হাজার বছরের বাঙালির সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি কালের আগ্রাসনে অনেকখানি বিলুপ্ত হতে চললেও, কিছু ঐতিহ্য আজো বাঙালির রন্ধ্রে মিশে আছে বলে বহাল তবিয়তে রাজ করে চলেছে।
তেমনি এক ঐতিহ্য, এ জাতির “পান বিলাস”।
‘ভালোবাসার এমনি গুণ, পানের সঙ্গে যেমনি চুন; বেশি হলে পোড়ে গাল, কম হলে লাগে ঝাল।’এমন আরও অনেক উপমাবহুল লোককথা শুনতে পাওয়া যায় এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
গ্রাম-শহর, ধনী-দরিদ্রকে যেন এক সূতোয় বেঁধে রেখেছে এই পান পাতার ভালোবাসা। গ্রামের বউজিদের দেখা যায় নিজের বাটার পান ফুরোলে এক পাড়া থেকে পানের খুঁজে অন্য পাড়ায় গিয়ে হাজির হোন, আর পান খেতে খেতে জমে উঠে দারুণ আড্ডা।
আমাদের নানী-দাদিরা বাটা থেকে পান বের করে নানান জাতের জর্দা, চুন আর সুপুরির মিশেলে পান সাজিয়ে নিয়ে মেতে উঠেন গল্প আড্ডায়, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে যায় গল্প ফুরোয় না! এটাই চিরাচরিত গ্রামীন বয়োজষ্ঠো আর বউজিদের সবচেয়ে সুখকর মুহূর্তের দৃশ্য।
পল্লীবধূর পান খাওয়া লাল ঠোঁটের সৌন্দর্যের কাছে যেন, বিশ্বের নামি দামী সব ব্র্যান্ডের কৃত্রিম লিপস্টিকের রং ম্লান হয়ে যায়।
আর বাঙালির বিয়ে মানেই যেন “পান বিলাস”। বিয়ের প্রতিটি প্রোগ্রামের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ এই পান। একে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে আবার বিভিন্ন রেওয়াজ।
সম্ভ্রান্ত সমাজে পানের এককালে বিশেষ সমাদর ছিল, তখন কনে দেখার সময় পাত্রীকে নিজের হাতে পান সাজিয়ে পরীক্ষা দিতে হতো পাত্রপক্ষের বয়স্কজনদের কাছে। যথাযথভাবে পানের খিলি তৈরি করে বহু খিলি পান একসঙ্গে গেথে মনোহর সব নকশা সৃষ্টি করা হতো। আর এ-কাজে ব্যবহার করা হতো লবঙ্গ। কারুশৈলীর নানা দিগন্ত উন্মোচিত হতো তখন আগত অতিথিদের সামনে।
কনে দেখা পর্ব শেষে কনে পছন্দ হলে শুরু হতো বিয়ের আয়োজন। বাঙালি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বিয়েতেই পানের ব্যবহার অপরিহার্য ছিল চিরকাল। বিয়ের একাধিক আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে পানের সম্পৃক্ততা তো ছিলই আর অনুষ্ঠানের নামের সঙ্গেও যুক্ত ছিল পান।
যেমন- পানকড়াল, পানখিলি, পানচিনি, পান-পত্তর, পান-বাতাসা, পানশল্লা, পানের আলাপ ইত্যাদি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিবাহকেন্দ্রীক এ-সব আচার-অনুষ্ঠানের অধিকাংশই আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
তবে এখনো বিয়ের জম্পেশ ভূরিভোজের পর অন্তত একখিলি পান মুখে না পুরলে বাঙালির চলেই না।
বর্তমানে আবার দেশের সব অঞ্চলে চলছে নানান নামের মিষ্টি পানের দৌরাত্ব্য। এভাবে সৌখিন মানুষ আর তরুণ সমাজের আগ্রহ বাড়ছে পানের প্রতি, অনেকটা নতুন ট্রেন্ডের মতো। কোনো কোনো জায়গায় ২০-১৫ রকমের মসলার মিশেলেও তৈরী হয় এসব পানের খিলি। যেগুলোকে আবার বিভিন্ন নামকরণ করা হয়,
যেমন- ভালোবাসার আগুন পান, বর-বৌ পান, মিষ্টি পান, মসলা পান ইত্যাদি।
ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত পানঃ
কাউনিয়াঃ
ময়মনসিংহ সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অষ্টধর ইউনিয়নের কৃষিপ্রধান গ্রাম কাউনিয়া। সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি চরাঞ্চলের এ গ্রামটিতে দিন দিন বাড়ছে পানের আবাদ, যেখানে ছোট-বড় মিলিয়ে কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক পানের বরজ রয়েছে।
আগে এ গ্রামে প্রচুর পরিমাণে কাউন চাষ হত বলে নাম ছিল কাউনিয়া, আর এখন পান চাষে সমৃদ্ধি লাভের সাথে গ্রামের নামও বদলে গিয়েছে। কাউনিয়া এখন “পানের গ্রাম” নামেই বেশি পরিচিতি লাভ করছে।
পান চাষের উপযোগী বেলে দোআঁশ মাটিতে জন্মানো কাউনিয়ার পান অনেক বেশি সুস্বাদু পান। আর তাই কাউনিয়ার পান দেশের সব অঞ্চলে যাওয়া সহ, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হচ্ছে। এতে গ্রামের অনেকেই যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতির শক্তিশালী ভিতও তৈরী হচ্ছে।
নান্দাইলঃ
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের রাজাবাড়ী গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান। তিনি নিজের সব জমিতে ধান চাষ করে কয়েক বছর লোকসানের সম্মুখীন হওয়ায়, এখন সে সব জমিতে কয়েক বছর ধরে ধানের পাশাপাশি পান চাষ শুরু করেছেন।
শুরুতে অল্প জমিতে চাষ করলেও বর্তমানে প্রায় দুই একর জমিতে পানের বরজ রয়েছে তার। পান বিক্রি করে এখন নিয়মিত লাভ করতে পারছেন তিনি এবং তার সাফল্য দেখে অন্য কৃষকরাও ধানের পাশাপাশি জমিতে পান চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, একসময় উপজেলার প্রায় ৫০ হেক্টরের কম জমিতে পান চাষ হতো। তবে ২০১৪ সালে পান আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ হেক্টরে দাঁড়ায়। আর এ বছর উপজেলাটি চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১০৬ হেক্টরে। পৌরসভাসহ উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর, মোয়াজ্জেমপুর, নান্দাইল, সিংরই, আচারগাঁও, শেরপুর, খারুয়া ইউনিয়নে প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি পানের বরজ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পান চাষ হচ্ছে জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নে। ইউনিয়নটিতে নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রায় দুই হাজারের মতো পানচাষী রয়েছেন।
গফরগাঁওঃ
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ছয়আনি রসুলপুর গ্রামের কৃষক দুলাল উদ্দিনের ৫ সদস্যের সংসার চলে একটি পান বরজের আয় দিয়ে। প্রায় চার কাঠা জমির উপর গড়ে তোলা এই পান বরজ থেকে তিনি প্রতি বছর অন্তত চার লাখ টাকার পান বিক্রি করেন তিনি।
মুক্তাগাছাঃ
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় পান অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে। এই উপজেলার হাজার খানেক কৃষক পান চাষের সাথে জড়িত। এ উপজেলার তারাটি, মানকোন ও ঘোগা ইউনিয়নের প্রায় ৬২টি গ্রামের মানুষ পান চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। পুরো এলাকা পানের বরজ আর বরজ।
এ অঞ্চলে উৎপাদিত পান, দেশের বিভিন্ন জেলাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় পান চাষের মাধ্যমে এ এলাকার শত শত পরিবার নিজেদের ভাগ্যের চাকা রীতিমতো ঘুরিয়ে দিয়েছেন।
উপজেলা শহরের আটানী বাজার, দরিচারআনি বাজার, সাহেব বাজার, জয়বাংলা বাজার, খামার বাজার, চেচুয়া, গাবতলী, কলিবাড়ি, দুল্লা বাজারে গড়ে উঠেছে পানের বিশাল আড়ৎ।
এখান থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা ট্রাক, বাস, মিনি ট্রাকে করে পান কিনে নিয়ে যান ঢাকার কাওরান বাজার, মগবাজার, তাতিবাজার, মিটফোর্ড বাজার, বাবুবাজারসহ, দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজারে।
সেখান থেকে অনেক পান রপ্তানীও করা হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। প্রতিবছর বাড়ছে পানচাষির সংখ্যা।
মুক্তাগাছার পানচাষিরা জানান, এই অঞ্চলের পান দেশের চাহিদা মিটিয়ে সৌদি আরবে রপ্তানি হচ্ছে। সৌদি আরবে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার পানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে জানান তারা।
এই উপজেলার উপসহকারী কৃষি অফিসার শংকর কুমার সরকার বলেন, “নতুন চাষিদের আধুনিক উপায়ে প্রযুক্তিনির্ভর পান চাষে উৎসাহ, উদ্দীপনা দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি এই এলাকার মাটি পান চাষের জন্য উপযোগী এবং ধান অপেক্ষা পান চাষে লাভজনক, তাই পান চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা।”
ফুলবাড়িয়াঃ
ফুলবাড়িয়া উপজেলার পুটিজানা ইউনিয়নের পাটুলী, বৈলাজান, মৌহতলা, গাড়াজান, নাওগাও ইউনিয়নের হরিরাম বাড়ী, শিবপুর, বাদিহাটী, আছিম পাটুলী ইউনিয়নের বাঁশদিল গ্রামের চাষিরা দেশি মিষ্ট,বেড়ামাড়া পান চাষ করে আসছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ীয়া উপজেলার সবচেয়ে বেশি পান উৎপাদন হয় পুটিজানা ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নে ৩৫শ’ হেক্টর জমিতে দেশি হাচি আর বেড়ামারা জাতের পান চাষ হয় থাকে। আগের থেকে পানের দামও অনেক বেড়ে যাওয়ায় পান চাষীরা ভীষন খুশি।
তারাকান্দাঃ
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কাকনী ইউনিয়নের পঙ্গুয়াই গ্রামের কৃষক সাইনউদ্দিন এই অঞ্চলে একক ভাবেই পান চাষ শুরু করেছিল ২০১৫ সালে। পরবর্তীতে তার সাফল্য দেখে ধীরে ধীরে আশেপাশের কৃষকরাও পান চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে পান চাষ করছেন।
পান চাষে বড় সুবিধা হচ্ছে, অল্প জায়গা ও কম পুঁজিতেই পান চাষ করা যায়। আর চারা রোপনের ঠিক কয়েক মাস পর থেকেই বরজ থেকে পান তোলে খুব ভালো দামে বিক্রি করা যায় এবং সারাবছরই এর সমান চাহিদা থাকে।
এদিকে পান চাষে লাভ হওয়ায় ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক কৃষক আবাদি জমির পাশাপাশি বাড়ির আশপাশের পতিত উঁচু জমিতেও পানের বরজ স্থাপন করছেন। অনেকে ভালো লাভের আশায় ধানের আবাদ বাদ দিয়ে পান চাষ করছেন।
বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পান চাষে সাধারণত সমতল জমি থেকে অপেক্ষাকৃত একটু উঁচু জমির প্রয়োজন হয়। এসব জমিতে বাঁশ, পাটখড়ি, বাঁশের শলা ও ছন দিয়ে বরজ তৈরি করে নিয়ম অনুযায়ী পানের চারা রোপণ করা হয়।
চারা রোপণের ছয় মাস পর থেকে গাছ থেকে পান ওঠানো যায়। স্থানীয় হাট-বাজারের সঙ্গে মিল রেখে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার পান তুলে বিক্রি করেন চাষীরা। আবার অনেক সময় বরজ থেকেও পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়।
একবার পানের বরজ স্থাপন করে নিয়মিত পরিচর্যা করলে ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত পান তোলা যায়। এসব বরজ থেকে প্রতি সপ্তাহে সর্বনিম্ন ৬ থেকে ৮ হাজার টাকার পর্যন্ত পান বিক্রি করা যায়। বরজ তৈরি করতে বিঘা প্রতি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয় তার। রোপণের ৫-৬ মাসের মধ্যে পান বিক্রি শুরু হয়ে যায়। এক বছর ব্যবধানে বার্ষিক আয় হয় ৫ লাখ টাকা।
এসব অঞ্চলে স্থানীয় বাজারে, এক বিড়া (৮০টি) বড় সাইজের পান ২৬০ টাকা থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি করেন এখানকার চাষীরা। এছাড়া মাঝারি সাইজের এক বিড়া ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় এবং ছোট সাইজের পান ৬০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করেন তারা। অঞ্চলভেদে দামে পার্থক্য দেয়া যায়। এসব পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায়।
পানের ভেষজ গুনঃ
• পান খেলে মুখের লালাগ্রন্থির নিঃসরণ বেড়ে যায়, ফলে লালার সাথে বিভিন্ন এনজাইম নিঃসৃত হয়। পান এভাবে দ্রুত খাবার হজমে সাহায্য করে। তাই যে কোনো উৎসবে খাওয়ার পর কোল্ড ড্রিংক্সের পরিবর্তে পান খাওয়া অধিক স্বাস্থ্যকর।
• পানের রস হজমে সাহায্য করায় তা গ্যাস্ট্রিক নিরাময়েও সাহায্য করে।
• খাবার গ্রহণের পর দাঁতে খাদ্যকণা জমে, সেটা পচে ব্যাকটেরিয়া হয়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। কিন্তু পান খেলে তার রস জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে এসব ব্যাকটেরিয়াকে জন্মাতে দেয় না, ফলে মুখে দুর্গন্ধও হয় না।
• পান চর্মরোগ সারায়। দেহের কোথাও দাদ হলে বা চুলকানি পাঁচড়া হলে সেখানে ঘষে পান পাতার রস লাগিয়ে দিলে কয়েক দিনের মধ্যে তা সেরে যায়।
• পান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, কারণ এটি রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে গবেষণায় জানা গেছে।
• বুকের ভেতর কফ/সর্দি বা শ্লেষ্মা জমা হলে তা বের করতে পানের রস কার্যকর।
• মাথা ব্যথা হলে কপালে পানের রস লেপে দিলে দ্রুত মাথাব্যথা কমে যায়।
• পানের বেদনানাশক ও ক্ষত সারানোর ক্ষমতা আছে। ক্ষতস্থানে পানের রস লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে রাখলে দুই-চার দিনের মধ্যেই ক্ষতস্থান শুকিয়ে যায়। কোথাও ব্যথা হলে পান পাতা বেটে মলমের মতো সেখানে লেপে দিলে দ্রুত ব্যথা কমে। দেহের ভেতরে কোথাও ব্যথা হলে পানের রস করে পানিতে মিশিয়ে তা শরবতের মতো খেলে উপকার পাওয়া যায়।
• পান পাতায় আছে চমৎকার এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ও দেহে ক্যান্সার সৃষ্টি প্রতিরোধ করে। এজন্য রোজ ১০-১২টি পান পাতা পানিতে ৫ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। এরপর তা নামিয়ে ছাঁকতে হবে। একটু ঠান্ডা হলে তাতে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে কুসুম গরম থাকতেই পান করতে হবে। রোজ এটা খেতে পারলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
• গলাব্যথা হলে খুব সহজেই তা পান পাতা ব্যবহার করে দূর করা যায়। এক্ষেত্রে ১ চা চামচ পান পাতার রস এ গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে গড়গড়া বা গার্গেল করতে হবে।
• দাঁতে ব্যথা হলে ২ কাপ পানিতে ২-৩টি পান পাতা সিদ্ধ করতে হবে। জ্বাল দিতে দিতে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে তা দিয়ে কুলকুলি করতে হবে। এতে দাঁতে ব্যথা কমে যাবে।
• পুড়ে গেলে সেখানে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া হয়। পোড়া জায়গায় পান পাতা বেটে তার সাথে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে প্রলেপ দিলে যন্ত্রণার উপশম হয় ও সহজে ঘা হতে পারে না।
এছাড়াও পানের আরও অনেক ঔষধী ব্যবহার রয়েছে, যা প্রত্যেকের জানা উচিত। কারণ সাইড ইফেক্টযুক্ত বিভিন্ন ঔষধ খাওয়ার থেকে রোগ নিরাময়ে এমন ন্যাচারাল ঔষধ গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য অধিক উপকারী।
ডাক্তার রা মূলত মশলাযুক্ত পান খেতে নিষেধ করেন, কারণ এতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পানের বোঁটাও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
তবে পানের রস অনেক রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে থাকে। পান পাতার সঠিক ব্যবহার জানা থাকলে, একে ঔষধ হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে সবাই।
তাই এর সঠিক ব্যবহার মানুষকে জানাতে হলে ই-কমার্স সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। পান পাতার এসব গুনাগুন এবং ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন কন্টেন্ট আর্টিকেল তৈরী করতে হবে।
যারা ই-কমার্স ব্যবহার করে হোম মেইড ফুড বিজনেস করছেন, তারা চাইলেই রেগুলার অর্ডারকৃত খাবারের সাথে কাস্টমারদেরকে নিজ অঞ্চলের পান উপহার হিসেবে দিতে পারেন, এর গুনাগুন আর ব্যবহার সংবলিত কোনো চিরকুট সাথে দিয়ে দিতে পারেন।
এভাবে গতানুগতিক ধারার বাইরেও পান পাতার ব্যবহার বাড়বে এবং নিজ অঞ্চলের পান চাষীরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি দেশের সমৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে।
পান রপ্তানিঃ
বিগত ছয় বছর ধরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এদেশের পানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরূপ করেছিল, পানে ক্ষতিকর সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে।
তবে সব বাঁধা কাটিয়ে এ বছর থেকে আবারও ইউরোপে এদেশ থেকে সম্পূর্ণ বিষ্মুক্ত পান রপ্তানি শুরু হয়েছে। প্রথম চালানে মে মাসে রপ্তানি হয়েছে এক মেট্রিক টন পান।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ময়মনসিংহ অঞ্চলের পানের চাহিদা সব সময়ই অনেক বেশি, আবার আমেরিকায়ও পানের চাহিদা অনেক বেশি উপমহাদেশীয় মানুষের বাস সেখানে অনেক বেশি হওয়ায়।
এসব দেশে পান রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। আর তাই পানকে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তাই এর উন্নয়নে প্রতিনিয়ত কাজ করে যেতে হবে দেশের কৃষি গবেষনা ও সম্প্রসারণে কাজ করে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর।