C.Lanatus প্রজাতির ৯২%জল , ৬% চিনি এবং মাএ ২% অন্যান্য উপাদান নিয়ে গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু ও ঠান্ডা ফল তরমুজের পথচলা । গরমের উত্তাপে পানির তৃষ্ণায় যখন আমরা মরি মরি অবস্থা তখন প্রানঠান্ডা করে দেয় তরমুজ।এতো মজা ও উপকারী ফল তরমুজের আদি জন্মস্থান নিয়ে বলা এখনও অনেক বেশ মুশকিল। কারণ , প্রত্নতাত্ত্বিক এবং প্যালেওবোটানিস্টদের মতে, তরমুজের সাংস্কৃতিক বিভিন্ন জাতীয় সিট্রুলাস প্রজাতির ক্ষুদ্র বুনো প্রতিনিধিদের সাথে প্রচলিত শেকড় রয়েছে, যা এখনো দক্ষিণ আফ্রিকা, মোজাম্বিক এবং জাম্বিয়া, নামিবিয়া এবং বোটসওয়ানা প্রান্তরে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই দেশগুলিতেই তরমুজগুলির জিনগত রূপগুলির সর্বাধিক সংখ্যক প্রকাশিত হয়েছিল বলেও জানা যায়।
এরপরই তরমুজের ইতিহাস শুরু । তারপর ভূমধ্যসাগর, মধ্য প্রাচ্য ভারত এবং চীন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।পশ্চিম আফ্রিকা, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নাকি মিসর , নাইজেরিয়া ,নাইজার সহ এ পর্যন্ত ১৭ দেশের কোন দেশে তরমুজের উৎপত্তি বলা যায় না । ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়,
প্রাচীন মিসরের দ্বাদশ রাজবংশের রাজা আমেনমহাট–১–এর শাসন আমলে ১৯৯১-১৯৬২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে তরমুজের দেখা পাওয়া যায়। এ ছাড়া তুতেনখামেনের সমাধিমন্দিরের গায়ে যে চিত্র রয়েছে, সেখানেও তরমুজের চিত্র দেখা যায়। প্যারিস জানান, উত্তর আফ্রিকার স্থানীয় ‘গুরুম’ আধুনিক তরমুজের পূর্বপুরুষ।
যাইহোক আমরা আদি জন্মস্থান খুঁজে না পেলেও পেয়েছি আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশে তরমুজের দেখা । বাংলাদেশের বেশ কিছু জেলায় হচ্ছে তরমুজের চাষ এবং চাষীরা বেশ লাভবান বলেও জানান । আমাদের দেশের প্যান্ডেমিক পরিস্থিতি আমাদের কতোটা পিছিয়ে দিয়েছে তা আমাদের সবারই জানা। তারপরও কিন্তু থেকে যায়, দেশের পরিস্থিতি যখন আমাদের সবাইকে আতন্কে রেখেছে ঠিক তখনই অন্যান্য জেলার মতো টাংগাইল জেলার একজন ভিন্ন ভাবে ভাবে তার ক্যারিয়ার নিয়ে ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাএ ,টাংগাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার গোপিনপুর (আমচালা) গ্রামের মাসুদ পারভেজ নামের একজন বর্ষাকালে পরীক্ষামূলক তরমুজ চাষ করেন।
মাসুদ পারভেজ জানান ,তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক করোনাকালীন সময়ে খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় শাকসবজি চাষের জন্য উৎসাহিত করেন।সব কিছু বন্ধ থাকার কারণে বাধ্য হয়েই তিনি শুরু করেছিলেন চাষ।ভবিষ্যৎ কৃষিবিদ হিসেবে তার অর্জিত জ্ঞান আর এই বাধ্যতামূলক অবসর তাকে কিছু একটা করার জন্য উদ্রুত করেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অফসিজনে কিছু বিদেশী জাতের তরমুজ পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে। কিন্তু আমি শুরু করি দেশী রেগুলার জাতের তরমুজ বীজ নিয়ে। যার ফলস্বরূপ আজ বলতে পারি তরমুজের কোন নির্দিষ্ট সিজন নেই। এটি বছরের বারোমাসই চাষযোগ্য।
তরমুজের ভিন্ন ধারার চাষ হচ্ছে টাংগাইলেরই সদর উপজেলায় । সদরের জহরুল হক নামের একজন । জহরুল হক আগে থেকেই একজন ব্যাবসায়ী ছিলেন।কোভিড পরিস্থিতি আমাদের দেশের সব থামিয়ে দেয় সাথে থেমে যায় জহুরুল হকের ব্যবসাও । কিন্তু তারব্যবসার কাজে সবসময় যাতায়াত ছিলো গাজিপুর কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে,সেখান থেকেই তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে অলস সময় কাটাতে শখের বশে শুরু করেন তরমুজ চাষ।পরীক্ষামূলক ভাবে কোরিয়ার সাকেরা, থাইল্যান্ডের ব্লাকবেরি ও ইয়েলো বেরী এবং সৌদির সাম্মাম জাতের তরমুজ চাষ করেন।এ জাতের তরমুজ বারো মাস পাওয়া যায়। কৃষি অধিদপ্তর থেকে বীজ না পেয়ে বন্ধু ছোটন কুমার ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মাধ্যমে বিদেশ থেকে তরমুজের বীজ সংগ্রহ করে বাড়ির পাশে দুই বিঘা জমিতে তরমুজের চাষাবাদ করেছেন। ফলনও বেশ ভাল হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ
এছাড়াও মে জায়গার কথা না বললেই না ,তা হচ্ছে টাংগাইল জেলার মধুপুর উপজেলা। এখানে এমন কোনো ফসল নেই যা হয় না । মধুপুরের এই সোনার মাটিতে আনারসের পাশাপাশি মাসুদ হাসান নামে অবসরপ্রাপ্ত একজন সেনা সদস্য তরমুজের চাষ শুরু করেন।যা বনাঞ্চলের ২১০ শতাংশ জমিতে চাষ হচ্ছে বলে জানা যায়।
টাংগাইল জেলায় তরমুজের এতো চাষ। এবং লাভের পাশাপাশি কিছু তরমুজ তো থেকেই যায় অবশিষ্ট ।যেমন ধরা যাক ,ছোট ছোট তরমুজ গুলো যা চাষীরা বাজারেই তুলেন না কেউ নিবে না বলে ,এছাড়াও একটু সমস্যা থাকলেও আমরা ক্রেতারা তা কিনতে আগ্রহ দেখাই না । ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে একটু ডিজিটাল চিন্তা করেছেন খুলনার মৃত্যুঞ্জয় । অবশিষ্ট থাকা তরমুজ যেনো একজন চাষীর লসের কারণ না হয় তাই তিনি তার আইডিয়া অনুযায়ী ক্যাট(ছোট ছোট তরমুজ) তরমুজ এর লাল অংশ ব্লেন্ড করে শুধু রসটা ছেকে জাল করে নিয়েছেন খেজুর রসের মতো।জাল করতে করতে একটা সময় তরমুজের রস গুলো গুড়ের রুপ ধারণ করছে।
কৃষি কর্মকর্তারাও জানান খেজুর,আখ গুড়ের পর আমরা তরমুজের তোগুড় নিয়ে বেশ আশাবাদী।কারণ একটা অন্য গুড়ের থেকে বেশি ঔষধি গুণসম্পন্ন । পরবর্তী সিজনে এই গুড় বাণিজ্যিক ভাবে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন এবং বলেন ২০০-৩০০ টাকা কেজিও বিক্রি করা যাবে তোগুড়।
তোগুড় হতে পারে টাংগাইলের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনাময় পণ্য ।কেননা টাংগাইলের উদ্যোক্তারা সফল ভাবে বারোমাসি তরমুজ চাষ করছে ।একটা পণ্য যখন আমরা সারাবছর ধরে সাপ্লাই দিতে পারবো তখন তার চাহিদা হবে একদম ভিন্ন ।তোগুড় বেশ চাহিদাসম্পন্ন এবং অনেক ভালো করার একটা সুযোগ রয়েছে কারণ এটাতে কোনো ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হচ্ছে না ।আমরা সবসময়ই চাই ফ্রেশ পণ্য ,তুগুড় ও কোনো দিকে কম না ।
তাই বলা যায় ,টাংগাইল জেলার উদ্যোক্তারা যদি চায় তবে আমাদের টাংগাইল জেলা তুগুড়ের জন্যেও হতে পারে সেরা ।
ধন্যবাদ
আমিনা আতকিয়া
অপরাজিতা