আমাদের কারো না কারো মধ্যেই ডিএসএলআর কেনার ইচ্ছা আছে। কিন্তু যখনি আমরা ঠিক করে ফেলি একটা ডিএসএলআর কিনেই ফেলব তখনি আসে আমাদের জীবনের মোস্ট কনফিউজিং পার্ট। ক্যামেরা কিনব ভালো কথা কিন্তু কোন ব্র্যান্ডের ক্যামেরা কিনব, কোন মডেলের ক্যামেরা কিনব, বডি নিব নাকি কিট লেন্স সহ নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে আমাদের সবার মাথা ঘুরাতে থাকে। বাংলাদেশে অফিসিয়ালি ডিএসএলআর ব্র্যান্ড এভেল্যাবল থাকলেও বাইরের দেশের তুলনায় অনেক কম দামে প্রাইভেট সেলারদের কাছ থেকে ক্যামেরা আমরা কিনতে পারি। আর ডিএসএলআরের ব্র্যান্ড আছেই মাত্র দুটি, ক্যানোন ও নিকন। কিন্তু ক্যামেরা কেনার জন্য আপনার বাজেট যদি হয় ৫০ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে আর পছন্দের ব্র্যান্ড যদি হয়ে থাকে ক্যানোন তাহলে এটি হচ্ছে আপনার জন্য। এই রেঞ্জে ক্যানোন আপনাকে অফার করছে দুটি ক্যামেরা ক্যানন ৮০০ডি এবং ক্যানোন ৭৭ডি।
এই দুটি ক্যামেরা কোয়ালিটির দিক থেকে প্রায় সেইম। কিন্তু এই ৬০ হাজার টাকার প্রাইস রেঞ্জের ক্যামেরা দুটির মধ্যে কি কি পার্থক্য আছে তা নিয়েই আমাদের আজকের এই ক্যামেরা যুদ্ধ।
ক্যামেরা দুটির মধ্যে যা মিল
ইমেজ সেন্সর
দুটি ক্যামেরাতেই ব্যাবহার করা হয়েছে 24.2 মেগাপিক্সেলের APS-C CMOS সেন্সর। দুটো ক্যামেরাতেই আপনারা সমান ইমেজ ক্রপ পাবেন, লাইট সমান পরিমাণে ঢুকবে। অর্থাৎ দুটো ক্যামেরাতেই আপনারা লাইট সেন্সিটিভিটি এবং ইমেজ কোয়ালিটি সেইম পাবেন।
ইমেজ প্রসেসর
৭৭ডি ও ৮০০ডি দুটি ক্যামেরার মধ্যেই ডিজিক-৭ ইমেজ প্রসেসর ব্যাবহার করা হয়েছে যা ক্যানোন ৮০ডি এর ডিজিক-৬ ইমেজ প্রসেসর থেকে উন্নত। অর্থাৎ এই প্রসেসর ক্যানোন ৮০ডি থেকে ভালো ইমেজ প্রসেসিং করতে পারে। এর কারণে ভিডিও ও ইমেজ কোয়ালিটি ক্যানোন ৮০ডি থেকে ভাল পাওয়া যাবে। তবে রিয়াল টাইম পিকচার কোয়ালিটি নির্ভর করছে আপনার ফটোগ্রাফি স্কিল আর কি লেন্স ব্যাবহার করছেন তার উপর।
ইমেজ প্রসেসরের উপর যে আরো একটি জিনিস নির্ভর করে তা হচ্ছে আইএসও ক্যাপাবিলিটি। দুটি ক্যামেরাতেই আপনারা পাচ্ছেন নেটিভ ২৫৬০০ আইএসও। এর কারণে হাই আইএসও তেও আপনারা কম নয়েজের ইমেজ পাবেন। কিন্তু ৩২০০ এর উপরে যেতে মানা করব।
ফটোগ্রাফি ফিচারস
দুটো ক্যামেরাতেই আপনারা ৬ ফ্রেমস পার সেকেন্ডে ছবি তুলতে পারবেন। আর বাফার পাবেন প্রায় ৪ সেকেন্ড পর্যন্ত বা প্রায় ২২ ফ্রেমস। অর্থাৎ হাই স্পীডে আপনি টানা ২২ টি ‘র’ ছবি তুলতে পারবেন। আর যদি Jpeg ছবি তুলে থাকেন তাহলে ১৬৭ টি ছবি তোলার পর বাফার শেষ হবে। এতে ব্যাবহার করা হয়েছে পেন্টামিরর ভিউফাইন্ডার যার কভারেজ হচ্ছে ৯৫%। অর্থাৎ আপনি ভিউ ফাইন্ডারে যা দেখবেন, আসল ছবিতে তার থেকে আরো একটু বেশি জায়গা আসবে। ক্যানোন ৮০ডি তে আপনারা পেন্টাপ্রিজম ভিউফাইন্ডার পাবেন যা আপনাকে ১০০% কভারেজ দেবে।
এছাড়া এই ভিউফাইন্ডারে দেয়া আছে ৪৫ টি ফোকাস পয়েন্ট যার সবগুলো ক্রস টাইপ। অর্থাৎ ছবি তোলার সময় আন্সটেবল হাত থাকলেও ছবির ফোকাস নষ্ট হবে না। এছাড়া এক জিনিস থেকে আরেক জিনিসে খুব সহজেই ফোকাস করা যাবে। যারা ভিউফাইন্ডার দিয়ে ছবি তুলেন তাদের জন্য এটি একটি গ্রেট ফিচার।
ভিডিও ফিচারস
যারা ভিডিও করতে চান তাদের জন্য ক্যানোন বেশ ভালো মানের জিনিসই দিয়েছে দুটি ক্যামেরায়। প্রথমে আসা যাক রেজোল্যুশনে। দুটো ক্যামেরাতেই আপনারা রেকর্ড করতে পারবেন আপ টু ফুল এইচ ডি 1080p রেজোল্যুশনে সর্বচ্চো ৬০ ফ্রেমস পার সেকেন্ডে। ৬০ এফপিএসের সুবিধা হচ্ছে ইডিটিঙ্গে ভিডিও স্পীড ৫০% করে দিয়ে আপনি কিছুটা স্লো মোশন আনতে পারবেন। তবে রিয়াল স্লো মোশনের জন্য সনি রেকমেন্ডেড। রেকর্ড করতে পারবেন এইচডিআর ও টাইম ল্যাপস ভিডিও। এছাড়া দুটো ক্যামেরাতেই পাবেন মুভি ইলেক্ট্রনিক আই এস অর্থাৎ ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন। এটি ভিডিওর সময় ক্রপ করলেও আপনার ভিডিওকে রাখবে শেকিংলেস।
আর যে জিনিসটা ক্যানোন একেবারে নেইল করেছে তা হচ্ছে ভিডিওর জন্য ডুয়াল পিক্সেল অটো ফোকাস। সংক্ষেপে বলতে গেলে এই অটো ফোকাস সিস্টেম হচ্ছে অনেক ফাস্ট। এই ফিচারটিও আপনারা পাচ্ছেন ৭৭ডি ও ৮০০ডি ক্যামেরায়।
অন্যান্য ফিচারস
দুটি ক্যামেরাতেই আপনারা পাচ্ছেন 3” আরটিকুলেটেড ভ্যারি এংগেল টাচ স্ক্রিন। এটিকে আপনি সাইডে নিয়ে আগে পিছে উপর নীচে ২৭০ ডিগ্রী পর্যন্ত ফ্লিপ করতে পারবেন। দুটো ক্যামেরাতেই পাবেন ওয়াইফাই আর ব্লুটুথ। ওয়াইফাই দিয়ে আপনি ক্যানন ক্যামেরা এপের মাধ্যমে আইফোন বা এন্ড্রয়েড ফোনকে কানেক্ট করতে পারবেন।
ব্যাটারিও পাচ্ছেন সেইম LP-E 17 লিথিয়াম আয়োন ব্যাটারি। এই ব্যাটারি দিয়ে আপনি ম্যাক্সিমাম ৬০০ টি শট অথবা প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টা ভিডিও রেকর্ড করতে পারবেন। দুটি ক্যামেরাতেই পাচ্ছেন ফ্লিপ আউট ফ্ল্যাশ আর বিল্ট ইন মাইক। পাচ্ছেন মিনি এইচডিএমআই, মাইক্রো ইউ এস বি, রিমোট শাটার ও মাইক্রোফোন জ্যাক। পাচ্ছেন না সাউন্ড মনিটর করার জন্য হেডফোন জ্যাক। দুটি ক্যামেরাতেই নেই ওয়েদার সিলিং। অর্থাৎ প্রচন্ড ধুলাবালি বা বৃষ্টির মধ্যে ক্যামেরা বাইরে না নিয়ে যাওয়াই উত্তম। এছাড়া দুটো ক্যামেরার বডি, সাইজ আর ওজন বলতে গেলে প্রায় সেইম টু সেইম।
ক্যানন ৭৭ডি আর ৮০০ডি এর পার্থক্য
তো এই পর্যন্ত আপনারা যা কমন পাবেন এই দুই ক্যামেরার মধ্যে সব দেখে গেলেন। তাহলে দুটি ক্যামেরার মধ্যে পার্থক্য কোথায়? দুটি ক্যামেরার মেইন পার্থক্য হচ্ছে এদের টার্গেট কনজুমার। ক্যানোন ৮০০ডি কে টার্গেট করা হয়েছে একটু এডভান্স বিগিনারদের দিকে যারা তাদের প্রথম ক্যামেরা থেকে একটু বেশি কিছু পেতে চান। আর ৭৭ডি টার্গেট করা হয়েছে তাদের জন্য যারা প্রফেশনাল ক্যামেরায় হাত আনতে চান কিন্তু লাখ টাকা খরচ করে ফুল ফ্রেম নিতে চাচ্ছেন না, এমনকি৮০ডি কিনেও অতিরিক্ত ১০/১২ হাজার টাকা খরচ করতে চাচ্ছেন না, কিন্তু ৮০ডি এর সমান পারফর্মেন্স ও ফিল চাচ্ছেন। এই দুটি ক্যামেরার মধ্যে আপনি যে পার্থক্যগুলো মেইনলি খুজে পাবেন তা হচ্ছে মেইনলি বডি ফিচারে। এই দুটি ক্যামেরার ৯০% ই হচ্ছে সেইম, কেবল ৭৭ডি তে কিছু এক্সট্রা জিনিস দেয়া আছে।
তো কোন ক্যামেরাটা কেনা দরকার?
এখন এসেছে সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কোন ক্যামেরাটি কিনলে সবচেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে। শুরুতে আসা যাক দুটি ক্যামেরার দামের দিকে। 18-55mm কিট লেন্স সহ দোকান ভেদে ৮০০ডি এর দাম পরবে ৫২,০০০ টাকা থেকে ৫৩ হাজার টাকা আর ৭৭ডি এর দাম পরবে ৫৭,৫০০ হাজার টাকা থেকে ৫৯ হাজার টাকা পর্যন্ত। আপনি যদি বেস্ট অভিজ্ঞতা চান, তাহলে রেকমেন্ড করব ক্যানোন ৭৭ডি। কারণ এই ক্যামেরায় আপনি ইজি কন্ট্রোল পাচ্ছেন যা ৮০০ডি তে পাওয়া যাবে না। এছাড়া প্রফেশনাল ক্যামেরা ফুলটাইম ধরার আগে এই ক্যামেরার মাধ্যমে আপনি সেটার অভিজ্ঞতা পুরোপুরি নিয়ে নিতে পারবেন।
কিন্তু যদি আপনার ‘একটা হলেই হয়’ এমন টাইপের ক্যামেরা লাগে আর বাজেট যদি একদমই বাড়াতে না পারেন তাহলে নিঃসন্দেহে ৮০০ডি নিতে পারেন। কারণ কন্ট্রোলের সুবিধা না পেলেও ইমেজ ও ভিডিও কোয়ালিটি হুবুহু সেইম পাবেন।