ইন্টারনেট ব্যবহারীদের অনেকেই ডার্ক ওয়েবের কথা শুনে থাকবেন। অবার অনেকেই কাছেই এটি একটি নিতান্তই অপরিচিত। ডার্ক ওয়েব বুঝতে হলে ইন্টারনেটের মহাসমুদ্র সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। ইন্টারনেট এক গভীর সমুদ্রের মতো। সেখানে আমরা দৈনন্দিন জীবনে যা যা ব্যবহার করি তাকে সমুদ্রপৃষ্ঠের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এই সব ওয়েবসাইট বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে নথিবদ্ধ থাকে। ইন্টারনেটের এই অংশকে সারফেস ওয়েব বলা হয়।
যেকোনো ওয়েব ব্রাউজার থেকে এই সব ওয়েবসাইট খোলা সম্ভব হয়। এর নিচেই থাকে ডিপ ওয়েব । যেখানে ওয়েবসাইটগুলো যেকোনো ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে ওপেন করা গেলেও সার্চ রেজাল্টে এই ওয়েবসাইটগুলো দেখা যায় না। এর নিচে রয়েছে মহাসাগরের অতল গভীর। যা সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কখনও অভিজ্ঞতা করেন নি। ইন্টারনেটের এই অংশকে বলা হয় ডার্ক ওয়েব।
এই ডার্ক ওয়েবে চলে অবৈধ কার্যকলাপ। যেখানে বিচরণ করেন অপরাধীরা। তারা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নানান ব্যক্তিগত ও দরকারি তথ্য ডার্ক ওয়েবে বিক্রি করেন।
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টসহ বর্তমানে আমাদের ফোনে নানারকম অ্যাকাউন্ট থাকে। এই অ্যাকাউন্টের তথ্যের সুরক্ষায় কিছুটা দুর্বল থাকলেই তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে ডার্ক ওয়েবে। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন আপনার তথ্য ফাঁস হয়ে গিয়েছে ? বিশেষজ্ঞরা এক্ষেত্রে কিছু লক্ষণের কথা জানাচ্ছেন। এই লক্ষণগুলো দেখলে সতর্ক হতে হবে।
ডার্ক ওয়েবে তথ্য ফাঁস হওয়ার লক্ষণ-
১. ঘন ঘন অজানা ই-মেইল, ফোন ও মেসেজ আসা
এই ঘটনাটি এমনিতেই অনেকের সঙ্গে হয়ে থাকে। কিন্তু ঘন ঘন হচ্ছে কি? রোজই বেশ কয়েকবার এমন ফোন, ই-মেইল আসছে নানা তথ্য চেয়ে ব্যাঙ্কের ব্যাপারে ? তাহলে বুঝতে হবে ডার্ক ওয়েবে ফাঁস হয়েছে আপনার তথ্য।
২. ব্যাংকের অ্যাপ ব্যবহার করতে পারছেন না
এখন প্রায় অনেকেরই ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপ রয়েছে। অনেকেই সেটি ব্যবহার করেন। কিন্তু সেখানে পাসওয়ার্ড দিতেই পারছেন না। আপনাকে ব্লক করা হয়েছে, এমন লেখা প্রদর্শন করছে অ্যাপটি ? এমন হতেই পারে, তাহলে আপনার তথ্য ব্যবহার করে অন্য কেউ ব্যাংকিং অ্যাপ খোলার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয় আইডেন্টিটি দেখে ব্যাংক আপনার অ্যাকসেস লক করে দিয়েছে।
৩. ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে অচেনা লেনদেন
কার্ড ডুপ্লিকেট করার মাধ্যমে এই ধরনের প্রতারণার শিকার অনেকেই হচ্ছেন। মূল লক্ষ বয়স্ক ব্যক্তিরা। তাই এমন অচেনা লেনদেন হলে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হন।
৪. আপনার অজ্ঞাতে পাসওয়ার্ড চেঞ্জ বা লগইন
কোনও অ্যাপে আপনার অজ্ঞাতে লগইন করা হয়েছে বা পাসওয়ার্ড পাল্টেদেওয়া হয়েছে। কিছুঅ্যাপ এই সংক্রান্ত নোটিফিকেশন মেল বা মেসেজ পাঠায়। এমন মেসেজ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হতে হবে।
ডার্ক ওয়েভে তথ্য ফাঁস ঠেকাতে কী করবেন ?
১. টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন বা টু স্টেপ ভেরিফিকেশন
এখন বিভিন্ন অ্যাপই এই ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথম ধাপে আপনি সঠিক পাসওয়ার্ড দিলেও পরের ধাপে আপনাকে আটকে দেবে অ্যাপ। পরের ধাপে ফোনে পাঠানো ওটিপি জমা দিতে হবে। যা অ্যাকাউন্টের সঠিক মালিকই করতে পারবেন। এছাড়াও, অ্যাপটি অন্য কোনও ডিভাইস থেকে আপনিই যে লগইন করছেন তা নিশ্চিত করতে বলতে পারে। অথবা অ্যাপটি থেকে আগে সেভ করে রাখা বিশেষ কোড ব্যবহার করতে হতে পারে। এই টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন বা টু স্টেপ ভেরিফিকেশন প্রতি অ্যাপে গিয়ে চালু করে দিন।
২. ব্যাংকের হেল্পলাইনে কল করুন
ব্যাংকে কোনও অচেনা লেনদেন দেখলে এক মিনিটও সময় নষ্ট নয়। দ্রুত ওদের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লক করে দিন। ডেবিট কার্ডসহ সব কার্ড লক করে দিন। এর পরের ধাপে একটি আবেদন করে করে ব্যাংক ও থানায় দিতে হবে। যত দ্রুত এই কাজ হবে, তত দ্রুত সক্রিয় হবে সাইবার ক্রাইম বিভাগ। আর ততই বেশি সম্ভাবনা লুট যাওয়া টাকা ফেরত পাওয়ার।