দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়নগি প্রদেশের বাসিন্দা কিওন জু-হাইওন। মাত্র এক মাস হলো ঘরদোর পরিষ্কারের রোবট ভ্যাকুয়াম ক্লিনার এনেছেন তিনি। আর এখন এমন হয়েছে যে সেটা ছাড়া তিনি একদিনও চলতে পারেন না।
কিওনের সেই রোবট ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের আকার ও গঠন পুরোপুরি একটা পিজ্জার মতো। রিমোট কন্ট্রোলের একটা বোতামে চাপ দিলেই ঘরদোর মোছা নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হয় না। সেন্সর, ড্রাইভ রুটিন ও স্বয়ংক্রিয় ডিভাইস ব্যবহার করে সে নিজেই চেয়ারের পাশ দিয়ে, টেবিল-সোফার নিচ দিয়ে নিজের জায়গা করে নেয়। তারপর কোনো মানুষের সাহায্য ছাড়াই মেঝে থেকে ধুলা আর ছোট ছোট কণা তুলে ফেলে।
পরিচ্ছন্নতার জন্য রোবট ছাড়াও স্মার্ট টেক গ্যাজেটগুলো দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় অংশ নিয়ে মানুষের কাছাকাছি চলে আসছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময়ে মানুষে মানুষে মিথস্ক্রিয়া কমেছে। সেজন্য পরিষেবা দানকারী রোবটগুলোর ক্ষেত্র প্রসারিত হয়েছে। কাজগুলো নিখুঁতভাবে করার ফলে তারা নিজেদের দ্রুত মানুষের জায়গায় প্রতিস্থাপনও করে ফেলছে। পরিষেবা রোবটগুলো যেমন বাড়ির কাজে সাহায্য করছে, তেমনি হোটেল বা রেস্টুরেন্টেও গ্রাহকদের সাহায্য করছে। আরো কিছু রোবট আছে, যেগুলো ডাক্তারদেরও সহযোগিতা করছে সার্জারির সময়ে, তারা ওই সময়ে কোনো ধরনের সংক্রমণ রোধ করতে আশপাশ জীবাণুমুক্ত করার কাজেও সাহায্য করছে।
কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর রোবট ইন্ডাস্ট্রি অ্যাডভান্সমেন্টের পলিসি প্ল্যানিং ডিভিশনের নির্বাহী পরিচালক জুন জিন-উ বলেন, পরিচ্ছন্নতার রোবটগুলো দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি বাজারের সবচেয়ে বাণিজ্যিক খাত হওয়ার ধাপ পার করে ফেলেছে। বর্তমানে এটি হোম অ্যাপ্লায়েন্স বাজারের অংশ। রেস্টুরেন্টগুলোয়ও কম রোবট কাজ করছে না। শিল্প সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়াজুড়ে রেস্টুরেন্টগুলোয় শুধু ডিসেম্বরেই সেবা দিয়েছে তিন হাজার রোবট। রান্নাঘর থেকে গ্রাহকের টেবিলে খাবার পৌঁছে দেয়ার কাজটা তারা করেছে। আর তাতে সময় লেগেছে ৫ থেকে ১০ মিনিট।
এসবের বাইরে রোবট ছড়িয়ে পড়েছে আকাশেও। ডেলিভারি রোবট কাজে লাগিয়ে আকাশপথে মনুষ্যবিহীন ড্রোনে করে খাবার পাঠানো হচ্ছে গ্রাহকের কাছে। গত মাসে ড্রোন ব্যবহার করে নিজেদের তেল স্টেশন থেকে পার্শ্ববর্তী পার্কে গরম তেলও বহন করেছে জিএস ক্যালটেক্স। গিয়নগি প্রদেশের স্থানীয় লাইব্রেরিতেও ব্যবহার হতে যাচ্ছে এ রোবট।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে আরেক ধরনের রোবট বানানো হয়েছে, যেটা বয়স্কদের সেবা দেবে। তাদের ওষুধ খাওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেবে এবং তাদের কথাবার্তা ও চলাফেরায় নজর রাখবে। জরুরি হলে অভিভাবক বা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে বার্তাও পাঠাবে সেই রোবট। বিগওয়েভ রোবোটিকসের সিইও কিম মিন-কিও বলেন, আগে কোরিয়ার ছোট ও মধ্যম আকারের প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল কর্মক্ষম রোবট বানাত। এখন স্যামসাং, এলজি, হুন্দাই, দুসান, হানওয়া ও কেটির মতো বড় প্রতিষ্ঠান রোবোটিক ব্যবসার দিকে নজর দিচ্ছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরাও অবশ্য সেই পূর্বাভাসই দিচ্ছেন। হুন্দাই মোটর গ্রুপ ও বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের পূর্বাভাসে বলা হয়, ২০২০ সালে বৈশ্বিক রোবোটিকসের বাজার যেখানে ছিল ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার, তা ২০২৫ সালে ১৭ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। ২০৩০ সাল নাগাদ এ বাজারের আকার দাঁড়াবে ২৬ হাজার কোটি ডলার। এ সময়ে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হার থাকবে ৩০ শতাংশ।