বেগুনী ধান, এটা আবার কিভাবে সম্ভব? কখনো তো দেখিনি? সত্যিই বেগুনী ধান চাষ করছে ময়মনসিংহের কৃষকরা। শুধু ময়মনসিংহে নয় বরং বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এখন বেগুনী ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে। বেগুনি ধানের নাম শুনলেই অনেকে প্রথমে মনে করে এটি বিদেশী ধানের কোনো একটা জাত হবে। কিন্তু না এটি আমাদের দেশীয় শ্রুক্রানু প্রাণরস (জার্মপ্লাজম)।
অন্যান্য ধান জাতের ধান যেভাবে চাষ করতে হয় ঠিক তেমন ভাবেই চাষ করতে হয় বেগুনী ধান।বেগুনী ধানের গাছ, পাতা,ধানের রং সোনালী হয়, চাল বেগুনী রং হয় এবং রান্না করার পর ভাতও বেগুনী রং এর হয়। বেগুনী চালগুলো শুধু যে দেখতে সুন্দর তা নয়, বরং ভাত খেতেও খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
বেগুনী ধানে অতিরিক্ত মাত্রায় এন্থোসায়ানিন ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারনে ধানের রং বেগুনী হয়।বেগুনী ধানে প্রচুর ফাইবার ও ভিটামিন রয়েছে যা মানুষের বার্ধক্য প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস,অ্যালজাইমার,ক্যান্সার ও হ্রদরোগের ঝুঁকি কমায় বেগুনী চালের ভাত।
মাঠ পর্যায়ের অবস্থার উপরে ভিত্তি করে বেগুনী ধানের জীবন কাল নির্ধারণ করা হয় ১৪৫ থেকে ১৫৫ লাগে ফলন হতে।প্রতি একরে ফলন হয় ৫৫ থেকে ৬০ মন।তবে এই ধানের বীজগুলো কৃষকরা নিজ উদ্যোগেই বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছিলো।এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন উপজেলায় চাষাবাদ হতে থাকে।
বেগুনী ধানের এই জাতকে বলা হয় পার্পল লিফরাইস। আমাদের দেশে প্রথম এই চালের চাষ হয় গাইবান্ধায়। জানা যায় এই উফশী ধানে রোগ বালাই বা পোকা মাকড় তেমন একটা আক্রমণ করে না।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার সরচাপুর গ্রামের কৃষক মাহবুব আলম বেগুনী ধানের চাষ করে প্রথম।তার মতে এই ধানের গোঁড়া ও কান্ড মজবুত হওয়ায় এটি সহজে বাতাসে হেলে পড়ে না।ব্রি -২৯ ধান যেমন ভাবে বীজতলা তৈরি করে রোপন করতে হয় তেমনি বেগুনী ধানও একই পদ্ধতিতে রোপন করতে হয়।
হালুয়াঘাটের সরচাপুরে মাহবুব যখন প্রথম এই ধানের চাষ করে তখন আশেপাশের অনেক মানুষ ধান ক্ষেত দেখতে আসে। মাহবুব উপজেলা কৃষি অফিসে জানিয়েছিলো যে, বেগুনী ধানের বীজ সে তার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলো।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায়ও বেগুনী ধানের চাষ করা হয়।ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে প্রথম বারের মতো বেগুনী ধানের চাষ করে মাইজবাগ ইউনিয়নের হারুয়া ব্লকের কৃষক চাঁন মিয়া।চাঁন মিয়া কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শেই প্রথম বেগুনী ধান চাষ শুরু করেন। ধানের ক্ষেত্রের বেগুনী হাসি দেখার জন্য অসংখ্য মানুষ ভির করতো।ধানের ফলন ভালো হওয়ায় গ্রামের মানুষ এই ধানের বীজ সংগ্রহে আগ্রহী হয়।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ঈশ্বরগঞ্জ, ধোবাউড়া সহ স্বল্প পরিসরে বেগুনী ধান চাষ করা হয়।কিন্তু এই বেগুনী চাল হতে পারে এই অঞ্চলের সম্ভাবনাময় পণ্য। বর্তমানে ই-কমার্সের যুগ, যতই দিন যাচ্ছে মানুষ ই-কমার্স ও অনলাইন কেনাকাটার দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। ই-কমার্সের মাধ্যমে সহজেই সারাদেশে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে পার্পল রাইস।প্রয়োজন শিক্ষিত উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা এবং কৃষকদের পার্পল রাইস চাষে আগ্রহী করে তোলা।আমাদের দেশে হরেক রকমের মিষ্টান্ন তৈরি হয় চাল দিয়ে যেমন পায়েশ,ফিরনী,জর্দা ইত্যাদি। এসবে অনেক সময় খাবার রং ব্যবহার করা হয় সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলার জন্য। কিন্তু যদি পার্পল রাইস দিয়ে তৈরি করা হয় এসব খাবার তাহলে খাবারের রং ব্যবহার করা কমে যেতে পারে। কারন এই চাষ এমনিতেই রঙ্গিন ও এর সৌন্দর্য রয়েছে।
ময়মনসিংহের ই-কমার্স উদ্যোক্তারা এই সেক্টরে উদ্যোগ নিলে কৃষকের সাথে সহযোগী হয়ে কাজ করলে এই সম্ভাবনা ময় খাতকে সারাদেশে পরিচিত করা সম্ভব হতো। আবার শিক্ষিত ও দক্ষ উদ্যোক্তারা যখন তাদের কনটেন্ট তৈরির মাধ্যমে প্রচার করতে থাকবে তখন অনেক হোটেল রেস্টুরেন্টের মালিকরাও এই চাল সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।
এতে করে সারাদেশের রেস্টুরেন্ট গুলো তাদের খাবারের সৌন্দর্য বাড়াতে ও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পার্পল রাইসের ব্যবহার করতে পারে। ফলে ধীরে ধীরে এই চালের যেমন চাহিদা বাড়তে পারে তেমনি চাহিদা বাড়লে কৃষকরাও ধান চাষে আগ্রহী হবে।
ময়মনসিংহের কৃষি পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোগক্তাদের সবার আগে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং কৃষকদেরকে পার্পল লিফরাইস চাষে আগ্রহী করে তুলতে হবে প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে। ময়মনসিংহের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিকে সমৃদ্ধ করতে উফশি জাতের বেগুনী ধান ও চাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।