ইতিহাসের দিক থেকে সমৃদ্ধশালী মুন্সিগঞ্জ জেলা অন্য দিকে থেকেও কোন অংশে পিছিয়ে নেই।এই জেলায় জন্মগ্রহন করেছেন অনেক অসাধারন ব্যাক্তিত্বের, কৃতিত্বের অধিকারী মানুষ।আজকের আলোচনা সে অসাধারন ও জনপ্রিয় ব্যাক্তিবর্গদের নিয়ে,যাদের জন্মস্থান হচ্ছে মুন্সিগঞ্জ।
স্যার জগদীশ চন্দ্রবসুঃ
জগদীশ চন্দ্র বসু,ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একজন প্রথম বিজ্ঞানী,যে কিনা প্রমান করেন “গাছের ও প্রান আছে”।
এই বিখ্যাত বিজ্ঞানী জন্মগ্রহন করেন ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর।তার জন্মস্থান হচ্ছে তৎকালীন সময়ের ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে, বর্তমানে যা বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলা নামে পরিচিত। তার গ্রামের নাম রাঢ়িখাল।
জগদীশ চন্দ্র বসুর পিতার নাম ভগবান চন্দ্র বসু।তিনি একজন ব্রাহ্ম (হিন্দু) ধর্মাবলম্বী ছিলেন। ভদ্রলোক সে সময়ে পেশায় ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।
ব্রিটিশ আমলের একজন ম্যাজিস্ট্রেট হয়েও, তিনি ছেলে জগদীশ চন্দ্রবসুর বাংলা ভাষায় পড়াশুনার প্রতি অনেক গুরুত্ব দিতেন,এইজন্য সামর্থ্য থাকা সত্বেও ছেলেকে তিনি কখনো ইংরেজি স্কুলে ভর্তি করান নি।জগদীশ চন্দ্র বসুর প্রথম স্কুল ছিলো ময়মনসিংহ জিলা স্কুল।আমাদের আজকের বাঙালি বিজ্ঞানি হিসেবে জগদীশ চন্দ্র বসুকে পাওয়ার পেছনে তার বাবার অবদান অনেক ছিলো।
জগদীশ চন্দ্রবসুর কলেজে একজন খ্রিষ্টান যাজক ছিলেন, ইউজিন ল্যাফন্ট নামে।মূলত কলেজে পড়াকালীন সময়ে, তিনিই প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ওপর জগদীশ চন্দ্রের আগ্রহ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বিভিন্ন পর্যায়ে পড়াশুনা শেষ করে ৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে জগদীশ চন্দ্র বসু ভারতে ফিরে আসেন। ফিরে আসার পরপরই তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হোন।কিন্তু কলেজের অধ্যক্ষ তার এই নিয়োগের বিপক্ষে ছিলেন।ফলে তিনি গবেষণার জন্য কোন রকম সুযোগ-সুবিধা পেতোনা।অন্যান্য অধ্যাপকদের তুলনায় তিনি অর্ধেক সম্মানী পেতেন।ফলে একটা সময় এর প্রতিবাদে তিনি সম্মানী নেওয়া বন্ধ করে দেন,একটানা তিন বছর তিনি কোন প্রকার সম্মানী ছাড়া অধ্যাপনা চালিয়ে যান।প্রেসিডেন্সি কলেজের একটা ছোট্ট ঘরে তিনি গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতেন।এত এত প্রতিকূলতার ভীড়েও তিনি এক দশকের মধ্যে বেতার গবেষণার একজন দিকপাল হিসেবে উঠে যান।প্রথম আঠারো মাসের গবেষনার উপর তিনি যে কাজ সম্পন্ন করেছিলেন, তা লন্ডনের রয়েল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিলো।এবং সে সকল গবেষণা পত্রগুলোর সূত্র ধরেই লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৯৬ সালের মে মাসে তাকে ডিএসসি নামক একটি ডিগ্রি প্রদান করেছিলেন এবং এর পাশাপাশি ইংল্যান্ডের লিভারপুলে বক্তৃতা দেয়ার জন্য ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন তাকে আমন্ত্রণ ও জানিয়েছিলেন। এই বক্তৃতাই ছিলো তার জীবনের সফল বক্তৃতা। যার পর রয়েল ইন্সটিটিউশন, ফ্রান্স এবং জার্মানিসহ বিভিন্ন স্থানে একজন সফল বাঙালি বিজ্ঞানী হিসেবে প্রথম বক্তৃতা দেন।
১৮৮৭ সালে জগদীশচন্দ্র বসু ব্রাহ্মসমাজের বিখ্যাত সংস্কারক দুর্গা মোহন দাসের কন্যা অবলাকে বিয়ে করেন।বৈবাহিক জীবন অবস্থায় তিনি আর্থিক ভাবে তেমন স্বচ্ছল ছিলেন না,কারন সে সময়ে তিনি কলেজ থেকে সম্মানী নিতেন না, এছাড়াও তার বাবার কিছু ঋণ ছিল,তার গবেষণার কাজ ছিলো।এইসব মিলিয়ে আর্থিক সমস্যা থাকাতে তিনি মুন্সিগঞ্জ বাসস্থানের কিছু জমিও বিক্রি করেন তখন।
জগদীশ চন্দ্রবসু শুধু একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীই ছিলেন না,তার হাত ধরে তার ছাত্রদের মাঝেও অনেক বিখ্যাত মানুষ উঠে আসেন।
জগদীশ চন্দ্রবসু ১৮৯৫ সালে সর্বপ্রথম প্রায় ৫ মিলিমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ তৈরি করেন,যা মাইক্রোওয়েভ নামে পরিচিত।তার এই সৃষ্টির কারনেই আজকে আমরা আধুনিক রাডার, টেলিভিশন এবং মহাকাশ যোগাযোগ এর মত সুবিধাগুলো পাই,ঘরে বসেই ব্লুটুথ,ওয়াইফাই এর সাহায্যে দ্রুত তথ্য আদান প্রদান করতে পারি।এছাড়াও তিনিই প্রথম উদ্ভিদ বিজ্ঞানী,যে কিনা প্রথম প্রমান করেন,”গাছের ও প্রান আছে”।
সম্প্রতি(২০২০ সাল) ইংল্যান্ড তাদের ৫০ পাউন্ডের নোটে নতুন কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির মুখ যুক্ত করার জন্য নমিনেশন দিয়েছে। এই পর্যন্ত ১,৭৫,০০০ নমিনেশন গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ১,১৪,০০০ নমিনেশনে,যেখানে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুকে সেরা তালিকায় রাখা হয়েছে। তাকে যদি নির্বাচিত করা হতও, তাহলে ২০২১ সালে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের ৫০ পাউন্ডের নোটে দেখা যেতক এ মহান বিজ্ঞানীর মুখ।যদিও পরবর্তীতে তাকে দেয়া হয়নি।
এই মহানবিজ্ঞানী ১৯১৬ সালে নাইটহুড উপাধি পান।১৯২০ সালে “রয়েল সোসাইটির ফেলো” পুরষ্কার পান।”ভিয়েনা একাডেমি অফ সাইন্স”-এর সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হোন ১৯২৮ সালে।এছাড়াও ১৯২৭ সালে “ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস” -এর ১৪তম অধিবেশনের সভাপতি হিসেবে ভূষিত হোন। লিগ অফ ন্যাশন্স কমিটি ফর ইনটেলেকচুয়াল কো-অপারেশন -এর সদস্য হিসেবে ভুষিত হোন।বিবিসি জরিপে এই মহান ব্যাক্তী হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় সপ্তম স্থান লাভ করেন।
১৯৩৭ সালের ২৩শে নভেম্বর মহানবিজ্ঞানী ভারতে মৃত্যুবরন করেন।তার কিছুদিন পূর্বে তিনি তার আজীবন সঞ্চিত ১৭ লক্ষ টাকার মধ্যে ১৩ লক্ষ টাকা ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’কে দান করেন। এছাড়াও জীবিত অবস্থায় তিনি তার পৈত্রিক নিবাসের বিপুল সম্পত্তি দান করে যান।যেখানে তার মায়ের নামে একটু স্কুল,তার নামে একটি জাদুঘর স্থাপন করা হয়।
মারা যাওয়ার পূর্বে এই মহানবিজ্ঞানী আমাদের তার লেখা অসংখ্যা বই,প্রবন্ধ উপহারস্বরূপ দিয়ে যান।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে___ অব্যক্ত,Responses in the Living and Non-living (১৯০২),Plant Responses as a Means of Physiological Investigations (১৯০৬),Comparative Electrophysiology (১৯০৭),Physiology of the Asent of Sap (১৯২৩),Physiology of Photosynthesis (১৯২৪),Nervous Mechanism of Plants (১৯২৫),Collected Physical Papers (১৯২৭),Motor Mechanism of Plants (১৯২৮),Growth and Tropic Movement in Plants (১৯২৯) ইত্যাদি।
অতীশ দীপঙ্করঃ
অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলেন একজন প্রখ্যাত পণ্ডিত এবং একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু।বৌদ্ধ ধর্মের গৌতম বুদ্ধের পরে একমাত্র তাকেই শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছিলো বৌদ্ধরা।
তিনি ৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে মুন্সিগঞ্জ জেলার,টংগীবাড়ি উপজেলার, বজ্রযোগিণী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তার পরিবার ছিলো গৌড়ীয় বংশের রাজ পরিবার।তার বাবার নাম রাজা কল্যাণশ্রী এবং মায়ের নাম প্রভাবতী।তিন সন্তানের মধ্যে অতীশ ২য় সন্তান ছিলেন।জন্মসূত্রে তিনি হিন্দু ছিলেন,এবং সে সময়ে তার নাম ছিলো আদিনাথ চন্দ্রগর্ভ।বাকি দুই ভাইয়ের নাম ছিল পদ্মগর্ভ ও শ্রীগর্ভ।
ছোটবেলা থেকেই অতীশের চিন্তা ভাবনা ছিলো একদম ভীন্নধর্মী।তিনি রাজ্যের প্রচলিত অনেক নিয়ম-নীতিই পছন্দ করতেন না।
তার পড়ালেখার হাতে খড়ি শুরু হয় মায়ের কাছ থেকে। তিন বছর বয়সে সংস্কৃত ভাষায় পড়তে শেখা ও ১০ বছর নাগাদ বৌদ্ধ ও অবৌদ্ধ শাস্ত্রের পার্থক্য বুঝতে পারার বিরল প্রতিভা প্রদর্শন করেন তিনি। মহাবৈয়াকরণ বৌদ্ধ পণ্ডিত জেত্রির পরামর্শ অনুযায়ী তিনি নালন্দায় শাস্ত্র শিক্ষা করতে যান।
১২ বছর বয়সে নালন্দায় আচার্য বোধিভদ্র তাকে শ্রমণ রূপে দীক্ষা দেন এবং তখন থেকে তার নাম হয় দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বোধিভদ্রের গুরুদেব অবধূতিপাদের নিকট সর্ব শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। ১৮ থেকে ২১ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বিক্রমশীলা বিহারের উত্তর দ্বারের দ্বারপণ্ডিত নাঙপাদের নিকট তন্ত্র শিক্ষা করেন। এরপর মগধের ওদন্তপুরী বিহারে মহা সাংঘিক আচার্য শীলরক্ষিতের কাছে উপসম্পদা দীক্ষা গ্রহণ করেন।ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের জন্য তিনি পশ্চিম ভারতের কৃষ্ণগিরি বিহারে গমন করেন এবং সেখানে প্রখ্যাত পণ্ডিত রাহুল গুপ্তের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। বৌদ্ধ শাস্ত্রের আধ্যাত্নিক গুহ্যাবিদ্যায় শিক্ষা গ্রহণ করে ‘গুহ্যজ্ঞানবজ্র’ উপাধিতে ভূষিত হন।
১০১১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রায় একশত শিষ্যসহ ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপ গমন করেন এবং আচার্য ধর্মপালের কাছে দীর্ঘ ১২ বছর বৌদ্ধ দর্শনশাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ের উপর অধ্যয়ন করে স্বদেশে ফিরে আসার পর তিনি বিক্রমশীল বিহারে অধ্যাপনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।দীর্ঘদিন দায়িত্বভারে থাকার পর তিনি শেষ বয়সে এসে তিব্বত ভ্রমন করেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন।
সারা জীবন ধর্মপ্রচারের পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ ও রচনা করেন।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে__
বোধিপথপ্রদীপ, চর্যাসংগ্রহপ্রদীপ, সত্যদ্বয়াবতার, মধ্যমোপদেশ, সংগ্রহগর্ভ, হৃদয়নিশ্চিন্ত, বোধিসত্ত্বমণ্যাবলি, বোধিসত্ত্বকর্মাদিমার্গাবতার, শরণাগতাদেশ, মহযানপথসাধনবর্ণসংগ্রহ, শুভার্থসমুচ্চয়োপদেশ, দশকুশলকর্মোপদেশ, কর্মবিভঙ্গ, সমাধিসম্ভবপরিবর্ত, লোকোত্তরসপ্তকবিধি, গুহ্যক্রিয়াকর্ম ইত্যাদি।
বৌদ্ধ ধর্মের সংস্কারে আজীবন পরিশ্রম করতে করতে,একটা সময়ে এসে তার স্বাস্থ্যের বেশ অবনতি ঘটে।ফলাফল ১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ৭৩ বছর বয়সে লাসা নগরের কাছে চে-থঙের দ্রোলমা লাখাং তারা মন্দিরে তিনি মারা যান।তবে মৃত্যুর বেশ কয়েকবছর পর তার দেহভষ্ম বাংলাদেশে তার ভিটায় এনে রাখা হয়েছিলো।
হুমায়ুন আজাদঃ
হুমায়ুন আজাদ একইসাথে একজন লেখক,কবি,ভাষাবিজ্ঞানী,গবেষক এবং অধ্যাপক।
তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ শে এপ্রিল বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলার,শ্রীনগর উপজেলার,রাঢ়িখাল গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান আজাদ,জন্মের সময় তার নাম ছিলো হুমায়ুন কবির,পরে সে নাম পালটে দিয়ে তিনি নাম রাখেন-“হুমায়ুন আজাদ”।হুমায়ুন আজাদের বাবার নাম আবদুর রাশেদ,তিনি প্রথম জীবনে একজন শিক্ষক ছিলেন।পরবর্তীতে ব্যবসায়ী হোন।তার মায়ের নাম জোবেদা খাতুন, তিনি একজন গৃহিণী ছিলেন।জন্মের পর থেকে প্রায় ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি রাড়িখাল গ্রামে কাটান,এমনকি তার বিভিন্ন লেখায় এই গ্রামের বর্ননা উঠে এসেছে অনেকটাই।
রাঢ়িখাল গ্রামে ছিলো তার নানাবাড়ি।তৎকালীন সময়ে ছেলেমেয়েরা মায়ের পরিচয়েই বড় হতো।
তার শৈশবকালের পড়াশুনা কাটে রাঢ়িখাল প্রাইমারি স্কুলে এবং জে সি বোস ইন্সটিটিউটে। পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্যের ওপরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।এবং ভাষাবিজ্ঞান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন,স্কটল্যান্ড এর এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।তিনি ১৯৭৫ পিএচডি করা অবস্থায় সালে লতিফুল কহিনূর নামে এক তরুনিকে বিয়ে করেন,যার সাথে তার পরিচয় হয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন সময়ে।পরবর্তীতে তিনি ৩ সন্তানের বাবা ও হোন।হুমায়ুন আজাদ তার কর্মজীবন শুরু করেন মাত্র ২২ বছর বয়সে।১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন, চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক হিসাবে।সেখানে কিছুদিন থাকার পর ১৯৭০ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে নিযুক্ত হোন। একই বছর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন।এবং পরবর্তী ১৯৭৮ সালের ১ ই নভেম্বর তিনি,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন, পরবর্তীকালে বাংলা বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।এবং সেখানেই তার অধ্যাপক পদের উন্নিত হয়।হুমায়ুন আজাদের সাহিত্যচর্চার শুরু হয়েছিলো কবিতা লেখার মাধ্যমে।বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করার পর তিনি লেখালেখি শুরু করেন। তবে একবার বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে থাকাকালীন তার “ঘড়ি বলে টিক টিক” শিরোনামে প্রথম লেখা প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল দৈনিক ইত্তেফাকে।
তার প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৭ টি,এরমধ্যে প্রথম মৌলিক কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে,”অলৌকিক ইস্টিমার”। তার প্রকাশিত-অপ্রকাশিত কবিতাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে__ জীবদ্দশায় হুমায়ুন আজাদের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৩) ও কাব্যসংগ্রহ (১৯৯৮) এবং মৃত্যুর পরে কাব্যসমগ্র (২০০৫)।
তিনি মোট ১২টি উপন্যাস লিখেছেন। তার উপন্যাসসমূহ উপন্যাসসমগ্র ১ (২০০১), উপন্যাসসমগ্র ২ (২০০২) এবং উপন্যাসসমগ্র ৩ (২০০৩) বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি যাদুকরের মৃত্যু (১৯৯৬) নামে ১টি মৌলিক ছোটগল্পের বই লিখেছেন। এছাড়াও তার ৮টি কিশোরসাহিত্য, এবং ৮টি ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক বই রয়েছ।
ষাটের দশকের পরিব্যাপ্ত হতাশা, দ্রোহ, ঘৃণা,প্রেম ইত্যাদিই ছিলো তার কবিতার মূল প্রেক্ষাপট।
১৯৬০-এর দশকে আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে, পশ্চিমের ভাষাবিজ্ঞানী চম্স্কি-উদ্ভাবিত রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল “ব্যাকরণ তত্ত্বটি” আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য আজাদ এই তত্ত্বের কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে বাংলা ভাষার রূপমূলতত্ত্ব তথা বাক্যতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেন। এর মাঝে ভাষার বাক্যতত্ত্বের ওপর বাক্যতত্ত্ব নামে একটি বই বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশ করেন। একই সালে বাংলা একাডেমি থেকে তিনি বাঙলা ভাষা শিরোনামে দুই খণ্ডের একটি দালীলিক সঙ্কলন প্রকাশ করেন, যাতে বাংলা ভাষার বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর বিগত শতাধিক বছরের বিভিন্ন ভাষাবিদ ও সাহিত্যিকের লেখা গুরুত্বপূর্ণ ভাষাতাত্ত্বিক রচনা সংকলিত হয়। এই তিনটি গ্রন্থ বাংলা ভাষাবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসাবে বিবেচিত। তিনি পরবর্তীকালে তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান (১৯৮৮) ও অর্থবিজ্ঞান (১৯৯৯) শিরোনামে দুইটি সংক্ষিপ্ত প্রাথমিক পাঠ্যপুস্তক লেখেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি বাংলা ভাষার একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ রচনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তবে মৃত্যুর কারণে তার এই আগ্রহ বাস্তবায়িত হয় নি।
হুমায়ুন আজাদ ব্যক্তিগতভাবে ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না এবং তিনি সরাসরি ধর্মের সমালোচনা করে কখনো বইয়ে লেখেননি। তার লেখালেখিতে উদারপন্থা, বিজ্ঞানমনস্কতার এবং একই সঙ্গে দ্রোহের ছাপ স্পষ্ট ছিলো।
হুমায়ুন আজাদ জীবিত থাকাকালীন নানা রকম
সম্মাননাপুরস্কারে ভুষিত হোন।তা হলো__ একাডেমি পুরস্কার(১৯৮৬),
সামগ্রিক অবদান,অগ্রণী ব্যাংক-শিশু সাহিত্য পুরস্কার(১৯৮৬),শিশু সাহিত্যমার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার(২০০৪), একুশে পদক (২০১২), ভাষা ও সাহিত্যমরণোত্তর।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই আগস্ট, জার্মানে নিজ আবাসস্থলে মৃত্যুবরন করেন হুমায়ুন আজাদ। ১২ আগস্ট আবাসস্থলের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।মৃত্যুর পর জার্মান সরকারের তত্ত্বাবধানে মিউনিখে তার নিজ বাসভবনে পাওয়া সব জিনিসপত্র ঢাকায় তার পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। সে জিনিসপত্রের ভেতরে পাওয়া যায় তার হাতের লেখা তিনটি চিঠি। চিঠি তিনটি আলাদা তিনটি পোস্ট কার্ডে লিখেছেন বড় মেয়ে মৌলিকে, ছোট মেয়ে স্মিতাকে এবং একমাত্র ছেলে অনন্য আজাদকে। অনুমান করা হয়, ওই লেখার অক্ষরগুলোই ছিল তার জীবনের শেষ লেখা ছিলো।
তার মরদেহ জার্মান থেকে এনে, ঢাকায় জানাযার নামাজ শেষে মুন্সিগঞ্জের রাড়িখাল গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে সেখানেই তার কবর সিমেন্ট দিয়ে পাকা করে একটি বইয়ের মত করা হয়েছে।
সাঁতারু ব্রজেন দাসঃ
ব্রজেন দাস দক্ষিন এশিয়ার একজন বিখ্যাত সাঁতারু,যিনি প্রথম সাঁতার কেটে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন।
১৯২৭ সালের ৯ ই ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়ামোড়া গ্রামে(তৎকালীন সময়ে যার নাম ছিলো ব্রিটিশ ভারত) এই বিখ্যাত সাঁতারু জন্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম ছিলো,হরেন্দ্র কুমার দাস।
ব্রজেন দাসের প্রাথমিক পড়াশুনা শুরু হয় তার নিজ জেলায়। নিজ জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি ঢাকা বিভাগের কে এল জুবলি হাই স্কুল থেকে ১৯৪৬ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন।পরবর্তীকালে কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও বিএ পাস করেন।
ছোটবেলা থেকেই ব্রজেন দাসের সাঁতার কাটার প্রতি বিশেষ ঝোক ছিলো,তার প্রথম সাঁতার কাটারর হাতে খড়ি হয় বুড়িগঙ্গা নদীতে সাঁতার কেটে।
পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে পশ্চিমবঙ্গে ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রথমবার তিনি চ্যাম্পিয়ন হন,এটা ছিলো তার জীবনের প্রথম অর্জন।১৯৫৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান ঢাকায় একটি জাতীয় পর্যায়ের ফ্রি স্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন।সেখানে ১৯৫৩-১৯৫৬ সাল পর্যন্ত পরপর ১০০,২০০,৪০০,১৫০০ মিটার ফ্রি স্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতায় ও তিনি চ্যাম্পিয়ন হোন। এছাড়াও তিনি ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান জাতীয় প্রতিযোগিতায় ১০০ ও ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতারের শিরোপা জেতেন।
১৯৫৮ সালে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমের সাঁতার প্রতিযোগিতায় মোট ২৩ টি দেশ অংশ নেয়। সেখানে পাকিস্থানের প্রতিনিধিত্ব করেন ব্রজেন দাস।সে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের ট্রেনিং স্বরূপ তিনি মেঘনা নদী,শীতলক্ষ্যা নদী সহ নারাগঞ্জ থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত প্রায় ৪৬ মাইল এর নদীপথ সাঁতার কেটে অতিক্রম করেন।এছাড়াও একই বছরের আগস্ট এর ১৮ তারিখে মধ্যরাতে ফ্রান্সের তীর থেকে মূল প্রতিযোগিতা শুরু হয়।সেখানে প্রচন্ড প্রতিকূল পরিবেশে সাঁতার কেটে পরদিন বিকেলবেলায় প্রথম সাঁতারু হিসেবে তিনি ইংল্যান্ডে তীরে এসে পৌঁছান।ব্রজেন দাস সর্বমোট ছয় বার ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন। সাল গুলো হচ্ছে, ১৯৫৮, ১৯৫৯, ১৯৬০, ১৯৬১ সাল। ১৯৬১ সালে ১০ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে তিনি বিশ্বরেকর্ড গড়েন।
বিখ্যাত এই সাঁতারু তার কৃতকর্মের মাধ্যমে অনেক পুরষ্কার অর্জন করে গিয়েছেন।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে,
*ব্রজেন দাস “লেটোনা ট্রফি”
*স্বাধীনতা দিবস পুরষ্কার,বাংলাদেশ (মরণোত্তর),১৯৯৯ সাল
*জাতীয় ক্রিড়া পুরষ্কার, বাংলাদেশ,১৯৭৬ সাল
*প্রাইড অফ,১৯৬০ সাল ,
*পারফোম্যান্স পাকিস্তান সরকার
*অতীশ দীপংকর মেডেল ইত্যাদি।
বিশ্ববিখ্যাত এই সাঁতারু দীর্ঘ এক বছর ক্যান্সার রোগের ভুক্তভোগী হয়ে ১৯৯৮ সালের ১ লা জুন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মৃত্যুবরন করেন।১৯৯৮ সালের ০৩ জুন ঢাকা বিভাগের পোস্তগোলা শ্মশানে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পাদন করা হয়েছিলো।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসঃ
চিত্তরঞ্জন দাস হলেন একজন ভারতীয় রাজনৈতিক কর্মী,আইনজীবী, কবি ও লেখক।কিন্তু এই সবকিছুকে ছাপিয়ে তিনি “দেশবন্ধু” নামে বেশি পরিচিত একজন ব্যাক্তি। একজন ভারতীয় নাগরিক হলেও তার পৈত্রিক নিবাস ছিলো,বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জে।চিত্তরঞ্জন দাস ১৮৭০ সালের ৫ ই নভেম্বর কলকাতা জন্মগ্রহন করেন। তার পৈত্রিক নিবাস হচ্ছে মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার তেলিরবাগ গ্রামে।তার বাবার নাম ভূবন মোহন দাস।পেশায় তিনি একজন সাংবাদিক ছিলেন।মায়ের নাম নিস্তারিণী দাস।
চিত্তরঞ্জন দাস,দাস পরিবারের ছেলে ছিলেন,এবং তারা আট ভাই-বোন ছিলেন।তাদের এই দাস পরিবার তৎকালীন সময়ে ব্রাহ্মসমাজের সদস্য ছিলো।
তার চাচা দূর্গা মোহন দাস ব্রাহ্ম সমাজের একজন সংস্কারক ছিলেন । তাঁর বাবা সাংবাদিকের পাশাপাশি একজন সলিসিটার ছিলেন, যিনি ইংরেজি গির্জার সাপ্তাহিক “ব্রাহ্মো পাবলিক মতামত ‘সম্পাদনা করেছিলেন । তার চাচাতো ভাইবোনদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাম হচ্ছে,সত্যরঞ্জন দাস,অতুল প্রসাদ দাস, সতীশ রঞ্জন দাস।
চিত্তরঞ্জন দাস এর পরিবার ছিল আইনজীবীদের পরিবার।তিনি ১৮৮৬ সালে মিশনারী স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন,১৮৯০ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি এ পাশ করেন।তারপর বিদেশ চলে যান,সেখান থেকে ১৮৯৩ সালে ব্যারিস্টার পাশ করে এসে আইনজীবী হিসেবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন।
তিনি ১৮৯৪ সালে কলকাতা হাইকোর্টে ব্যারিস্টার হিসেবে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করেন। ১৯০৮ সালে অরবিন্দ ঘোষের বিচার তাকে তার পেশাগত জীবনের প্রথম সারিতে নিয়ে আসেন। তিনি এত সুনিপুণ দক্ষতায় মামলাটিতে বিবাদী পক্ষ সমর্থন করেন যে, অরবিন্দকে শেষ পর্যন্ত বেকসুর খালাস দেয়া হয়। তিনি ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলায় বিবাদী পক্ষের একজন কৌশলী ছিলেন। তিনি দেওয়ানী ও ফৌজদারী উভয় আইনেই দক্ষ ছিলেন।সে সময়ের অন্যতম বৃহৎ অঙ্কের আয় অর্জনকারী উকিল হওয়া সত্ত্বেও তিনি তার সম্পদ অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। ফলাফল পরিচিতি পেলেন”দেশবন্ধু” নামে।
চিত্তরঞ্জন দাস বেশ কয়েকটি সাহিত্য সমিতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন।তিনি অসংখ্য প্রবন্ধ এবং কবিতা লিখেছিলেন। তিনি স্বরাজ্য পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
১৮৯৭ সালে তিনি বাসন্তী দেবী কে বিয়ে করেন।বাসন্তী দেবী ও বিক্রমপুরের কন্যা ছিলেন।এবং এই দম্পত্তির তিনজন সন্তান ও ছিলো।
তার স্ত্রী বাসন্তী দেবী স্বাধীনতা আন্দোলনে তার সহযাত্রী হিসেবে নেমেছিলেন এবং তিনি ছিলেন মাতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত একজন মুক্তিযোদ্ধা ভ্রাতৃত্ব। এই জন্য নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু তাকে ‘মা’ হিসাবে সম্মোধন করতেন।
১৯২৫ সালের ১৬ই জুন চিত্তরঞ্জন দাস মৃত্যুবরণ করেন।তিনি বেশ উদার মনের মানুষ ছিলেন। দেশের প্রতি তার অনেক দরদ ছিলো।বিক্রমপুর তার আদি নিবাস হওয়াতে তিনি সবসময় নিজেকে বিক্রপুরের মানুষ ভাবতেই পছন্দ করতেন।এছাড়াও তিনি হিন্দু মুসলমান সকলের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা অর্জন করেন তার উদার মনের জন্য।
অভিনেতা নারায়ণ চক্রবর্তীঃ
৫০দশকের চলচিত্র জগতে একজন রাশভারী জমিদার, কখনো বা বাবা,কখনো বা চাকর চরিত্রে একজন অভিনেতা কে বেশ দেখা যেতো।তিনি আর কেউ নন,তিনি হচ্ছেন জনপ্রিয় অভিনেতা নারায়ণ চক্রবর্তী। বিখ্যাত এই অভিনেতা ১৯২৬ খ্রীস্টাব্দের ১৮ ই জানুয়ারি, মুন্সিগঞ্জ জেলার,সিরাজদিখান উপজেলার কোলা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।
তার পিতার নাম জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী,মাতার নাম মায়া চক্রবর্তী। তার পিতা সে সময়ে কলকাতা টিএন্ডটি ডাকবিভাগে চাকরি করতেন।নারায়ণ চক্রবর্তীর বেড়ে উঠা মুন্সিগঞ্জ জেলাতেই।ছাত্র হিসেবে তেমন ভালো ছিলেন না তিনি।মেট্রিক পাশ পর্যন্তই তার পড়াশুনার গন্ডি ছিলো।এরপর কারিগরি শিক্ষার প্রতি ঝুকে পরেন।বাবার ইচ্ছায় ম্যাট্রিক পাশের পর রেখা চক্রবর্তীর সাথে বিবাব বন্ধনে আবদ্ধ হোন।
১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান ভাগ হলে তার বাবা ভারতে থেকে যান।কিন্তু দেশের প্রতি ভালোবাসায় ঘেরা নারায়ণ তার চাকরির পোস্টিং করে চলে আসেন কুষ্টিয়া।চাকরির অবসরে ফুটবল খেলতে বেশ পছন্দ করতেন তিনি।কুষ্টিয়ার একটি মিলের মালিক কানন চক্রবর্তী তাকে কুষ্টিয়ার প্রথম বিভাগের ফুটবল দলে টাউন মাঠে খেলার সুযোগ করে দেন।কিছুদিন পর তার চাকরির বদলি হয়ে যায় রাজবাড়ি।
সেখানে গিয়ে রাজবাড়ি রেইলওয়ে ক্লাবে বাৎসরির নাটক”সিরাজদৌল্লা” তে জীবনের প্রথম অভিনয় করেন।একে একে চিটাগং,ঢাকা তে বদলি হওয়া অবস্থায় বিভিন্ন মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতেন।সব শেষে ঢাকার এফসিডিতে অভিনয়ের সুযোগ পান।এখানেই তার সিনেমা জগতের অভিনয়ের যাত্রা শুরু।ততদিনে নিজের অভিনয় দিয়ে অনেক মানুষকে মুগ্ধ করে ফেলেছেন।তার অভিনীত প্রথম বাংলা ছায়াছবি হচ্ছে মুখ ও মুখোশ।এছাড়াও প্রায় একাধিক উর্দু ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে____এদেশ তোমার আমার, তিতাস একটি নদীর নাম, পদ্মা নদীর মাঝি, লাঠিয়াল, হারানো দিন, আলোর মিছিল, ক খ গ ঘ ঙ, কাগজের নৌকা, মতিমহল, দীপ নিভে নাই, কাঁচের দেয়াল, প্রীত না জানে রীত, শহীদ তিতুমীর, ডুমুরের ফুল, মাটির পুতুল, নীল আকাশের নীচে, অবাঞ্চিত ও বেদের মেয়ে ইত্যাদি।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় একবার তিনি সহ আরো ১১ জন মুন্সিগঞ্জের হরগংগা কলেজের ক্যাম্পে পাক বাহিনীর হাতে আটক হোন।পরবর্তীতে উর্দু ছবিতে অভিনয় করাতে, পরিচিত স্বরূপ তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
একজন জনপ্রিয় অভিনেতা হওয়ার পরেও, মৃত্যুর আগে ও পরে তিনি জাতীয় পর্যায়ে কোন পুরস্কার পাননি। রাশভারি এ অভিনেতা বাংলা সিনেমায় জমিদার, রাজা, চাকরসহ নানা রকমের অভিনয় করেছেন।
জীবনের শেষ কাল অবধি তিনি কাটিয়েছেন মুন্সিগঞ্জে।সিরাজদিখানে তিনি তার পিতা ও মাতার নামের নামকরণ এ “মায়া কুটির” নামে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন। বর্তমানে এই ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
তবে তার পিতা জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কলিকাতার টালিগঞ্জে কোলা ভিলা নামে আরেকটি ভবন নির্মাণ করেন। বাংলার মাতৃভূমির টানে কোলা গ্রামের নাম অনুসারেই সেখানে কোলা ভিলা নির্মাণ করা হয়।
নারায়ণ চক্রবর্তী ৭ সন্তানের পিতা ছিলেন। তারমধ্যে ছিলো ৪টি ছেলে সন্তান ও ৩টি মেয়ে সন্তান।
এই তিন মেয়ের মধ্যে একজন মারা গেছেন। বাকি ছয় ভাই ও বোনদের মধ্যে দীলিপ চক্রবর্তী হচ্ছে প্রথম। নারায়ণ চক্রবর্তীও অপর সন্তানরা হচ্ছেন প্রদীপ চক্রবর্তী (প্রধান মন্ত্রীর বাসভবন ও সংসদ ভবন কর্মরত রয়েছেন), সন্দীপ চক্রবর্তী (গণভবনে কর্মরত রয়েছেন), আরতি রানী রায় (মারা যায়), দীপ্তি ব্যানার্জী বড় বোন ( কলিকাতায় বসবাস) তৃপ্তি ব্যানাজী ( ছোট বোন মাইজপাড়ায় বসবাস করছেন)।
বর্তমানে এফডিসি থেকেও তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নেওয়া হয়। নারায়ণ চক্রবর্তীর বড় পুত্র দীলিপ চক্রবর্তী অভিনয়ের জন্য কয়েকবার অডিশন দেন। কিন্তু বাবা অভিনয় করতে পুত্রকে বাঁধা দেন। বাবার বাঁধার মুখে দীলিপ অভিনয় করতে পারেন নি।
নারায়ণ চক্রবর্তী বসতিতে জায়গার পরিমাণ হচ্ছে ১৪ পয়েন্ট ৫ কানি।যেখানে বর্তমানে তার প্রথম সন্তান বসবাস করছেন।এখানে একাধিক পুকুরে মাছ চাষ ও জমিতে চাষাবাদ করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন।
নারায়ণ চক্রবর্তী বাধক্যজনিত কারণে ৮২ বছর বয়সে ঢাকার একটি হাসপাতালে ১৯৯৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে তাঁর নিজ বাড়িতে সমাহিত করা হয়েছে, পাশে তাঁর স্ত্রীকেও।
বুদ্ধদেব বসুঃ
বুদ্ধদেব বসু একইসাথে একজন কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গল্পকার, অনুবাদক, সম্পাদক এবং সমালোচক ছিলেন।
বহুমুখী প্রতিভার এই মানুষটির হাত ধরেই বিশ ও ত্রিশের দশকের নতুন কাব্যরীতির সূচনা হয়।তাই বলে, সাহিত্য সমালোচনায় ও তিনি কম সম্মাননীয় ব্যাক্তি নন।
বহুমুখী প্রতিভার এই মানুষটি জন্মগ্রহন করেন ১৯০৮ সালের ৩০ এই নভেম্বর, কুমিল্লা জেলায় তার নানাবাড়িতে।তবে তার পৈত্রিক নিবাস হচ্ছে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর গ্রামে।
তার বাবার নাম ভূদেব বসু। তিনি পেশায় একজন ঢাকা বারের উকিল ছিলেন। তার মায়ের নাম বিনয়কুমারী।
তার জন্মের কয়েকঘন্টা পরের তার মা মারা যান।সে শোক সইতে না পেরে তার বাবা সন্ন্যাসী জীবন বেছে নেনে।বেশ কয়েকবছর এভাবে কাটানোর পর পরবর্তীতে নতুন বিয়ে করে জীবন শুরু করেন।ফলে বুদ্ধদেব বসুর জন্ম এবং বেড়ে উঠা নানাবাড়িতেই। তার নানা চিন্তাহরণ সিংহ ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার।
পরিনত বয়সে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন।তার স্ত্রীর নাম প্রতিভা বসু।
বুদ্ধদেব বসু ১৯১৮ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সচ্চিদানন্দ ইনস্টিটিউশনে প্রথম পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯২১ সালে ১৩ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং প্রায় দশ বৎসর তিনি ঢাকায় কাটান।সে সময়ে ঢাকার কলিজিয়েট স্কুল থেকে ১৯২৫ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বিভাগে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। ১৯২৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে ঢাকা কলেজ) থেকে প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আই. এ. পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ইংরেজিতে ১৯৩০-এ প্রথম শ্রেণীতে বি. এ. অনার্স এবং ১৯৩১-এ প্রথম শ্রেণীতে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন।
বুদ্ধদেব বসুর অল্প বয়স থেকেই কবিতা, রচনা নিজের নাট্যদল এর প্রতি বিশেষ ঝোক ছিলো। তিনি সে সময় প্রগতি ও কল্লোল নামে দু’টি পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন। ইংরেজি ভাষায় কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ রচনা করে তিনি ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় বেশ প্রশংসা অর্জন করেছিলেন।
অধ্যাপনার মাধ্যমে তার প্রথম কর্মজীবন শুরু হয়।কর্মজীবনের শুরুতে স্থানীয় কলেজের লেকচারের পদের জন্য আবেদন করে দু’বার প্রত্যাখ্যাত হলেও ইংরেজি সাহিত্যে বিশেষ দক্ষ ও পাণ্ডিত্যের জন্য একটা বয়সে এসে তিনি আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে বক্তৃতা দিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিও অর্জন করেছিলেন। ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত কলকাতা রিপন কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন।এরপর ১৯৪৫ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত স্টেটসম্যান পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। ১৯৫২ সালে দিল্লি ও মহিশূরে ইউনেস্কোর প্রকল্প উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গের পেনসিলভেনিয়া কলেজ ফর উইমেনে শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৬ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন।
এছাড়াও, তিনি অনেক উচ্চ মানের সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন।বাংলা সাহিত্যের আধুনিক পত্তনে যে কয়েকজনের নাম স্মরণ করা যায়,তাদের মধ্যে বুদ্ধদেব বসু অন্যতম।বাংলা কবিতায় আধুনিক চিন্তা-চেতনা এবং কাঠামো প্রবর্তনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে পশ্চিমা সাহিত্যের সঙ্গে তার বেশ ভালো পরিচয় ছিল। ফলে ইউরোপীয় এবং মার্কিন সাহিত্যের কৌশল তার দ্বারা বাংলা সাহিত্যে প্রবর্তনে অনেক ভূমিকা রাখে। তবে সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় তার কাজ পাওয়া যাবে।
তার উল্লেখযোগ্য কিছু প্রবন্ধ,কবিতা,গল্প হচ্ছে__
মর্মবাণী (১৯২৫),বন্দীর বন্দনা (১৯৩০),পৃথিবীর পথে (১৯৩৩),দ্রৌপদীর শাড়ি (১৯৪৮),
শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।
বহুমুখী প্রতিভার এই মানুষটি বিভিন্ন সম্মাননা লাভ করেন।তা হলো___
*পদ্মভূষণ উপাধি (১৯৭০ সাল)
* সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার।
* রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) ।
বুদ্ধদেব বসু ১৯৭৪ সালের ১৮ই মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় কে চেনেন না এমন কম মানুষই আছেন।তিনি একজন বিখ্যাত ভারতীয় সাহিত্যিক।কিন্তু মুন্সিগঞ্জের সাথে উনার কি সম্পর্ক?
অবশ্যই সম্পর্ক আছে।এমন একটা সম্পর্ক যেটা চাইলেই কখনো মুছে ফেলা যায় না।
তিনি ভারতের জনপ্রিয় একজন সাহিত্যিক হলেও তার পৈত্রিক নিবাস হচ্ছে মুন্সিগঞ্জ জেলার বাইনখাড়া গ্রামে।
তিনি ২ নভেম্বর ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির(বর্তমানে বাংলাদেশ) ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন।
ভারত বিভাগের সময়, তার পরিবার কলকাতা চলে যান।ফলে তার জন্ম বাংলাদেশে হলেও,তার বেড়ে উঠা ভারতেই।
তার বাবা সে সময় রেলওয়েতে চাকুরি করতেন।বাবার রেলওয়ের চাকরির সুবাদে তিনি আসাম,পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে শৈশব কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন।
তার প্রাথমিক পড়াশুনা শুরু হয় জলপাইগুড়ি তে। ফনীন্দ্রদেব ইনস্টিটিউশন এ, ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়েন, তারপর কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর কর্মজীবন শুরু হয় একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে।তবে বর্তমানে তিনি ভারতের স্বনামধন্য পত্রিকা আনন্দবাজার ও দেশ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত আছেন।
একজন ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক হিসেবে তিনি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক এই দুই শ্রেণির জন্যই গল্প লিখেছেন।বর্তমানে এই জনপ্রিয় সাহিত্যিক ৮৫ বয়সের কোঠায় পা রেখেছেন।
তার প্রথম গল্পের নাম হচ্ছে “জলতরঙ্গ”, যা ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাত বছর পরে ঐ একই পত্রিকায় পূজাবার্ষিকীতে “ঘুণ পোকা” নামক তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়।
ছোটদের জন্য লেখা তার প্রথম উপন্যাস হচ্ছে,”মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি”। “শবর দাশগুপ্ত” তার সৃষ্ট অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র।
এছাড়াও তিনি একাধিক গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন। জনপ্রিয়তার শীর্ষে এখনো তার অসংখ্য গল্প ও উপন্যাস রয়েছে।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে___পার্থিব,দূরবীন, পারাপার,ঘুন পোকা,গুহামানব,গয়নার বাক্স,যাও পাখি,উজান,মানবজমিন,হৃদয়বৃত্তান্ত,আদম ও ইভ অন্ধকার,মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি, গোঁসাইবাগানের ভূত,একটুখানি বেঁচে থাকা,গঞ্জের মানুষ,উকিলের চিঠি,ঘণ্টাধ্বনি,হারানো জিনিস ইত্যাদি।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বহু উপন্যাসকে ঘিরে চলচ্চিত্র হয়েছে।তার সৃষ্ট “শবর” চরিত্রটি নিয়ে তৈরি হয়েছে তিনটি রহস্য চলচ্চিত্র। এছাড়াও অদ্ভুতুড়ে সিরিজ অবলম্বনে বিভিন্ন সিনেমা তৈরি হয়েছে। তার কাহিনী অনুসারে বানানো চলচ্চিত্রগুলো হলো____আজব গাঁয়ের আজব কথা,বাঁশিওয়ালা,পাতালঘর,গোঁসাইবাগানের ভূত,দোসর,কাগজের বৌ,গয়নার বাক্স (চলচ্চিত্র),ছায়াময়,সাধুবাবার লাঠি,মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি,ঈগলের চোখ,আসছে আবার শবর,হীরের আংটি,আশ্চর্য প্রদীপ (চলচ্চিত্র),এবার শবর।
ভারত বিখ্যাত এই সাহিত্যিক তার গুনের কারনে অনেক পুরষ্কার ও পেয়েছেন।
তা হলো__
বিদ্যাসাগর পুরস্কার (১৯৮৫) – শিশুসাহিত্যিক হিসেবে পেয়েছেন।
আনন্দ পুরস্কার (১৯৭৩ ও ১৯৯০)
সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৮)- তার মানবজমিন উপন্যাসের জন্য।
বঙ্গবিভূষণ (২০১২)।
সরোজিনী নায়ডুঃ
সরোজিনী নায়ডু ভারতের একজন স্বনামধন্য স্বাধীনতা সংগ্রামী, যে ভারতীয় কোকিল “দ্য নাইটেঙ্গেল নামে পরিচত।তার এই পরিচয়ের পাশাপাশি ও তিনি একজন কবি।এছাড়াও তিনি ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এর প্রথম মহিলা সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তার জন্ম ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৯ সালে ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরের একটি হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে।জাতিগত হিসেবে ভারতীয়,তবে তার পৈতৃক বাড়ি ছিল বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলার, লৌহজং উপজেলার ,কনকসার গ্রামে।
তার পিতার নাম অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় ,তিনি ছিলেন একজন বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক।তার মাতার নাম বরদাসুন্দরী দেবীর,তিনি একজিন কবি ছিলেন।তাদের জ্যেষ্ঠা কন্যাই হচ্ছেন সরোজিনী।
সরোজিনী নায়ডু ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন সক্রিয় যোদ্ধা। মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তিনি যোগ দেন ডান্ডি পদযাত্রায়। এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন ইংরেজি ভাষার যশস্বী কবি।
সরোজিনী নায়ডু মাত্র ১২ বছর বয়সে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।সে সময় তিনি সমগ্র মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৮৯১ সাল থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা বন্ধ রেখে তিনি নানা বিষয় অধ্যয়ন করেন। ১৮৯৫ সালে ইংল্যান্ডে প্রথমে লন্ডনের কিংস কলেজ ও পরে কেমব্রিজের গার্টন কলেজে পড়াশোনা করেন।
সরোজিনী নায়ডুর স্বামীর নাম,ড. মুথ্যালা গোবিন্দরাজুলু নায়ডু। মাত্র ১৯ বছর বয়সে পড়াশোনা সমাপ্ত করে তার সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি।তবে সরোজনী ছিলেন ব্রাহ্মন পরিবারের মেয়ে,তার স্বামী এই একই গোত্রের ছিলেন না।এমনকি, সেই সময় অসবর্ণ বিবাহ সমাজে নিষিদ্ধ ছিল।পরবর্তীতে আইনগভাবে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোন।
সরোজিনী নায়ডু নানা রকমের ভাষা জানতেন।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উর্দু, তেলুগু, ফার্সি ইত্যাদি।
১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে এশীয় সম্পর্ক সম্মেলনের স্টিয়ারিং কমিটির পৌরোহিত্য করেন সরোজিনী নায়ডু।
১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট স্বাধী সরোজিনী নায়ডু যুক্তপ্রদেশের (বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ) রাজ্যপাল নিযুক্ত হন।তিনিই ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল।
অত্যান্ত গুনী এই ব্যাক্তি ১৯৪৯ সালের ২ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন।
জিতেন ঘোষঃ
জিতেন ঘোষ একজন বিপ্লববাদী,লেখক এবং মুক্তিযোদ্ধা।তিনি ১৯০১ সালের ৩ ই ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জ জেলার,লৌহজং উপজেলার, কুমারভোগ গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।তার পিতার নাম বংগচন্দ্র ঘোষ।
প্রাথমিক পড়াশুনা শেষ করার পর জিতেন ঘোষ কাজিরপাগলা অভয়কুমার তালুকদার হাই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন।মূলত স্কুলপড়ুয়া সময়েই তিনি বিপ্লববাদী দল ‘যুগান্তরে’র সাথে যুক্ত হন। বিক্রমপুরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদেরকে নিয়ে বিপ্লবী গ্রুপ গঠন করেন তিনি। ১৯১৭ সালে এই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর আই.এ. ভর্তি হন। এসময়ও তিনি বিপ্লবী দলে কলেজ ছাত্রদেরকে টেনে আনার কাজে যুক্ত থাকেন। ১৯১৯ সালে আই.এ. পাশ করার পর ১৯২০ সালে বি.এ. ভর্তি হন। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হন এবং এই আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
মা, বাবা, ভাই-বোনের সাধারণ পরিবারে জিতেন ঘোষ ছিলেন কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। বাল্যকাল সম্পর্কে তিনি লিখেছেন- “রাজনীতিতে তখনও নাম লিখাইনি। কিন্তু মনে মনে এদেশে ইংরেজ রাজত্ব পছন্দ করতাম না। একটু অপমান ও লজ্জা বোধ করতাম ইংরেজদের অধীনে আছি বলে” ( জেল থেকে জেলে-পৃষ্ঠা:-১)।
কৈশোরের প্রথম থেকেই তিনি সাধারণ মানুষকে সেবা করার জন্য সেবাশ্রম ও লাইব্রেরী গড়ে তোলেন। এখান থেকে তিনি দেশপ্রেমের ভাবধারাকে সহপাঠী তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন।
জিতেন ঘোষ তার পুরো জীবনটাই কাটিয়েছেন কারাগারে।বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আন্দোলনে সত্যের পথটাকে বেছে নিয়েছিলেন।
মাত্র ১৪ বছর বয়েসে কারাগারে প্রথম বন্দী হোন, পুলিশ তাকে বিপ্লবী আন্দোলনের সাথে যুক্ত ভেবে আটক করেছিলো।
তিনি বি.এ তে ভর্তি হওয়ার পরপরই অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন,এর কারনেও তাকে কারাবাসে বন্দী থাকতে হয়।জেলে থাকাকালীন অবস্থায় অনেক নির্যাতনের ও শিকার হয়েছিলেন তিনি,তবুও তিনি দৃঢ় ছিলেন নিজের সিদ্ধান্তে।
একবার মাদারীপুর জেলে থাকার সময় বাঘা যতীনের সহকর্মী বিপ্লবী পূর্ণ দাসের সাথে আলাপ হয়। সে সময় প্রথম মানবেন্দ্রনাথ রায়ের লেখা পত্র পড়ার সুযোগ হয় তার। হুগলী জেলে বিপ্লবী যতীন্দ্র নাথ দাস এর সাথে পরিচয় হয়।বিপ্লবী জেতার চেতনায় তিনি প্রতিবাদে অনেক কঠোর অনশনও করেন।
ক্রমাগত জেলে আটক থেকে বাচতে তিনি ১৯২৪ সালে বর্মায় পলাতক আশ্রয় নেন।সে সময় বর্মায় নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু সহ বহু বাংগালী স্বাধীনতা সংগ্রামীকে ব্রিটিশ সরকার জেলে পাঠিয়েছিল।তিনি সে সময় পলাতক আসামী হয়েও গোপনে জেল থেকে সুভাষচন্দ্রের চিঠি পত্র, লেখা বাইরে আনার দায়িত্ব নেন।
এইরকম সাহসী বিপ্লবের শত শত উদাহরন আছে তার।
এই বিপ্লবীর মহৎ গুনের মধ্যে একটা ছিলো,শ্রমিক কৃষকদের সাথে সহজেই মিশতে পারা। ১৯৪১ এ কুকুটিয়া গ্রামে কৃষক সম্মেলনের উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে আবার গ্রেপ্তার হোন। দু বছর পর মুক্তি পেয়ে কুকুটিয়া অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনে সচেষ্ট হন। স্থানীয় জমিদার ও শাসকেরা সাম্প্রদায়িক ভেদনীতি গ্রহণ করে আন্দোলন ব্যার্থ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। বিপ্লবী জিতেন ঘোষ কৃষক আন্দোলনের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন এবং এই চক্রান্ত আটকে যায়। হিন্দু মুসলিম কৃষক নির্বিশেষ যোগদানে তেভাগা সাফল্য লাভ করে।
১৯৬৫ সালে বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জ এলাকায় কৃষকদের নিয়ে অক্লান্ত ভাবে দাংগা প্রতিরোধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।এছাড়াও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঢাকা থেকে দুর্ভেদ্য কৃষক প্রধান অঞ্চলে চলে যান বিপ্লবী সংগঠনের কাজে। কেন্দ্রীয় কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপের কর্মীরা তার পরামর্শ নিতেন নিয়মিত। মুক্তিযুদ্ধের কার্যপ্রণালী ঠিক করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সত্তরোর্ধ বয়সে এসেও।
১৯৭৫ এ তৈরি কৃষক লীগের অন্যতম সদস্য হন প্রবীন বিপ্লবী জিতেন ঘোষ।
এই মহান বিপ্লবী জেলে জেলে বিচরন করা অবস্থায় বেশ কিছু গ্রন্থ লিখে গিয়েছিলেন।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে__
অগ্নিদিনের বর্মা
জেল থেকে জেলে
গরাদের আড়াল থেকে
রক্তাক্ত ঊষা
এই লেনিনের দেশে
১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান খুন হলে কলকাতায় চলে আসেন গোপনে এবং ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬ কলকাতাতে একটি মোটর দুর্ঘটনায় এই বিপ্লবীর মৃত্য হয়।
মানিক বন্দোপাধ্যায়ঃ
মানিক বন্দোপাধ্যায় ছিলেন, একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক,যার জন্ম ১৯ মে ১৯০৮ সালে।এই বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক এর জন্মস্থান হচ্ছে, বিহারের সাঁওতাল পরগনার,বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের, দুমকা শহরে।তবে তার পৈতৃক নিবাস হচ্ছে, বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলায়,লৌহজং উপজেলা মূলত তার মায়ের আদিনিবাস ছিলো।কিন্তু তার পরিবার সে সময়ে তার বাবার চাকরির সুবাদে কলকাতা থাকতেন।ফলে সেখানেই তিনি জন্ম নেন।
মানিক বন্দোপাধ্যায় এর প্রকৃত নাম হচ্ছে, প্রবোধ কুমার বন্ধোপাধ্যায়।তবে জন্মপত্রিকায় তার নাম রাখা হয়েছিল অধরচন্দ্র।তার পিতার নাম হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতার নাম নীরদাসুন্দরী দেবী। পিতামাতার চৌদ্দ সন্তানের মধ্যে মানিক ছিলেন অষ্টম তম সন্তান।তার স্ত্রীর নাম ছিলো কমলা দেবী।
তৎকালীন সময়ে তার পিতা ছিলেন ঢাকা জেলার সেটেলমেন্ট বিভাগের একজন সাব-রেজিস্টার।এই চাকরির বদলির সুবাদে মানিকের শৈশব-কৈশোর ও ছাত্রজীবন কাটে বাংলা-বিহার-ওড়িষার দুমকা, আরা, সাসারাম, কলকাতা, বারাসাত, বাঁকুড়া, তমলুক, কাঁথি, মহিষাদল, গুইগাদা, শালবনি, নন্দীগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল এর মত নানা শহরে।
তার মা নীরদাসুন্দরীর আদিনিবাস ছিলো বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার গাউদিয়া গ্রামে।
তার বিখ্যাত “পুতুলনাচের ইতিকথা” উপন্যাসের মূল পটভূমি ছিলো এই গাউদিয়া গ্রামটি।এছাড়াও পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলেপাড়ার মানুষদের জীবনের পটভূমি থেকে তিনি রচিত করেছিলে “পদ্মা নদীর মাঝি” উপন্যাসটি।যা পরবর্তীতে সিনেমা আকারেও প্রকাশ পেয়েছিলো।
মানিক ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় এবং ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে বাঁকুড়া ওয়েসলিয় মিশন কলেজ থেকে আই.এস.সি. পরীক্ষায় পাশ করে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিত বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মুহূর্ত কেটেছিলো।সে সময়ে বাংলা কথা-সাহিত্যের যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগতের এক নতুন ধারা প্লাবিত হয়,তার মধ্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন অন্যতম।
মানিক বন্দোপাধ্যায় এর রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিলো, মধ্যবিত্ত সমাজের চিত্র, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম ইত্যাদি। জীবনের অতি ক্ষুদ্র পরিসরে তিনি রচনা করে গেছেন প্রায় চল্লিশটি উপন্যাস ও তিনশত ছোটগল্প।তার গল্প ও উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে,জননী ,দিবারাত্রির কাব্য ,পদ্মানদীর মাঝি,পুতুলনাচের ইতিকথা ,জীবনের জটিলতা ,অমৃতস্য পুত্রাঃ ,শহরতলি ,চতুষ্কোণ ,প্রতিবিম্ব ,দর্পণ ,অতসী মামী ও অন্যান্য গল্প ,প্রাগৈতিহাসিক ,মিহি ও মোটা কাহিনী ,সরীসৃপ ,হলুদপোড়া ,আজ কাল পরশুর গল্প ইত্যাদি।ইংরেজি ভাষাসহ আরো বেশ কয়েকটি বিদেশি ভাষায় তার লেখা উপন্যাস ও ছোটগল্প অনুবাদিত হয়েছে।
একবার তার কলেজ ক্যান্টিনে একদিন আড্ডা দেওয়া অবস্থায় তার এক বন্ধুর সাথে তিনি বাজি ধরেছিলেন, তার লেখা গল্প তিনি বিচিত্রা পত্রিকায় ছাপাবেন। সে সময় কলকাতায় বিচিত্রা পত্রিকা ছিল অত্যন্ত বিখ্যাত এবং কেবল নামকরা লেখকেরাই তাতে লিখতেন। বন্ধুর সাথে বাজি ধরে মানিক লিখে ফেললেন তার প্রথম গল্প “অতসী মামী” এবং সেটি বিচিত্রার সম্পাদকের নিকট পাঠিয়ে দেন।সম্পাদক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় লেখাটি পাঠানোর চার মাস পর বিচিত্রায় ছাপেন। প্রকাশের সাথে সাথেই গল্পটি অনেক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে।মূলত সেখান থেকেই তার পরিচিতি হয়ে ওঠা শুরু সাহিত্যজগতে।এছাড়াও সেসময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা পাঠাতেন তিনি।কিন্তু এই সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশের ফলে তার একাডেমিক পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হয়।শেষ অবধি অসমাপ্ত অবস্থাতেই তার শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটে। তবে সাহিত্যপ্রেমী এই মানুষটি সাহিত্য রচনাকেই তার মূল পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
মানিক একটি পত্রিকার সহসম্পাদক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দে তিনি একটি প্রেস ও প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন যা কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় ।১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে মানিক কয়েকমাস একটি সরকারি পদে চাকরি করেছিলেন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৪৬ সালে প্রগতি লেখক সংঘের যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বিখ্যাত ওই সাহিত্যিক ১৯৩৫ সালে মৃগী রোগে আক্রান্ত হোন, যা পরবর্তীতে অনেক জটিল আকার ধারন করেছিলো। জীবনের শেষদিকে তীব্র আর্থিক কষ্টে ভোগার কারনে ঠিকমত চিকিৎসা ও করতে পারেন নি তিনি।ফলাফল দীর্ঘদিন কষ্টে ভোগার পর ১৯৫৬ সালের ৩রা ডিসেম্বর তার মৃত্যু ঘটে।
সত্যেন সেনঃ
সত্যেন সেন একজন লেখক,বিপ্লবী,সাহিত্যিক এবং শ্রমিক সংগঠক। তিনি ১৯০৭ সালের ২৮ শে মার্চ বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জ জেলার,টংগিবাড়ী উপজেলার,সোনারং গ্রামের সেন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ধরনীমোহন সেন এবং মাতার নাম মৃণালিনী সেন।তার ডাক নাম ছিলো লস্কর। চার সন্তানের মধ্যে সত্যেন ছিলেন সবচেয়ে ছোট সন্তান।
তৎকালীন সময়ে তার পরিবার ছিলো সোনারং গ্রামের একমাত্র পরিবার,যে পরিবারে শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার অনেক কিছু চোখে পরতো। সত্যেন সেনের চাচা ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন একজন বিশ্বভারতীয় উপাচার্য। তার আরেক চাচা মনোমোহন সেন ছিলেন একজন বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক।
সত্যেন সেনের পড়াশোনার হাতেখড়ি শুরু হয় তার পরিবার থেকেই,সে তার শিক্ষা জীবনের প্রাথমিক ধাপ (অর্থাৎ প্রাইমারি থেকে ৫ম শ্রেণি) পর্যন্ত কাটান বাসায় পড়াশুনা করে।পরবর্তীতে ১৯১৯ সালে সোনারং হাইস্কুলে ষষ্ঠ থেকে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয়।মাত্র অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থা থেকেই তার মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটে।তিনি ১৯২৪ সালে সোনারঙ হাই স্কুল থেকেই এন্ট্রান্স পাস করেন।পরবর্তীতে কলকাতায় কলেজে ভর্তি হোন এবং সেখানকার একটি কলেজ থেকে এফএ এবং বিএ পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস বিভাগে এমএ শ্রেণীতে ভর্তি হন। এম এ তে ভর্তি হোন ঠিকই কিন্তু সে সময়টাতে রাজনীতির সঙ্গে তিনি পুরোপুরি যুক্ত হয়ে পরেন,মূলত এখান থেকেই তার রাজনীতি জীবনের শুরু।ফলাফল তাকে জেলে বন্দী করা হয়। ১৯৩১ সালে জেল থেকেই তিনি এমএ পাস করেন।রাজনীতি জীবনের শুরুতে তিনি প্রথম যুক্ত হন বিপ্লবী দল যুগান্তরের সাথে। ছাত্র অবস্থায় ১৯৩১ সালে তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রথম কারাবরণ করতে বাধ্য হন। বহরমপুর বন্দি ক্যাম্পে থেকেই শুরু হয় তার জেলজীবন। এ সময় তিনি ৩ মাস জেলে ছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লববাদী আন্দোলনের যুক্ত থাকার অভিযোগে তিনি ১৯৩৩ সালে দ্বিতীয় বার গ্রেফতার হন। এ সময় তার ৬ বছর জেল হয়। সত্যেন সেন ১৯৩৮ সালে জেল থেকে মুক্তি পান। ওই বছর শান্তিনিকেতন থেকে তাকে দেয়া হয় ‘গবেষণা বৃত্তি’। ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে এক সমাবেশে শহীদ হন ফ্যাসিবাদ বিরোধী এক বিপ্লবী। সে সময় ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সত্যেন সেন অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৩ সালের মহাদুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় ‘কৃষক সমিতি’র মাধ্যমে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। কৃষক সমিতির নেতা-কর্মীকে নিয়ে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় কাজ করেছিলেন।ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। ১৯৪৯ সালে বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য তাকে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী গ্রেফতার করে। আবার শুরু হয় দীর্ঘ জেলবন্দী জীবন।সে সময়টাতে কারাগারে কমিউনিস্টদের প্রতি নানা অত্যাচার ও নির্যাতনে মাত্রা ছিল অনেক বেশি।
কমিউনিস্ট পেলেই বেশি অত্যাচার শুরু করে দিত। সত্যেন সেনকেও কারা প্রশাসন নানা অত্যাচার ও নির্যাতন করতো। যার ফলে একটা সময় সে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরেন এবং তার চোখের ও খারাপ অবস্থা দেখা যায়। এছাড়াও তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এক পর্যায়ে তার চোখের সমস্যা গুরুতর হয়ে দাড়ালে সে সময় কমিউনিস্ট পার্টি তাকে চোখের উন্নত চিকিৎসার জন্য মস্কো পাঠায়। সেখানে অবস্থানকালে তিনি বিভিন্ন দেশের বিপ্লবীদের পরিচিত হন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তাদের অবহিত করেন। তারাও স্ব-স্ব দেশে গিয়ে বাংলাদেশের প্রতি সহনাভূতি জানান। মস্কো হাসপাতালে অবস্থানকালে তিনি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সংবাদ পান।
১৯৬৯ সালে সত্যেন সেন একঝাঁক তরুণ এর সাথে মিলে উদীচী গঠন করেন। উদীচী প্রতিষ্ঠা মূলত অধিকার, স্বাধীনতা ও সাম্যের সমাজ নির্মাণের সংগ্রাম নিয়ে কাজ করতো।তবে এই উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী এদেশে সুস্থ সাংস্কৃতিক ধারার সংস্কৃতি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন।
সত্যেন সেন গান রচনার মাধ্যমেই লেখালেখি জগতে প্রথম আসেন।তার লেখায় সবসময় ফুটে উঠতো সমাজের বাস্তব চিত্র। এছাড়াও লেখালেখির পাশাপাশি তিনি গানের সুর করা ও গান শেখানোর কাজও করেছেন।
তার লেখা বেশ কয়েকটি উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে,ভোরের বিহঙ্গী, রুদ্ধদ্বার মুক্ত প্রাণ, অভিশপ্ত নগরী,পাপের সন্তান, সেয়ান,পদচিহ্ন, আমাদের পৃথিবী, মসলার যুদ্ধ,এটোমের কথা,অভিযাত্রী, মানবসভ্যতার উষালগ্ন, মনোরমা মাসিমা, প্রতিরোধ সংগ্রামে বাংলাদেশ, বিপ্লবী রহমান মাষ্টার ইত্যাদি।
লেখালেখি জীবনের সীমিত সময়ে তিনি বেশ কয়েকটি পুরষ্কার ও লাভ করেছেন।তা হলো__
*আদমজী সাহিত্য পুরস্কার
* বাংলা একাডেমি পুরস্কার
* সাহিত্য মরণোত্তর একুশে পদক
১৯৭১ সালে থেকেই অসুস্থ থাকলেও ১৯৭৩ সালে তার শারীরিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি ঘটে। ফলে চিকিৎসার জন্য আবার দেশ ছেড়ে ভারতে যেতে বাধ্য হোন তিনি।চিকিৎসা করা অবস্থায় প্রায় ৮টি বছর কেটে যায়। ১৯৮১ সালের ৫ ই জানুয়ারি শান্তি নিকেতনের গুরুপল্লীতে মারা যান তিনি।
আব্দুল কাদেরঃ
আব্দুল কাদের বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান অভিনেতা ছিলেন।অভিনয় জগতের পাশাপাশি নাট্যকার জগতেও তার বেশ সুনাম রয়েছে।
তিনি ১৯৫১ সালের ১ লা এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ জেলার টংগিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।তার পিতার নাম আব্দুল জলিল এবং মাতার নাম আনোয়ারা খাতুন।তার স্ত্রীর নাম ছিলো খাইরুন্নেছা কাদের।বিবাহিত জীবনে এই দম্পতি এক ছেলে ও মেয়ের বাবা-মা ছিলেন।তিনি সোনারং হাইস্কুল ও বন্দর হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি সম্পন্ন করে ঢাকা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি সম্পন্ন করেছিলেন।পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিভাগে বিএ অনার্স ও এমএ সম্পন্ন করেছিলেন।তার নাট্যজীবন শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়েই। ১৯৭২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন তিনি পরপর তিন বছর মহসিন হল ছাত্র সংসদের নাট্যসম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।এছাড়াও ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সাল থেকে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য এবং চার বছর যুগ্ম-সম্পাদকের ও ছয় বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকায় আমেরিকান কলেজ থিয়েটার ট্রুপ কর্তৃক আয়োজিত অভিনয় কর্মশালায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন।এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারদের একমাত্র সংগঠন টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদ’ টেনাশিনাস -এর সহ-সভাপতি ছিলেন।
নাট্যজগতের পাশাপাশি অভিনয় জগতেও তিনি বিপুল সাড়া ফেলেছিলেন।তার প্রকৃত নামের চেয়েও বেশি একটা সময় তার মুখটা পরিচিত ছিলো “বদি” নামে। ১৯৯৪ সালে কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে তিনি বদি চরিত্রে অভিনয় করে অনেক সুনাম অর্জন করেছিলেন। এছাড়া তিনি জনপ্রিয় বাংলাদেশী ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে তার মামা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তবে তিনি অভিনয় জগতে প্রথম পা রাখেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রের মাধ্যমে।এছাড়াও অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনেও অংশ নিয়েছিলেন।তার অভিনীত নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে__
কোথাও কেউ নেই,মাটির কোলে,নক্ষত্রের রাত,শীর্ষবিন্দু,সবুজ সাথী,তিন টেক্কা,যুবরাজ,আগুন লাগা সন্ধ্যা,এই সেই কণ্ঠস্বর,আমার দেশের লাগি,প্যাকেজ সংবাদ,সবুজ ছায়া,কার ছায়া ছিল,দীঘল গায়ের কন্যা,কুসুম কুসুম ভালোবাসা,নীতু তোমাকে ভালোবাসি,আমাদের ছোট নদী ইত্যাদি।
অভিনয় জগতে এসে তিনি বেশ কিছু পুরষ্কার ও লাভ করেছেন।তা হলো__
টেনাশিনাস পুরস্কার
মহানগরী সংস্কৃত গোষ্ঠী পুরস্কার
জাদুকর পিসি সরকার পুরস্কার
টেলিভিশন শ্রোতা ফোরাম পুরস্কার।
আব্দুল কাদের অভিনয়ে জগতে অনেক জনপ্রিয় হলেও তার মূল পেশা ছিলো শিক্ষকতা।এমনকি তার পেশাগত জীবনও শুরু হয়েছিলো শিক্ষকতা দিয়ে। তিনি সিংগাইর ডিগ্রি কলেজ এবং মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং কলেজে অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা করতেন এক সময়।পরবর্তীতে বিটপী বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরি করেন। ১৯৭৯ সাল থেকে বহুজাতিক কোম্পানী ‘বাটা’তে উচ্চপদস্থ পদে কর্মরত ছিলেন।
এই খ্যাতিমান ব্যাক্তি খুব অল্প সময়েই আমাদের ছেড়ে চলে যান।মাত্র ৬৯ বছর বয়স ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
ইমদাদুল হক মিলনঃ
ইমদাদুল হক মিলন হলেন একজন কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার।তার জন্ম ১৯৫৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মুন্সিগঞ্জ জেলার মেদিনীমণ্ডল গ্রামে। মেদিনীমন্ডল তার নানা বাড়ি ছিলো।তবে তার পৈতৃক নিবাস হচ্ছে মুন্সীগঞ্জ জেলার,লৌহজং থানার, পয়সা গ্রামে। তার বাবার নাম গিয়াসুদ্দিন খান এবং মায়ের নাম আনোয়ারা বেগম।
ছোটবেলা থেকেই তার বেড়ে উঠা ছিলো নিজ গ্রামে। তিনি ১৯৭২ সালে লৌহজং থানার কাজীর পাগলা হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ১৯৭৪ সালে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।এবং পরবর্তীতে তিনি ১৯৭৯ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকেই স্নাতক সম্পূর্ণ করেন।
সাহিত্যজগতে তার প্রবেশ হয় কিশোর বাংলা নামের একটি পত্রিকায় শিশুতোষ গল্প লিখে। তবে ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে সাপ্তাহিক বিচিত্রা নামক একটি পত্রিকায় ‘সজনী’ নামে একটি ছোট গল্প লিখে মূলত পাঠকের দৃষ্টি আর্কষণ করতে শুরু করেন।তবে তার লেখা সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বই হচ্ছে নুরজাহান।এই উপন্যাসটি এপার-ওপার দুই বাংলাতেই তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।তার লেখা আরো একটি জনপ্রিয় বই হচ্ছে “ভালোবাসা সুখ-দুখ”। বইটির প্রায় ৬৫০০০ কপি বিক্রি হয়েছিলো গ্রন্থমেলায়।
লেখক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও বর্তমানে তিনি দৈনিক কালের কণ্ঠের একজন সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।
ইমদাদুল হক মিলন এর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা এই পর্যন্ত প্রায় দুইশত।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে___
অধিবাস, পরাধীনতা, কালাকাল, বাঁকাজল, নিরন্নের কাল, পরবাস, কালোঘোড়া, মাটি ও মানুষের উপাখ্যান, পর, কেমন আছ সবুজপাতা, জীবনপুর ইত্যাদি।
এর বাইরেও তিনি প্রায় দেড়শতাধিক নাটক লিখেছেন।তার লেখা নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে___
কোন কাননের ফুল, বারো রকম মানুষ, রূপনগর, যুবরাজ, কোথায় সেজন, আলতা, একজনা, নীলু, তোমাকেই, ছোছা কদম, আঁচল, খুঁজে বেড়াই তারে, কোন গ্রামের মেয়ে, মেয়েটি এখন কোথায় যাবে, বিপুল দর্শকপ্রিয়তা ইত্যাদি।
মাত্র ৬৫ বছর বয়সে এই লেখকের প্রাপ্তির ঝুলিতে স্থান পেয়েছে অনেক সম্মাননা ও পুরষ্কার।তা হলো_
বিশ্ব জ্যোতিষ সমিতি পুরস্কার।
ইকো সাহিত্য পুরস্কার।
হুমায়ুন কাদির সাহিত্য পুরস্কার।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার।
পূরবী পদক।
বিজয় পদক।
মনু থিয়েটার পদক।
যায়যায়দিন পত্রিকা পুরস্কার।
ঢাকা যুব ফাউণ্ডেশন পদক।
বাচসাস পুরস্কার।
জিয়া শিশু একাডেমী কমল পদক।
এস এম সুলতান পদক।
জাপান রাইটার্স অ্যাওয়ার্ড।
মাদার তেরেসা পদক।
অগ্রণী ব্যাংক শিশু একাডেমী শিশুসাহিত্য পুরস্কার।
চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণপদক।
এত সম্মাননা ছাড়াও ২০০৬ সালে জাপান ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘তাকেশি কায়েকো মেমোরিয়াল এশিয়ান রাইটারস লেকচার সিরিজে’ বাংলাভাষার একমাত্র লেখক হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। জাপানের চারটি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে তিনি বাংলাদেশের সাহিত্য এবং তার নিজের লেখা নিয়ে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এশিয়ার লেখকদের জন্য এক বিরল সম্মান ছিলো এটা।
ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদঃ
ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ বাংলাদেশের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং অধ্যাপক(মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ছিলেন।
তিনি পহেলা ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৌলভি মুহাম্মদ ইব্রাহিম।
তার স্ত্রীর নাম আনোয়ারা বেগম।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপিকা ছিলেন।এছাড়াও তিনি শামসুন্নাহার হলের একজন প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।বৈবাহিক সূত্রে এই দম্পতির এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে।
ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ১৯৪৮ সালে মুন্সিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করেন এবং ১৯৫০ সালে মুন্সিগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করেন।পরবর্তীতে ১৯৫০ ও ৫২ সালে বি.এস.সি ও এম.এস.সি পাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।এরপর ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকোন্সিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এম.এস. এবং পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬৩ সালে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে । ১৯৭৩ সালে তিনি সেখানে অধ্যাপক হোন।এছাড়াও ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের প্রভোস্ট ছিলেন।১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯১ সাল নাগাদ পর পর দুই বার তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে নির্বাচিত হন।এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল এবং বোর্ড অফ এডভান্স স্টাডিস এর সদস্য ছিলেন।
তিনি ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধ্যায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন।সে সময় তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করতেন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ার আগে একটাসময় তিনি স্টেট ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে এই মানুষটির অনেক সক্রিয় ভূমিকা ছিলো। তিনি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন।পরবর্তীতে যদিও একটি বিশেষ কারনে সে পদ ছেড়ে দিতে হয় তার।এছাড়াও তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪৯তম সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের একজন সদস্য ছিলেন। সেখানে তিনি প্যালেস্টাইন শরণার্থী এবং বিশ্ব-বাণিজ্য ও উন্নয়ন নিয়েও অনেক কথা বলেছিলেন।তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত। তার মধ্যে অন্যতম হল “ফেডারেশন অফ ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন”। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সম্মিলিত শিক্ষক আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন।
বাংলাদেশের এই সাবেক রাষ্ট্রপতির আরেকটা পরিচয় অধ্যাপক হওয়ায় একটা সময় তিনি গবেষণার কাজেও অনেক সময় ব্যয় করেছিলেন।তিনি ধান গাছের উপর লবণাক্ততার প্রভাব ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে উচ্চ ফলনশীল ধান নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান মাটিতে জমা করে রাখা এবং তা প্রয়োজন মত উদ্ভিদকে সরবরাহ করার পদ্ধতির উপর সফল গবেষণা চালান। এই কাজের ফলে যুক্তরাজ্যে ও তিনি ব্যাপক সাড়া জাগান। অধ্যাপক হিসেবে এক সময় তিনি বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন।
কর্মজীবনে সফলতার কারনে জীবনে তিনি নানা রকম পুরষ্কার ও সম্মাননা পান।সেগুলো হচ্ছে__
ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণ পদক।
শ্রীজ্ঞান অতীশ দিপঙ্কর স্বর্ণ পদক।
ক্রেস্ট, একুশে পদক
২০১২ সালের ২৮ অক্টোবর তারঅতিরিক্ত হার্ট সার্জারি করানো হয়।কিন্তু কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে দীর্ঘ এক মাস লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ১০ ডিসেম্বর ২০১২ সালে তিনি মারা যান।মারা যাওয়ার পর চারটি নামাযে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমটি ১১ ডিসেম্বর ব্যাংককে, দ্বিতীয়টি ১৩ ডিসেম্বর তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জে, তৃতীয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে ও সর্বশেষটি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়।জানাযার পর তাকে বনানীর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মাহবুবে আলমঃ
মাহবুবে আলম বাংলাদেশের একজন অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন সিনিয়র এডভোকেট।তিনি ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার, লৌহজং উপজেলার,মৌছামন্দ্রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তার পৈত্রিক নিবাস মুন্সিগঞ্জেই।
তার স্ত্রীর নাম বিনতা মাহবুব। তিনি একজন চিত্রশিল্পী। এই দম্পতির এক ছেলে এবং এক মেয়ে আছে। ছেলে সুমন মাহবুব একজন সাংবাদিক,মেয়ে শিশির কণা একজন আইনজীবী।
মাহবুবে আলম ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) সম্পন্ন করেন এবং ১৯৬৯ সালে লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে এমএ সম্পন্ন করেন। এমএ সম্পন্ন করার দুই বছর পর ১৯৭২ সালে তিনি এল.এল.বি সম্পন্ন করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৭৯ সালে ভারত,নয়াদিল্লি থেকে সংবিধান এবং সংসদীয় গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইসিপিএস) থেকে “সাংবিধানিক আইন এবং সংসদীয় প্রতিষ্ঠান” এই দুই পদ্ধতিতে দুটি ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন।
আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার পর তিনি ১৯৭৫ সালে হাইকোর্টে অনুশীলন শুরু করেন। ১৯৮০ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হন। ১৯৯৯ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। এবং ২০০৪ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৫-২০০৬ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন এর আগে ১৯৯৩-১৯৯৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।এছাড়াও তিনি ১৩ জানুয়ারী ২০০৯ থেকে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে নিযুক্ত হন।
২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অসুস্থ হলে তার করোনা পরীক্ষা করানো হয়, রিপোর্ট পজিটিভও আসে।করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মাত্র ৭১ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তাহসান খানঃ
তাহসান খান, বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় অভিনেতা,গায়ক,উপস্থাপক।
পুরো নাম তাহসান রহমান খান।জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার,শ্রীনগর উপজেলার,মুরুপাড়া গ্রামে, ১৮ ই অক্টোবর ১৯৭৯ সালে।তার পৈত্রিক নিবাস মুন্সিগঞ্জ হলেও তার বেড়ে ওঠা ঢাকা শহরে।
তাহসান পড়াশোনা শুরু করেন এ জি চার্চ স্কুল থেকে,মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন সেন্ট যোসেফ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে।এরপর ১৯৯৮ সালে নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং বিষয়ে অনার্স এবং ফিন্যান্স বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।তারপর ২০০৮ সালে স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা কার্লসন স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট থেকে “ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্ট” এর উপর পড়াশুনা করেন। এবং ২০১০ সালে” মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ” এর ওপর তার ২য় ডিগ্রী অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন।
ব্যাক্তিগত জীবনে তার এক স্ত্রী এবং কন্যা সন্তান আছে।তবে ২০১৭ সালে তার স্ত্রীর সাথে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।
তাহসান খান এর কর্মজীবন শুরু হয় ২০০৩ সালে ইউনিলিভারে চাকরির মাধ্যমে।এরপর ২০০৬- ২০০৮ সাল পর্যন্ত ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক পদে কর্মরত ছিলেন। ২০১০ এর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের “মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ ইন মার্কেটিং” এ গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১০-২০১৩ সাল পর্যন্ত ইউল্যাব ইউনিভার্সিটি তেও শিক্ষকতা করছেন।তারপর ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তাহসান।
তাহসান খানের একটি বড় পরিচয় হচ্ছে তার গান।তিনি ছায়ানট থেকে প্রায় ছয় বছর রবীন্দ্রসংগীত শিখেছেন।এছাড়াও ভার্সিটি পড়ুয়া অবস্থায় ১৯৯৮ সালে তিনি কয়েকজন যুবক এর সাথে মিলে একটি ব্যান্ডদল গঠন করেন নাম “ব্ল্যাক”।যদিও পরবর্তিতে তিনি এই ব্যন্ড দল থেকে আলাদা হয়ে নিজস্ব ধারার গানে সম্পৃক্ত হন।২০১২ সালে তিনি “তাহসান অ্যান্ড দ্য সুফিজ” নামে একটি নতুন ব্যান্ড গঠন করেন।
বর্তমানে তাহসান খান বিভিন্ন নাটক,টেলিফিল্ম এ অভিনয় করেছেন।এছাড়াও গান গাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে চমৎকার উপস্থাপন ও করেন।
টেলি সামাদঃ
টেলি সামাদ,বাংলাদেশের একজন গুনী অভিনয় শিল্পী ছিলেন।তার আসল নাম আবদুস সামাদ।তিনি ৮ ই জানুয়ারি ১৯৪৫ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার, সদর উপজেলার, নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার বড় ভাই ছিলেন একজন চারুশিল্পী, নাম আব্দুল হাই। সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন তার চাচা।
আবদুস সামাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলা বিভাগে পড়াশুনা করেছেন।বিবাহিত জীবনে তিনি দুই সন্তানের বাবা ছিলেন। সোহেলা সামাদ কাকলী ও দিগন্ত সামাদ নামে তার দুই ছেলে ও মেয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে তিনি বেশ জনপ্রিয় একজন কৌতুক অভিনেতা ছিলেন।মূলত এই জগতে এসেই তার নাম হয় আবদুস সামাদ থেকে টেলি সামাদ।
একদিন বিটিভির এক অনুষ্ঠানে তার আমন্ত্রন ছিলো।সেখানে বিটিভির ক্যামেরাম্যান মোস্তফা মামুন তাকে হুট করেই বলেন, ‘সামাদ শুন, আজ থেকে তোর নাম টেলি সামাদ।”সেদিন থেকেই তার নাম হয়ে গেলো টেলি সামাদ।চলচিত্র জগতে সবাই তাকে এই নামেই বেশি চিনতেন।
চলচ্চিত্র জগত ছাড়াও তিনি মঞ্চ নাটকেও বেশ অভিনয় করেছিলেন।এছাড়াও তিনি গান গাইতেন, সঙ্গীত পরিচালনা করতেন।
১৯৭৩ সালে ‘কার বউ’ চলচ্চিত্র দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে তার প্রবেশ ঘটে।এছাড়াও নয়নমনি ও ‘পায়ে চলার পথ’- চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেন।
চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনার পাশাপাশি তিনি প্রায় ৫০টির মত চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেন।
অভিনয় জীবনের চার দশকে তিনি প্রায় ৬০০’র কাছাকাছি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে__
বেহেস্তের চাবি, কে আমি, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, মিস লোলিতা,নতুন বউ, মাটির ঘর, নাগরদোলা, গোলাপী এখন ট্রেনে, বঙ্গা,অশিক্ষিত ইত্যাদি।
তার অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিলো জিরো ডিগ্রী ,যা ২০১৫ সালে মুক্তি পায়।
২০১৭ সাল থেকেই তিনি শারীরিক ভাবে বেশ অসুস্থ ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে একবার তার বাইপাস সার্জারি ও করা হয়।২০১৮ সালের শেষ দিকে রক্তে লোহিত রক্তকণিকার স্বল্পতা, খাদ্য নালীতে সমস্যা সহ ডায়াবেটিস রোগ ও কাবু করে ফেলেছিলো তাকে।ফলাফল ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল দুপুরে উল্লেখিত রোগের অসুস্থতাজনিত কারণে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
রাবেয়া খাতুনঃ
রাবেয়া খাতুন একজন বাংলাদেশী সাহিত্যিক,সাংবাদিক এবং কথাশিল্পী ।
তিনি ১৯৩৫ সালের ২৭ এ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জ জেলায়
তার মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ও একই জেলার( মুন্সিগঞ্জ), শ্রীনগর উপজেলার, ষোলঘর গ্রামে অবস্থিত৷ তার বাবার নাম মৌলভী মোহাম্মদ মুল্লুক চাঁদ এবং মায়ের নাম হামিদা খাতুন।
তিনি ১৯৪৮ সালে আরমানিটোলা বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা (বর্তমানে মাধ্যমিক) পাশ করেন।সে সময়ে বাঙালী মুসলিম পরিবার মানেই খুব রক্ষণশীল। তার পরিবার ও ব্যাতিক্রম ছিলো না।এমন একটি পরিবারের কন্যাসন্তান হওয়ায় বিদ্যালয়ের গন্ডির পর তার আর পড়াশুনা করা হয়ে উঠে না।
তার বাবার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ হলেও বাবার চাকরির সুবাদে তার বেড়ে ওঠা হয়েছিলো ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে।
ছোটবেলা থেকেই গানবাজনা পছন্দ করতেন রাবেয়া খাতুন।সে সময়ে মসজিদের আশেপাশে গান বাজনা করা যেত না বলে,তার বাবা বৃষ্টির সময়ে হারমনিয়াম বাজিয়ে তাকে গান শেখাতেন।কারন বৃষ্টি হলে বাইরে আওয়াজ যেত না।
১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই সম্পাদক ও চিত্র পরিচালক এটিএম ফজলুল হকের সাথে তার বিয়ে হয়ে যায়।এই দম্পতির চার সন্তান রয়েছে,নাম_ ফরিদুর রেজা সাগর, কেকা ফেরদৌসী, ফরহাদুর রেজা প্রবাল ও ফারহানা কাকলী।
রাবেয়া খাতুন বেশ কিছু বই লিখেছেন।তার লেখা ৪ টা বই থেকে চলচ্চিত্র নির্মান ও করা হয়।সেগুলো হচ্ছে, মেঘের পরে মেঘ,মধুমতি, মেঘ কখনো বৃষ্টি।
লেখালেখির পাশাপাশি তার আরো দুটি পেশা ছিলো, শিক্ষকতা এবং সাংবাদিকতা। এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন বাংলা একাডেমীর কাউন্সিল মেম্বার ছিলেন।ছিলেন জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের গঠনতন্ত্র পরিচালনা পরিষদের সদস্য, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরীবোর্ডের বিচারক, শিশু একাডেমীর কাউন্সিল মেম্বার ও টেলিভিশনের ‘নতুন কুড়ি’র বিচারক।
তার লেখা গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে__
মধুমতী,সাহেব বাজার, অনন্ত অন্বেষা,রাজারবাগ শালিমারবাগ,মন এক শ্বেত কপোতী,
সেই এক বসন্তে,মোহর আলী,নীল নিশীথ,বায়ান্ন বাজার এক গলি, পাখি সব করে রব,নয়না লেকে রূপবান দুপুর,হানিফের ঘোড়া,হিরণ দাহ,মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস সমগ্র ইত্যাদি।
লেখালেখি জগতে এসে তিনি বেশ কিছু পুরষ্কার ও সম্মাননা পান।সেগুলো হচ্ছে___
বাংলা একাডেমি পুরস্কার, (১৯৭৩)
হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৯)
একুশে পদক(১৯৯৩)
বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ (১৯৯৪)
নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯৫)
জসিমউদ্দিন পুরস্কার (১৯৯৬)
শেরে বাংলা স্বর্ণপদক (১৯৯৬)
শাপলা দোয়েল পুরস্কার (১৯৯৬)
টেনাশিনাস পুরস্কার (১৯৯৭)
ঋষিজ সাহিত্য পদক (১৯৯৮)
অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার (১৯৯৮)
বাংলাদেশ কালচারাল রিপোটার্স এ্যাওয়ার্ড
মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার (২০০৫)
স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৭)
শেষ বয়সে এসে তিনি বেশ অসুস্থ হয়ে পরেন।২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি গুলশানে নিজ বাড়িতে স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুর তার বয়স ছিলো ৮৫ বছর।
আজিমেরী হক বাঁধনঃ
আজমেরী হক বাঁধন বাংলাদেশের একজন অভিনেত্রী এবং একজন দন্ত চিকিৎসক।
তিনি ২৮ অক্টোবর ১৯৮৩ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার কামারঁগাও গ্রামে।কামারগাঁও তার নানাবাড়ি ছিলো।তার পৈত্রিক নিবাস একই উপজেলার(শ্রীনগর) বাশাইলভোগ গ্রামে।তার বাবার নাম আমিনুল ইসলাম সেন্টু ঢালী,তিনি পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।
বাঁধন বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ থেকে দন্ত বিষয়ে বি.ডি. এস. পাশ করেন।অভিনয়ের পাশাপাশি বর্তমানে সে দন্ত চিকিৎসক পেশায় ও জড়িত আছেন।
২০১০ সালে জানুয়ারি মাসে তিনি মাশরুর সিদ্দিকী সনেটকে বিয়ে করেছিলেন। ২০১০ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর এই দম্পতির কন্যা সায়রা জন্মগ্রহণ করে। ২০১৪ সালের ২৬শে নভেম্বর তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।এরপর আইনগতভাবে বাধঁন তার কন্যার অভিভাবক হোন।
বাধঁন ২০০৬ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার এ রানার আপ হয়েছিলেন।মূলত রানার-আপ হওয়ার মাধ্যমেই তিনি অভিনয় জগতে তার কর্ম জীবন শুরু করেন।তিনি বেশ কিছু ধারাবাহিক নাটক,বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে__
নিঝুম অরণ্যে ,রেহানা মরিয়ম নূর ,বুয়াবিলাস,শুভবিবাহ,চাঁদ ফুল অমাবস্যা,বিজি ফর নাথিং ইত্যাদি।তার অভিনীত রেহানা মরিয়ম নূর (২০২১) চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং সেখানে তার অভিনয় এর খুব সমাদৃত হয়। এছাড়াও সম্প্রতি(২০২১ সাল) তিনি একটি ওয়েব সিরিজ”রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি” এর কাজ শেষ করেছেন।
চাষী নজরুল ইসলামঃ
চাষী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক।তার জন্ম ২৩ ই অক্টোবর ১৯৪১ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার, শ্রীনগর উপজেলার, সমষপুর গ্রামে।তার বাবার নাম মোসলেহ উদ্দিন আহম্মদ।তিনি বর্তমান ভারত “টাটা আয়রন এন্ড স্টীল” কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।চাষী ছিলেন তার বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান।
চাষী ১৯৬৯ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর বিখ্যাত কাজী পরিবারের কে.জি.আহমেদের মেয়ে জোত্স্না কাজীকে বিয়ে করেন।
তার নাম চাষী হওয়ার পেছনে বেশ দারুন একটা গল্প রয়েছে।তার মামার নাম ছিলো চাষী ইমাম উদ্দিন। তিনি শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হকের সঙ্গে একসময় রাজনীতি করতেন এবং নবযুগ ও লাঙ্গল পত্রিকার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই সূত্রেই একদিন ফজলুল হককে তার মামা একটা নাম দিতে বললে, তিনি চাষী ইমাম উদ্দিনের ‘চাষী’ আর কাজী নজরুল ইসলামের ‘নজরুল ইসলাম’ মিলিয়ে নাম দিলেন চাষী নজরুল ইসলাম।
চাষী নজরুল ইসলামের জন্ম মুন্সিগঞ্জ হলেও,জন্মের তিন মাস বয়সে তাকে নিয়ে তার বাবার চাকরিস্থল জামশেদপুর থাকতেন তার পরিবার।সেখানে প্রায় চার বছর ছিলেন তারা। এরপর কিছুদিনের জন্য আবার নিজেদের গ্রাম বিক্রমপুরে ফিরে এলেন। বিক্রমপুরে চাষীদের বাড়ির সামনে বেশ খোলা জায়গা ছিল। তার কিছু অংশে পারিবারিক হাট বসতো-সবাই বলতো হাটখোলা। পাশেই ছিল একটা প্রাইমারি স্কুল। এ স্কুলটার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তার মামা চাষী ইমাম উদ্দিন(বর্তমান নাম সমরপুর হাইস্কুল ও কলেজ)।
এই স্কুলেই ক্লাস ওয়ানে তাকে ভর্তি করানো হয় চাষীকে।এরপর ক্লাস টুতে ওঠার পর চাষীর বাবা আবার তাকে নিয়ে গেলেন জামশেদপুরে। ওখানে চাষীর বাবারই প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল মুসলিম স্কুলে তিনি ফাইভ পর্যন্ত পড়েন। তারপর ক্লাস সিক্স-সেভেন পড়েন গোলামুড়ি মাধ্যমিক স্কুলে। তারপর আরডি টাটা হাইস্কুলে-এখান থেকেই পরে চাষী ইলেভেন পাস করেন।এরপর হঠাৎ চাষীর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে বাবার অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাকে নিয়ে সবাই ১৯৫৮ সালে বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জে ফিরে আসেন।তার কিছুদিন পরেই তার বাবা মারা যান।সংসারে বড় ছেলে হিসেবে সব দায়িত্ব চাষীর কাঁধে এসে পড়ে।।
১৯৬৯ সালে শুরু হয় তার প্রথম কর্মজীবন,এজি অফিসে অফিসের পোস্ট-সর্টার হিসেবে।সে সময়ে এফডিসি মাত্র গড়ে উঠছে। আউয়াল সাহেব বিখ্যাত সিনেমা করিয়ে ফতেহ্ লোহানীর প্রধান সহকারী। চাষী চাকরির ফাঁকে ফাঁকে তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, একই সঙ্গে শুরু করলেন নাটক। আলী মনসুর সাহেবের কৃষ্টি সংঘের সঙ্গে কাজ করেন মঞ্চে অভিনয় করেন। এদিকে চাষীর সিনেমা প্রীতিটা জানতেন তার খালাতো বোনের স্বামী সৈয়দ আওয়াল। একদিন সুযোগ এলো- চাষীকে পরিচয় করিয়ে দিলেন পরিচালক অভিনেতা ফতেহ লোহানীর সঙ্গে। ফতেহ লোহানী তখন ‘আছিয়া’ করছিলেন। চাষীকে ছোট্ট একটা রোল করার জন্য নিয়েছিলেন। কিন্তু ফতেহ্’র নির্দেশে পরদিন সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৬১’র জুন মাসে চাষী কাজ শুরু করলেন। এরপর ১৯৬৩-তে কাজ করেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রাকার ওবায়েদ-উল-হকের সহকারী হিসাবে ‘দুইদিগন্ত’ ছবিতে। এভাবে কাজ করতে করতে এলো ১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলেন আর সবার মতো।
তারপর যুদ্ধশেষে বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ নির্মাণ করলেন। ১৯৭২-এ এই ছবির মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে চাষী নজরুলের আত্ম প্রকাশ ঘটলো।এভাবেই তার চলচ্চিত্র জগতে পদর্পন।
তার পরিচালিত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র গুলো হচ্ছে__
আছিয়া ( (সহকারী পরিচালক),দুই দিগন্ত (সহকারী পরিচালক),ওরা ১১ জন ,সংগ্রাম ,ভালো মানুষ ,বাজিমাত ,দেবদাস ,চন্দ্রনাথ ,শুভদা ,লেডি স্মাগলার ,বেহুলা লক্ষিন্দর ,মহাযুদ্ধ ,পদ্মা মেঘনা যমুনা ,হাঙর নদী গ্রেনেড ,হাছন রাজা,কামালপুরের যুদ্ধ ,ধ্রুবতারা ,দুই পুরুষ ইত্যাদি।
এছাড়াও চাষী বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে চারবারের মতো সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
কর্মজীবনে এসে কাজের মাধ্যমে বেশ কিছু সম্মাননা পান চাষী।তা হলো__
১. বাংলাদেশ সিনে জার্নালিষ্ট এ্যসোসিয়েশন।
২. জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শুভদা)।
৩. সিনে ডিরেক্টরাল এসোসিয়েটস।
৪. শের-ই-বাংলা স্মৃতি পুরস্কার।
৫. বাংলাদেশ ফিল্ম ক্রিটিকস্।
৬. বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইয়ুথ অর্গানাইজেশন ফেডারেশন এওয়ার্ড।
৭. সিনে ডিরেক্টরাল সোস্যাল ওয়েলফেয়ার।
৮. বাংলাদেশ সোস্যাল ওয়েলফেয়ার।
৯. স্যার জগদীশচন্দ্র বসু স্বর্ণপদক।
১০. জহির রায়হাণ স্বর্ণপদক।
১১. জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ( হাঙর নদী গ্রেনেড, ১৯৯৭ শ্রেষ্ঠ পরিচালক)
১২. একুশে পদক ।
১৩. বিনোদন বিচিত্রা অ্যাওয়ার্ড ।
১৪. জেনেসিস নজরুল সন্মামনা পদক ।
১৫. বি.সি. আর.এ.অ্যাওয়ার্ড ।
১৬. তারকালোক অ্যাওয়ার্ড ।
১৭. আন্তজাতির্ক বাংলাদেশ ইন্দোকালা মিউজিক । ২০০৩ জহির রায়হান আজীবন সন্মাননা
১৮. CJFB অ্যাওয়ার্ড ।
১৯. আন্তজাতির্ক কালাকার পুরস্কার।
২০. ট্রাব অ্যাওয়ার্ড।
চাষী নজরুল ইসলাম ২০১৪ সালের মে মাস থেকে অসুস্থজনিত কারনে চিকিৎসক সৈয়দ আকরামের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তার মাঝে তার বেশ কয়েকবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে ২০১৫ সালের ১১ই জানুয়ারি রোববার ভোরবেলা তিমি মৃত্যুবরণ করেন।
আলাউদ্দিন আলীঃ
আলাউদ্দিন আলী বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় সুরকার,গীতিকার এবং সংঙ্গীত পরিচালক।তার জন্ম ১৯৫২ সালের ২৪শে ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেলার, টংগিবাড়ী উপজেলার,বাঁশবাড়ী গ্রামে।তার পরিবার খুবই সাংস্কৃতিক মনা ছিলেন। তার পিতার নাম জাবেদ আলী এবং মাতার নাম জোহরা খাতুন। তার পিতা একজন সংঙ্গীত এর ওস্তাদ ছিলেন।আলাউদ্দিন আলী নজরুলসঙ্গীত শিল্পী সালমা সুলতানাকে বিয়ে করেন।এই দম্পতির একটি মেয়ে আছে,নামআলিফ আলাউদ্দিন। তিনি বর্তমানে একজন সঙ্গীতশিল্পী।
আলাউদ্দিন এর সঙ্গীত এর হাতে খড়ি শুরু হয় তার পিতা এবং ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে। ১৯৬৮ সালে তিনি যন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে প্রথম আসেন এবং আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজ সহ বিভিন্ন সুরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
তবে সঙ্গীত পরিচালনা হিসেবে বেশ জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত হোন ১৯৭৫ সালে।তিনি প্রায় ৩০০ টির ও বেশি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে_
গোলাপী এখন ট্রেনে , সুন্দরী , কসাই ,যোগাযোগ, পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি।তার উল্লেখযোগ্য কিছু গান হলো__
যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়,একবার যদি কেউ ভালোবাসতো,ভালোবাসা যতো বড়ো জীবন তত বড় নয়,প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ,হয় যদি বদনাম হোক আরো
,সুখে থাকো, ও আমার নন্দিনী হয়ে কারও ঘরনি,আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার,বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম দেখা পাইলাম না,সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি ও আমার বাংলাদেশ,যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে, মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে,আমায় গেঁথে দাওনা মাগো, জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো,হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ ইত্যাদি।আলাউদ্দিন আলী সঙ্গীত জগতে এসে ৭ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার সম্মাননা লাভ করেন।আলাউদ্দিন আলী ফুসফুস টিউমার ও রক্তে সংক্রমণজনক বেশ কিছু রোগে ভুগছিলেন দীর্ঘদিন। এরপর হুট করেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৯ আগস্ট ২০২০ বিকাল সাড়ে ৫টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ফেরদৌস ওয়াহিদঃ
ফেরদৌস ওয়াহিদ বাংলাদেশের একজন গায়ক, লোকসংঙ্গীত শিল্পী এবং চলচ্চিত্র পরিচালক। তার জন্ম ১৯৫৩ সালের ২৬ শে মার্চ মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার দক্ষিন পাইকসা নামক একটি গ্রামে। তার বাবার নাম ওয়াহিদ উদ্দিন আহমেদ এবং মায়ের নাময় উম্মে হাবিবা নূরজাহান। ছয় ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট।জন্মের পর তিনি তার কিশোর বয়স কাটিয়েছেন কানাডায়।
ফেরদৌস ওয়াহিদ এর গান শেখা শুরু হয় তার ওস্তাদ মদনমোহন দাশের কাছে,তবে তিনি ক্লাসিকাল গান শেখেন ফজলুল হকের কাছে। তিনি কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৭০-এর দশকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষার মধ্য দিয়ে। ক্যারিয়ার শুরু করার সময় তার কয়েকটি হিট গান আনিস জেড চৌধুরী, লাকী আখান্দ এবং আলম খান সুর করেছিলেন। এর পর হতে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত তিনি পরিচালনা ও গান করছেন। এছাড়া দেশ বিদেশেও অনেক গান গেয়েছেন তিনি।
সিনেমাতে ফেরদৌস ওয়াহিদ প্রথম প্লে-ব্যাক করেন দেওয়ান নজরুল পরিচালিত ‘আসামী হাজির’ সিনেমায়। পরিচালকের লেখা ও আলম খানের সুর সঙ্গীতে সাবিনা ইয়াসমিন সঙ্গে ‘আমার পৃথিবী তুমি’ গানটি করেন। সিনেমায় তার আলোচিত গান হচ্ছে ‘ওগো তুমি যে আমার কতো প্রিয়’, ‘আমি এক পাহারাদার’,‘ শোন ওরে ছোট্ট খোকা’, ‘আমি ঘর বাঁধিলাম’ ইত্যাদি। সিনেমার বাইরে তার গাওয়া আলোচিত গান হচ্ছে ‘মামুনিয়া’, ‘আগে যদি জানতাম’, ‘এমন একটা মা দেনা’। এছাড়াও তার পনেরোর অধিক একক এলবাম রয়েছে ।
গানের পাশাপাশি একটা সময় তিনি চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসেবেও পদার্পন করেন।তার নির্মিত প্রথম সিনেমা ‘কুসুমপুরের গল্প’ এতে তিনি নিজে অভিনয় করেন।১৯৯৮ সালে আবুল হোসেন খোকন পরিচালিত ’ভয়ঙ্কর বদমাশ’ সিনেমাতে প্রথমবারের মতো নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন ফেরদৌস ওয়াহিদ। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন ববিতা।
তিনি তার কর্মজীবন থেকে অবসর নেন ২০২০ সালে।তবে কর্মজীবনে তিনি তার সাঁকো টেলিফিল্ম এর জন্য “আজীবন সম্মাননা” পেয়েছিলেন