রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর থেকে এক ক্যাবল নেটওয়ার্ক কোন ধরনের অনুমোদন বিহিন ফিড অপারেটরদের কাছে ডিস লাইন দিয়ে অবৈধ ভাবে ব্যবসা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে সরকার প্রতি মাসে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় কয়েক লাখ টাকা।
জানা যায়, বাগমারার তাহেরপুরে বিসিএন ক্যাবল নেটওয়ার্কের মালিক ডিস বিমলের লাইসেন্স থাকলেও তার নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৫০ জন ফিড অপারেটর হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসা করে আসছেন। এই ফিড অপারেটর ব্যবসায়ীদের বৈধ অনুমতি ও লাইসেন্স ছাড়াই ডিস ব্যবসা করায় সরকার প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
সূত্রে জানাগেছে, প্রায় ১৮-২০ বছর যাবৎ তাহেরপুর পৌরসভার বাজার এলাকায় বিমল (ডিস বিমল) কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক লাইন এর ব্যবসা করে আসছে। গত ১০ বছর ধরে বিসিএন ক্যাবল নেটওয়ার্ক ডিস সংযোগের ব্যবসা পৌরসভা ছাড়াও আশেপাশে ৪ উপজেলায় বিস্তৃত এলাকায় (৫০টি ফিড অপারেটর) প্রায় ৬০ হাজার বৈধ সংযোগ ছড়িয়ে রয়েছে বলে জানাগেছে।
সূত্রে আরও জানাযায়, কতিপয় ডিস অপারেটর সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বছরে ডিস সংযোগে গ্রাহকদের নিকট হতে প্রতি মাসে অর্ধ কোটি টাকা আদায় হয়ে থাকে বলে জানাগেছে। সেই হিসেবে ৪ উপজেলায় প্রায় ৬০ হাজার সংযোগ থেকে সরকার মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাবদ বিপুল পরিমান টাকা রাজস্ব পাওয়ার করার কথা থাকলেও তা দেয়া হচ্ছেনা।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফিড অপারেটর হলেন, রামরামার সাদ্দাম ও আজাদ, পিরগাছা বাজারের ওয়াসিম বারী পলাশ, গোয়ালকান্দি বাজারের রশিদ, চেউখালি বাজারের কালাম, শরকুতিয়ার হাবিব, (ফিড লাইসেন্স আছে) হামিরকুৎসা বাজারের রাজু, কাশিয়াবাড়ি বাজারের মুন্না ও জিন্না, তালঘরিয়া বাজারের লিটন, যাত্রাগাছি বাজারের সোনা উদ্দিন, (ফিড লাইসেন্স আছে) কার্তিক পাড়া বাজারের মুনি, আড়ইল বাজারের বাবু, (ফিড লাইসেন্স আছে) মাইপাড়ার লুৎফর, তেবিলিয়া বাজারের সুমন, দমদমা বাজারের রশিদ, বাসুপাড়া বাজারের হাফিজ, (ফিড লাইসেন্স আছে) মোল্লাপাড়া বাজারের কানাই মাস্টার, (ফিড লাইসেন্স আছে) পচাঁ মাড়িয়া বাজারের গোলাম মোস্তফা, সাতার পাড়ার ওয়াহেদ, সরগাছি বাজারের আরিফ, রঘুনাথপুর বাজারের মনির, বড়ইল বাজারের লালটু, রাতুগ্রাম বাজারের আলম, কয়ামজমপুর মাহাবুর, সুজানগর বাজারের সাইফুল, গোপালপুর বাজারের সাননান, ইসবপুর বাজারের বাদশা, তাহেরপুর বাজারের জেবন, মোহনগঞ্জ বাজারের জনি, আলিয়া বাদ নাজমুল, বাসু বালিয়ার ওয়াহেদ, পালসা বাজারের রুবেল, শ্রীপুর গোয়ালকান্দা বাজারের আফজাল, সুলতানপুরের ফয়সাল, জামগ্রামের হেলাল, আলু গাছি বাজারের হাবিবুল, খয়রার আশাদুল ও তাহেরপুর বাজারের ইদ্রিস আলী কবিরাজ। এই ফিড অপারেটর দের সবার এক হাজার থেকে দুই হাজার অবৈধ সংযোগের গ্রাহক আছে।
এ ছাড়াও কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক মালিক অধিকাংশ গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কম ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে ডিস সংযোগ দেয়ায় টিভির গ্রাহক বা দর্শকরা সুন্দর এবং স্পষ্ট ছবি দেখতে না পেয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অভিযোগের পর অভিযোগ দিয়ে আসছে। এ কারনে দর্শকদের চোখ এবং মানষিক সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানাগেছে। কিন্তু ক্যাবল নেটওয়ার্ক মালিক বা লাইনম্যানরা পাত্তা দেন না বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করেন। বেশি বাড়াবাড়ি করলে কোন ধরনের আগাম নোটিশ না দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ঘটনা ঘটছে। বিনোদনের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ডিস গ্রাহকরা ক্যাবল নেটওয়ার্ক মালিক এবং লাইনম্যানদের দাপটে সব সময় অস্থির থাকেন। স্থানীয় প্রশাসনের নিকট অবৈধ ক্যাবল নেটওয়ার্ক মালিকদের চিহ্নিত করে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেবেন বলে এলাকাবাসী দাবি জানন।
একাধিক ফিড অপারেটর বলেন, তার কোন কেবল অপারেটরের লাইসন্স নেই, তারা সবাই বিসিএন ক্যাবল নেটওয়ার্ক মালিক (ডিস বিমল) সাথে চুক্তিতে ফিড অপারেটর সংযোগ দিয়ে ব্যবসা করে আসছে।
অভিযোগ সম্পর্কে বিমল উরফে (ডিস বিমল) বলেন, আমার বিসিএন প্রতিষ্ঠান অপারেটর লাইসেন্স নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবৎ ব্যবসা করে আসছে। তবে আমি যেগুলো ফিড অপারেটর দিয়েছি তাদের অধিকাংশরই ফিট অপারেটর লাইসেন্স বা বৈধ অনুমতি নাই।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারা দেশেই অবৈধভাবে ডিস অপেরেটর ব্যবসা চলে এমনকি রাজশাহী দুর্গাপুর অনুমোদন ছাড়া ডিস ব্যবসা করছে তাই আমিও অবৈধ ফিড অপারেটর দিয়ে ব্যবসা করছি।
সম্প্রতি অবৈধ ভাবে ডিস লাইন পরিচালনার অপরাধে উপজেলার ভবানীগঞ্জ বাজারের গোডাউন মোড়ে আকতার কেবল নেটওয়ার্ক নামের একটি ডিস ব্যবসায়ের কন্ট্রোল রুম সিলগালা করেছে উপজেলা প্রশাসন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বলেন, যারাই অবৈধ ডিস ব্যবসা পরিচালনা করুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ববস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকে অবৈধ ভাবে ডিস লাইন চালাতে দেয়া হবে না।