মোবাইল মার্কেটে নিজের জমি শক্ত করে নিজেকে একটি মিড রেঞ্জ স্পেশালিস্ট ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মার্কেটিং রিসার্চ টিমের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের সবচেয়ে দ্রুত প্রগতিপ্রাপ্ত স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হল রিয়েলমি। মিডরেঞ্জার মার্কেটে শাওমি রেডমি, স্যামসাং, অনার, মোটোরোলার মত বড় বড় ব্র্যান্ডকে পিছনে ফেলে রিয়েলমি এখন স্মার্টফোন মার্কেটের ভালো একটি জায়গা দখল করে আছে।
রিয়েলমি১ রিয়েলমি২, রিয়েলমি২ প্রো, রিয়েলমি৩, রিয়েলমি ৩ প্রো, রিয়েলমি সি১, রিয়েলমি সি ২, রিয়েলমি ইউ১ এবং রিয়েলমি এক্স -এর পরে অপোর সাব-ব্র্যান্ড রিয়েলমি নিয়ে এসেছে তাদের নতুন স্মার্টফোন রিয়েলমি ৫ এবং রিয়েলমি ৫ প্রো। এই দুটি স্মার্টফোনে লিপ টু কোয়াড ক্যামেরা টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও এই দুটি ফোনে আপনারা এমন কিছু ফিচার পেয়ে যাবেন যেগুলি মূলত কোন হাইরেঞ্জ প্রিমিয়াম স্মার্টফোনের ফিচার। আজ আমরা এই নতুন দুইটি স্মার্টফোনের সম্পূর্ণ রিভিউ এবং আমাদের মতামত আপনাদেরকে জানাবো।
প্রিমিয়াম ডিজাইন-
রিয়েলমি ৫ প্রো তে আপনারা পেয়ে যাবেন একটি প্রিমিয়াম ডিজাইন। এই ফোনটির পিছনে একটি গ্রেডিয়েন্ট ফিনিশ ব্যাক প্যানেল রয়েছে। এই প্যানেলে আপনি ভালো লাইট রিফ্লেকশন পেয়ে যাবেন। এই ফিনিশিংয়ের জন্যই আপনি ফোনটি থেকে একটি প্রিমিয়াম লুক পাবেন। তবে ব্যাক প্যানেলটি স্মাজ প্রুফ নয়, ব্যবহার করার সময় আপনার হাতের ছাপ ব্যাক প্যানেলে লাগবে। তাই ফোনটিতে একটি ব্যাক কভার লাগিয়ে ব্যবহার করাই ভালো। রিয়েলমি এই ফোনটির সাথে আপনাকে একটি ব্যাক কভার ফোনের বক্সেই দিয়ে দেবে। রিয়েলমি ৫ প্রো তে দুটি রংয়ের বিকল্প আপনারা পাবেন- স্পার্কলিং ব্লু এবং ক্রিস্টাল গ্রীন।
সামনে প্যানেলে দেওয়া হয়েছে ওয়াটারড্রপ নচ্ যুক্ত ৬.৩ ইঞ্চির ফুল এইচডি প্লাস ডিসপ্লে। ডিসপ্লেটি অ্যামোলেড না হলেও যথেষ্ট ভালো। এই ফোনটিতে আপনারা ৪৫০নিট পর্যন্ত ব্রাইটনেস পাবেন এবং সঙ্গে নাইট মোডও রয়েছে যার ফলে রাত্রে কাজ করলে আপনার চোখে সমস্যা হবে না। এই ডিসপ্লেটি একটি মাল্টি টাচ্ ডিসপ্লে।
ডিসপ্লেটির রেসোলিউশন ২৩৪০×১০৮০ পিক্সেল এবং পিপিআই লেভেল ৪০৯। স্ক্রিন এবং ব্যাক প্যানেলের দিক থেকে ফোনটি খুবই ভালো এবং আপনার হাতে একটি প্রিমিয়াম ফোনের লুক দেবে। তবে ফোনটির ওজন ১৮৪ গ্রাম যার ফলে ফোনটি আপনার হাতে একটু ভারী লাগতে পারে।
পারফরম্যান্স-
রিয়েলমি ৫ প্রো তে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৭১২ এআইই প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। ভিভো Z1 প্রো-এর পরে এই ফোনেই এই প্রসেসরটিকে আবার দেখা গেল। ১০ ন্যানোমিটার অক্টাকোর প্রযুক্তিতে তৈরি এই প্রসেসরটিতে ২.৩ গিগাহার্ৎজের ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়া যায় এবং প্রসেসরটি ৩৫% অবধি এনার্জি সাশ্রয়কারী। ফোনটিতে হাইপার গেম বুস্ট ২.০ দেওয়া হয়েছে যার ফলে কল অফ ডিউটি, ব্যাটেলফিল্ড, পাবজি মোবাইলের মত হাই গ্রাফিক্সের ভারী গেম খেলতে কোন অসুবিধা হবে না। অর্থাৎ ফোনটি গেমিং লাভার্সদের জন্য খুবই ভালো।
রিয়েলমি ৫ প্রো অ্যান্ড্রয়েড ৯ পাই-র উপর বানানো কালার ওএস ভার্সন ৬ তে কাজ করে। ফোনটিতে ওপ্পোর, VOOC 3.0 ফাস্ট চার্জিং ব্যবস্থা আছে যার ফলে মাত্র ৪৫ মিনিটে আপনার ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ হয়ে যাবে। আপনি ফোনটিকে একদিন অবধি ওই ব্যাটারীতে অনায়াসে চালাতে পারবেন।
ফোনটিতে ৪০৩৫ এমএএইচের ব্যাটারি রয়েছে। রয়েছে ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট। সাধারণত এই রেঞ্জের ফোনে টাইপ-সি পোর্ট দেখতে পাওয়া যায় না। তাই এটি এই ফোনটির একটি ভাল দিক বলা যেতে পারে। এছাড়া ফোনটিতে ডুয়াল 4জি সিম কার্ড সাপোর্ট, ওয়াইফাই ৮০২.১১, এবং ব্লুটুথ ৫.0-র সাপোর্ট রয়েছে। কানেক্টিভিটি এবং পারফরম্যান্সের দিক থেকে দেখতে গেলে ফোনটি খুবই ভালো। হার্ডওয়ারের ক্ষেত্রে ফোনটি এই রেঞ্জের বহু ফোনকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। শক্তিশালী প্রসেসর, ভালো ব্যাটারি, ফাস্ট চার্জিং, গেম বুস্ট, টাইপ-সি পোর্ট, এবং কানেক্টিভিটির সবদিক থেকেই ফোনটি আপনার জন্য একটি ভালো পছন্দ হবে।
কোয়াড ক্যামেরা-
রিয়েলমি এই সিরিজে লিপ টু কোয়াড ক্যামেরা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। কার্যত ক্যামেরাই এই ফোনটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ফিচার। ফোনটির পিছনে আপনারা ৪৮ মেগাপিক্সেলের প্রাইমারি ক্যামেরা, ৮ মেগাপিক্সেলের ওয়াইড অ্যাংগেল ক্যামেরা, ২ মেগাপিক্সেলের পোর্ট্রেট ক্যামেরা, এবং ২ মেগাপিক্সেলের ম্যাক্রো ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। সামনে সেলফি ক্যামেরার জন্য ১৬ মেগাপিক্সেলের একটি লেন্স দেওয়া হয়েছে। তাহলে আসুন এই ক্যামেরাগুলির ব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিই-
৪৮ মেগাপিক্সেল সোনি আইএমএক্স ৫৮৬ প্রাইমারি সেন্সর- প্রথমে কথা বলা যাক ফোনটির প্রাইমারি ক্যামেরার ব্যাপারে। এটির অ্যাপারচার f/1.79 এবং এ ক্যামেরাটি পিডিএএফ বা ফেজ ডিটেক্ট অটো ফোকাস প্রযুক্তি সাপোর্ট করে। তবে এই ক্যামেরাটিকে চালু করতে হলে আপনাকে আপনার স্মার্টফোনের ক্যামেরা অ্যাপে গিয়ে আল্ট্রা মোডটি অন করতে হবে। এই ফোনের ক্যামেরা অটোমেটিক 10X ডিজিটাল জুমের সাথে আসে। তবে আলট্রা মোডে ছবি তুললে আপনি জুম ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে এই ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবি আপনি জুম করতে গেলে ছবিটি ফেটে যেতে পারে। তাই ৪৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা হলেও আপনার ফোনের পিকচার কোয়ালিটি সাধারণই থাকবে। তবে হ্যাঁ, এই রেঞ্জের অন্যান্য ফোনের ক্যামেরা তুলনায় এই ফোনের ক্যামেরার ছবির কোয়ালিটি অনেকটা ভালো।
৮ মেগাপিক্সেলের ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স- এই লেন্সটির অ্যাপারচার f/2.25। এই ক্যামেরাটি মাধ্যমে আপনি অনেকটা বড় জায়গার ছবি একসাথে তুলে নিতে পারবেন। এই ক্যামেরাটির অন্যতম বড় ফিচারটি হল সুপার নাইটস্কেপ মোড। এই মোডটি ব্যবহার করে আপনারা রাত্রিবেলা খুব ভালো ছবি তুলতে পারবেন। ফোনের এই ক্যামেরাটিতে আপনারা স্লো মোশন, প্যানোরামা, এবং এআই বিউটির মতো আরো অনেক মোড এবং ফিচার পেয়ে যাবেন। সঙ্গে আপনি এইচডিআরের সাপোর্টও পাবেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবি আপলোড করার জন্য। সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবি আপলোড করার জন্য এই ক্যামেরাটি খুবই ভালো।
এছাড়াও ফোনে দুটি ২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। যার একটির মাধ্যমে আপনারা বোকে মোড বা পোট্রেট ছবি তুলতে পারবেন এবং অপরটির মাধ্যমে চার সেন্টিমিটার অঞ্চলের মধ্যে তোলা ছবি খুব ভালোভাবে উঠবে।
সেলফি ক্যামেরা- ফোনটি সামনে একটি ১৬ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে, সোনি আইএমএক্স ৪৭১ সেন্সরের সাথে। এই ক্যামেরাটির অ্যাপারচার f/2.0। ফোনটির সেলফি ক্যামেরাতে আপনারা এআই বিউটি মোড পেয়ে যাবেন। রিয়েলমি ৫ প্রো-র সেলফি ক্যামেরার মাধ্যমে আপনি খুবই ভালো সেলফি তুলতে পারবেন। আপনার সেলফিগুলি খুবই ব্রাইট আসবে যা আজকের দিনের যুবক-যুবতীদের পছন্দ হবে। ক্যামেরার দিক থেকে রিয়েলমি ৫ প্রো মিড রেঞ্জের খুবই ভালো একটি ডিভাইস। এর মাধ্যমে আপনি ভাল পোর্ট্রেট, ল্যান্ডস্কেপ, সাধারণ ছবি, সেলফি তুলতে পারবেন এবং ৪কে ভিডিও রেকর্ডিংও করতে পারবেন।
দাম-
রিয়েলমি ৫ প্রো-র ৪ জিবি+৬৪জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ মডেলটির দাম ২০,৯৯৯ টাকা, ৬ জিবি+৬৪ জিবি স্টোরেজ মডেলটির দাম ২১,৯৯৯ টাকা, এবং ৮ জিবি+১২৮ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ মডেলটির দাম ২৩,৯৯ টাকা। দামের দিক থেকে দেখতে গেলে ফোনটি প্রকৃত মিড রেঞ্জার প্রিমিয়াম স্মার্টফোন। ফোনের ইন্টারনাল মেমোরি আপনারা মেমোরি কার্ডের মাধ্যমে ২৫৬ জিবি অবধি বাড়াতে পারেন। ফোনটিতে মেমোরি কার্ডের জন্য আলাদা স্লট দেওয়া হয়েছে।