শেরপুরের মন্ডার ইতিহাস প্রায় ২০০ বছরের পুরানো। বংশানুক্রমে চলছে মন্ডা উৎপাদন। তৎকালীন সময়ে অভিজাত শ্রেণী এই মন্ডার স্বাদ নেওয়ার এক চেটিয়া ক্ষমতা ভোগ করতো। জমিদার আমল নিস্তেজ হওয়ার পর থেকে বাণিজ্যিক ভাবে মন্ডার ব্যবহার শুরু হয়। বহুকাল আগে থেকে শেরপুরের মন্ডার সুনাম ও পরিচিতি ছিল আশেপাশের জেলা, পাশের দেশ ভারত সহ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে। বর্তমানে ইন্টারনেট তথা ফেসবুকের কারণে মন্ডার প্রচার ও প্রসার বেড়েছে কয়েকগুণ।
স্থানীয় লোকেরা আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে গেলে মিষ্টি হিসেবে বেচে নেন মন্ডা। আবার শেরপুরের আত্মীয় বেড়াতে আসলেও আপ্যায়ন করা হয় মন্ডা দিয়ে। এ রেওয়াজ চালু হয়েছে অনলাইনেও। মিষ্টি হিসেবে যেন মন্ডার কোন বিকল্প নেই। অনুরাধা, আদি গিরীশ, স্বদেশের দোকান সহ শহরের কয়েক টি দোকানে মন্ডা উৎপাদন হয়। সন্ধ্যার পর পর ই শেষ হয়ে যায় এসব দোকানের মন্ডা। শেরপুরের মন্ডা দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইতিমধ্যে আমেরিকা, লন্ডন, কানাডা, দুবাই, সিঙ্গাপুর, ইতালি সহ ভারতে যাচ্ছে হরহামেশাই।
ই-কমার্সের মাধ্যমে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হচ্ছে শেরপুরের মন্ডা। জেলা ওয়েবসাইট আওয়ার শেরপুর এর সূত্র মতে, অনলাইনে দিনে দিনে বাড়ছে এই মন্ডার চাহিদা। তাদের কাস্টমারদের একজন ইফফাত জাহান মিলা বলেন, “আমি ফেসবুকে মন্ডার প্রচারণা দেখে অর্ডার করি। মন্ডা ছানার তৈরি হওয়ায় ভালো লেগেছে। তাই নিজে খাওয়ার পর আমার মা’কে উপহার পাঠিয়েছিলাম। মা শেরপুরের মন্ডা খেয়ে ছোট বেলার স্মৃতীচারণ করেছেন। যেহেতু চিনির পরিমাণ কম তাই প্রতি মাসে অর্ডার করি এই মন্ডা।”
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ছানা, ক্ষীর, এলাচি ও চিনির সমন্বয়ে মন্ডা উৎপাদন হওয়ায় এতে রয়েছে অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন এ, সি, ডি, বি-১২, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, রিবোফ্লাভিন, ম্যাগনেশিয়াম, নিয়াসিন। নিয়মিত মন্ডা খেলে শরীরের হাড় সুঠাম হয়। চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীরা পরিমিত মন্ডা খেতে পারেন। যাদের সরাসরি দুধ খেতে সমস্যা, তারা মন্ডার স্বাদ খেয়ে শরীরের দুধের চাহিদা মিটাতে পারেন।
অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী বাপ্পি দে বলেন, প্রায় দু’শ বছর ধরে মন্ডা উৎপাদন হয়ে আসছে। শেরপুরে কৃষকদের উৎপাদিত খাঁটি দুধ এই শিল্পটিকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে। খাঁটি দুধের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, ঋণদানসহ সরকারি সুবিধা দিলে এখানে মন্ডাসহ নানান মিষ্টির নতুন নতুন উৎপাদক তৈরি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ’আওয়ার শেরপুর’ ইন্টারনেটে প্রচারণার চালানোর পর থেকে অনলাইনে মন্ডার চাহিদা বাড়ছে দিনে দিনে।
জেলা ওয়েবসাইট আওয়ার শেরপুর এর প্রতিষ্ঠাতা মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, শেরপুরের মন্ডার স্বাদ ও মান দুটাই অনন্য। ইন্টারনেটের সুবিধা কে কাজে লাগিয়ে মন্ডার পরিচিতি সর্বত্রে ছড়িয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। এতে মন্ডার চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি জেলারও ব্র্যান্ডিং হবে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা অনলাইনে যত ক্রেতার কাছে মন্ডা বিক্রি করেছি তাদের অর্ধেকেরও বেশি পুনরায় মন্ডা ক্রয় করেছেন এবং নিকটস্থদের কাছে প্রচার করেছে। এরফলে তাদের মাধ্যমে নতুন নতুন ক্রেতা যোগ হয়েছে আওয়ার শেরপুরে।