ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, শিগগিরই রাজধানী ঢাকার ২০০টি জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে ৫জি পরিষেবা চালু হবে।
সচিব গত রবিবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে উন্নত বিশ্বে ৫জি প্রযুক্তির ব্যবহার ও দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের প্রয়োগ বিষয়ক অবহিতকরণ সভায় এসব কথা বলেন। সভার প্রধান অতিথি ছিলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
সচিব সভায় ৫জি বাস্তবায়নে ব্যাপক জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন।
এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন ৫জি প্রযুক্তি সেবা কেবল গ্রাহকদের জন্য মোবাইল ব্রডব্যান্ড ও ভয়েস কলের প্রযুক্তি নয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রাহক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস), রোবোটিক্স, বিগডাটা, ব্লকচেইন, হিউম্যান টু মেশিন, মেশিন টু মেশিন ইত্যাদি প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে স্মার্ট গ্রিড, স্মার্ট সিটি, স্মার্ট হোম, স্মার্ট ফ্যাক্টরি সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। এটি ডিজিটাল যুগের মহাসড়ক।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার,ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তা এবং এর অধীনস্থ সকল অধিদপ্তর ও সংস্থা প্রধানগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় হুয়াওয়ে বাংলাদেশ লিমিটেড বিশ্বব্যাপী ৫জি প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ক পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ১৮ সালের জুলাই মাসে ৫জি প্রযুক্তি পরিক্ষা ও ১২ ডিসেম্বর ২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে পরীক্ষামূলকভাবে ৫জি যুগের যাত্রা শুরু হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ৩জি বা ৪জির মতো ৫জি প্রযুক্তি শুধু মুঠোফোন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয় বরং ওয়াইফাইয়ের মতো প্রযুক্তিতে যেকোনো ডিভাইস বা যন্ত্রের সঙ্গে যন্ত্রের সংযুক্তিও থাকতে পারবে। এই প্রযুক্তি ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সবাইকে সংযুক্ত করতে সক্ষম হবে এবং মেশিন, অবজেক্ট ও ডিভাইসগুলোকে একই সূত্রে গাঁথবে। ফলে তথ্য আদান-প্রদান, ভিডিও কল, কল কনফারেন্স এবং ইন্টারনেটভিত্তিক সেবাসহ দেশে শিল্প বাণিজ্য ও কৃষি এবং মৎস্য চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
৫জি এমন একটি নতুন তারহীন প্রযুক্তি, যা রেডিও তরঙ্গের ব্যবহার আরও বেশি নিশ্চিত করবে এবং একই সময় একই স্থানে বেশি মুঠোফোন ইন্টারনেটের সুবিধা নিতে পারবে। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ করে, অনলাইন এডুকেশনে এক যুগান্তকারী বিপ্লব নিয়ে আসবে। স্বাস্থ্য খাতেও ব্যাপক রদবদল ঘটবে। মেডিকেল ডিভাইসের সঙ্গে ফাইভ–জি ব্যবহার করে ডাক্তার দূরের কোনো রোগীকে শহরে বসেই জরুরি চিকিৎসা দিতে পারবেন। এমনকি রোবোটিক সিস্টেমের সাহায্যে রিমোট সার্জারি করতে পারবেন।
৫জি প্রযুক্তি সম্পর্কে হুয়াওয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রয়োগ ও এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে। উপস্থাপনায় ৫জি কী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৫জি প্রয়োগ ও এর প্রভাব এবং বাংলাদেশে ৫জির প্রস্তুতি ও করণীয়সহ এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিশ্বের ৭২টি দেশে বর্তমানে ৫জি চালু রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ২০১৯ সালে এই প্রযুক্তির যাত্রা শুরু করে। পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে উপস্থাপনায় বলা হয়, সর্বত্র ৫জি চালু হলে দূরে থেকেও ঘরের লাইট, ফ্যান, এসি ও কৃষিক্ষেত্রে পানির পাম্প চালু বা বন্ধ, পুকুরে মৎস্য চাষ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ৫জি নেটওয়ার্ক সেবা চালু হলে টিভি চ্যানেলগুলো দেখার জন্য ডিসের প্রয়োজন হবে না। বন্দর ব্যবস্থাপনাতে এই প্রযুক্তি ফলপ্রসূ অবদান রাখবে । এই অঞ্চলে থাইল্যান্ডে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় এই প্রযুক্তি প্রয়োগের দৃষ্টান্ত এসময় তুলে ধরা হয়। কম্পিউটারে থাকা ৫জি চিপ থেকে ডেটা ট্রান্সমিট করে ফোনে, ট্যাবলেটে, টিভিতে ডেটা সিংক করা সম্ভব হবে। ঘরের ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ইত্যাদি প্রযুক্তির আওতায় থাকবে। ফলে জনপ্রিয় হবে স্মার্ট হোম, স্মার্ট সিটি, সেলফ ড্রাইভিং কার, হেলথ মনিটরিং ডিভাইস আর অগমেন্টেড রিয়েলিটির মতো পযুক্তিগুলো।
চোখের পলক পড়ার পূর্বেই কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। অর্থাৎ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বিকাশ ঘটবে ৫জির কল্যাণে অনায়াসেই। তবে এসব সুবিধা পেতে হলে বিদ্যমান টাওয়ারগুলো ৫জিতে রূপান্তর করতে হবে এবং গ্রাহকদের লাগবে সেই উপযোগী হ্যান্ডসেট।
বডি ফিটনেস ডিভাইস নিজের শরীরের সঙ্গে ব্যবহার করে বডি থেকে সিগন্যাল পাঠাতে মিলি সেকেন্ড সময় লাগবে। গাড়ির লোকেশন, স্পিড, ডেস্টিনেশনসহ ট্রাফিকের সব ইনফরমেশন হাতের মুঠোয় চলে আসবে ফলে ড্রাইভিং, গাড়ি দুর্ঘটনা কমাতে সহায়ক হবে।