কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ই-ক্যাব, নামটা শুনলেই বোঝা যায়—এটা দেশের ই-কমার্স খাতের প্রতিনিধিত্বকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে—এই সংগঠনটি কী আসলেই উদ্যোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করছে, নাকি ‘একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর’ সুবিধা নিশ্চিত করার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে?
ই-কমার্স খাত যে গত কয়েক বছরে ব্যাপক জটিলতা, প্রতারণা ও ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ থেকে শুরু করে ধামাকা—একটির পর একটি ই-কমার্স স্ক্যাম এই খাতের প্রতি মানুষের আস্থা চূড়ান্তভাবে দুর্বল করে দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেই সময় ই-ক্যাব কী ভূমিকা রেখেছিল? ভোক্তা, উদ্যোক্তা ও রাষ্ট্রের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরির বদলে ই-ক্যাবের অনেক কার্যক্রমই ছিল ‘পদ রক্ষার কূটনীতি’ আর সুবিধাবাদী নীরবতা।
আজও দেখা যায়, কিছু নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে ই-ক্যাবের নেতৃবৃন্দ সরব থাকেন। অথচ নতুন উদ্যোক্তারা বারবার অভিযোগ করেন—সংগঠনটি তাদের আইনি সহায়তা, লগিস্টিকস বা প্ল্যাটফর্ম এক্সেসে কোনো ভূমিকা রাখে না। ই-ক্যাবের সদস্য হতে গেলেই চড়া ফি, আবার ভোটের সময় বিভিন্ন ধরনের অভ্যন্তরীণ চক্রান্ত—এসব মিলিয়ে এটি এখন অনেকের কাছে ‘ই-কমার্সের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট’ নামেও পরিচিত।
আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে স্বচ্ছতার অভাব। সংগঠনের আয়ের উৎস, ব্যয়ের খাত, বিদেশি অনুদান কিংবা সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের তথ্য—কোনোটাই সাধারণ সদস্যদের জানা নেই। প্রতিবছর কিছু কনফারেন্স বা মিটআপ হয় বটে, তবে তাতে বাস্তব উদ্যোগের চেয়ে বেশি থাকে ‘চকচকে পাওয়ার পয়েন্ট আর সেলফি সেশন’।
তবে সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো—এখন ই-ক্যাব অনেক ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করছে, অথচ তাদের গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার কাঠামো নেই।
তাহলে এতো কিসের মধু?
এই প্রশ্ন এখন অনেক উদ্যোক্তার মনেই ঘুরছে। ই-ক্যাবের নামের পাশে যেন এখন ‘প্রতিনিধিত্ব’ নয়, বরং ‘লভ্যাংশের লোভ’ বেশি চোখে পড়ে। উদ্যোক্তারা চাইছেন একটি বাস্তব, জবাবদিহিতামূলক ও পরিস্কার সংগঠন—যা আসলেই দেশের ই-কমার্স খাতকে এগিয়ে নিতে পারবে। না হলে, আরেকটি ‘ই-ক্যাব’ বানানোর দাবি আর দূরে নয়।
পাঠকের জন্য প্রশ্ন:
আপনার কি মনে হয়, ই-ক্যাব এখন ই-কমার্স খাতের উন্নয়ন করছে, নাকি কেবল সুবিধাভোগী কয়েকজনের জন্যই কাজ করছে?