সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ব্যপকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এ খাতের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি জি-গ্যাস আয়োজিত ‘বাংলাদেশে এলপিজি’র গতিপ্রকৃতি’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে বক্তারা দেশের এলপিজি খাতের সম্ভাবনা, প্রতিবন্ধকতা ও করণীয় প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন এনার্জিপ্যাকের ডিরেক্টর নাওইদ রশিদ ও বসুন্ধরা গ্রুপের হেড অব প্ল্যানিং ও স্ট্র্যাটেজি জাকারিয়া জালাল। আয়োজনটির সঞ্চালনায় ছিলেন
ব্যবসা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ আবু সাঈদ রাজা।
ওয়েবিনারে এনার্জিপ্যাকের ডিরেক্টর নাওইদ রশিদ জানান, বিগত তিন বছরে বৈশ্বিক ব্যবসায়িক ডেমোগ্রাফিতে বেশ পরিবর্তন এসেছে। প্রথমে কোভিডের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল (সাপ্লাই চেইন)
বাধাগ্রস্ত হয়। এরপর ইউক্রেন রাশিয়া-দ্বন্দের কারণে সারাবিশ্ব জুড়ে ডলার সংকট ও মন্দা তৈরি হয়। গ্রাহক পর্যায়ে এলপিজির দাম সাধ্যের মধ্যে রাখতে হলে সরকারের উচিত বিদ্যুৎ খাত সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতে ভর্তুকি দেয়া। তাছাড়া, বছর বছর এলপিজির দাম সমন্বয় করা আরেকটি সমাধান হতে পারে।
নতুবা আকস্মিক ২০-৩০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি হলে গ্রাহকের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এছাড়া, এলপিজি খাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য অংশীজনদের নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন বলে মতামত ব্যক্ত করেন নাওইদ রশিদ। তিনি জানান, পাওয়ার প্ল্যান্টের ক্ষেত্রে ইনভেস্টমেন্ট রিটার্নে ৮-৯ বছর সময় দেয় ব্যাংক, কিন্তু এলপিজি খাতে এই সময় দেয়া হয় মাত্র ৫-৬ বছর। জাতীয় অর্থনীতি এলপিজি খাতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। তাই, সংবেদনশীল এই খাতে ইনভেস্টমেন্ট রিটার্নের সময় হওয়া উচিত কমপক্ষে ১০ বছর।
ওয়েবিনারে বসুন্ধরা গ্রুপের হেড অব প্ল্যানিং ও স্ট্র্যাটেজি জাকারিয়া জালাল জানান, এলপিজি খাতে ইতোমধ্যে অতিবিনিয়োগ হয়ে গেছে। অতিবিনিয়োগের কারণে এই খাত তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সাথে এলপিজি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর দামের পার্থক্য নিয়ে কথা বলেন জাকারিয়া। তিনি জানান, ডলারের দামের ওপর এলপিজি’র মূল্য নির্ধারণ নির্ভর করে। ফলে নির্দিষ্ট কোনো দর না দিয়ে যদি ডিরেকটিভ প্রাইস (সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন) ঠিক করে দেয়া হয়, তাহলে বাজারে এলপিজি’র মূল্য স্থিতিশীল থাকবে।
অর্থনৈতিক নানা প্রতিবন্ধকতা ও মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও দেশের এলপিজি খাতকে সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেন বক্তারা। এই খাত সামনের দিনে আরও বিকশিত হবে ও জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।