বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন দেশের অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক আন্দোলনের কর্মী, সাংবাদিক ও আইনজীবীদের মুঠোফোনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে সরকারি নজরদারির কথা শোনা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে উঠে এসেছে ইসরায়েলের দুটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের নাম। গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ অনেক দেশের সরকারকেই তাদের উদ্ভাবিত নজরদারির সফটওয়্যার সরবরাহ করেছে। এছাড়া ক্যান্ডিরো নামে আরেক প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ডিভাইসে নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করার যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে। খবর বিবিসি ও রয়টার্স।
জানা যায়, এনএসও গ্রুপটির কাছে প্রায় অর্ধকোটি ফোন নম্বর সংরক্ষণে রয়েছে। এসব ফোন নম্বর তাদের সম্ভাব্য গ্রাহকদের জন্য আগ্রহের কেন্দ্র তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে ঠিক কতজনের ফোন নম্বর তাদের তালিকায় রয়েছে আর ঠিক কতটি ফোন তাদের দ্বারা হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের কাছে কোনো মন্তব্য করতে বরাবরই অস্বীকৃতি জানিয়েছে এনএসও গ্রুপ।
গ্রুপটি জানায়, তাদের সফটওয়্যার শুধু দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা। এসব সফটওয়্যার বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনী, আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে সরবরাহ করা হয়। তারা আরো জানায়, এসব বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের মানবাধিকারবিরোধী কোনো অভিযোগ না থাকলে কেবল তখনই তারা এসব যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে। প্যারিসভিত্তিক এনজিও ফরবিডেন স্টোরিজ ও মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক পরিচালিত তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে এনএসও জানায়, এ প্রতিবেদন সম্পূর্ণ অসত্য ধারণা ও অসমর্থিত তত্ত্ব দ্বারা পরিপূর্ণ।
রোববার ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ান, লে মন্ডে এবং আরো ১৪টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এনএসও গ্রুপের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যারের কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, সফটওয়্যারটি আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড উভয় ধরনের ফোনকেই আক্রান্ত করতে পারে। এর মাধ্যমে আক্রান্ত ফোনের বার্তা, ইমেইল, কল রেকর্ড, মিডিয়া ফাইল, মাইক্রোফোন ও ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ নেয়া যায়।
প্রতিবেদনে জানা যায়, ঠিক কতগুলো ফোন এ সফটওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে তা ধারণা করা যায় না। তবে ৫০টি দেশের হাজারের বেশি মানুষের ফোন এটির মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছে বলে গণমাধ্যমগুলো নিশ্চিত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রধান, ব্যবসায়ী, অধিকার কর্মী এবং বেশ কয়েকটি আরব দেশের রাজপরিবারের সদস্য রয়েছেন। এছাড়া সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস ও আল জাজিরাসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের অন্তত ১৮০ জন সাংবাদিকের ফোন এ সফটওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা যায়।
প্রতিবেদনে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি মুঠোফোন নম্বর আক্রান্ত হয়েছে বিশ্বের ১০টি দেশে। এ দেশগুলো হলো আজারবাইজান, বাহরাইন, হাঙ্গেরি, ভারত, কাজাখস্তান, মেক্সিকো, মরক্কো, রুয়ান্ডা, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এদিকে ইসরায়েলি এক গ্রুপের বিরুদ্ধে হ্যাকিংয়ের অভিযোগ তুলেছে প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফটও। বৃহস্পতিবার প্রযুক্তিসংক্রান্ত মানবাধিকার গ্রুপ সিটিজেন ল্যাব জানায়, একটি ইসরায়েলি গ্রুপ মাইক্রোসফট উইন্ডোজ, মাইক্রোসফট হ্যাকিংয়ের জন্য বিভিন্ন টুল বিক্রি করেছে।
সিটিজেন ল্যাব জানায়, ক্যান্ডিরো নামে হ্যাকিং টুল বিক্রেতা এসব সফটওয়্যার তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। এসব সফটওয়্যার উইনডোজে প্রবেশের মাধ্যমে তথ্য চুরি করতে সহায়তা করে। উইন্ডোজের অনেক গ্রাহকের কম্পিউটারে একটি গোপন প্রতিষ্ঠানের তৈরি গোয়েন্দা সরঞ্জাম প্রবেশের আলামত পাওয়া গেছে।
সিটিজেন ল্যাব ও মাইক্রোসফট জানায়, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা দেখতে পান যে ক্যান্ডিরো কীভাবে অসংখ্য নামহীন গ্রাহকের কম্পিউটারে প্রবেশের মাধ্যমে তথ্য চুরি করছে। এটি ব্যবহার করে সৌদি আরবের রাজতন্ত্রবিরোধী গ্রুপ ও ইন্দোনেশিয়ার বামপন্থী গণমাধ্যমের ওপর নজরদারির প্রমাণ মিলেছে।