গ্যালাক্সি আনপ্যাকড অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্যামসাং-এর বহুল প্রতীক্ষিত গ্যালাক্সি এস২২ আল্ট্রা ও এস২২+ উন্মোচন করা হয়েছে। ফোননির্মাতা কোনো প্রতিষ্ঠান নাম মুখে না নিলেও “ঘরের ভেতরে থাকা হাতি”র কথা কারো ভোলা কি সম্ভব? জ্বি, বাজারে নতুন এই ফোনটির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে অ্যাপলের আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স-এর সঙ্গে।
এ মাসের শেষের দিকে মার্কিন বাজারে আসবে গ্যালাক্সি এস২২ আলট্রা। তার আগে ফোন দুটিকে হাতে নিয়ে যেহেতু তুলনার সুযোগ নেই, আসুন প্রতিষ্ঠানদুটির দেওয়া তথ্য অনুসারে যাচাই করে মিলিয়ে দেখা যাক কোন ফোনে কী আছে বা নেই।
চলুন দেখে নেই গ্যালাক্সি এস২২ আলট্রা ও আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স ফোন দুটির পর্দা বা ডিসপ্লের তুলনা-
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২২ আলট্রা’র ডিসপ্লে আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্সের চেয়ে বড়, শার্প, উজ্জ্বল এবং শক্তি-সাশ্রয়ী।
নির্মাতাদের দেওয়া সংখ্যাভিত্তিক বর্ণনা বিবেচনায় নিয়ে খানিকটা তুলনা করা যেতে পারে। গ্যালাক্সি এস২২ আলট্রা’র ৬.৮ ইঞ্চির অ্যামোলেড ডিসপ্লের রেজুলিউশন ৩২০০x১৪৪০ পিক্সেল। অপরদিকে আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স ডিসপ্লে হচ্ছে ৬.৭ ইঞ্চির ওলেড এবং এ রেরজুলিউশন ২৭৭৮x১২৮৪ পিক্সেল।
দুটো স্ক্রিনই সেকেন্ডে সর্বোচ্চ ১২০ বার রিফ্রেশ করে, যা মানে হচ্ছে পর্দায় ছবির মসৃণতা দুটি ফোনেই একই থাকে। রিফ্রেশ রেটের নিচের দিকে এসে গ্যালাক্সি এস ২২ আল্ট্রা সেকেন্ডে এক বারের রিফ্রেশ রেটে চলে আসতে পারে যেখানে আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স সেকেন্ডে ১০ বারের কম রিফ্রেশ করতে পারে না।
ডিসপ্লেতে ছবির গুণগত মানের দিক থেকে হয়তো এর কোনো গুরুত্ব নেই, তবে শক্তি খরচের বিবেচনায় এটি গ্যালাক্সি এস২২ আল্ট্রাকে আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্সের দুর্দান্ত ক্ষমতার কাছাকাছি যেতে খানিকটা সহায়তা করবে।`আশপাশে উজ্জ্বল আলো থাকলে স্যামসাংয়ের ডিসপ্লে অনেক বেশি উজ্জ্বল হতে পারে। গ্যালাক্সি এস২২ আল্ট্রার ডিসপ্লে সর্বোচ্চ ১৭৫০ নিট পর্যন্ত উজ্জ্বল হতে পারে। সেই হিসাবে আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স যেতে পারে সর্বোচ্চ ১,২০০ নিট পর্যন্ত।
এই সব তুলনার পরও ডিসপ্লের বেলায় একটা কথা বলতেই হয়। হাতে নিয়ে দেখার আগে একেবারে নিশ্চিত হয়ে বলা সম্ভব নয় কোন ডিসপ্লে সঠিক রং দেখায়, একই ছবি কোন ডিসপ্লেতে দেখতে চোখের জন্য আরামদায়ক। স্যামসাংয়ের ডিসপ্লে তুলনার সময় মনে রাখা উচিৎ আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স-এর ডিসপ্লে দক্ষতার সঙ্গে টিউন করা। এদিকে স্যামসাং সম্পর্কেও বলা যায়, প্রতিষ্ঠানটি অ্যামোলেড ডিসপ্লে উৎপাদন এবং টিউনিংয়ে শীর্ষ দক্ষ প্রতিষ্ঠান। ফলে, কোনও সন্দেহ ছাড়াই বলা সম্ভব ফোনটির ডিসপ্লে যেন কনটেন্ট দেখার সর্বোচ্চ অভিজ্ঞতা দেয়, প্রিমিয়াম ফোনটিতে সে চেষ্টাই করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
চলুন দেখে নেই গ্যালাক্সি এস২২ আলট্রা ও আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স ফোন দুটির নকশাভিত্তিক তুলনা-
দুটি ফোনই আপনার পকেটের শত্রু! একটি হিসাব তো সহজেই বোঝা সম্ভব যে দুটি ফোনই ক্রেতার পকেট কাটবে। তবে, আরও একটি বিষয় রয়ে গেছে। ফোন দুটিকে পকেটে আঁটানো এক ঝক্কি হতে যাচ্ছে। আকারে এদের দুজনই বিশাল!
গ্যালাক্সি এস২২ আল্ট্রা’র আকার ১৬৩ x৭৭.৯ x ৮.৯ মি.মি। অপরদিকে আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স-এর আকার ১৬০.৮ x ৭৮.১ x ৭.৬৫ মি.মি। এর মানে হচ্ছে স্যামসাং ফোনটি তার প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় যথেষ্টই দীর্ঘ ও মোটা, কিন্তু চওড়ায় সামান্য কম।
তবে স্যামসাংয়ের ফোনটি তুলনামূলকভাবে সামান্য হালকা। আইফোন ১৩ প্রো-এর ২৩৮ গ্রামের তুলনায় ২২৯ গ্রাম ওজনের। চুলচেড়া বিশ্লেষণ ছেড়ে দিন, দুটি ফোনই যথেষ্ট ভারী।
আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স ভারী হওয়ার কারণ সম্ভবত ফ্রেমে স্টেইনলেস স্টিলের ব্যবহার। স্যামসাং অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করেছে। অ্যালুমিনিয়াম হালকা তবে স্টিল ফ্রেম বেশি মজবুত এবং ফোনটিকে ‘প্রিমিয়াম’ চেহারা দেয়।
নান্দনিকতার দিক থেকে ফোন দুটকে অবশ্য তুলনার সুযোগ কম। গ্যালাক্সি এস২২ আল্ট্রা গ্যালাক্সি এস২২ রেঞ্জের বাকি ফোনগুলোর তুলনায় কিছুটা বাকসো আকৃতির। ফোনের মাথার দিক আর নিচের দিক সমতল, কিন্তু এর কিনারাগুলো বাঁকানো।
অন্যদিকে, আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স-এর ডিসপ্লেতে বাড়তি কোনো বিশেষণই খাটবে না, এটি স্রেফ ‘ফ্ল্যাট’, আর কিনারাগুলোও একেবারে ৯০ ডিগ্রি কোণে বাঁকানো।
এটি গ্যালাক্সি এস২২ আল্ট্রা ফোনটির পেছন দিকে পুরোই সমতল। কোনো ক্যামেরা মডিউল ফোনের পেছনের পৃষ্ঠ ছেড়ে মাথা বাড়ায়নি। অন্যদিকে, আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স এর ক্যামেরা মডিউলগুলো পেছনের পৃষ্ঠ থেকে উঁচু হয়ে থাকে। অনেকের মতেই এটি ফোনের ‘অতিসরল’ নকশাকে খানিকটা হলেও নষ্ট করেছে।
উভয় ফোনেরই রয়েছে আইপি৬৮ রেটিং। তাই ধুলোময়লা বা হাত ফসকে পানিতে পরে গেলেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
ফোন দুটির নকশায় আরও একটি পার্থক্যের কথা এড়িয়ে যাওয়া একেবারেই অনুচিত হবে, এটি সামনের ক্যামেরার অবস্থান। গ্যালাক্সি এস২২ আল্ট্রা একটি ছোট্ট হোল-পাঞ্চ নচ রয়েছে। অপরদিকে আইফোন ১৩ প্রোতে একটি সম্পূর্ণ নচ ডিসপ্লের বড় অংশ দখল করে আছে।