মোবাইল ফোন এখন সবার কাছেই অতি প্রয়োজনীয় একটি যোগাযোগের মাধ্যম। কথা বলার পাশাপাশি ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি ব্যবহারের কারণে জীবনযাত্রার নিত্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ এই মোবাইল ফোন। নতুন বাজেটে মোবাইল ফোনে কথা বলা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর আরও ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
মোবাইলে কথা বলা ও ইন্টারনেট সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক আরো ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। একইসঙ্গে নতুন অর্থবছরে সিম ট্যাক্স আগের চেয়ে আরো ১০০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে দেয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এই প্রস্তাব করেন তিনি। এই প্রস্তাবানায় উচ্চবিত্ত থেকে শুরু মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তদের কাছে মোবাইল ফোনে কথা বলার পাশাপাশি ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে জীবনের নানা প্রয়োজন মেটানোর খরচ আরও বাড়বে।
প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পরপরই নতুন এ শুল্ক হার কার্যকর করবে মোবাইলফোন অপারেটরগুলো। একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির যোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, ‘বাজেট ঘোষণার জন্য অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেই এ সংক্রান্ত আদেশ (এসআরও) পাঠানো হয়। ফলে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেল ৩টার পর থেকেই নতুন হারে গ্রাহকের কাছ থেকে কর কর্তন শুরু করা হতে পারে।’
সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সরকার ২৮ টাকা শুল্ক-কর পাবে এবং বাকি অর্থের সমপরিমাণ টকটাইম পাবেন মোবাইল গ্রাহক। কেননা, আগে মোবাইলফোনের কল রেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হতো গ্রাহকদের। এখন তা আরও ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর সঙ্গে ভোক্তাদের ১ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে। অর্থাৎ নতুন করে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানোয় একজন গ্রাহক এখন ১০০ টাকার রিচার্জ করলে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কেটে নেওয়ার পর ৬৯ টাকা ৩৫ পয়সার কথা বলতে পারবেন।
অপরদিকে বাজেট প্রস্তাবে এবার প্রতিটি সিমকার্ড বা ই-সিম সরবরাহের বিপরীতে বিদ্যমান মূসকের পরিমাণ ২০০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব করায় এক্ষেত্রেও খরচ বাড়বে।
প্রসঙ্গত, দেশে সর্বপ্রথম ৮০০ টাকা দিয়ে এই সিম ট্যাক্সের যাত্রা। এরপর ২০১১-১২ অর্থবছরের তা ২০০ টাকা কমিয়ে ৬০০ টাকা করা হয়। পরে এই ট্যাক্স অর্ধেক কমে আসে ৩০০ টাকায়। তবে ২০১৫-১৬ অর্থবছর হতে সিম ট্যাক্স ১০০ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। পরে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সিম ট্যাক্স ফের দ্বিগুণ করে ২০০ টাকা করা হয়েছিলো।
বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ৪০ শতাংশ নাগরিককে টেলিযোগাযোগ সেবা থেকে বঞ্চিত করবে প্রস্তাবিত বাজেট। ২০৪১ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষকে টেলিযোগাযোগ ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনার পরিকল্পনা সেখানে সিমট্যাক্স ও সেবার ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধির কারণে সেবার বাইরে থাকা নাগরিকদের সংযুক্তি থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে।