বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুকের পরিচিত অনেক পুরনো। পাহাড়ের এই দৃশ্যটি অতি চমৎকার।এ পাহাড় থেকৈ সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের দৃশ্য যেকোনো পর্যটককে মুগ্ধ করে জেলা শহর হতে ২৬ কি. মি. দূরে অবস্হিত।সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ২৬০০ ফুট উপরে।
চিম্বুক পাহাড়ে যাওয়ার পথে দেখা যায় আঁকাবাঁকা পথ, চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য, সর্পিল সাঙ্গু নদী, ঝরনা আরো কতো অভূতপূর্ব দৃশ্য চোখের সামনে উপস্থিত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখেম। চিম্বুক পাহাড়ে মেলে মেঘের স্পর্শ।
চিম্বুক পাহাড়ে যাওয়ার আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই পাশের চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সর্পিল সাঙ্গু নদীর সৌন্দর্য মনকে প্রশান্ত করে। পাহাড়ের সর্বোচ্চ উচ্চতায় দাঁড়িয়ে নৈস্বর্গিক প্রকৃতিক রূপের সুধা পান করতে করতে মেঘের ভেলা চেপে হারিয়ে যাওয়া যায় অপার্থিব জগতের গভীরে। আর বর্ষায় চিম্বুক পাহাড় থেকে সাজেকের মত দুরন্ত মেঘের উড়াউড়ি দেখা যায়, আর ভাগ্য ভাল হলে হাত বাড়িয়ে নেয়া যায় মেঘের স্পর্শ। এছাড়া চিম্বুক পাহাড়ে যাওয়ার পথে মিলনছড়ি ও শৈলপ্রপাত ঝর্ণা ঘুরে দেখা যায়।
চিম্বুকের উপর থেকে নীচে তাকালে মনে হবে মেঘের ভেলায় আপন মনে ভাসছি যেন। রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় ও পাহাড়ের উপর মেঘের দেখা মেলে। এছাড়া পাহাড়ের উপর থেকে দিগন্তজুড়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়কে কিছু মুহূর্তের মনে হয় সমুদ্রের ঢেউ।
প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারনে দেশের গন্ডী পেরিয়ে আজ বিদেশেও পরিচিত চিম্বুক পাহাড়। বাংলাদেশের পাহাড়ী সৌন্দর্যের রানী হিসেবে পরিচিত চিম্বুক পাহাড় দেশের তৃতীয় বৃহত্তম পাহাড়। এ পাহাড় থেকে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের দৃশ্য প্রকৃতি প্রেমীদের মুগ্ধ করে।
বান্দরবান থেকে চিম্বুক যাওয়ার রাস্তার দুই পাশের পাহাড়ী দৃশ্য খুবই মনোরম। চারপাশের সবুজ পাহাড় আর বনরাজি দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে। চিম্বুকে যাওয়ার পথের পাশে রয়েছে অসংখ্য উপজাতির আবাসস্থল।বাড়িগুলো বাঁশ ও শণ দিয়ে তৈরি। মাচাং ধরনের। এখানে ধরিত্রী, প্রকৃতি ও মানুষ পরিপূরক, একাকার।
বাড়িগুলো মাচার মতো উঁচু করে তৈরি। চিম্বুকে যাওয়ার পথে সাঙ্গু নদী ভ্রমণকে আরও বেশি আকর্ষণীয় ও নান্দনিক করে তুলে। পাহাড়ের মাঝে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সড়ক দিয়ে এঁকেবেঁকে যাওয়ার সময় মনে হয় গাড়িতে করে চাঁদের বুকে ভ্রমণে যাচ্ছি।
পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতেই চমকে দেয় পরিপাটি ও পরিকল্পিতভাবে সাজানো এ পাহাড়চূড়া।পাহাড়ে উঠেই দক্ষিণে সিঁড়ি নেমে গেছে বিশাল এক চত্বরে। চত্বরটির নাম নব চত্বর। শরতে এই ভিউ পয়েন্ট থেকে দাঁড়িয়ে দেখা যায় বিশাল মেঘের সমুদ্র। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপেও হিম বাতাস গা জুড়িয়ে যায় এখানে। পাহাড় আর আকাশ বিশালতা নব চত্বরে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায়। পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে দেখতে পাওয়া যায় ভাসা মেঘের ভেলা। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া মেঘ দেখে মনে হয় মেঘের স্বর্গরাজ্য ভাসছে চিম্বুক।
সিঁড়ির পূর্বে রয়েছে দুই স্তরের দু’টি ছোট ভিউ পয়েন্ট। সিঁড়ি যেখানে শেষ সেখানে পশ্চিম পাশে রয়েছে তিনটি কংক্রিটের সুদৃশ্য চেয়ার-টেবিল। গাছের ছায়া পড়ে তাতে। বিকেলের শেষ রোদ উপভোগ কিংবা বসে আড্ডা দেওয়া বা নিজের জন্য বরাদ্দ একান্ত সময় উপভোগ করা যায়।
চিম্বুকের আরো একটি বিশেষত্ব হলো ঠিক নিচে রাস্তার পাশে বারো মাস মেলে পাহাড়ের ফল। পেঁপে, কলা, আখ, ডাব, শরিফা, কমলা, বরই পাওয়া যায় সিজন অনুযায়ী। তবে কলা-পেঁপে মেলে সারাবছর। সব ফলই টাটকা।কেমিক্যাল মুক্ত। পর্যটকরা এসব ফল খেতে পছন্দ করেন সবসময়।
চিম্বুকের নিচে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত মারমাদের জীবন-জীবিকা চলে এই ফল-মূল বিক্রিতে। তারাই মূলত এখানে বিভিন্ন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত।এখানে বার্মিজ ও আদিবাসী পণ্যও মেলে।
চিম্বুকে রয়েছে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে একটি রেস্টহাউজ, কিন্তু তা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত নয়। চিম্বুকের চৌহদ্দির মধ্যে নেই কোনো প্রাইভেট আবাসিক হোটেল মোটেল, যেখানে গিয়ে রাত যাপন করা যেতে পারে। অথচ এই চিম্বুক পাহাড়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে সুন্দর উপজেলা শহর আর সেটা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের চিম্বুক হতে পারে একটি শৈল শহর।পরিকল্পিতভাবে পাহাড়ি শহর গড়ে উঠলে এই জনপদে নৈসর্গিক সৌন্দর্য স্বচক্ষে অবলোকনের জন্য দেশ-বিদেশের পর্যটন প্রেমিরা ছুটে আসবে।
একটু অবসর সময় বের করে ঘুরে আসা যায় বাংলার দার্জিলিং থেকে।
চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যাওয়ার জন্য সরাসরি বাস আছে।
রাহাত সোলতানা
অভিরুচি বুটিকস