গত ৯ মে আত্মপ্রকাশ করা নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ সংক্ষেপে আপ বাংলাদেশ এর নব গঠিত আহবায়ক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সাজ্জাদ সাব্বির আপ বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের রাজনীতির সমসাময়িক বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন টেকজুম-এর সাথে।
টেকজুম: আপ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পেছনে মূল অনুপ্রেরণা কী ছিল?
সাজ্জাদ সাব্বির: ২০২৪ সালের গণআন্দোলনে জনগণের আত্মত্যাগ ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থেকেই আপ বাংলাদেশের জন্ম। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতিকে মানুষকেন্দ্রিক, সুশাসনভিত্তিক ও মর্যাদাপূর্ণ করতে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন ছিল। সেই প্রয়োজনের তাগিদেই ৪৭,৭১ এবং ২৪ এর চেতনা সাথে নিয়েই আপ বাংলাদেশর প্রতিষ্ঠা।
টেকজুম: আপনারা কি নিজেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে দেখেন, নাকি নাগরিক প্ল্যাটফর্ম?
সাজ্জাদ সাব্বির: বর্তমানে আমরা একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছি, তবে ভবিষ্যতে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক দলে রূপ নেবে কি নেবে না এই বিষয়ে সংগঠন সিদ্ধান্ত নিবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সচেতন নাগরিকদের সংগঠিত করা ও একটি বিশ্বাসযোগ্য এবং স্বচ্ছ বিকল্প তৈরি করা।
টেকজুম: আপ বাংলাদেশের মূল আদর্শ বা দর্শন কী?
সাজ্জাদ সাব্বির: আমরা গণতান্ত্রিক উদারতাবাদে বিশ্বাস করি। সামাজিক সুবিচার, ধর্মীয় সহনশীলতা, মানবিক মর্যাদা এবং দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র গঠন আমাদের প্রধান আদর্শ। জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করে ন্যায়ভিত্তিক ও ইনসাফের বাংলাদেশ গঠন করায় আমাদের লক্ষ্য।
টেকজুম: বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আপ বাংলাদেশ কীভাবে আলাদা?
সাজ্জাদ সাব্বির: আমরা পেশিশক্তি, দুর্নীতি, পারিবারিক রাজনীতি ও ব্যক্তিপূজার বিরুদ্ধে। আমাদের কাঠামো উন্মুক্ত, অংশগ্রহণমূলক ও সিদ্ধান্তে গণতন্ত্রসম্মত। আমাদের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ সদস্য শিক্ষিত, পেশাজীবী ও সমাজসচেতন নাগরিক। এদেশের অরাজনৈতিক মানুষদেরকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করাও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।
টেকজুম: আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? নির্বাচনে অংশ নেবেন?
সাজ্জাদ সাব্বির: বর্তমানে আমাদের লক্ষ্য সংগঠন বিস্তার, জনগণের সঙ্গে সংযোগ তৈরি এবং রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি। আমরা নির্বাচনে অংশ নিব কিনা সেটা ভবিষ্যৎ নির্ধারন করবে। এর পূর্বে একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলতে চাই এবং সবসময় ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে চাই।
টেকজুম: আপ বাংলাদেশে নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া কীভাবে হয়?
সাজ্জাদ সাব্বির: আমাদের নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও গঠনমূলক। আমরা মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এবং ভবিষ্যতে সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
টেকজুম: আপনাদের প্রতি তরুণ সমাজের আগ্রহ কেমন দেখছেন?
সাজ্জাদ সাব্বির: অত্যন্ত ইতিবাচক। তরুণদের মধ্যেই পরিবর্তনের স্পৃহা সবচেয়ে বেশি। আমাদের প্ল্যাটফর্মে অনেক শিক্ষার্থী, ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট ও উদ্যোক্তা স্বেচ্ছায় যুক্ত হচ্ছেন। তরুণদের ইতিবাচক আগ্রহের সুস্পষ্ট প্রতিফলন আপনি আমাদের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখতে পাবেন।
টেকজুম: আপ বাংলাদেশে আপনার দায়িত্ব ও কাজ কী?
সাজ্জাদ সাব্বির: আমি বর্তমানে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার কাজ মূলত সংগঠনের ব্র্যান্ডিং, জনসংযোগ, এবং রাজনৈতিক বার্তা তরুণ সমাজের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করা। আমরা চাচ্ছি, নতুন এক রাজনীতির চর্চা হোক—যেটা মানুষকেন্দ্রিক, যুক্তিভিত্তিক এবং নৈতিক।
জাগরণ এক্সপ্রেস: আপ বাংলাদেশ কি শুধুই অন্য আরেকটি দল এর প্রয়োজনীয়তা কোথায়?
সাজ্জাদ সাব্বির: এটা শুধু আরেকটা দল নয়, এটা একটা জনতার প্রক্রিয়া। দেশে দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখছি—রাজনীতির নামে ক্ষমতার লড়াই, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের দৌরাত্ম্য। মানুষের কাছে রাজনীতি আজ আতঙ্ক বা বিরক্তির বিষয় হয়ে উঠেছে। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতি হচ্ছে জনগণের কল্যাণের মাধ্যম, সেটিকে পুনরুদ্ধার করার জন্যই “আপ বাংলাদেশ”।
টেকজুম: আপনাদের দৃষ্টিতে রাজনীতির সবচেয়ে বড় সংকট কী?
সাজ্জাদ সাব্বির: রাজনীতির বড় সংকট হচ্ছে বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি। মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারছে না—কে সত্য বলছে, কে আদর্শিক। আমাদের প্রজন্ম প্রশ্ন করে, কিন্তু উত্তর পায় না। আমরা সেই নিরুত্তরতার জবাব হতে চাই, কারণ আমরা ক্ষমতা নয়, ন্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।
টেকজুম: আপনাদের বিরুদ্ধে অনেকে বলে—’নতুন মুখ, পুরোনো চিন্তা’ এছাড়া কেউ কেউ বলেন ‘এক্স শিবিরের দল’। কী বলবেন?
সাজ্জাদ সাব্বির: আমি বলব—আমরা নতুন মুখ, নতুন চিন্তাই আনি। তবে জাতীয়তা, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার—এসব কখনো পুরোনো হয় না। আমরা পুরোনো সমস্যার আধুনিক সমাধান দিতে চাই। আমাদের চিন্তা অনেকটাই rooted in values, but fresh in approach.
টেকজুম: আপ বাংলাদেশে সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়া কী?
সাজ্জাদ সাব্বির: আমাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে যে কেউ সদস্য হতে পারেন। এছাড়া স্থানীয় সংঠকদের মাধ্যমেও সংযুক্ত হতে পারেন। আমরা চাই, সচেতন, সৎ ও সমাজমুখী মানুষ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হোক। সদস্যপদ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে সংগঠনের কাজে যুক্ত করা হয়।
টেকজুম: সাবেক সরকার বা বিরোধী দলের প্রতি আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
সাজ্জাদ সাব্বির: আমরা কারো বিরুদ্ধে নয়, তবে ব্যবস্থার সংস্কার চাই। সাবেক ক্ষমতাসীন বা তথাকথিত বিরোধী দল — উভয়ের মধ্যে গণতান্ত্রিক শূন্যতা, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ও জবাবদিহির অভাব স্পষ্ট। আমরা এ ধরনের রাজনীতির বিপরীতে জনগণের রাজনীতি করতে চাই। এবং আমরা চাই সরকার কিংবা বিরোধীদল তথা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে বাংলাদেশপন্থী হতে হবে।
টেকজুম: আপ বাংলাদেশে নারীদের অংশগ্রহণ কী রকম?
সাজ্জাদ সাব্বির: আমাদের আহ্বায়ক কমিটিতে এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে নারীদের সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, নারীর নেতৃত্ব ছাড়া একটি পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক সংগঠন হতে পারে না।
টেকজুম: শেষ প্রশ্ন—আপ বাংলাদেশ পাঁচ বছর পর কোথায় দেখতে চান?
সাজ্জাদ সাব্বির: আমরা বিশ্বাস করি, পাঁচ বছরের মধ্যে আপ বাংলাদেশ হবে দেশের সবচেয়ে সংগঠিত ও আস্থাভাজন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। আমাদের স্বপ্ন—একটি আদর্শিক, কর্মী-নির্ভর ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি গড়ে তোলা। নেতৃত্ব নয়, নেতৃত্ব তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য। ধন্যবাদ!