ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক তীব্র সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে, পাকিস্তানি নিরাপত্তা সূত্র অন্তত পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে, যার মধ্যে তিনটি রাফাল যুদ্ধবিমান রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এক্সপ্রেস নিউজের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। তবে, নয়াদিল্লি এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিমান ধ্বংস বা এ ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেনি।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে জানা যায়, গত ৬ ও ৭ মে রাতে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানে ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলো পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ না করেই দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের ছয়টি স্থানে বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালায়। এর জবাবে পাকিস্তানি বিমানবাহিনী গুলি করে একাধিক ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে বলে দাবি করা হয়েছে। আরও বলা হয়, বিমানগুলোর ধ্বংসাবশেষ ভারতের সীমানার ভেতরেই পতিত হয়েছে, কারণ সেগুলো পাকিস্তানের সীমানা অতিক্রম করেনি।
সূত্রগুলো আরও দাবি করে, একটি রাফাল যুদ্ধবিমান জম্মু ও কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলার গাডুল কোকেরনাগ এলাকায় ভূপাতিত হয়, যেখানে বিমানের ইজেকশন সিট উদ্ধার করা হয়েছে। আরেকটি যুদ্ধবিমান পুলওয়ামার পাম্পোর এলাকায় বিধ্বস্ত হয়, এতে দুই পাইলট গুরুতর আহত হয়ে শ্রীনগরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তৃতীয় যুদ্ধবিমানটি রামবান জেলার পান্তিয়াল এলাকায় ভূপাতিত হয় এবং এর পাইলট ফ্লাইং অফিসার ইকবাল সিং আহত অবস্থায় উধমপুর সেনা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এছাড়াও, জম্মুর আখনূরের ভরদা কালান এলাকায় কৃষিজমিতে আরেকটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যার দুই পাইলট আহত অবস্থায় আখনূর মিলিটারি হাসপাতালে ভর্তি। পাঞ্জাবের ভাঠিন্ডা শহরেও একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে সূত্রগুলো। পাশাপাশি, জম্মুর ১৩ মাইল পূর্বে ভারতের একটি ‘হেরন’ রিমোট পাইলটেড ড্রোনও গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
পাকিস্তান এই ঘটনাকে তাদের সামরিক সাফল্যের ‘১০০-০’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছে, এই অভিযান ভারতের সামরিক ব্যর্থতাকে স্পষ্ট করেছে। তারা আরও দাবি করে, এই অভিযানে পাকিস্তানের কোনো যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং তারা সম্পূর্ণ সফলভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
অন্যদিকে, ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের যুদ্ধবিমান হারানোর বিষয়টি স্বীকার না করলেও, এয়ার মার্শাল এ. কে. ভারতী এক বিবৃতিতে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা স্বীকার করে বলেছেন, ‘এটি যুদ্ধ এবং ক্ষয়ক্ষতি এর অংশ। কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো আমরা কি আমাদের লক্ষ্য অর্জন করেছি? উত্তর হলো- জ্বলজ্যান্ত হ্যাঁ। আমরা সন্ত্রাসী পরিকাঠামো ধ্বংস করেছি’।
এই উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মিরের পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহতের ঘটনায়। ভারত এর জন্য পাকিস্তানভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করলেও কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দাখিল করেনি। ইসলামাবাদ এই অভিযোগ জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করে, যার ফলে দুই দেশের সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে। এর প্রতিক্রিয়ায় ২৩ এপ্রিল ভারত ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেয়, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে এবং সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। পাকিস্তান এটিকে ‘যুদ্ধের উসকানি’ বলে নিন্দা জানায় এবং আকাশপথ ও বাণিজ্য বন্ধসহ বিভিন্ন পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
পরবর্তীতে ৬ ও ৭ মে ভারতের হামলার পর, ৯ ও ১০ মে রাতে পাকিস্তান ‘বুনিয়ান-উল-মারসুস’ নামে পাল্টা সামরিক অভিযান চালায়। এই অভিযানে ভারতের অভ্যন্তরে ২৬টি সামরিক অবস্থানে আঘাত হানা এবং একাধিক ব্রিগেড ও ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর ধ্বংস করার দাবি করেছে পাকিস্তান।
এদিকে, গত ১৩ মে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতের হামলায় আজাদ কাশ্মির ও পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে মোট ৫১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক ও ১১ জন সামরিক সদস্য রয়েছেন।