যুগ যুগ ধরে চট্টগ্রামের মহিষের টক দইয়ের সুনাম রয়েছে।চট্টগ্রামের,বান্দরবান,কেরানী হাট,চকরিয়া এবং লোহাগাড়ায় গ্রামীণ পর্যায়ে এখনো প্রচুর পরিমাণে মহিষে দই উৎপাদন হয়।স্হানীয়ভাবে বিপুল পরিমাণ চাহিদা রয়েছে।
প্রায় ৪৫০০ বছর আগে থেকে পৃথিবীতে মানুষ দুধের তৈরি ভিন্ন এক খাবার খেয়ে আসছে। তা হলো টক দই। দুধের গাজনের ফলে টক দই তৈরি হয়। ল্যাকটোব্যসিলাস নামক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে দুধের গাজনের ফলে ঘন থকথকে দই জমে। এতে আলাদা করে চিনি যোগ না করলে দইয়ের স্বাদ টক হয়। গাজনের ফলে ল্যাকটিক এসিড তৈরি হয় বলে দইয়ের স্বাদ সামান্য টক হয়। টক দইয়ের গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না।
পুষ্টিগত দিক থেকে টক দই হলো প্রোটিনের ভালো উৎস। এটি হলো ক্যালসিয়ামের খাজানা। প্রতি ১০০ গ্রাম টক দই থেকে ৬৯ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়। তবে এতে ১১ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায় আর চর্বি মাত্র ৪.৩ গ্রাম। যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য টক দই উৎকৃষ্ট খাবার।
তাছাড়া টক দই-এ আছে ক্যালসিয়াম, জিংক আর ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। আর যা আছে তা হলো প্রোবায়োটিকস্। আমাদের পাকস্থলীসহ অন্ত্রের বিপাকীয় পরিবেশ ভালো রাখার জন্য প্রোবায়োটিকসের জুড়ি নেই।
জিংক আমাদের দেহে তিনশো’রও বেশি এনজাইমের সহযোগী হিসেবে কাজ করে যার অন্যতম প্রকাশ হলো রুচি বৃদ্ধি।যারা কম খান বা খেতে পারেন না তাদের জন্য রুচিবর্ধক হবে টক দই।
এমন অনেকেই আছেন যারা দুধ খেতে পারেন না, তারও নির্ভয়ে খেতে পারেন টক দই কেননা এতে ল্যাকটোজ গাজনের ফলে ভেঙে ল্যাকটিক এসিডে রূপ নেয়। ফলে হজমে আর কোন অসুবিধা থাকে না।
বাচ্চা থেকে বয়স্ক সবার জন্য উপযোগী খাবার হলো মহিষের টক দই। মিষ্টি দইয়ে যেহেতু আলাদা করে ব্যবহার করা হয় চিনি তাই এর উপকারি দিক কিছুটা কমে যায়।টক দই ডায়াবেটিক রোগীরাও খেতে পারে কিন্তু মিষ্টি দই খাওয়া নিষেধ, তাছাড়া অতিরিক্ত ক্যালরি যোগ হওয়ায় তা ওজনও বাড়িয়ে দেয়। তাই দই খেলে টক দইই খাওয়া ভালো।
মিষ্টি দই আমাদের মুখে স্বাদ লাগে বলেঅনেকই আমরা তা মজা করে খাই ও পছন্দও করি।আমরা বেশির ভাগ সময় টক দই এড়িয়ে চলি। কিন্তু দইয়ের আছে অনেক গুণ।দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায় খেতে পারেন টক দই। টক দই ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিনের অনেক ভালো
টক দইয়ে রয়েছে ল্যাক্টোব্যাসিলাস,অ্যাসিডোফিলাস, যা ইস্ট ধ্বংস করতে সহায়তা করে।প্রতিদিন মাত্র ৬ আউন্স টক দই দূর করবে ইস্ট ইনফেকশনের সমস্যা।টক দই কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।ল্যাক্টোব্যাসিলাস নামক যে ব্যাকটেরিয়া টক দইয়ে রয়েছে তা কোলনে ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়ায় যা কোলনের প্রতিরক্ষায় কাজ করে।
এই ভালো ব্যাকটেরিয়া খারাপ মাইক্রোঅর্গানিজম ধ্বংস করে।হাড়ের সমস্যা টক দইয়ের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ আমাদের হাড়ের গঠন মজবুত করতে সহায়তা করে। এবং
হাড়ের নানা সমস্যাজনিত রোগ-প্রতিরোধে সাহায্য
করে।
আপনি চাইলে ঘরে বসেই খুব সহজে টক দই বানিয়ে নিতে পারেন এজন্য আপনাকে তেমন কোন ঝামেলা করতে হবে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক টক দই তৈরি করতে কি কি প্রয়োজনঃ দুধ দেড় লিটার, গুঁড়া দুধ আধা কাপ, ও চার চামচ টাটকা টক দই।
পস্তুত প্রণালী
প্রথমে চুলায় মিডিয়াম তাপে দুধ জ্বালিয়ে ঘন করে নিন। দেড় লিটারকে এক লিটার বানিয়ে ফেলুন। এবং চুলা বন্ধ করে দিন।
এবার বাজার থেকে আনা বীজ ফ্রিজ থেকে বের করে একদম নরমাল করে ফেটে নিন এবং জ্বালানো দুধে দিয়ে দিন। এবং ভালো ভাবে নাড়িয়ে নিন। আপনি চাইলে বাসায় থাকা দইও ব্যবহার করতে পারেন।
হাত দেওয়া যায় এমন সামান্য কুসুম গরম দুধ মাটির পাত্রে ঢালুন। এ পর্যায়ে বাসায় অ্যালুমিনিয়ামের বড় পাত্র থাকলে সেটির মধ্যে কাপড় দিয়ে তার উপরে দুধ দেওয়া মাটির পাত্রটি বসিয়ে পাত্রে একটি ঢাকনা দিয়ে ৬-৮ ঘণ্টা রেখে দিন। হয়ে গেল আপনার টক দধি তৈরি।
দই খাওয়ার অপকারিতা
মিষ্টি দইয়ের তুলনায় টক দই বেশি উপকারী। উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা আছে তবে তা নির্ভর করবে আপনার উপর। আপনি যদি একজন ডায়াবেটিকসের রোগী হয়ে থাকেন কিংবা আপনার কিডনি জনিত কোন সমস্যা থাকে তবে এটি আপনার জন্য উপকারের বদলে ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াতে পারে। এরকম সমস্যা থাকেল চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং দেখুন তারা কি পরামর্শ দেয়। পাশাপাশি ইচ্ছামতো অতিরিক্ত দই খাওয়াও ক্ষতিকর। এছাড়া কারো শরীরে অ্যালার্জি জনিত সমস্যা বেশি থাকলে এতে থাকা প্রোটিনের কারনে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আপনি চাইলে ঘরে বসেই খুব সহজে টক দই বানিয়ে নিতে পারেন এজন্য আপনাকে তেমন কোন ঝামেলা করতে হবে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক টক দই তৈরি করতে কি কি প্রয়োজনঃ দুধ দেড় লিটার, গুঁড়া দুধ আধা কাপ, ও চার চামচ টাটকা টক দই।
চট্টগ্রামের এই মহিষের টক দই বেকারত্ব দূর করে অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ ভূমিকা পালন করতে পারে।ই-কমার্সে ও এর অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাহাত সোলতানা
স্বত্বাধিকারী-অভিরুচি বুটিকস