আগামী ২৫ কোটি বছরে কী কী বড় ধরনের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে চিরচেনা এই পৃথিবীতে সেই তথ্য প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। আঁতকে ওঠার মতোই এমন সব শঙ্কার কথা ওঠে এসেছে সবশেষ গবেষণায়। এই ধরণির ৯২ শতাংশ অঞ্চলই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। মানুষসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী প্রায় বিলীন হয়ে যাবে। মহাদেশগুলো ফের একত্রিত হয়ে গঠন করবে পেনজিয়া আলটিমা নামের এক নতুন অতিমহাদেশ। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বেড়ে যাবে ভয়াবহ ভাবে। অতিমহাদেশটির মাঝে তৈরি হয়ে বিশাল এক মরুভূমির। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে যেই তাপমাত্রায় মানুষসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী আর বেঁচে থাকতে পারবে না। তবে সেই চরম বৈরী পরিবেশে হয়ত জন্ম নেবে নতুন প্রজাতির যারা নতুনভাবে আধিপত্য বিস্তার করবে।
জার্মানির জিএফজেড রিসার্চ সেন্টারের ভূতত্ত্ববিদ হান্নাহ ডেভিস জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এই পৃথিবীতে জীবনযাপন করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। ৯২ শতাংশের বেশি অঞ্চল বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। এখন বসবাসের উপযোগী অঞ্চল হচ্ছে ৬৮ শতাংশ। তখন থাকবে মাত্র ৮ শতাংশের কম অঞ্চল। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বেড়ে যাওয়ায় বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাবে।
প্রায় ২০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে সবশেষ যে অতিমহাদেশ পেনজিয়া গড়ে উঠেছিল তা ভেঙে এশিয়া, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশ গঠিত হয়েছিল। আগামী ২৫ কোটি বছরে আটলান্টিক মহাসাগর সংকোচিত হয়ে আফ্রিকা, ইউরোপ, এশিয়া আর অস্ট্রেলিয়া উত্তর মেরুমুখী হয়ে মিলিত হবে আমেরিকা মহাদেশের সঙ্গে।
অতিমহাদেশের আবহাওয়া কেমন হবে সেই বিষয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর নেচার জিওসায়েন্সে প্রকাশিত হয় এই গবেষণাটি। একই দিনে সেটি নেচার জার্নালে প্রকাশ করা হয়। এই গবেষণায় অন্যতম একজন হলেন ব্রিসটল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলেকজান্ডার ফার্নওয়ার্থ। তিনি বলেন, `সেই সঙ্গে সূর্যরশ্মি ও এর বিকিরণের মাত্রা বেড়ে যাবে আড়াই শতাংশের বেশি। এতে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। অতিমহাদেশটির মধ্যাঞ্চল সমুদ্র থেকে অনেক দূরে সরে যাওয়ায় সেখানকার আবহাওয়া বর্তমানের উত্তপ্ত মরুভূমিকেও ছাড়িয়ে যাবে।`
অধ্যাপক ফার্নওয়ার্থ আরও বলেন, `তীব্র বৈরী আবহাওয়ায় পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ বিভিন্ন প্রজাতি। এছাড়া বিভিন্ন উদ্ভিদ চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে। এর মধ্যে হয়ত জন্ম নেবে নতুন প্রজাতি। যারা রাজত্ব করবে নতুন বৈরী পরিবেশে।`
পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫০ কোটি বছর। আর আধুনিক মানুষের বসবাস প্রায় দুই লাখ বছর। ভয়ঙ্কর পারমাণবিক দুর্যোগ বা গ্রহাণুর প্রচণ্ড আঘাতের মতো বড় কোনো বিপর্যয় না ঘটলে এই ধরনীতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে আরও প্রায় ১৭৫ কোটি বছর পর্যন্ত।