ফাইভস্টার হোটেল ছেড়ে চলুন একটু বাইরে বেরিয়ে আসি ,দেখি কি আছে আমাদের জেলাগুলোতে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খাওয়ার মতো।একটা সময় ছিলো যখন মানুষ বিরিয়ানিকে স্বপ্ন ভাবলেও আটা ময়দা কে ভাবতো অমৃত । কেননা তখন খাবার পাওয়াটাই ছিলো সো টাফ । তেমনি ভাবে টাংগাইলে বিখ্যাত হয়ে যায় কিছু খাবার। এগুলো খুব বেশি দামি না আবার হাতের নাগালেই হওয়ায় এতোটাই বিখ্যাত হয় যে টাংগাইলের সব কিছুতেই আধুনিকতার ছোঁয়া পেলেও পরিবর্তন আসেনি খাবারে । তেমনি কিছু খাবার নিয়ে আমরা জানবো আজ ।
কলার কেঞ্জাল
ছোট বেলা কেমন কেটেছে? খুব বেশি ধরাবাঁধা নাকি স্বাধীন পরিবেশে একদম নিজের মন মতো?
আমার কেটেছে একদম বন্দী জীবন। খেলার সাথী হিসেবে ছিলো আমার একমাত্র ভাই। বাইরের বাচ্চাদের সাথে মিশতে দেওয়া হতো না একদমই, কারণ মুরব্বিদের ধারণা ছিলো গ্রামের বাচ্চাদের সাথে মিশে এমনটাই হবো, পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াবো ।
স্কুল জীবন শুরু হলে একটু মুক্ত হলাম। পড়াশোনার জন্যই বাহিরে যেতে দেয় তখন, কিন্তু আমি লুকিয়ে খেলা করি সবার সাথে।
একদিন সবাই মিলে পিকনিক খাবে, টাংগাইলের ভাষায় যাকে বলে টোলা পানি। কিন্তু তখন অনেক ছোট কিছু কিনতে হলে টাকা তো লাগবে, পাবো কোথায়! সবাই মিলে প্লান করলো টাংগাইলের মোষ্ট ফেবোরেট খাবার চিংড়ি মাছের কেঞ্জাল রান্না করবে। যার জন্য কোনো টাকা লাগবে না।
আমরা সবাই জেনে থাকবো, কলা গাছ একবার ফল দেওয়ার পর কেটে ফেলা হয়। বর্তমানে মধুপুরে এটি দিয়ে ফাইবার বানানো হলেও ওই সময়টায় কিছু করা হতো না। তাই সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সবাই মিলে কলা গাছ ছিলতে থাকলাম।
একটা পর্যায়ে কেঞ্জাল নামের সেই সাদা অংশ পেয়ে সবার যেনো রাজ্যের খুশি ভর করেছে। কেঞ্জাল কুচি কুচি করে কেটে ধুয়ে রাখা হলো পানি ঝড়ার জন্য। অন্যদিকে চুলায় দেওয়া হলো মসলা যার মাঝে সংগ্রহ করে রাখা চিংড়ি দিয়ে ভেজে নেওয়া হলো। চিংড়ি ভাজা শেষ হলে কুচি করে রাখা কেঞ্জাল দেওয়া হলো ভাজির জন্য, মুটামুটি হয়ে এলে উপর দিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হলো চিংড়ি।
ভীষণ মজার এই চিংড়ি কেঞ্জাল আগে প্রায়ই দেখা যেতো রান্না করতে। সময়ের সাথে সবই পরিবর্তন হয়, সেইসাথে পরিবর্তন হয়ে কমে গেছে এই কেঞ্জাল খাওয়ার প্রচলন। আমাদের দাদা দাদীরা এখনও এই খাবারকে অমৃত মনে করে খেলেও আমরা তরুণ সমাজ এতোটা পরিচিত না এই খাবারের সাথে।
টাংগাইলের মোষ্ট ফেবোরেট খাবারের একটা এই খাবার। যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন । রোগী ও প্রেগন্যান্ট মাদারকে সাজেস্ট করা হয় আয়রন ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খেতে। আগের মানুষ এই ডিজিটাল চিকিৎসা ব্যাবস্থা সম্পর্কে জানতেন না, কিন্তু আয়রনের উৎস হিসেবে কলা ও কেঞ্জাল খাওয়াতে ভুলতেন না কখনোই।
আমের পায়েস
পায়েস বা আম যেটাই বলি না কেন জিভে জল চলে আসে না? মনে হয় না এখনই যদি পেতাম, উফফ কি ভিষণ মজার এই খাবার। নবান্ন এলেই সবাই অপেক্ষায় থাকেন কবে পায়েস করা হবে কবেই বা খাওয়ানো হবে সবাইকে। কিন্তু বাচ্চারা ভাবে একটু ভিন্ন ভাবে।
বৈশাখ জ্যৌষ্ঠ মাসে আমরা কাচা আমের গন্ধে যখন পাগল প্রায় তখন টাংগাইলের প্রতি টা জায়গা জুড়ে আমেজ চলে আমের পায়েসের । আমাদের টাংগাইল জেলায় নবান্নে পিঠা উৎসবের সাথে আয়োজন করা হয় এই পায়েশের।
নতুন ধান কড়া রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় পায়েসের চাল। তারপর সেই চাল আধভাঙা করে পায়েসের মতো করে করে জ্বাল করা হয়। যখন প্রায়ই পায়েস হয়ে আসে তখন দিয়ে দেওয়া হয় নারিকেল ও ব্লেন্ড করে রাখা পাকা আম।
মধুর এই পায়েসের গন্ধে সবাই মাতোয়ারা হয়ে যায় যেনো। বিকেলে আড্ডা ও রাতের আড্ডার একাংশ জুড়ে থাকে নবান্নের নতুন চালের এই আমের পায়েস।
যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই পায়েসের রীতি এখনও বেশ জমজমাট। টাংগাইলের ঐতিহ্যবাহী খাবারের একটা অংশ হয়ে আছে আমের পায়েস।
আনারসের তরকারি
টাংগাইল জেলার মধুপুর উপজেলা কে বলা হয় আনারসের রাজধানী। একদম ফুল থেকে ফল পাকা পর্যন্ত উপভোগ করে নেয় মধুপুর ভাওয়াল গড়ের মানুষেরা। এই আনাররস বিভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করার মাঝেই একটি আনারসের তরকারি।
আনারস যখন একদম কচি, শুধুমাত্র টকটক একটা ভাব মাএ এসেছে তখন ওই আনারস দিয়ে রান্না করা হয় শুটকি মাছ। প্রতিটি খাবার আমরা উপভোগ করি তার স্বাদে গন্ধে। ছোট আনারস কুচি করে কেটে একটু সিদ্ধ করা হয় যেনো হালকা টক স্বাদটা চলে যায়।
তারপর চুলায় রান্নার সকল মসলা দিয়ে নরমাল শুটকি রান্নার মতো করে রান্না করা হয়। এই শুটকি রান্না পুরো অমৃত মনে হয়, একটু শুটকির ঘ্রাণ একটু চাটনির ঘ্রাণ, সব মিলিয়ে অসাধারণ।
অন্যদিকে পাকাঁ আনারস ও ইলিশ মাছ রান্না এতো বেশি মজার যে সিজনে এই খাবার কেউ মিছ করে না, অতিথি আপ্যায়নেও রাখা হয় এই ইলিশ রান্না। পাকাঁ আনারস এমনিতেই ঘ্রাণে মাথা নষ্ট করা তার মাঝে যদি ইলিশ থাকে পুরোটাই যেনো জিভে জল এনে দেয়।
মুটামুটি যখন আনারস পেকেঁ যায় তখন ওই আনারস দিয়ে রান্না করা হয় ইলিশ মাছ। কেননা এটি এতো বেশি রসালো হয় না, আবার টক ও থাকে না, গ্রামের প্রচলিত একটা কথা আছে ইলিশ আনারস নিয়ে,
ইলিশ মাছের তিরিশ কাটা ,
তাতে কি মোড় গায়ে তো ঝাটা,
সব বাদ দিয়ে আয় দেই হাটা । ।
এই কথাটি বলা হয় কারণ, আমরা সবাই জানি ইলিশ মাছের অনেক কাটা, অন্যদিকে আনারসেও রয়েছে কাটার মতো, প্রচলিত ভাষায় বলা হয় চোখ। সব বাদ দিয়ে হাটার কথাটি হলো আনারস ইলিশ রান্না করার ব্যাপার।
এই খাবার যতোটা মজা, ঠিক ততোটাই রয়েছে এর গুনাগুন।
পাচুই
অনেকের অভিযোগ থাকে ঘুম পায় না বলে। তাদের জন্য এই ঔষধ অবশ্য অবশ্যই ঘুম আসবেই। কিছুদিন আগেই চলে গেলো ধানের বীজ অঙ্কুরিত করার দিন, সোজা বাংলায় টাংগাইলের ভাষায় যদি বলি তাহলে হবে জালা করার দিন।
জালার ধান শুকিয়ে আধভাঙা করে আয়োজন করা হয় এই পাচুই এর, কোথাও কোথাও মধুভাতও বলা হয় পাচুই কে। আমরা যেমন পিঠা উৎসব, করে থাকি তেমনি টাংগাইলের একটা উৎসব ও আতিথেয়তার অংশ পাচুই।
আধভাঙা জালাধান থেকে রান্না করা হয় ভাত, সেটাতে রাতে পরিমাণ মতো দুধ, ও চিনি দিয়ে মাখিয়ে রাখা হয় সারারাত। পরদিন উপর দিয়ে কুড়ানো নারকেল দিয়ে পরিবেশন করা হয় সবার মাঝে।
স্মেল টা অন্য রকম একটু তাই এই খাবার সবার পছন্দ নাও হতে পারে, কিন্তু ঐতিহ্য তো ঐতিহ্য ই। প্রতি বার ধান লাগানোর সময় প্রতি বাড়িতে দেখা যায় এই পাচুই উৎসব। অনেকেই বলে থাকে এই খাবার খাওয়ার পর খুব ভালো ঘুম হয়। তাই বললাম যাদের কমপ্লেইন থাকে ঘুম হয় না বলে এটা তাদের ঔষধ।
বর্তমানে এই খাবার ইয়াং জেনারেশন পছন্দ না করলেও আমাদের দাদী নারীরা অমৃত মনে করে থাকেন পাচুই কে। এমনকি কোনো সময় বাদ যায় না এই উৎসব। তাদের মতে এই খাবারের মতো মজা শীতকালে অন্য কোনো খাবার থেকে পাওয়া যায় না।
কাউনের পায়েস
পায়েস মানেই আলাদা একটা স্বাদ মনে হয় । কিন্তু কাউনের পায়েস মনে হলে নতুন করে কি মনে হয় বলুন তো! ঘাসের মতো দেখতে হয় কাউনের গাছগুলো। কথা ছিলো অবহেলায় থাকবে কাউন , কেননা দেখতে ঘাসের মতো। কিন্তু তা না হয়ে এই খাবারের প্রাধান্য সবথেকে বেশি হয়েছে।
একটা সময় ছিলো যখন পায়েস বলতেই টাংগাইল জেলায় বুঝতো কাউন দিয়ে রান্না হবে। বাচ্চাদের সুজি রান্না মানেই বুঝতো কাউন। সময়ের পরিক্রমায় আজ কাউনের চাষাবাদ কমে গেছে, কিন্তু সিজনাল খাবারের সাথে কাউনের পায়েস আজও বেশ প্রচলিত।
ধান থেকে চাল সংগ্রহ করার মতো করেই সংগ্রহ করা হয় কাউন। এই কাউন গুড়া করে বানানো হয় বিভিন্ন পিঠা কিন্তু পায়েস কে আজও স্বাদে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি কিছু।
বিভিন্ন প্রোগ্রামের পায়েস মানে কাউন দিয়ে পায়েস। সময়ের সাথে সাথে এর পরিচিতি কমে গেলেও এই পরিচিতি অল্প করে হলেও বাচিয়ে রেখেছেন আমাদের পূর্বপুরুষরা। যাদের থেকেই শোনা এই কাউনের গল্প। মাঠের পর মাঠ ঘুরে বেড়ানোর গল্প।
মেন্দা
ছোটবেলার সেই খোলা মাঠে হাজার মানুষের সাথে বসে কলাপাতার খাবার মেন্দা। বর্তমানে এসেছে ওয়ান টাইম থাল, সাথে রান্না করা হয় ট্রেডিশনাল অনেক খাবার। কিন্তু তারপরও কোথায় যেনো এখনও মেন্দার জন্য জায়গাটা ফাকাই থেকে যায়।
টাংগাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এক খাবার মেন্দা। এটা মূলত গরুর মাংসের তরকারি হলেও রান্নার ভিন্নতা থাকায় এই তরকারি কে বলা হয় মেন্দা। নরমালি যেভাবে রান্না করা হয় গরুর মাংস ঠিক তেমনি ভাবে রান্না হয় মেন্দা তবে এই খাবারের স্পেশাল ইথিক্স হচ্ছে চালের গুঁড়া। গোস্তের তরকারি প্রায় হয়ে এলে তরকারির উপর দিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয় চালের গুঁড়া। যার কারণে তরকারি অনেকটা আঠালো ভাব হয়।
মেন্দা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত ধনবাড়ী তে। এখনও কোনও চল্লিশা, বিয়ে বা যেকোন ধরনের প্রোগ্রামে রান্না করা হয় মেন্দা। ধনবাড়ীর একটা রেষ্টুরেন্ট ও বেশ নামডাক পেয়েছে মেন্দার জন্য। দূর থেকে অনেকেই চলে যায় মেন্দার টেস্ট নিতে।
আমরা ঐতিহ্য ধরে রাখতে পছন্দ করি, সেই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্যই এখনও মেন্দা বেশ প্রচলিত। এই মেন্দা আগে দেওয়া হতো কলা পাতায়, বর্তমানে এই কলা পাতার স্বাদ না পাওয়া গেলেও মেন্দা রান্নার কোনো পরিবর্তন আসেনি। যার কারণেই শত বছরের ঐতিহ্য আজও চলমান।
চিনার উনসা
চিনার উনসা টাংগাইলের ঐতিহ্যবাহী আঞ্চলিক খাবারের একটি। চিনার উনসা রান্না করা হয় পায়েসের মতো করে। এটি খেতে বেশ সুস্বাদু।
আমাদের টাংগাইলে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে চর এলাকা হওয়ায় এখানে একসময় অনেক বেশি চিনা আবাদ হতো। বিশেষ করে ভাওয়াল ও অন্যান্য পাহাড়ি অঞ্চলে তুলনামূলক বেশি চিনা আবাদ হতো।
চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে চিনার উনসা রান্না করা হয়।
চিনার দানাগুলো খুবই ছোট হয়ে থাকে। প্রথমে চিনাকে সিদ্ধ করে ধানের মতো শুকিয়ে নেয়া হয়। শুকনো চিনাগুলো থেকে ঢেকিতে ধান ভাঙানোর মতো করে উনসা ভাঙা হয়। এখান থেকে পাওয়া চালগুলোকে বালিতে ভেজে চালনি দিয়ে চেলে বালি থেকে আলাদা করা হয়। এই চালগুলো দুধ দিয়ে জাল দিলেই পাওয়া যায় মুখরোচক চিনার উনসা।দুধ জাল দেয়ার সময় একটি তেজপাতা এবং এক বা দুইটি এলাচ দিতে পারেন।পরিমাণ মতো চিনি বা মিছরি দিয়ে ভালো করে জাল দিতে হবে।দেখতে একদম পায়েসের মতো হবে। আপনি চাইলে এখানে কাজুবাদাম এবং কিসমিস ব্যবহার করতে পারেন। পরিবেশন শেষে মুখে দিলেই এর স্বাদ ও ঘ্রাণ আপনাকে আত্মতৃপ্তিতে ভরিয়ে দিতে সক্ষম।
এই চিনার উনসা একটা সময় আমাদের খাবার তালিকার শীর্ষে ছিলো। অতিথি আপ্যায়ন এর ক্ষেত্রে মিষ্টিমুখ করানোর জন্য চিনার উনসা বেশ জনপ্রিয় ছিলো। তবে চিনার উনসার কথা এখন অনেকেরই অজানা।আরিফা মডেলের ফলে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো আবারো সবার কাছে জনপ্রিয় হতে উঠতে পারে।
খুইড়া কাটার চচ্চড়ি
ভিন্ন স্বাদের ভিন্ন রেসিপি নিয়ে চলে এলাম। খুঁইড়া কাটা গাছ আমরা অনেকেই দেখেছি কিন্তু এই গাছটি সম্পর্কে আমাদের ধারণা হচ্ছে এটি একটি আগাছা গাছ।
আমার মনে আছে ছোটবেলায় যখন মিথ্যে রান্না বাটি খেলেছি তখন এই আগাছা টাইপের গাছগুলো দিয়ে কত কত আইটেম রান্না করেছি।
আগাছা বলে অবহেলা করলেও খুইড়া কাটার গাছ দিয়ে মজাদার খাবার তৈরি হয়। সাধারণত গ্রাম অঞ্চলে এই গাছগুলো দেখা যায়। বাড়ির আশেপাশে কিনবা জঙ্গল বা ঝোপেঝাড়ে এই গাছগুলো জন্মে। গাছটির পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের শাকের সাথে মিক্সড করে খুইড়া কাটার শাক রান্না করা হয়। শুধু যে শাক রান্না হয় তাই নয়। খুইড়া কাটার তরকারিও বেশ মজার হয়। ছোট মাছ কিনবা বড় মাছের সাথে খুইড়া কাটা রান্না করে খাওয়া হয়। কেউ চাইলে শুটকি মাছ কিনবা চিংড়ি দিয়েও খুইড়া কাটা রান্না করতে পারে।
প্রস্তুত প্রণালীঃ প্রথমেই শাকগুলো বেছে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী অন্য শাকের সাথে মিশিয়ে পরিমাণ মতে পেয়াজ কুচি, রসুন, কাঁচা মরিচ, শুকনো মরিচ ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে রান্না করে নিতে হবে। ছোট বা বড় মাছের সাথে রান্না করলে প্রথমে মাছগুলো ভেজে নিতে হবে। তারপর কড়াইয়ে তেল দিয়ে তার মধ্যে পেঁয়াজ কুচি, রসুন বাটা,হলুদ গুড়া,লাল মরিচ গুড়া, জিরা গুড়া,স্বাদমতো লবণ,কাঁচা মরিচ দিয়ে তাতে প্রথমে শাক এবং পরে ভেজে রাখা মাছ দিয়ে রান্না করলেই তৈরি হয়ে যাবে খুইড়া কাটার তরকারি।
বেগুনের খাষি
শীতের সকালে গরম ধোয়া উঠা ভাতের সাথে বেগুনির খাষি হলে আর কিছুই লাগে না। খেতে যেন একদম অমৃত।
বেগুনের খাষি টাংগাইল জেলার একটি পুরোনো আঞ্চলিক খাবার। প্রথমে শুধু গারো সমাজের মাঝে এই খাবারটি সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে এই সুস্বাদু খাদ্যটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে।
প্রথমেই বেগুনকে পছন্দ অনুযায়ী টুকরো করে নিতে হবে।টুকরো গুলো খুব বড় কিনবা ছোট না করাই ভালো। মাঝারি আকারের টুকরো করলে রান্না করা খাষি দেখতে ভালো লাগে। টুকরো করা বেগুনের ফালিগুলো কিছু সময়ের জন্য পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। এরপর কড়াইয়ে তেল দিয়ে সেখানে মরিচ গুড়া,হলুদ গুড়া, ধনিয়া গুড়া,পরিমাণ মতো লবণ, ধনিয়া পাতা, কাঁচামরিচ সহ অন্যান্য মসলা দিতে হবে।মসলা গুলো ভালোভাবে নেড়ে তার মধ্যে বেগুনের টুকরো গুলো ছেড়ে দিতে হবে। বেগুন গুলো সিদ্ধ হয়ে নরম হয়ে গেলে নামিয়ে নিয়ে পরিবেশন করতে হবে। কেউ চাইলে বেগুনির খাষির মধ্যে চিংড়ি বাটাও ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে বেগুনের খাষির স্বাদ আরো বাড়বে।
কচুশাকের ইলিশ ভুনা
কচুশাকের ইলিশ ভুনা পছন্দ করে না এমন মানুষ মেলা ভাড়। কচুতে যাদের এলার্জি তারাও কিন্তু খাবারটি সামনে থাকলে লোভ সামলে উঠতে পারে না।আয়রনের অন্যতম উৎস কচুশাক যার ফলে যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে তাদেরকে ডাক্তার খাবারের তালিকায় কচু শাক নিয়মিত খেতে বলেন। আমার তো মায়ের হাতের কচুশাকের ইলিশ ভুনা খুবই পছন্দ।
কচুশাকের ইলিশ ভুনা রান্নার জন্য প্রথমেই কচুশাক সাইজ মতো কেটে ভাপিতে নিতে হবে। আপনি যদি ভাপ না দিতে চান তবে পানিতে ভিজিয়ে রাখলেও হবে। কড়াইয়ে তেল দিয়ে লবণ ও হলুদ গুড়া সহ ইলিশ মাছের মাথা ভেজে নিতে হবে। মাছের মাথা ভাজা হয়ে গেলে ভাজা মাছ নামিয়ে রেখে ঐ তেলের মধ্যে দুটো তেজপাতা, একটি শুকনো লংকা, গোটা জিরে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। খানিকক্ষণ পর আদাবাটা,হলুদ গুড়া,মরিচ গুড়া,জিরা গুড়া, কাঁচা মরিচ বাটা দিয়ে মসলা গুলো কষিয়ে নিতে হবে।এরপর ভাপ দেয়া কচুশাক নিয়ে পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে কম তাপমাত্রায় রান্না করতে হবে। কচুশাকগুলো থেকে যখন পানি বের হওয়া শুরু হবে তখন চুলার তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে ভাজা ইলিশ মাছের মাথা ছেড়ে দিতে হবে।খুন্তি দিয়ে মাছগুলো ভেঙে দিয়ে মিডিয়াম তাপমাত্রায় নাড়াচাড়া করতে হবে বেশ কিছুক্ষণ। কচুশাকের রং দেখলেই বুঝা যাবে কষানো হয়ে গেছে। তখন নামিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে গেলো কচুশাকের ইলিশ ভুনা।
টাংগাইল শুধু মাএ তাঁত , মিষ্টি ও কৃষি পণ্যের জন্যই সেরা না ,সেরা এই অমৃত গুলোর জন্যেও ।আমরা ঐতিহ্য ধরে রাখতে পছন্দ করি, যার কারণেই শত শত বছর পরেও হয়েছে আমাদের খাবারের এই ভিন্নতা । জেলা পর্যায়ে যারা হোমমেইড খাবার নিয়ে কাজ করেন তাদের খাবার মেন্যু তে এই খাবার গুলো জায়গা করে নিতে পারে৷ কেননা শহরের ব্যাস্ত জীবন শেষে যখন আমাদের এই খাবার গুলো সামনে পাই প্রানবন্ত হয়ে যাই ।
আমিনা
ওনার অফ অপরাজিতা
ইসরাত জাহান জীম
ওনার অফ স্বপ্নডিঙ্গা