জেলার পণ্যকে অনলাইনে তুলে ধরার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে গত ৩১ মে টেকজুমের প্রযুক্তি লাইভে আসেন খুরশিদা ইসলাম রুকু। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় করেন আওয়ার শেরপুর এর প্রতিষ্ঠাতা মোঃ দেলোয়ার হোসেনে। রুকু আলোচনা করেন দিনাজপুর জেলার দেশি পণ্যের ই-কমার্স সম্ভাবনা নিয়ে। খুরশিদা ইসলাম রুকু একজন দেশি পণ্যের উদ্যোক্তা। তার উদ্যোগের নাম ঘরকুনো সিনজিনি। রুকুর লাইভের সারাংশ লিখছেন ইপ্পি শপিং এর স্বত্বাধিকারী রোখসানা আক্তার পপি।
দিনাজপুর থেকে অনলাইন উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করতে কেমন সুযোগ সুবিধা আছে?
বর্তমান যুগ ই-কমার্সের। কয়েক বছর আগেও এই অবস্থা ছিল না, আমরা এত বেশি নির্ভরশীল ছিলাম না অনলাইনের। দিনে দিনে বাড়ছে অনলাইনে কেনাকাটা। ৭-৮ বছর আগে চিন্তা করতে পারতাম না দিনাজপুরে বসে সিলেটের চা, চাঁদপুরের ইলিশ দিনাজপুরে বসে পাবো। ই কমার্সের কল্যাণে তা সম্ভব হচ্ছে। আগে দিনাজপুরে হাতে গুণা কয়েকটা কুরিয়ার সার্ভিস ছিল। বর্তমানে অনলাইন বিজনেসের চাহিদা বাড়ার কারণে কুরিয়ার কোম্পানি গুলো দিনাজপুরে শাখা দিচ্ছে। যার ফলে ডেলিভারিতে অনেক বেশি সহজ হচ্ছে।
দিনাজপুরের উদ্যোক্তারা কোন ধরনের প্রডাক্ট নিয়ে অনলাইনে কাজ করছেন?
সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও দিনাজপুর থেকে অনেক উদ্যোক্তারা অনলাইনে কাজ করছেন। আমি কয়েকজন উদ্যোক্তাদের চিনি যারা দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, চিনিগুড়া সুগন্ধি চাল, লিচু, আম সহ অনেক স্থানীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছে। ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি রাজিব স্যারের পরামর্শে আম নিয়ে কাজ শুরু করছি। আম নিয়ে একদম নতুন অভিজ্ঞতা। লিচু নিয়ে অনেকে কাজ করলেও আম নিয়ে খুব বেশি উদ্যোক্তা কাজ করছেনা এজন্য আমি আম নিয়ে কাজ করতে চাই। এটি দিনাজপুরের সম্ভাবনাময়ী পন্য। এছাড়াও দিনাজপুরের মুগ ডালের পাপড়, চিড়া, সিদল এসব খাবার নিয়ে অনেক উদ্যোক্তারা কাজ করছেন। অনলাইনে বিক্রি করে অনেকে সাবলম্বী হচ্ছে। সারাদেশে যাচ্ছে তাদের পন্য। দিন দিন প্রোডাক্ট ও উদ্যোক্তা সংখ্যা বাড়বে।
জেলার পণ্য গুলো অনলাইনে তুলে ধরার ফলে কর্মসংস্থানের কেমন ভূমিকা থাকবে?
প্রতিটি জেলায় শিল্প আছে একসময় যেগুলোর চাহিদা ছিল অসীম তবে দিন দিন চাহিদা কমতে থাকায় এসব পেশায় জড়িতরা জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় যোগ দিচ্ছে। যেসব পণ্য বিলুপ্তির পথে সে সব পণ্য অনলাইনে তুলে ধরতে পারলে চাহিদা বাড়বে এবং ফিরবে এসব শিল্পের দিন। এর জন্য প্রয়োজন অনলাইনে প্রচুর তথ্য দেওয়া। আমি যদি উদাহরণ দিয়ে বলতে চাই আম-লিচুতে যদি উদ্যোক্তা বাড়ে তাদের অর্ডার ডেলিভারি করার জন্য পণ্যের প্যাকেজিং থেকে শুরু করে ভোক্তার হাতে পৌছানো পর্যন্ত লোকবল প্রয়োজন। এতে নতুন কিছু কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
দিনাজপুর থেকে কিছুদিন আগে রিডিং সিলেবাস নিয়ে আপনারা একটা ভিডিও করেছিলেন, ভিডিওতে সকলের উন্নতির কথা বলা হয়েছে। ইংলিশ রিডিং সিলেবাস ক্যারিয়ারে কতটা সহায়ক হবে বলে মনে করেন?
একটা সময় ছিলো বড় পোস্ট সামনে আসলে স্কিপ করতাম। ডিএসবি তে জয়েন হয়ে রাজিব আহমেদ স্যার সহ মেম্বারদের প্রচুর পোস্ট পড়ি। এতে দ্রুত পড়ার অভ্যস হয় এবং কমেন্টের মাধ্যমে দিনাজপুরের অনেকের সাথে নেটওয়ার্কিং হয়। পোস্টের মাধ্যমে স্যারের পরামর্শ পেয়ে ১০ মিনিট রাইটিং চর্চা শেষ করি, এতে নিজের ভেতর অনেক পরিবর্তন লক্ষ করি। পণ্য সম্পর্কে স্টোরি টেলিং, কনটেন্ট রাইটিং, দ্রুত পড়তে পারা, আত্মবিশ্বাস সহ অনেক উন্নতি হয় লক্ষ্য করি।। চাকরিজীবী বা উদ্যোক্তা সবার জন্যই রিডিং সিলেবাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজির দক্ষতা এবং পড়ার আগ্রহ বাড়াতে দারুণ ভূমিকা রাখে রিডিং সিলেবাস।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় দিনাজপুরের রাজা ছিলেন প্রাণনাথ। তিনি একবার রাষ্ট্রদ্রোহিতার মত ভুল কাজ করে ফেলেছিলেন। এরফলে সম্রাট খুব রুষ্ট হয়েছিলেন। সেই সময় প্রাণনাথ বিভিন্ন নামী দামী পাথরের সাথে সম্রাটের জন্যে দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল উপহার পাঠায়। এতে সম্রাট খুশি হয়। রিডিং সিলেবাস শেষ করায় পড়ার আগ্রহে বেড়ার কারণে এতো সুন্দর কিংবদন্তি জানার সুযোগ হয়েছে।
জেলার পণ্যকে অনলাইনে তুলে ধরার সম্ভাবনা কেমন? টীমওয়ার্ক কতটা সুফল বয়ে আনবে?
ই-কমার্সে স্থানীয় পণ্যের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। দিনাজপুরের এমন অনেক পণ্য আছে যেগুলো দেশের অন্য কোথাও হয় না। তা পাওয়ার জন্য অনলাইন ই ভরসা। যেমন কাটারিভোগ চাল, পাপড় ইত্যাদি পাশের জেলা ঠাকুরগাঁও এও হয় না। দিনাজপুরের লিচুর স্বাদ সেরা। টিমওয়ার্ক করতে পারলে এসব পণ্য সহজে তুলে ধরা যাবে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হবে।