আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট গ্রহ বুধ। সূর্যের সবচেয়ে কাছে বলে ভয়ংকর উত্তপ্ত। সম্প্রতি গবেষকরা বলেছেন, বুধ গ্রহের ভূপৃষ্ঠের নিচে ১৮ কিলোমিটার (১১ মাইল) পর্যন্ত পুরু হীরার একটি স্তর থাকতে পারে।
সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে ধূলিকণা আর গ্যাসের ঘূর্ণায়মান মেঘ থেকে জমে কঠিন গ্রহে পরিণত হয় বুধ।
এর অল্প সময় পরই ধাতু গলানোর মতো প্রচণ্ড চাপ ও তীব্র তাপমাত্রার মধ্যে ভূগর্ভে এই বিপুল হীরার ভাণ্ডার তৈরি হয়ে থাকতে পারে। এই সময়ে নতুন জন্ম নেওয়া গ্রহটির গভীরের লাভার মহাসাগরের ওপরে গ্রাফাইটের একটি কঠিন আবরণ ছিল বলে মনে করা হয়। অ্যানভিল প্রেস নামের একটি বিশেষ যন্ত্রের সহায়তায় এক দল বিজ্ঞানী সেই পরিবেশ কৃত্রিমভাবে তৈরি করেন। সাধারণত প্রচণ্ড চাপে বিভিন্ন পদার্থের কী ঘটে তা বুঝতে এবং কৃত্রিম হীরা উৎপাদনে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়।
বেলজিয়ামের লিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রধান এবং এই গবেষকদলের সদস্য বার্নার্ড শারলিয়ার বলেন, এখানে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি করা যায়। বুধ গ্রহের ম্যান্টেলের গভীরে যেমন উচ্চ চাপ ও উচ্চ তাপমাত্রা রয়েছে বলে আমরা ধারণা করি—এ যন্ত্রের সাহায্যে কিছু পদার্থের নমুনাকে তেমনই পরিস্থিতির মধ্যে ফেলা হয়। এই পরীক্ষায় সিলিকন, টাইটানিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি পদার্থ একটি গ্রাফাইট ক্যাপসুলের ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। বুধের প্রারম্ভিক দিনগুলোয় এমন মিশ্রণ ছিল বলেই মনে করা হয়।
এরপর গবেষকরা এই ক্যাপসুলটি যন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে পৃথিবীর পৃষ্ঠের চাপের তুলনায় প্রায় ৭০ হাজার গুণ বেশি চাপ এবং দুই হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োগ করেন। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বুধ গ্রহের অন্তস্তলে কয়েক শ কোটি বছর আগে এমন পরিবেশই ছিল। পরে বিজ্ঞানীরা ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের নিচে এসব পদার্থের মিশ্রণের অবস্থা যাচাই করেন। তাঁরা দেখতে পান, নানা পদার্থ ভরা গ্রাফাইট ক্যাপসুলটি হীরার ক্রিস্টালে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তত্ত্ব ও তথ্যের সন্নিবেশ ঘটিয়ে জোরালোভাবেই ধারণা করা হচ্ছে, গ্রহটির পৃষ্ঠের নিচে রয়েছে ওই বিশাল হীরার মজুদ।