বছর দশেকের মধ্যে ক্ষুদ্রাকৃতির পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বানাবে রোলস-রয়েস। সম্প্রতি প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানটি বিবিসিকে জানিয়েছে, ২০২৯ সাল নাগাদ তারা শিল্প-কারখানায় ব্যবহার উপযোগী পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও স্থাপন করতে শুরু করবে। এ ধরনের ক্ষুদ্র বিদ্যুৎকেন্দ্র কম সময়ের মধ্যে ব্যাপকভাবে উৎপাদনের পাশাপাশি এর যন্ত্রাংশ ট্রাক-লরিতে বহন করা যাবে। এর ফলে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের খরচও প্রত্যাশিতভাবে কমে আসবে।
এ দশকের শেষ নাগাদ যুক্তরাজ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে রোলস-রয়েসের ক্ষুদ্রাকৃতির পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যবহৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে অনেকে বলছেন, যুক্তরাজ্যের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। বরং এখন অপেক্ষাকৃত সস্তা নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে নজর দেয়ার সময় হয়েছে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যবহার নিয়ে পরিবেশবাদীদের মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে। একটি পক্ষ মনে করে, এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ খুবই বিপজ্জনক এবং ব্যয়বহুল। আরেক পক্ষ বলে, ২০৫০ সালের মধ্যে নিট শূন্য কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সব ধরনের প্রযুক্তিই বিবেচনায় নিতে হবে।
তবে ক্ষুদ্রাকৃতির পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্যান্য স্বল্প খরচের নবায়নযোগ্য প্রযুক্তি যেমন উপকূলীয় বায়ুকল, নির্মাণ স্থাপন ও পরিচালন ব্যয়ের সঙ্গে ভালোভাবেই প্রতিযোগিতা করতে পারবে বলে মনে করছে রোলস-রয়েস।
রোলস-রয়েস যুক্তরাজ্যে ১০ থেকে ১৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেছে। এসব কেন্দ্রের আয়তন হবে মাত্র ১ দশমিক ৫ একর থেকে ১০ একর। বর্তমানকালের বৃহৎ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর তুলনায় এগুলোর আয়তন ১৬ ভাগের এক ভাগ। কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, একটি শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি করে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকবে।
তবে এমন প্রকল্পকে কীভাবে সম্ভব করা হবে সে প্রশ্নের ব্যাখ্যায় রোলস-রয়েসের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা পল স্টেইন বলেন, এখানে কৌশলটি হলো রিঅ্যাক্টরের প্রত্যেকটি অংশ উন্নত ডিজিটাল ওয়েলডিং পদ্ধতিতে বানিয়ে রোবটের মাধ্যমে সংযোজন করা হবে। এরপর প্রত্যেকটি পার্ট নির্দিষ্ট জায়গায় ট্রাক-লরির মাধ্যমে নিয়ে গিয়ে নাট-বোল্ট দিয়ে জোড়া দেয়া হবে। এভাবে করতে পারলে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের খরচ অবিশ্বাস্যরকম কমে আসবে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও কমবে।
তবে ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের অধ্যাপক পল ডর্ফম্যান বলছেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রচলিত পদ্ধতির সঙ্গে ‘নির্মাণ ও সংযোজন কৌশলের’ সম্ভাব্য ব্যয় হ্রাসের যে ধারণা দেয়া হচ্ছে এটি ভুল প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। কারণ প্রোডাকশন লাইনের একটি ভুল ভিত্তিমূলে ত্রুটির কারণ হতে পারে। এতে প্রভাবিত হবে পুরো রিঅ্যাক্টর। এ ত্রুটি সারানো তখন বেশ ব্যয়বহুল হবে।
১ দশমিক ২ গিগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চেয়ে ডজনখানেক ১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র বানানো বেশি সাশ্রয়ী। রোলস-রয়েস আশা করছে, ক্ষুদ্রাকৃতির বিদ্যুৎকেন্দ্র বিদেশে রফতানি করে তারা উৎপাদন খরচ যথেষ্ট কমিয়ে আনতে পারবে।
তবে এর জন্য তাদের অন্তত ২০৩০ এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ তখন জলবায়ু পরিবর্তন নিরসন লক্ষ্য অর্জনে যুক্তরাজ্যের সময়সীমা শেষ হবে এবং চাহিদা মেটাতে প্রচুর নবায়নযোগ্য জ্বালানির দরকার হবে।