ। চলুন দেখে নেওয়া যাক তালিকার শীর্ষে থাকা পাঁচ স্মার্টফোন-
নারীদের জন্য স্টাইলিশ ৫ স্মার্টফোন
গুগল পিক্সেল ৭: চলতি বছরের অক্টোবরে বাজারে এসেছে গুগলের সবশেষ সংস্করণ পিক্সেল ৭। এতে রয়েছে ৬.৭১ ইঞ্চি ডিসপ্লে, যার রিফ্রেশ রেট ১২০ হার্টজ। অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে রয়েছে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ১৩। আছে গুগলের নিজস্ব শক্তিশালী টেনসর জি টু প্রসেসর। গুগলের নতুন এই ফোনে রয়েছে তিনটি রিয়ার ক্যামেরা- ৫০ মেগাপিক্সেলের স্যামসাং জিএন১ প্রাইমারি ক্যামেরা, ১৩ মেগাপিক্সেলের সনি আইএমএক্স৩৮ আল্ট্রাওয়াইড ক্যামেরা এবং ৪৮ মেগাপিক্সেলের স্যামসাং জিএম১ টেলিফটো ক্যামেরা। সেলফিপ্রেমীদের জন্য রয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ মেগাপিক্সেলের স্যামসাং ৩জে১ সেন্সর।
৫ হাজার এমএএইচ ব্যাটারির এই ফোনে রয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ও ফেস আনলক ফিচার। ওয়্যারলেস চার্জিং সুবিধাও আছে। এক চার্জে তিন দিন সচল থাকে পিক্সেল ৭। ফোনটির বাজার মূল্য ৯০০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯৩ হাজার টাকা।
আইফোন ১৪: অ্যাপলের আইফোন ১৪ সিরিজের প্রো ম্যাক্স বাজারে আসা অপ্টিমাইজ করা ফোনের মধ্যে একটি। গেমারদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে এই ফোন। এতে থাকছে ৬.১ ইঞ্চি ওলেড ডিসপ্লে। রয়েছে একটি বাস্পীয় চেম্বার থার্মাল সিস্টেম যা আইফোনে দ্রুতগতির চিপ এবং ৫জি কানেক্টিভিটির কারণে তৈরি হওয়া তাপকে কমিয়ে আনে। ফিজিক্যাল সিম স্লট বদলে ব্যবহার করা হয় ই-সিম স্লট। এতে অ্যাপলের নিজস্ব দ্রুতগতির চিপ এ১৬ ব্যবহার করা হয়েছে। ফোনে থাকছে দ্রুতগতির ১০-গিগাবিট ৫জি মডেম, যার রয়েছে দ্রুতগতির কানেক্টিভিটি স্পিড।
নতুন আইফোন মনেই ক্যামেরায় পরিবর্তন থাকবে। এ ভার্সনেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আলট্রা ওয়াইড ক্যামেরাতে নতুন ইমপ্রুভমেন্ট রয়েছে। আইফোন প্রো মডেলগুলোতে রয়েছে ৪৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা এবং ৮কে ভিডিও রেকর্ডিং সুবিধা। এই ফোনের দাম বর্তমানে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯৯ টাকা।
অপো রেনো ৮: অপো রেনো ৮ ফোনে ৬.৬৫ ইঞ্চি অ্যামোলেড ডিসপ্লে রয়েছে, যা ১,০৮০ বাই ২,৪০০ পিক্সেলের ফুল এইচডি প্লাস রেজুলেশন এবং ১২০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট যুক্ত। নিরাপত্তার জন্য এই ফোনের ডিসপ্লের ওপর রয়েছে একটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার। কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৭ জেন ১ চিপসেট দ্বারা চালিত এই ফোনে আছে এলপিডিডিআর ১২ জিবি র্যাম এবং ২৫৬ জিবি ইউএফএস ৩.১ স্টোরেজ।
ফটোগ্রাফির জন্য এই ফোনের রিয়ার প্যানেলে রয়েছে ৫০ মেগাপিক্সেল সনি আইএমএক্স৭৬৬ প্রাইমারি সেন্সর, একটি ৮ মেগাপিক্সেল লেন্স এবং একটি ২ মেগাপিক্সেল সেন্সর। সেলফির জন্য এই ডিভাইসে রয়েছে ৩২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। পাওয়ার ব্যাকআপের জন্য রয়েছে ৪,৫০০ এমএএইচ ব্যাটারি, যা ৮০ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি সাপোর্টেড। ফোনটির বাজার মূল্য ৩৫ হাজার টাকা।
গুগল পিক্সেল ৬এ: পিক্সেল ৬এ ফোনের ডিজাইন পিক্সেল ৬ সিরিজের মতোই। তবে পিক্সেল ৬ ফোনের তুলনায় দাম অনেকটাই কম। এটির বাজার মূল্য ৪৪৯ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৯ হাজার টাকা। ফোনটিতে রয়েছে ফুল এইচডি প্লাস ৬.১ ইঞ্চির ওলেড পাঞ্চ হোল ডিসপ্লে। স্ক্রলিং এবং সুইপিংয়ে সুবিধার জন্য ডিসপ্লেতে রয়েছে ৬০ হার্জ রিফ্রেশ রেট। যদিও রিফ্রেশ রেট অনেকটাই কম। সাধারণত এই ধরনের ফোনে ৯০ থেকে ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেট ব্যবহার করা হয়। ডিসপ্লে রেজুলেশন ১০৮০ বাই ২৪০০ পিক্সেল। ফোনটি যাতে হাত থেকে পড়ে ভেঙে না যায় সে জন্য ডিসপ্লেতে ব্যবহার করা হয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাস ৩।
ফোনটির প্রধান আকর্ষণ, এতে শক্তিশালী অক্টো-কোর গুগল টেনসর চিপসেট ব্যবহার করা হয়েছে। এই চিপসেটে রয়েছে স্মার্টফোনের সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট, গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট, নিউরাল প্রসেসিং ইউনিটসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। যার ফলে ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে থাকে ফোনটি। ফোনের ৬ জিবি র্যাম ও ১২৮ জিবি রম। ব্যাকসাইডে ডুয়েল ক্যামেরার ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১২.২ মেগাপিক্সেলের সনির আইএমএক্স৩৬৩ প্রাইমারি সেন্সর ও ১২ মেগাপিক্সেলের আল্ট্রা-ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স। ১২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা হলেও ফোনটি দিয়ে অনায়াসেই ৪কে ভিডিও করা যায়। সেলফি ও ভিডিও কলিংয়ের জন্য থাকছে ৮ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা। থাকছে ৪৪১০ এমএএইচ ব্যাটারি। দ্রুত চার্জ করতে থাকছে ২৫ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তির চার্জার।
ভিভো এক্স৮০: ভিভো এক্স৮০ ফোনে রয়েছে মিডিয়াটেক ডাইমেনসিটি ৯০০ প্রসেসর। ২৫৬ জিবি স্টোরেজের এই ফোনে আছে ৮ জিবি র্যাম। এতে এক্সটেন্ডেড র্যাম ৩.০ সাপোর্ট করবে, ফলে ৮ জিবি পর্যন্ত ভার্চুয়াল র্যাম ব্যবহার করা যাবে। থাকছে ৬.৪৪ ইঞ্চি ফুল এইচডি প্লাস অ্যামোলেড ডিসপ্লে, যার রিফ্রেশ রেট ৯০ হার্টজ। ১০৮০ বাই ২৪০৪ পিক্সেল রেজুলেশনের ফোনে রয়েছে ১৩০০ নিটস ব্রাইটনেস এবং এইচডিআর১০ প্লাস সাপোর্টেড।
ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপের এই ফোনে রয়েছে অপটিক্যাল ইমেজ স্টেবিলাইজেশন টেকনোলজিযুক্ত ৬৪ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি সেন্সর, ৮ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা-ওয়াইড সেন্সর এবং ২ মেগাপিক্সেল ম্যাক্রো শুটার। সেলফি ও ভিডিও কলিংয়ের জন্য ফোনে রয়েছে এআই অটোফোকাস ও এফ/২.০ অ্যাপরচারসহ ৫০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে রয়েছে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ১২।
ভিভো এক্স৮০ লাইট ফোনে গেম বুস্ট মোড, লিকুইড কুলিং সিস্টেম ও ৪ডি গেম সাপোর্ট করবে। পাওয়ার ব্যাকআপের জন্য রয়েছে ৪,৫০০ এমএএইচ ক্যাপাসিটির ব্যাটারি, যা ইউএসবি টাইপ-সি পোর্টের মাধ্যমে ৪৪ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট করে। সানরাইজ গোল্ড ও ডায়মন্ড ব্ল্যাক রঙের ফোনটির বাজার মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৮ হাজার টাকা।